মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের জয়রথ ছুটছে। অসামান্য বোলিং ও ব্যাটিং-এর স্বাক্ষর রাখছেন মেয়ে খেলোয়াড়েরা। পাশাপাশি মিডিয়া-বন্দিত ছেলেদের ক্রিকেট দল বেশ খারাপ ফল করছে। তা যদি না-ও করত, এ প্রশ্নটা কিন্তু সঙ্গত ভাবেই উঠত, একই দেশের ক্রিকেট দলের ছেলে-খেলোয়াড় ও মেয়ে-খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকে যে বিরাট ফারাক, তা কি অন্তত কিছুটা কমানোর দিন আসেনি? ঠিকই, ছেলেদের ক্রিকেটে যে পরিমাণ বিজ্ঞাপন পাওয়া যায়, এখনও মেয়েদের ক্রিকেটে তা যায় না। কিন্তু পারিশ্রমিক কি শুধু বাণিজ্যের নিরিখে হিসেব হবে? না কি প্রতিভা, দক্ষতা ও ম্যাচের ফলাফলের নিরিখে?
যাজ্ঞসেনী গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা-৯৬
কাফিল
প্রথমেই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ধন্যবাদ জানাই ‘নিরাপত্তা কী ও কেন’ (২১-২) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের জন্য। আমার পরম বন্ধু কাফিল সম্পর্কে কয়েকটি কথা তুলে ধরতে চাইছি।
আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এনআরসি-সিএএ বিরোধী বক্তব্য পেশ করার ‘অপরাধ’-এ অবরুদ্ধ কাফিল খানকে হাইকোর্টের নির্দেশে জামিনের দিন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বন্দি করা হয়েছে, তা ইতিমধ্যে সবাই জানেন। কিন্তু কতটা বিপজ্জনক এই কাফিল?
আমার বন্ধু কাফিল উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মানুষের প্রতি অসীম দরদ। ফলে প্রতিবেশী, বন্ধু, তার রোগীদের পরিজন, সবার প্রিয়। পাশ করার পরেই গোরক্ষপুর বিআরডি মেডিক্যাল কলেজে শিশু চিকিৎসকের চাকরি, সুখের সংসার, অকারণ পরনিন্দা-পরচর্চায় থাকে না, রাজনীতির ঝামেলার মধ্যে মাথা গলায় না। মাস কয়েক আগের কথা, মুজফ্ফরপুরে শিশুমৃত্যু হচ্ছে শুনেই ছুটে গেল, নাওয়া-খাওয়া ভুলে পড়ে রইল গরিবগুর্বো অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের নিয়ে। আমাদের সংগঠন মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার অসমের বন্যায় কাজ করতে যাচ্ছে, শুনে এক পায়ে খাড়া। বললাম, সেখানে কোথায় থাকবে, কী খাবে, কোনও নিশ্চয়তা নেই। ও হেসে বলল, মানুষ তো বেঁচেই আছে? আমি পারব না?
২০১৭-র ১০ অগস্ট। কাফিল সে দিন ছুটিতে, সময় কাটাচ্ছে পরিবারের সঙ্গে। বিভাগের গ্রুপে দেখতে পেল, হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ফুরিয়ে গিয়েছে, ধুঁকছে মরণাপন্ন শিশুগুলো। না, ফোন বন্ধ করে ছুটি কাটাতে পারেনি কাফিল; ছুটে গেল হাসপাতালে। উপরের মহলে বার বার আবেদন করে কোনও লাভ হল না। তখন একটা গাড়ি জোগাড় করে চষে বেড়াতে লাগল গোটা শহরটা, যেখানে যতটুকু অক্সিজেন পাওয়া গেল তুলে আনল ট্যাঁকের টাকা খরচ করে। চলল যমে-মানুষে টানাটানি। অবস্থা একটু স্থিতিশীল হল যখন, তত ক্ষণে তিনটে দিন গুজরে গিয়েছে, ওরা জোগাড় করেছে ৫০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন। কাফিলের যন্ত্রণা, এত চেষ্টার পরেও ৭০টা শিশুকে বাঁচানো গেল না। তাদের বাবা-মায়েদের কাতর আর্তনাদের কথা যখন বলত, চোখ দুটো ভরে যেত বিষাদে। মিডিয়াতে কাফিল তখন ‘হিরো’। কাফিল নয়, সংবাদমাধ্যমই সব কথা ফাঁস করে দিয়েছে। মাসের পর মাস মেটানো হয়নি অক্সিজেন জোগান দেওয়া কোম্পানিগুলির বকেয়া। তারা অক্সিজেন জোগান বন্ধ করে দেবে, সে নোটিস আগেই এসেছিল কর্তৃপক্ষের হাতে। কিন্তু হেলদোল নেই।
কিন্তু সরকারের অপদার্থতার কথা যে ফাঁস হয়ে গেল, যোগীরাজ সেটা সইবে কেন? সুতরাং ব্যাটাকে জেলে ঢোকাও। বিনা বিচারে জেলের ভেতর পচল ন’মাস। শুধু কি কাফিল একা? গুলি করে মারার চেষ্টা হল ভাইকে, প্রতি রাতে ঢিল পড়ল ঘরের দরজায়, ঘরের সামনে সশস্ত্র আরএসএস বাহিনীর হুমকি মিছিল। অশ্লীলতা আর হুমকির বন্যা বইল মা-স্ত্রী’র মোবাইলে। মানুষকে ভালবাসার প্রতিদান হিসেবে কাফিলের জুটল একগুচ্ছ মামলা আর সাসপেনশন, সন্ত্রস্ত এলাকাবাসীর সামাজিক বয়কট।
২০১৯ সালের ১০ মে সুপ্রিম কোর্ট ঘোষণা করল, তার বিরুদ্ধে যোগী সরকার কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি। কমিটির বিচার বিভাগীয় তদন্তও তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করতে পারল না। এর পরেও যোগী সরকার কাফিলের উপর সাসপেনশন তোলেনি, এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে তার বকেয়া ১৬ লক্ষ টাকা মেটায়নি। ফলে বিনা রোজগারে, মামলা চালাতে প্রায় সর্বস্ব খোয়ানোর মুখে কাফিল। সেই কাফিল জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে নাকি বিপজ্জনক!
এক দিকে এক জন তরুণ চিকিৎসকের স্বপ্ন, তার জীবনের সর্বস্ব দিয়েও রোগীদের প্রতি ভালবাসা, শিশুদের জন্য নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। অন্য দিকে একটা সরকারের বকলমে উগ্র ও গোঁড়া ধর্মান্ধতা নিয়ে চরম উদ্ধত একটা দল বিজেপি ও তার চালিকাশক্তি আরএসএস, যাদের কাছে শিশুর জীবনের চেয়ে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের চেয়ে বড় হল প্রতিহিংসা। ন্যায়বিচার নয়, অন্যায়কে চোখ রাঙিয়ে লোকচক্ষু থেকে লুকিয়ে রাখাই এদের লোকতন্ত্র। তা হলে দেশের নাগরিকদের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে আসল বিপজ্জনক কে বা কারা?
মনে পড়ে, কলকাতায়, ওর নিঃশর্ত সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে আমরা যে কনভেনশন আয়োজন করেছিলাম, সেখানে কাফিল বলেছিল: মনে করবেন না আমি মুসলমান বলে যোগী সরকার আমাকে হেনস্থা করছে। আসলে আমার কাজ তাদের অন্যায়টা ফাঁস করে দিয়েছে। তাই আমি ওদের চক্ষুশূল। আমি মুসলমান বলে কিছু হিন্দু অনুগামীদের উজ্জীবিত করতে ওদের সুবিধা হতে পারে মাত্র। কিন্তু যে কোনও ধর্ম-বর্ণের লোক আজকে এটা করলে, তার রেহাই নেই।
বিপ্লব চন্দ্র
গুপ্তিপাড়া, হুগলি
স্কুলের নাম
‘‘আইসিএসই-র নবম শ্রেণিতেও প্রশ্ন ‘ফাঁস’’ (২৭-২) শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদে এই চিঠি। প্রতিবেদকের আমার সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল, কারণ আমি অ্যালবানি হল পাবলিক স্কুল-এর অধ্যক্ষ এবং তাই আমিই এই স্কুলের মুখপাত্র। দ্বিতীয়ত, আমাদের স্কুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে শুধুমাত্র শেখ আসাদুল্লা নামক এক জন অভিভাবকের কথার ভিত্তিতে। তৃতীয়ত, যখন আইসিএসই বোর্ডের সচিব জেরি অ্যারাথুন বলেছেন, ‘‘অ্যালবানি হল পাবলিক স্কুল থেকেই যে প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে তার নির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। আইসিএসই বোর্ডের অধীনস্থ আরও অনেক স্কুল আছে শহরে। তাই ওই স্কুলকে অভিযুক্ত করা ঠিক নয়...’’, তখন প্রতিবেদক কেন আমাদের স্কুলের নামটিই ব্যবহার করলেন প্রতিবেদনে? চতুর্থত, আসাদুল্লা মহাশয়ের বিরুদ্ধে বেনিয়াপুকুর থানায় আমরা ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি অভিযোগ দায়ের করেছি, সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হল না, আর ওই ব্যক্তির ভিত্তিহীন অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হল?
টেরেন্স জন
অধ্যক্ষ, অ্যালবানি হল পাবলিক স্কুল
প্রতিবেদকের উত্তর: প্রশ্ন ফাঁসের রিপোর্টে অ্যালবানি হল পাবলিক স্কুলের বক্তব্য জানার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার মণ্ডলকে ফোন করা হলে তিনি বক্তব্য জানান। ওঁর নাম না দিয়ে, স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য বলে প্রতিবেদনে লেখা হয়। অশোকবাবুর সঙ্গে কথোপকথন রেকর্ড করা রয়েছে। তিনি ফোনে এক বারও বলেননি, বিষয়টা নিয়ে স্কুলের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বললে, তা নিশ্চয় বলা হত। প্রশ্ন ফাঁসের ক্ষেত্রে স্কুলের নাম উল্লেখ করেই বেনিয়াপুকুর থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তার নথি আমাদের কাছে রয়েছে। সেই সঙ্গে স্কুলের নাম উল্লেখ করে আইসিএসই বোর্ডেও মেল করা হয়েছে বলে আমাদের জানান স্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা। থানার ওসি বিষয়টি আইসিএসই কাউন্সিল জানে বলে জানান। তখন আইসিএসই কাউন্সিলের সচিব জেরি অ্যারাথুনকে ফোন করা হলে উনি জানান, অ্যালবানি হল পাবলিক স্কুল থেকে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলা ঠিক নয়, তবে বিষয়টি তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। সব পক্ষের বক্তব্যই প্রতিবেদনে রয়েছে।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy