সোনালী দত্তের ‘মেয়েদের লড়াই কঠিন হচ্ছে’ (২৯-৬) প্রবন্ধটি কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেল। লিঙ্গ অসাম্যের নিরিখে ভারতবর্ষে নারীদের স্থান ক্রমশ নিম্নগামী হওয়ার পিছনে আসল কারণ কী? আন্দোলন ও সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত কিছু সামাজিক স্বাধীনতা, অশিক্ষা থেকে মুক্তি, মুক্তচিন্তার অধিকার— সে সবও আজ হারিয়ে যাচ্ছে। মনুবাদী মানসিকতা— ‘রান্নাঘরই মেয়েদের আসল স্থান’ অথবা ‘বিবাহ ও সন্তান উৎপাদনেই নারী জীবনের সার্থকতা’ ধরনের চিন্তা ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে সমাজে। এমনকি শিক্ষিত মানুষও এর শিকার হয়ে পড়ছেন। রক্ষণশীল ডানপন্থী কিংবা তথাকথিত উদার, ধর্মনিরপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল দলের মহিলা সদস্য বা নেত্রীরা কেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে জবাবদিহি করছেন না? কেন সরবে প্রতিবাদ করছেন না?
শুধু কি নারী-পুরুষে অসাম্য বেড়েছে? ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব-এর মতে, ভারতে ধনী-দরিদ্রের অসাম্য বেড়েছে অভূতপূর্ব ভাবে। ব্রিটিশ আমলের চেয়েও অসাম্য বেশি এখন। স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রভাব পড়েছে নারী-পুরুষের মধ্যেও। দেশে যে-হেতু প্লুটোক্র্যাসির মতো পরিস্থিতি উপস্থিত হয়েছে এবং সেই কারণে সক্ষম পুরুষই তাঁর নিজের প্রয়োজনের উপাদান সংগ্রহ করতে পারছেন না, সেখানে নারী যে তাঁর চাহিদা পূরণের অনেক পিছনেই থাকবে, সেটা সহজবোধ্য। সাক্ষরতার হারে, অর্থনৈতিক লিঙ্গসাম্যতায় ভারতে নারী অনেক পিছিয়ে। শ্রম আয়ের ৮২ শতাংশই পুরুষের দখলে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ‘নাম কা ওয়াস্তে’ অধিকার হয়তো পাওয়া গেছে, কিন্তু সব ক্ষেত্রে নয়। এর থেকে বেরিয়ে আসার পথ কী?
শহুরে শিক্ষিত, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী মহিলা, যাঁরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী, কেন সক্রিয় ভাবে এগিয়ে আসছেন না! সংসদে জনসংখ্যার পঞ্চাশ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য কেন মাত্র ১৩.৬ শতাংশ নারীদের মুখ দেখা যাবে? কেন মহিলাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আরও এক জন রামমোহন কিংবা বিদ্যাসাগরের আবির্ভাবের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে? কেন মহিলাদের মধ্যে থেকেই জোরদার আওয়াজ উঠে আসবে না? দুর্ভাগ্যের বিষয়, সমাজমাধ্যমে মেয়েদের পোশাক বা ভিন্ন ধর্মের নারী-পুরুষের বিয়ে নিয়ে যত চর্চা হয়, মেয়েদের অধিকার নিয়ে তার দশ শতাংশও হয় না। এর জন্য যুক্তিবাদী, আধুনিক প্রকৃত শিক্ষা দরকার। প্রশ্ন করতে হবে, অধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। ভিড়ের মধ্যে মুখ লুকিয়ে রেখে কোনও মহৎ কাজ করা যায় না। এগিয়ে এসে আওয়াজ তুলতে হবে, যে কোনও রকমের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে, কষ্ট স্বীকার করতে হবে, তবেই এক দিন লক্ষ্যপূরণ হবে।
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
হতাশা কেন
সোনালী দত্তের ‘মেয়েদের লড়াই কঠিন হচ্ছে’ প্রবন্ধে মেয়েদের নিয়ে একটি হতাশাব্যঞ্জক চিত্র ফুটে উঠেছে। সত্যিই মেয়েদের উপর অনেক বৈষম্যের ভার আছে, গার্হস্থ হিংসা আছে, কিন্তু এটাই শেষ কথা নয়। এখন শিক্ষা ক্ষেত্রে বহু মেয়ে আসছেন। শুধু মধ্যবিত্ত, বা বিত্তশালী পরিবারের মেয়েরা নন, সমাজের নিম্নতম স্তর থেকেও মেয়েরা লেখাপড়া শিখতে আসছেন। মা পরিচারিকার কাজ করেন, বাবা দিনমজুর— এমন পরিবারের মেয়েরাও শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পেরে স্নাতকোত্তর পাঠও নিচ্ছেন। এটা কিন্তু বর্তমান সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে বিরাট উন্নয়ন। সরকারি, বেসরকারি চাকরিতে মেয়েদের যোগদান উল্লেখযোগ্য। অবশ্য যখন কর্মসংস্থানে মন্দা চলে, তখন ছেলে, মেয়ে— উভয়কেই ভুগতে হয়। সেটি অন্য প্রসঙ্গ।
গবেষণা, মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চা, চিকিৎসা বিদ্যা— সব ক্ষেত্রেই মেয়েদের সাফল্য লক্ষণীয়। আগে মেয়ে মানেই সে আর্টস পড়বে, এমন ধারণা করা হত। কিন্তু এখন বিজ্ঞান, কলা— সব বিষয়েই মেয়েরা পারদর্শিতা দেখাচ্ছেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি স্বয়ং এক জন জনজাতি গোষ্ঠীর মহিলা, এর পরেও কি বলা যায় মেয়েরা পিছিয়ে আছেন? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমাজকর্মী মেধা পাটকর, সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর, ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী, আরও কত শত মেয়ে সমাজের মুখ উজ্জ্বল করছেন প্রতিনিয়ত। রাজনীতি, অর্থনীতি, ক্রীড়া জগৎ, বিনোদন জগৎ, আইনের ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন নারী। গ্রামে মেয়েরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ করে, হাঁস-মুরগি পালন করে উপার্জনের পথ খুঁজে নিয়েছেন।
তবে মেয়েদের নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে। আগে ধর্ষণ হলে ধর্ষিতা মেয়েটি প্রতিবাদ করতেন না, এখন কিন্তু তিনি থানায় অভিযোগ জানান, দোষীর শাস্তির ব্যবস্থা করেন। মেয়েদের মেরুদণ্ড শক্ত হচ্ছে। এখন সমাজে ‘সিঙ্গল মাদার’-এর ধারণা চালু হয়েছে। সন্তানের ক্ষেত্রে অভিভাবক হিসাবে মা-ও বাবার সমান গুরুত্ব পাচ্ছেন। মেয়েরা বিয়ের পরেও নিজের বিবাহ-পূর্ববর্তী পদবি ব্যবহার করতে পারেন। মেয়েরা শুধু চাকরি নয়, নিজেরা ব্যবসাও করছেন, অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। তবে প্রবন্ধকারের সঙ্গে সহমত— নারী প্রগতি এখনও অনেক বাকি আছে। সেগুলি করায়ত্ত করতে হবে। হতাশ না হয়ে, আরও কী করে নারীদের উন্নতি করা যায়, সেই কথাটি ভাবতে হবে।
সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া
শুধু লড়াই
সোনালী দত্তের প্রবন্ধটি পড়লাম। এ দেশের নারীরা অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে যতই স্বাবলম্বী হোন না কেন, পুরুষের সমান অধিকার অর্জন ও উপভোগ থেকে আজও তাঁরা অনেকটাই বঞ্চিত। কারণ, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষিকাজে সমান অধিকারকে মেনে নেওয়ার সুস্থ চেতনা আজও এ দেশের পুরুষরা অর্জন করতে পারেননি বা করতে চাননি। এ সমাজে পুরুষের ধারণা হল, সংসারে তাঁরাই সর্বময় কর্তা, আর নারীরা তাঁদের ভোগপণ্য। নারীর প্রধান দায়িত্ব হল, সংসারের সমস্ত কাজ করে স্বামীর সেবা করা, তাঁদের আজ্ঞা পালন করা এবং সন্তান উৎপাদন ও তার দেখভাল করা। মজার ব্যাপার হল, কোনও সংসারে বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী সহমত হয়ে যদি সন্তানের জন্ম না দিতে চান, কিংবা বাল্যবিবাহের কারণে অথবা পুরুষ বা নারীর কোনও শারীরিক অসুস্থতা বা অক্ষমতার কারণে নারী যদি সন্তানের জন্ম দিতে না পারেন, তা হলে তাঁর নিজের সংসারে এবং সমাজে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার লড়াইটা খুব কঠিন হয়ে ওঠে। যখন তাঁরা কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে যান, তখন তাঁদের সঙ্কুচিত হয়ে থাকতে হয়, পাছে কেউ জিজ্ঞাসা করেন “তোমার ছেলেপুলে ক’টা?” সদুত্তর দিতে গেলে তাঁরা মুখের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকেন বা ব্যঙ্গের হাসি হাসেন, তা চরম অপমানের শামিল হয়ে ওঠে। অথচ, পাশে দাঁড়ানো স্বামীকে এই ব্যাপারে কেউ কিছুই বলেন না। কারণ, তাঁদের ধারণা, সন্তান জন্মনোর দায় একমাত্র নারীরই, পুরুষের নয়। সন্তান লাভই হল এক জন নারীর পূর্ণ পরিচয়। এ দেশের সরকারও মেয়েদের প্ৰজনন-স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে চির-উদাসীন। আর এই উদাসীনতার ফলে অকালমাতৃত্ব, প্ৰসূতির মৃত্যু, যৌনরোগ, ঋতুকালীন সমস্যা, ধর্ষণ, দৈহিক নির্যাতন, অপুষ্টিজনিত রোগ— প্রভৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকা মেয়েদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নব-নির্বাচিত ৭৪ জন নারী সাংসদ কি পারবেন দেশের বাকি মহিলাদের এই ভাবে লড়াই করে বেঁচে থাকার হাত থেকে মুক্তি দিতে!
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
অধরা ইলিশ
এখন ইলিশের দিন। বাঙালির ঘরে ঘরে ইলিশচর্চা। অথচ দাম যথারীতি ঊর্ধ্বমুখী। ফলে সাধারণ রোজগেরে মধ্যবিত্তের পাতে ইলিশ পড়ার সম্ভাবনা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে উঠছে। অন্য দিকে, ছোট মাপের ইলিশ বাজারে বিক্রি হওয়ায় বাঙালির মনে আশঙ্কা জাগছে, অদূর ভবিষ্যতে ইলিশ কি তবে স্বপ্নই থেকে যাবে! নির্দিষ্ট সাইজ়ের কম ইলিশ বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ। এ ব্যাপারে টাস্ক ফোর্স সক্রিয় হওয়া বাঞ্ছনীয়। একই সঙ্গে জানাই, ছোট ফাঁদের জাল বাজেয়াপ্ত না করা হলে ইলিশের দিন বাঙালিজীবনে আর হয়তো উৎসব হয়ে আসবে না।
অসিত কর্মকার, কলকাতা-৭৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy