মধ্যরাতে পেটে প্রচণ্ড চাপ। এই অসহ্য অবস্থাতেও বাহ্যে যাওয়ার অনুমতি নেই। হাতজোড় করে বন্দি বলেন, আমি যে আর পারছি না। কঠোর চোখে জেলার জানিয়ে দেন, ‘‘রাতে মলত্যাগের হুকুম নেই।’’
স্বাধীনতা সংগ্রামী মদনমোহন ভৌমিক তখন বন্দি সেলুলার জেলে। বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত। সেলুলার জেলের অমানুষিক যন্ত্রণার কথা লিখে গিয়েছেন তিনি ‘আন্দামানের দশ বছর’ বইতে। লিখছেন, ‘‘... প্রথমদিন খাবার কিছু পাইলাম না। পর দিবস সন্ধ্যাকালে একজনকে ভগ্নকণ্ঠে জানাইলাম যে, আমি খাবার কিছুই পাই নাই। কাহাকে ডাকিয়া একবিন্দু জলও পাওয়ার উপায় নাই। আমার শয্যার একপাশ হইতে অন্যপাশে ফিরিবার শক্তিটুকুও নাই। ক্ষুধায় এই অস্থির অবস্থা দেখিয়া একবাটি সাগু আসিল। রাত্রিটা আবার পেটের নিচে বালিশ চাপা দিয়া কাটাইলাম।’’
স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বন্দিজীবনের এই ভয়ঙ্কর কাহিনি আমরা মনেই রাখিনি। মনে রাখিনি ওই বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলাতেই অভিযুক্ত ত্রৈলোক্য চক্রবর্তীর কথা। যিনি লিখেছিলেন, ‘‘পৃথিবীতে সম্ভবত আমিই রাজনৈতিক আন্দোলন করার কারণে সর্বাধিক সময় জেলখানায় অতিবাহিত করেছি। আমি টানা ৩০ বছর জেলখানায় কাটিয়েছি...’’ সেলুলার জেলে তাঁকে সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোই করতে দেওয়া হত। খাওয়ার অযোগ্য খাবার প্রতি দিন খেতে হত। সন্ধ্যার পর অন্ধকার খোপে থাকতে হত। সেই খোপেই প্রস্রাব করতে হত। সে জন্য মাত্র একটি পাত্রই দেওয়া হত। এমন অবর্ণনীয় শারীরিক কষ্টেই অনেক বন্দির মৃত্যু হত। সে সময় গড়ে প্রতি মাসে তিন জন কয়েদি আত্মহত্যা করতেন।
সুদীপ বসু
কলকাতা-১১৮
প্রবল তাড়া
পাশের বাড়ির পাঁচ বছরের ছেলের কয়েক দিন হল জ্বর কমেনি। সামনেই এক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। নিয়ে গেলাম। ইদের ছুটির দিন, আউটডোর বন্ধ। ইমার্জেন্সিতে গিয়ে অনুরোধ করলাম বাচ্চাটিকে দেখবার জন্য। সিনিয়র ডাক্তারবাবু দেখে প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়ে বললেন, তিনতলায় চলে যান ওখানে শিশুদের ডাক্তারবাবু আছেন। গেলাম। ডাক্তারবাবুর বয়স কম। তিনি তখন ইনডোরে ভর্তি থাকা শিশুদের দেখছেন।
লক্ষ করলাম, ডাক্তারবাবুর যেন খুব তাড়া। কোলে বাচ্চা নিয়ে বেডে থাকা মায়েদের সঙ্গে কথাবার্তায় মাঝে মাঝে ঝাঁজ বেরিয়ে পড়ছে। হঠাৎ গলা থেকে স্টেথোস্কোপটা সিস্টারের দিকে ছুড়ে দিয়ে বললেন, ‘‘চললাম।’’ সিস্টার চিৎকার করে বললেন, ‘‘ডাক্তারবাবু, একটা বাচ্চা রয়েছে, একটু দেখে যান।’’ আড়চোখে ডাক্তারবাবু আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘এই ভাবে দেখা যাবে না।’’ আমি ছুটে গিয়ে বললাম, ‘‘ডাক্তারবাবু, আমি নিজে থেকে এখানে আসিনি। ইমার্জেন্সি থেকে সিনিয়র ডাক্তারবাবু আপনার কাছে পেশেন্টকে পাঠিয়েছেন। একটু যদি দেখে দেন।’’ ডাক্তারবাবু রূঢ় ভাবে বললেন, ‘‘কে পাঠালেন এখানে? পাঠিয়ে দিলেই হল? আমি এ ভাবে দেখতে পারব না।’’ অনেক অনুরোধ করলাম, কিন্তু তিনি নারাজ। তিরের মতো ছুটে লিফট ধরলেন।
আমি কিছু ক্ষণ পর, পাশেই একটি ওষুধের দোকানে ফোন করে জানলাম, ওখানে এক শিশু-চিকিৎসক রোগী দেখছেন। আমি ছেলে এবং মা’কে ওখানে পৌঁছে দিয়ে সব ঠিকঠাক করে, একটি জরুরি কাজে বেরিয়ে গেলাম।
পরে জানলাম, ছেলের মা চেম্বারে ঢুকেই চমকে উঠলেন। চমকে উঠলেন ডাক্তারবাবুও। কিছুটা বিব্রত হয়ে ডাক্তারবাবু বললেন, ‘‘আসলে তখন ঠিক করে বাচ্চাটাকে দেখা হয়নি।’’ বলেই বাচ্চাটিকে যত্নসহকারে দেখে ওষুধ দিলেন।
হাসপাতালে ডাক্তারবাবুর আচরণে তেমন আহত হইনি। মনে হয়েছিল, তাড়া থাকতেই পারে। যখন জানলাম, এত তাড়া কেবল প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখে অধিক রোজগারের জন্য, মনে হল এই সব ডাক্তারবাবুর জন্যই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে জনতার মধ্যে।
কিংকর অধিকারী
বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
কিসের সুপার?
আমার এক আত্মীয়া রাতে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ি ফ্রেজারগঞ্জে। স্থানীয় ডাক্তার দেখলেন, কিন্তু অবস্থার উন্নতি হওয়া তো দূরের কথা, সারা শরীরে ফোসকা পড়ে গেল। কাছাকাছি হাসপাতাল কাকদ্বীপে। সেখানে কয়েক দিন কাটার পর রেফার করা হল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে ‘বেড নেই’, তাই ভর্তি নেওয়া হবে না। আবার দৌড় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। এখানেও ‘বেড নেই’। অগত্যা খুঁজেপেতে পার্ক সার্কাস এলাকার এক নার্সিং হোমে ভর্তি করাতে বাধ্য হল তাঁর পরিবার। যে হেতু কোনও বিশেষ চিকিৎসকের পরামর্শে উনি ভর্তি হননি, তাই সাধারণ চিকিৎসাটুকুও জোটেনি। কিন্তু ২৪ ঘণ্টাতেই সেই নার্সিং হোমে বিল উঠল প্রায় ২৫০০০ টাকা। এই রাজ্যে বসবাস করে কি এই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পাওয়া যাবে না? তা হলে সুপার তকমা দেওয়া হাসপাতালগুলো কাদের কাজে লাগবে?
সুজিত কুমার মাজি
বাজিতপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
তখনই দেখুন
একটি নির্দিষ্ট সরকারি হাসপাতালে, যখনই কোনও ভয়ানক অসুস্থ রোগীকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখনই রোগীর আত্মীয়কে বলা হয়, রেফার করে দিচ্ছি। গত বছর মার্চে আমার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে গিয়েছিলাম। একই কথা বলা হল। বহু কাকুতি-মিনতির পর, অনেক দেরিতে চিকিৎসা শুরু হল। অক্সিজেন সিলিন্ডার আমি নিজেই লাগিয়ে নিলাম। এক জন ম্যাডাম বসে ছিলেন। উঠে এসে সাহায্য করলেন না। পরে ডাক্তারবাবু ইসিজি ও এক্স-রে লিখে দিলেন। ইসিজি বিভাগের লোক দেরি করে এলেন। এর পর ডাক্তারবাবু দু’টি ইঞ্জেকশন দিলেন, ছেলে মৃতপ্রায় হয়ে থাকল। ডাক্তারবাবু বুকটা মাসাজ করতে থাকলে, এক বার জ্ঞান এল, তার পরেই মারা গেল। আমার বিনীত অনুরোধ, হাসপাতালে রোগী গেলে যেন চিকিৎসা করা হয়।
বৃন্দাবন ভট্টাচার্য
বালি, হাওড়া
মিষ্টি অভিজ্ঞতা
বছর চারেক আগের ঘটনা। আমার স্ত্রী তখন কিডনির রোগে শয্যাশায়ী। তাঁর চিকিৎসায় প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছে। আমি তখন রাজ্য সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের অাধিকারিক পদ থেকে অবসর নিয়েছি। একমাত্র ভরসা ছিল ‘হেলথ স্কিম’। স্ত্রীর তিনটি মেডিক্যাল বিল ‘রিইমবার্সমেন্ট’-এর জন্য ‘নবান্ন’য় আমার নিজের দফতরে বহু দিন ধরে আটকে ছিল। যিনি সই না করলে অর্ডার বেরোবে না, তাঁকে ফোনে বহু বার বহু অনুরোধ করেও ফল হল না। তাঁর ভোজনপ্রীতি সর্বজনবিদিত ছিল। আমি এক দিন নবান্নে গিয়ে তাঁকে টোপ দিলাম, আমার ফাইলটা ছেড়ে দিন, দামি মিষ্টি খাওয়াব। তিনি বললেন, দেখবেন মিষ্টিটা যেন ড্রাই হয়। হয় কাজু বরফি, নয় তালশাঁস সন্দেশ, বা ভাল বড় কালাকাঁদ।
পরের দিনই দোকান থেকে আড়াইশো টাকার কালাকাঁদ নিয়ে, নবান্নে পৌঁছলাম প্রায় বিকেল পাঁচটার সময়। গিয়ে দেখি দফতরে বসে অপেক্ষা করছেন। প্যাকেটটা ওঁর হাতে দিতেই মুখে মিষ্টি হাসি ফুটে উঠল, বললেন, ‘‘কী এনেছেন?’’ বললাম। উনি প্রসন্ন মুখে প্যাকেটটি নিয়ে বললেন, আপনার সব ক’টা সই এখনই করে দিচ্ছি, এই সপ্তাহেই আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে। যে ফাইল মাসের পর মাস পড়ে ছিল, হাজার অনুরোধেও নড়েনি, তা এক নিমেষে সই হয়ে গেল। ফিরে আসার সময় উনি ফিসফিস করে বললেন, ‘‘কাজু বরফি আর তালশাঁস সন্দেশের কথাটা মনে রাখবেন।’’ আমি আর ওমুখো হইনি।
তারকনাথ চৌধুরী
কলকাতা-৫৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy