Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: নায়ক লাল ফৌজ

১৯৩৯-এর ১ সেপ্টেম্বর জার্মান ফ্যাসিস্ট বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০০:০৫
Share
Save

সেমন্তী ঘোষের ‘মানুষই মানুষকে বাঁচাল’ (১০-৫) শীর্ষক নিবন্ধে বিষয়টিকে এমন ভাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের বিরুদ্ধে জয়ের প্রধান কুশীলব ছিল ব্রিটিশ ও মার্কিন সেনাবাহিনী। অথচ দুর্ধর্ষ হিটলার বাহিনীকে পরাস্ত করার প্রধান সেনাপতি ছিলেন স্তালিন ও সোভিয়েট লাল ফৌজ।

১৯৩৯-এর ১ সেপ্টেম্বর জার্মান ফ্যাসিস্ট বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। এর ঠিক দু’দিন পরে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ঠিকই। কিন্তু ওই ঘোষণাই সার— যুদ্ধ তারা কোথাও করেনি। পোল্যান্ডকে কোনও রকম সাহায্যও করেনি। পরবর্তী কালে নুরেমবার্গ বিচারের সময় হিটলারের হাইকম্যান্ড অপারেশন ডিপার্টমেন্টের চিফ অব স্টাফ আলফ্রেড ইয়ল সে কথা স্বীকার করে বলেন, যখন তাঁরা মাত্র ২৩ ডিভিশন সেনা নিয়ে পোল্যান্ড অভিযান করেন, তখন ফরাসি সীমান্তে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের একশো ডিভিশন সেনাকে স্রেফ বসিয়ে রাখা হয়েছিল।

এর পর চলতে থাকে হিটলার বাহিনীর জয়যাত্রা। ইউরোপ তাদের হাতের মুঠোয় চলে আসে। ১৯৪১-এর ২১ জুন সোভিয়েট ইউনিয়নে ঢোকে নাৎসি বাহিনী। লাল ফৌজ শুরু করে মরণপণ যুদ্ধ। ১৯৪৪-এর গ্রীষ্মের প্রথম দিকে নাৎসি বাহিনীকে সোভিয়েট সীমান্তের বাইরে ঠেলে বার করে দেয় লাল ফৌজ, পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে তাড়িয়ে নিয়ে চলে তাদের। বস্তুত এই সময় পর্যন্ত ব্রিটিশ-মার্কিন বাহিনী ইউরোপে কোথাও সেনা নামায়নি, প্রতিরোধ-যুদ্ধ দূরের কথা। কারও সাহায্য ছাড়াই লাল ফৌজ ইউরোপকে নাৎসি বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করবে, এমনই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

ঠিকই, এই অবস্থায় ১৯৪৪-এর ৬ জুন ব্রিটিশ-মার্কিন সেনা ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে নামে এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে ফ্যাসিস্টদের পর্যুদস্ত করে। এর পর মিত্রবাহিনী জার্মানি সীমান্তের দিকে প্রায় বিনা বাধায় এগিয়ে যায়। ১৬ ডিসেম্বর নাৎসি বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্রিটিশ- মার্কিন বাহিনীর ওপর। পশ্চিম রণাঙ্গনে আরদেন্স ও উত্তর আলসাসে ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে বিপর্যস্ত হতে থাকে মিত্রবাহিনী।

বিপদ থেকে বাঁচতে ভীত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, স্তালিনকে একটি জরুরি চিঠিতে ভিশ্চুলা রণাঙ্গন বা অন্য কোথাও জার্মান বিরোধী অভিযান চালানোর জন্য অনুরোধ করেন। সাড়া দিয়ে স্তালিন ১২ জানুয়ারি বাল্টিক সাগর থেকে কারপেথিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় জার্মান বাহিনীর বিরুদ্ধে লাল ফৌজের অভিযান শুরু করেন। জার্মান বাহিনী ব্রিটিশ-মার্কিন বাহিনীকে রেহাই দিয়ে পূর্ব রণাঙ্গনে চলে যায় যুদ্ধ করতে। ব্রিটিশ নথিপত্রেই উল্লেখ রয়েছে, ১৯৪৫-এর মার্চে আরদেন্সে নাৎসি বাহিনীর হাতে মার খাওয়া ও লাল ফৌজের সাহায্যে বিপন্মুক্ত হওয়ার পর ব্রিটিশ-মার্কিন বাহিনীকে আর যুদ্ধ করতে হয়নি।

এর পর ২৭ এপ্রিলের মধ্যে লাল ফৌজ পৌঁছে যায় বার্লিনে। তীব্র নাৎসি প্রতিরোধ ভেঙে ২ মে রাইখস্ট্যাগের চূড়ায় উড়িয়ে দেয় লাল নিশান। ফ্যাসিবাদের বিপদ থেকে মুক্ত হয় গোটা দুনিয়ার মানুষ। ৮ মে জার্মান সেনা অফিসাররা সোভিয়েট, আমেরিকা ও ব্রিটেনের সেনাধ্যক্ষদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

বাস্তবিকই এই যুদ্ধ ছিল ‘মাস ওয়র’— জনগণের যুদ্ধ। স্তালিনের আহ্বানে উদ্বুদ্ধ সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েট ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ সেই যুদ্ধের ভয়ানক ভারের প্রধান অংশটাই নিজেদের পিঠ পেতে বহন করেছেন। ইউরোপের অন্য দেশগুলি বিধ্বস্ত হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু এই ভয়ঙ্কর যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সোভিয়েট ইউনিয়নের। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সেনামৃত্যুই শুধু নয়, প্রায় তিন কোটি সোভিয়েট নাগরিক মারা গিয়েছিলেন সেই বিধ্বংসী যুদ্ধে। নিজেদের জীবন অকাতরে বলি দিয়ে মানবসভ্যতাকে হিটলারের ফ্যাসিবাদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন তাঁরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের িবজয় দিবসের স্মৃতিচারণে এই ইতিহাসের উল্লেখ না করা ঠিক হল কি?

শ্রীরূপা বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-৪

উল্লেখ থাক

‘মানুষই মানুষকে বাঁচাল’ নিবন্ধে সেমন্তী ঘোষ লিখছেন, ১৯৪৫-এর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে যুদ্ধের সমাপন ঘনিয়েছিল। সেই সমাপনে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সোভিয়েট রাশিয়ার ভূমিকার কথাও থাকা উচিত ছিল। সোভিয়েট রাষ্ট্রের তৎকালীন কর্ণধার স্তালিনের বিচক্ষণ পরামর্শের ভিত্তিতেই উক্ত দেশের তিন জন সেনানায়ক বার্লিন দখলের উদ্দেশ্যে তিন দিক থেকে এগিয়েছিলেন। তাঁদের মার্শাল জ়ুকভই সফল হয়েছিলেন। কিন্তু এই বিজয়ের পুরো কৃতিত্ব (সুযোগ থাকলেও) আত্মসাৎ করতে চাননি স্তালিন। তাই ৮ মে রাত বারোটায় অনুষ্ঠিত জার্মানির নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের পর্বে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সোভিয়েট রাশিয়ার সেনানায়কবৃন্দ। মার্শাল জ়ুকভই এই সভা পরিচালনা করেন। উল্লেখ্য, চার্চিল কখনও চাননি, স্তালিন আগে বার্লিন দখল করুন।

ইতিহাস তার নিজ গতিতে চলবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ১৯৪৫ সালের মে মাসের ওই জয়ের মুহূর্তকে ‘দ্য ফাইনেস্ট আওয়ার’ বলতেই পারেন। কিন্তু ওই মুহূর্ত তিনি বা আইজ়েনহাওয়ার সৃষ্টি করতে পারেননি। কারণ তাঁদের বাহিনী বার্লিন থেকে তখন অনেক দূরে অবস্থান করছিল। তবুও মিত্রবাহিনীর এক আন্তরিক সদস্য হিসাবে, সমষ্টির প্রতি আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন সে দিনের সোভিয়েট নেতৃত্ব।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট যথার্থই স্তালিনকে এক তারবার্তায় জানিয়েছিলেন, "We fully appreciate the contribution made by the mighty Soviet Union to the cause of Civilization and liberty." এর উত্তরে স্তালিন তাঁর সংক্ষিপ্ত বার্তায় জানালেন, "The joint of the Soviet, U. S. and British Armed Forces against the German invaders which has culminated in the latter's complete rout and defeat, will go down in history as a model military alliance between our peoples."

তবুও এই রাষ্ট্রনায়কের অবদান উল্লেখ করার ক্ষেত্রে কার্পণ্যে ইতিহাস-বিকৃতি হবে না তো?

তপনকুমার সামন্ত

খেজুরি, পূর্ব মেদিনীপুর

কলেজ স্তরেও

রাজ্য শিক্ষা দফতর থেকে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে পড়ুয়াদের, বিশেষত বিদ্যালয় স্তরের ক্লাস ফাইভ থেকে টুয়েলভ অবধি ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও এ রকম পাঠদান করা সম্ভব হলে, উপকার হয়।

সায়ন তালুকদার

কলকাতা-৯০

আয়করে ছাড়

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, চলতি ২০২০-২১ অর্থবর্ষে অযোধ্যায় রামজন্মভূমি মন্দির নির্মাণে অর্থ দান করলে দাতা সেই অর্থে কর-ছাড় পাবেন। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সরকারের কাছে প্রশ্ন: গির্জা, মসজিদ ও বৌদ্ধ মঠ নির্মাণে অর্থ দান করলে ওই একই ধারায় আয়করে ছাড় পাওয়া যাবে কি?

তা ছাড়া এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের দেশও যখন এক অভূতপূর্ব অতিমারির বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াইতে ব্যস্ত, তখন সময়ের দাবি মেনে উপযুক্ত পরিকাঠামো সহ দেশের নানা প্রান্তে নতুন নতুন হাসপাতাল না গড়ে, রামমন্দির নির্মাণের যৌক্তিকতা কোথায়!

কেন্দ্রীয় সরকার বরং ঘোষণা করুন, যাঁরা নতুন হাসপাতাল নির্মাণে অর্থসাহায্য করবেন, তাঁরাই পাবেন অনুদানে আয়কর ছাড়।

সমীর কুমার ঘোষ

কলকাতা-৬৫

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Hitler British America Second World War

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।