‘চরম, অমানবিক অবিবেচনা’ (২২-১০) প্রবন্ধে কল্যাণ রুদ্র যথার্থই বলেছেন, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন যে ভাবনা নিয়ে গড়া হয়েছিল, তা অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী জলাধার নির্মিত হয়নি। তা যদি হত, তা হলেও কি সমস্যার সমাধান হত? বড় নদীবাঁধ, বহুমুখী নদী উপত্যকা পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হয়নি। বিশ্ব জুড়েই তাই বড় নদীবাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠছে। ডিভিসি, ফরাক্কা বা দেশের বিভিন্ন স্থানে এই সব বড় নদীবাঁধ-জলাধার নির্মাণে বন্যা প্রতিরোধ করা যায়নি। বরং নতুন করে বহু স্থান প্লাবিত হয়েছে। বহুমুখী পরিকল্পনায় বনসৃজন-সহ আরও যে সব কাজের কথা ছিল, তার অগ্রগতির মূল্যায়ন প্রয়োজন।
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান সুপারিশ অনুযায়ী বাস্তবায়িত হলেও সমস্যার সমাধান হবে কি না, তা নিয়ে প্রবন্ধকারের মত যথার্থ। ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বা আরামবাগ মাস্টার প্ল্যানের মতো অঞ্চল-ভিত্তিক পরিকল্পনা নয়, সমগ্র নদী অববাহিকা জুড়েই ভূমি ব্যবস্থাপনার দরকার। মুণ্ডেশ্বরী নদী সংস্কারের জন্য এ বার অনেক স্থানে বন্যা ভয়াবহ আকার নেয়নি, অথচ সেই নদীই হুগলির খানাকুলে বিধ্বংসী রূপ নিয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে ২০০০ সাল, বা ১৯৭৮ সালের বন্যার থেকেও এ বার নদীর রোষ ছিল বেশি। সার্বিক নদী সংস্কারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছোট ছোট নদী, খাল দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা। এ দিকে মন না দিলে নানা নামের চমকই থাকবে, কাজের কাজ হবে না।
লেখায় উল্লিখিত উঁচু বাঁধের উপর নির্মিত রেলপথ, সড়কপথ নির্মাণের ঔপনিবেশিক অভ্যাস কিন্তু আজও বহমান। তাই হুগলি জেলার তারকেশ্বর-আরামবাগ রেলপথ সংলগ্ন তারকেশ্বর, পুরশুড়া ব্লকের গ্রামগুলিতে এ বারেও প্লাবনের প্রকোপ ছিল বেশি। চাঁপাডাঙা-আরামবাগ সড়ক চওড়া করতে গিয়ে নিকাশি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই সড়ক সংলগ্ন গ্রামগুলি বিপর্যস্ত হয়েছে। জলাশয়, নিকাশি ব্যবস্থা রক্ষা করেই রেলপথ, সড়ক নির্মাণ দরকার। আরামবাগ-বিষ্ণুপুর নির্মীয়মাণ রেলপথে ভাবাদিঘি বাঁচিয়ে রেল যোগাযোগ গড়ার জন্য গ্রামবাসীরা লড়ে চলেছেন।
প্রবন্ধকার শাখানদীগুলির উৎসমুখে রেগুলেটর নির্মাণ করে বহমান জলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব দিতে গিয়ে কাঁসাই নদীর জল ময়নার দিকে পাঠানোর কথা বলেছেন। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ময়নায় নদীর অতিরিক্ত জল ব্যবহার করে মাছ চাষের কথা ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার হয়েছিল। চাষের জমি মেছোভেড়িতে পরিণত হয়েছে, কিন্তু যা হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি। ময়না-সহ এই জেলার বিভিন্ন ব্লকে খাল দখল, দূষিত হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সেপ্টেম্বরের বন্যার পর দীর্ঘ সময় জল জমে আছে খোদ শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের প্রশাসনিক ভবনের সামনে। উপরন্তু ভূগর্ভস্থ জলের নির্বিচার ব্যবহারে জলস্তর নীচে নেমে যাচ্ছে। বছর দুয়েক আগে এক সমীক্ষায় প্রকাশ, সবং, পিংলা, ময়না ব্লকে ভূগর্ভস্থ জলস্তর উদ্বেগজনক ভাবে কমেছে। পরিবেশ-বাস্তুতন্ত্র রক্ষাকারী পথ না নিলে বন্যা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয়।
মৃন্ময় সেনগুপ্ত, কলকাতা-১৫
বিচ্ছিন্ন চেষ্টা
কল্যাণ রুদ্র পশ্চিমবঙ্গের নদীজনিত সমস্যার বস্তুনিষ্ঠ আলোচনার শেষে সমাধানের দায় কেন্দ্রীয় সরকারের উপর চাপিয়ে সব দায়িত্ব ঝেড়ে ফেললেন। হতাশার এই উপসংহারে পশ্চিমবঙ্গের আদৌ কোনও উপকার হল না। অথচ, আলোচক যথার্থ দেখিয়েছেন যে, ছোটনাগপুর থেকে বর্ষার জলবাহিত ও হিমালয় থেকে বরফগলা জলবাহিত নদীগুলো ভাসিয়ে দিয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গকে। যত পলি তা-ও জমে পশ্চিমবঙ্গের নদীতে। স্বাধীনতার পর তাই রাজনীতির দায়িত্ব ছিল এই প্লাবন ও জমা পলির নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা তৈরি করা। একদা বাংলার ‘জল সমৃদ্ধি’-র গুরুত্ব রাজনীতিনিরপেক্ষ ভাবে পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞ রূপকারদের বোঝা উচিত ছিল। বাংলার গরিব চাষির কথা এখন বাসি হয়ে ফলছে।
ডিভিসি থেকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হঠকারী, চোরের উপর রাগ করে মাটিতে ভাত খাওয়ার মতো। এতে প্রবন্ধকারের পরামর্শ— ‘সর্বোপরি আবহাওয়া দফতর, ডিভিসি এবং রাজ্য সেচ দফতরের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমেই বানভাসিদের দুর্দশা লাঘব করা সম্ভব’— কার্যকর করার মূল চাবিকাঠিটি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হল। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত এত জন সাংসদই বা কী করছেন? ফি-বছর বন্যায় তাঁদের কাজের কী হিসাব দিচ্ছেন, ঊহ্য থেকে যাচ্ছে।
প্রথমে দরকার সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমন্বয় সাধন। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার সঙ্গে, এবং পূর্ব দিকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে ঐক্য ও সমন্বয় জরুরি। অর্থাৎ, ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, চুক্তি ব্যবস্থাও এই আলোচনায় আসবে। সমস্যা বহুমুখী, তাই সব মুখ এক জায়গায় এনে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। বিচ্ছিন্ন ভাবে আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে না। এ ব্যাপারে নীরব থেকে প্রবন্ধকার দায়িত্ব এড়িয়ে গেলেন।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
সোমেনের পুজো
প্রচারমাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রাসঙ্গিক হওয়া কোনও দিনই পছন্দ করিনি। কিন্তু কিছুটা অযাচিত ভাবেই এই পত্রিকায় প্রকাশিত “সোমেনের পুজোয় ‘কালির ছিটে’...” (২-১১) প্রতিবেদনের অংশ হয়ে পড়ায় কিছু কথা জানানো আবশ্যক মনে করছি।
প্রথমত, এই স্বনামধন্য পুজো এবং এই পুজোর প্রাণপুরুষ সোমেন মিত্রের সাংগঠনিক ঐতিহ্যকে শুধুমাত্র ক্ষমতা দখলের জন্য যাঁরা কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছেন, তাঁদের আগামী দিনে হতাশা ছাড়া আর কিছু উপভোগ্য থাকবে না, অন্তত আমি যত দিন এ পুজোর দায়িত্বে আছি। এই সংগঠনের সদস্যরা জানেন যে, এখানে কিছু অশুভ আঁতাঁতকারী এই সংগঠনের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ নিয়ে এই পুজোর ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় মেতেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে সংগঠনের গচ্ছিত সম্পদ তছরুপেরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আমরা কেউ দেশের বিচার ব্যবস্থার ঊর্ধ্বে নই। আইন আইনের পথে চলবে। বিচারের আগেই কোনও অজ্ঞাত প্ররোচনায় কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি ঘোষণা করা মানে প্রকারান্তরে আদালত অবমাননা করা এবং আইন নিজের হাতে নেওয়া, যাতে সভ্য সমাজের অনুমোদন থাকতে পারে না।
এই মুহূর্তে সংগঠনের যে পদে আমি রয়েছি তা সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত। তাঁরা আমার প্রতি যে বিশ্বাস রেখে আমায় দায়িত্ব দিয়েছেন, আমি শেষ পর্যন্ত তার মর্যাদা রাখব। সোমেন মিত্রের হাতে গড়া আমহার্স্ট স্ট্রিট কালী পূজা কোনও অশুভ শক্তির নিয়ন্ত্রণে যেতে দেব না।
শিখা মিত্র,চেয়ারপার্সন, আমহার্স্ট স্ট্রিট, সাধারণ শ্রী শ্রী কালী পূজা কমিটি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy