আমাদের দৈনন্দিন জীবন তো বটেই, বহু জরুরি পরিষেবার সঙ্গেও আমাদের মোবাইল নম্বর এখন যুক্ত। যেমন, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, গ্যাসের বই, রেশন কার্ড ইত্যাদি। ফলে মোবাইল ছাড়া আমাদের জীবন এখন চলে কি?
এক সময় প্রয়োজন অনুযায়ী স্বল্প মূল্যে বহন করা যেত মোবাইল ব্যবহারের খরচ। কিন্তু এখন এই ডেটা ব্যবহারের চমকের যুগে একের পর এক কোম্পানি পাল্লা দিয়ে মোবাইল ব্যবহারের খরচ দিন দিন বাড়িয়েই চলেছে। সীমাহীন কল, সীমাহীন ডেটার লোভ দেখিয়ে কোম্পানিগুলি তাদের ব্যবসার ভার চাপিয়ে চলেছে মানুষের উপর। এই দুর্মূল্যের যুগে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের খরচ জোগাতেই মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে রিচার্জের খরচ বৃদ্ধির ফলে বাড়তি বোঝা চাপায় দেশের অসংখ্য দরিদ্র মানুষ চালাবেন কী করে? মোবাইল এখন আমাদের রাখতে হয় বলেই বাড়তি খরচ চাপানোর সুযোগ পাচ্ছে সংস্থাগুলি। আর অদ্ভুত ভাবে সরকারও এই বিষয়ে নির্বিকার। মোবাইলের নম্বর যখন সরকারি সমস্ত তথ্যের জন্য বাধ্যতামূলক, তখন সাধারণ মানুষের জন্য সরকারি ভাবে মোবাইলের ন্যূনতম খরচের জন্য ভর্তুকির ব্যবস্থা করুক রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার। আর কত দিন এ ভাবে মানুষকে ভুগতে হবে?
পার্থজিৎ বণিক, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
পরোক্ষে শাস্তি?
সম্প্রতি তিনটি টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা তাদের রিচার্জের টাকা বৃদ্ধি করল। কেন্দ্রীয় সরকার দিনের পর দিন গ্যাস থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্যের দাম যে ভাবে বাড়িয়ে চলেছে, তাতে সাধারণ মানুষের ক্রমশ বেঁচে থাকাই দায় হয়ে উঠছে। এর মাঝে মোবাইল রিচার্জের টাকা বাড়ায় মধ্যবিত্তদের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেল। বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলেও বাজারে এক সময় সরকারি সংস্থা বিএসএনএল ছিল। কিন্তু খোদ সরকারেরই অবহেলায় আজ তার সঙ্গিন অবস্থা। এ বারের ভোটে মানুষ কেন্দ্রের শাসক দলের সঙ্গে থেকে ৪০০ আসনের লক্ষ্য পার করেনি বলেই কি তার শাস্তি এ বার মানুষকে দিচ্ছে সরকার?
সুদীপ্ত দে, কলকাতা-১০২
চাপ বাড়ল
গত ৩ জুলাই থেকে দেশের তিনটি মোবাইল সংস্থাই তাদের রিচার্জ মাসুল যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করেছে। সমাজমাধ্যমে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচনায় প্রসঙ্গটি সমালোচিত হলেও সরকার, নেতা, মন্ত্রীরা এর বিরোধিতা করেননি। বর্তমানে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ইত্যাদির পাশাপাশি এখন আমাদের জীবন-জীবিকার অন্যতম চালিকাশক্তি এই মোবাইল। আবার বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক মানুষকে মোবাইল ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়েছে। যেমন, আধার কার্ড, ব্যাঙ্কের পাসবই, রেশন কার্ড, বিভিন্ন প্রকার বিমা, জমি-বাড়ি বিক্রি ইত্যাদি।
দশ বছর আগে প্রি-পেড মোবাইল ব্যবহারের খরচ যেখানে মাসিক ৫০ টাকা ছিল, বর্তমানে সেটি মাসিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হয়েছে। ওই পরিমাণ টাকায় পূর্বে ৩০ দিনের ভ্যালিডিটি পাওয়া যেত, বর্তমানে মেলে ২৮ দিন। অর্থাৎ, বারো বারের বদলে মানুষকে এখন তেরো বার রিচার্জ করতে হয় বার্ষিক। ফলে, বাৎসরিক খরচ ন্যূনতম ছোট মোবাইলের ক্ষেত্রে ১৯৯x১৩= ২৫৮৭ টাকা। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করলে বাৎসরিক ন্যূনতম খরচ ২৯৯x১৩= ৩৮৮৭ টাকা। প্রয়োজন থাকুক আর না থাকুক, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য এই টাকাটি মানুষকে খরচ করতেই হয়। দেশে বহু প্রবীণ নাগরিক আছেন, যাঁদের আর্থিক অসঙ্গতির কারণে মোবাইলের এই বড় অঙ্কের খরচ বহন করা সম্ভব না হলেও সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজনে তাঁরা মোবাইল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। সেই সঙ্গে আরও উল্লেখ করা যায় যে, বর্তমানে একটি পরিবারে কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি মোবাইল রয়েছে। কারণ, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা এবং পরিবারের প্রধানের কাজের প্রয়োজনে মোবাইল অত্যাবশ্যক বস্তুতে পরিণত হয়েছে। ফলে, সব মিলিয়ে ওই পরিবারের মোবাইলের বাৎসরিক খরচ উক্ত খরচের দুই বা তিনগুণ।
দেশের তথা রাজ্যের সাংসদ, বিধায়ক, নেতা, মন্ত্রীর কোটি কোটি টাকার ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকলেও জনগণের করের টাকায় তাঁদের মোবাইলের, যাতায়াতের খরচ বহন করা হয়, তাঁদের বার্ধক্যকালীন পেনশন দেওয়া হয়, বাসস্থানের ভাড়া গোনা হয়। অথচ, সাধারণ জনগণ, যাঁরা কঠোর পরিশ্রম করে সামান্য অর্থ রোজগার করেন, তাঁদের এক প্রকার শোষণই করা হচ্ছে মোবাইল রিচার্জের মাধ্যমে। কোম্পানিগুলি যেমন তাদের লভ্যাংশ বাড়ানোর লক্ষ্যে মোবাইল রিচার্জের মাসুল বাড়াচ্ছে, তেমনই সরকারও এই টাকার ১৮ শতাংশ জিএসটি বাবদ বিপুল রোজগার করছে। সেই কারণেই কি তারা এই খরচ বৃদ্ধিতে সম্পূর্ণ নীরব?
১৫ থেকে ২০ বছর আগেও মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যে সব খরচ অপ্রাসঙ্গিক ছিল, বর্তমানে সেগুলিই প্রাসঙ্গিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এখন এমনই যে মানুষ এক দিন না-খেয়েও কাটিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু এক দিন মোবাইল ফোনের সংযোগ না থাকলে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। তাই সরকারের কাছে আবেদন, প্রতিটি পরিবারে একটি মোবাইল নম্বর নিঃশুল্ক করা হোক। যাতে ওই পরিবারের সামর্থ্য না থাকলেও আধার কার্ড সম্পর্কিত তথ্য, রেশন সম্পর্কিত তথ্য ও অন্যান্য সরকারি সুবিধাগুলি তাঁরা পেতে পারেন।
প্রবীর আদক পূর্বকোলা, পূর্ব মেদিনীপুর
অপব্যয় বন্ধ
‘একটি ডিমই তো’ (১৯-৭) সম্পাদকীয়ের বিষয়বস্তু যথার্থ এবং সময়োপযোগী। প্রথম শ্রেণির শিশু থেকে অষ্টম শ্রেণির কিশোর-কিশোরীদের খাদ্যতালিকায় যদি ডাল-ভাত ও আনাজ-সহ একটা ডিম দিতে হয়, তার খরচ বর্তমানে রান্নার খরচ, চালের ভর্তুকি-সহ পড়ে মাথাপিছু ন্যূনতম ১৫-২০ টাকা। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যবিধি সম্মত রান্নাঘরের ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থায় রাজ্যের প্রায় চল্লিশ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে পুষ্টিকর প্রোটিনযুক্ত খাদ্য দিতে হলে কেন্দ্রের অনুদান বাদে গড়ে প্রতি শিক্ষার্থী পিছু আরও ১০-১৫ টাকা দিতে হবে।
যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীর বিদ্যালয়ের কাছেই বাসস্থান, তাদের সবুজসাথী প্রকল্পে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে সাইকেল প্রদান বা সচ্ছল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের দশ হাজার টাকার ট্যাব বা মোবাইল ফোন দেওয়া সরকারি তহবিলের অপচয় নয় কি? তা ছাড়া, ওই ট্যাব বা মোবাইল হাতে পেয়ে নেট সংযোগের মাধ্যমে অপরিণত বয়সের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাচর্চার বদলে কুরুচিকর বিনোদনের প্রতি আসক্ত হতে পারে। তাই এই তুলনায় কম প্রয়োজনীয় খরচগুলি সঙ্কোচন করে মিড-ডে মিলের ভর্তুকি, বিদ্যালয়গুলিতে স্বাস্থ্যসম্মত রান্নার জায়গা এবং উপযুক্ত শৌচালয় নির্মাণের জন্য ব্যয় করতে সরকারকে অনুরোধ করছি।
সুকুমার সরকার, শেওড়াফুলি, হুগলি
অকেজো যন্ত্র
বেশ কিছু দিন আগে রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশনে একটি স্ক্যানার মেশিন বসানো হয়েছে। অথচ, আজ অবধি একটি ব্যাগও সেখানে পরীক্ষা হতে দেখলাম না। সম্ভবত মেশিনটি অকেজো। অন্য কয়েকটি স্টেশনেও এক চিত্র। কাজ না করা মেশিনগুলিতে কাপড় চাপা দিয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন হল, কাজই যদি না করে, তা হলে মেশিনগুলো রেখে জায়গা দখল ও দৃশ্যদূষণ ঘটানোর প্রয়োজন কী?
তৃণা ভৌমিক, কলকাতা-৩৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy