মারিকে ভেভুর্ট।
মারিকে ভেভুর্ট ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর, মাত্র ৪০ বছর বয়সে, সজ্ঞানে মরণকে বরণ করে নিলেন। ২০০৮ সাল থেকেই তাঁর ইচ্ছামৃত্যুর নথি সই করা ছিল, তাঁর আবেদন চিকিৎসক-মণ্ডলীর স্বীকৃতিও পেয়েছিল। ছোটবেলা থেকে অনারোগ্য ব্যাধিতে তাঁর শরীরের মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত ও নিম্নাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত। তবু অদম্য মানসিক শক্তি প্রয়োগ করে তিনি প্রতিবন্ধীদের আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে থাকেন ও অসামান্য কীর্তির স্বাক্ষর রাখেন।
তিনি প্যারাট্রায়াথেলনে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ২০০৬ ও ২০০৭ সালে। ২০১২ প্যারালিম্পিকসে সোনা ও রুপো জেতেন, ২০১৬’য় জেতেন রুপো ও ব্রোঞ্জ। এ ছাড়াও বহু আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পদক জেতেন, কয়েকটি বিশ্বরেকর্ডও করেন। কিন্তু যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছিলেন না বলে ইচ্ছামৃত্যুর রেজিস্ট্রেশন করে রাখেন। তাঁর দেশ বেলজিয়ামে স্বেচ্ছায় নিষ্কৃতি-মৃত্যু বৈধ।
মারিকে বলেছিলেন, তাঁর যন্ত্রণা প্রায় নিরবচ্ছিন্ন এবং কোনও কোনও রাতে মাত্র ১০ মিনিট ঘুমোতে পারতেন, কখনও তাঁর যন্ত্রণা দেখে অন্য লোক মূর্ছিত হয়ে পড়তেন। বলেছিলেন, ইচ্ছামৃত্যুর কাগজগুলো সই করা না থাকলে, এত দিনে আত্মহত্যা করতাম।
আমাদের দেশে শীর্ষ আদালত ২০১৮ সালের মার্চে পরোক্ষ নিষ্কৃতি-মৃত্যুর অধিকারের পক্ষে রায় দেয়, যা মূলত কৃত্রিম শ্বাসগ্রহণ-ব্যবস্থা সরিয়ে দিয়ে বা অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ বন্ধ করার মধ্য দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে মৃত্যুকে তরান্বিত করার প্রক্রিয়া। তবে প্রত্যক্ষ মৃত্যুর অধিকার (অর্থাৎ সরাসরি ওষুধ বা ইঞ্জেকশন প্রয়োগ করে) দেয়নি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় পাই, আমাদের দেশে অনারোগ্য রোগের শিকার ১৬ লক্ষ মানুষ। এঁদের মধ্যে অন্তত ১০ লক্ষের দেহে তীব্র যন্ত্রণা। মারিকে-র মতো প্রথিতযশা মহিলার স্বেচ্ছা-নিষ্কৃতিমৃত্যুর ঘটনাটি কি তাঁদের কাছে এক মহামুক্তির বার্তা এনে দেবে?
পৃথ্বীশ মজুমদার
কোন্নগর, হুগলি
মন্দার কারণ
বর্তমানে ভারতের আর্থিক মন্দার আসল কারণটি লুকিয়ে আছে ১৯৯১ সালে গৃহীত তথাকথিত উদার অর্থনীতির মধ্যে, যার অন্যতম বিষয় ছিল শ্রম-সংস্কার, অর্থাৎ হায়ার অ্যান্ড ফায়ার নীতি। স্থায়ী পদের বিলোপ ঘটিয়ে অস্থায়ী বা চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ ধীরে ধীরে বাজারে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্যটিকে নষ্ট করতে করতে এত দিনে একেবারে শেষ করে দিয়েছে। অথচ অর্থনীতির এক সাধারণ ছাত্র হিসেবে ষাটের দশকে শিখেছিলাম, ভোক্তার পরিমাণ এতটা কমানো যাবে না, যাতে চাহিদার পরিমাণ জোগানের তুলনায় মুখ থুবড়ে পড়ে। একটি উদাহরণ দিই। ১৯৮১ সালে আমি যখন একটি সর্বভারতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিই, সেখানে তখন ৪০০ জনের মতো স্থায়ী কর্মী ছিলেন। ২০০৭ সালে যখন অবসর নিই, তখন উদার অর্থনীতির কল্যাণে স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ১৫০ মতো, আর বর্তমানে তা ১০০-রও নীচে। এমনই ঘটনা ঘটেছে প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। বলা বাহুল্য, এই স্থায়ী কর্মীরাই ছিলেন বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট এবং দামি ভোগ্যপণ্যের প্রধান ক্রেতা। এঁরাই ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়ে কেনাকাটা করতেন এবং সময়মতো কিস্তিতে সেই ধার শোধ করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে অস্থায়ী কর্মীদের কাছে, ধার নিয়ে কেনার সুযোগ এবং সাহস কোনওটাই নেই। তাই নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আমার বক্তব্য, গরিব মানুষকে সরাসরি অর্থসাহায্যের মাধ্যমে বাজারে চাল-ডাল-তেল-নুনের চাহিদা বাড়তে পারে, কিন্তু বাড়ি গাড়ি ফ্ল্যাট বাইকের চাহিদা বাড়ানো যাবে না। চাহিদা বাড়াতে গেলে, স্থায়ীপদে নিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
পৃথ্বীশ কুমার সানা
কলকাতা-৮৪
নতুন টিকা নয়
‘কিছু প্রশ্ন’ (২০-১০) চিঠিতে লেখক প্রশ্ন তুলেছেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘‘গবেষণা-পদ্ধতির নীতিগত যৌক্তিকতা নিয়ে’’। তুলেছেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথাও। মৈত্রীশ ঘটক ও অমিতাভ গুপ্ত-র ‘দারিদ্র থেকে উত্তরণের মই’ (১৬-১০) শীর্ষক লেখাটির কথা উল্লেখ করে বলেছেন, সেখানে বর্ণিত আছে ‘উৎকোচের বিনিময়ে শিশুদের টিকাদান’।
প্রথমেই বলি, এটা কিন্তু কোনও নতুন টিকাদান নয়। আমাদের দেশে শিশুদের পোলিয়ো রোগের টিকা দেওয়া হয়, বেশ কয়েকটা ডোজ় খাওয়ানো হয়। কিন্তু এখনও অনেক মানুষ বা গোষ্ঠী আছেন, যাঁরা শিশুদের এটি খাওয়াতে চান না। কী করলে তাঁদের অনুপ্রাণিত করা যায় শিশুদের পোলিয়ো এবং অন্যান্য টিকা খাওয়াতে, মূলত এটিই গবেষকরা খুঁজে বার করতে চাইছিলেন।
হু এবং ইউনিসেফ-এর গবেষণা অনুযায়ী, সারা বিশ্বে ২৭ মিলিয়ন শিশু এবং ৪০ লক্ষ গর্ভবতী মহিলা তাঁদের নির্ধারিত ‘ভ্যাকসিন প্যাকেজ’ বা কোর্সটা গ্রহণ করেন না, যার ফলে বহু লোক প্রতি বছর মারা যান নানা অসুখে ভুগে, যা ওই টিকাগুলির মাধ্যমে প্রতিহত করা যেত। টিকাগুলি ভারতে দেওয়া হয় বিনামূল্যে, তা সত্ত্বেও ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে-তে দেখা গিয়েছে, ভারতে ১-২ বছরের মাত্র ৪৪% শিশু এই টিকা নেয়, যেটা রাজস্থানের গ্রাম্য এলাকায় মাত্র ২২% এবং আরও প্রত্যন্ত অঞ্চলে (যেখানে ওঁরা এই গবেষণা চালিয়েছেন) মাত্র ২% শিশুকে টিকার পাঁচ বারের কোর্স নিতে দেখা গিয়েছে। কী করলে এই হারকে বাড়ানো যেতে পারে, যাতে শিশুমৃত্যুর হার কমানো যায়, এটিই ছিল ওঁদের গবেষণার প্রশ্ন।
তাঁরা শুধু ‘উৎকোচ’ দেননি, তাঁরা দেখেছেন বিভিন্ন টিকাদানের হার বাড়াতে গেলে দরকার উপযুক্ত পরিকাঠামো, স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্ব ক্ষণের উপস্থিতি, টিকার গুণগত মান ঠিক রাখা ইত্যাদি। মজার ব্যাপার, টাকাপয়সা দিয়ে এইখানকার মানুষদের উৎসাহিত করা যায়নি। সেই জন্য টাকার বদলে গবেষকরা প্রথম চার দিন প্রত্যেককে মাথাপিছু এক কেজি করে মুসুর ডাল এবং পঞ্চম দিন একটা স্টেনলেস স্টিলের বড় থালা দিয়েছেন। আরও বিশদে জানতে চাইলে ২০১০-এর ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত মূল পেপারটি পড়তে হবে।
সমীর কুমার দত্ত
কলকাতা-৩২
অনাদায়ী ঋণ
ব্যাঙ্কের ভয়ঙ্কর অবস্থার জন্য নোবেলজয়ী অভিজিৎবাবু কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনকে দায়ী করেছেন (‘রাহুমুক্তি বিলগ্নিতে, বার্তা অভিজিতের’, ২৩-১০)। দাওয়াই হিসেবে বলেছেন, ব্যাঙ্কে সরকারি মালিকানা ৫০ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে। ভিজিল্যান্স কমিশনের রক্তচক্ষু সরে গেলে হয়তো ‘রিপোর্টিং’-এ স্বচ্ছতা আসবে, কিন্তু ‘ক্রেডিট কোয়ালিটি’-র কোনও উন্নতি হবে কি? যে-ঋণ প্রকৃত ব্যবসাগত কারণে অনাদায়ী হয়েছে, তা সত্যিই ঠিক সময়ে জানানো দরকার, আর দরকার তার জন্য ব্যবস্থা করা। কিন্তু যে-সব ঋণ প্রথম থেকেই ঠকিয়ে নেওয়া হয়েছে, তার ক্ষেত্রে কি ‘রিপোর্টিং’ করে দিলেই দায় সারা হয়? ভারতের বেশির ভাগ ঋণ (অবশ্যই কোম্পানি ঋণ) জন্মলগ্নেই অনাদায়ী হওয়ার দিকে এগোয়। সে ক্ষেত্রে ঋণদান পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা অনেক বেশি জরুরি। এগুলো সরকারি মালিকানা ৫০ শতাংশের নীচে না নামিয়েও করা যায়।
প্রতিম বয়াল
কলকাতা-১০৯
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy