Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sitaram Yechury

সম্পাদক সমীপেষু: আধুনিক, ব্যতিক্রমীও

সীতারাম ইয়েচুরি মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁদের আপন করে নিতে পারতেন। আর তাঁর এই সহজে আপন করার ক্ষমতা চোখে পড়েছিল ভারতীয় জোট রাজনীতির প্রথম সূত্রধার হরকিষেন সিংহ সুরজিতের।

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:৪৫
Share: Save:

তিনি জলপাইগুড়ি সিপিএম অফিসের কর্মী সালামের বন্ধু। ব্রিটেনের বামপন্থী নেতা জেরেমি করবিনেরও বন্ধু। আবার লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধীরও। শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, বামপন্থী অনুরাকুমার দিশানায়েকে তাঁর ভাবশিষ্য। সীতারাম ইয়েচুরির ব্যাপ্তিটাই ছিল এই রকম!

তিনি মানুষের সঙ্গে মিশে তাঁদের আপন করে নিতে পারতেন। আর তাঁর এই সহজে আপন করার ক্ষমতা চোখে পড়েছিল ভারতীয় জোট রাজনীতির প্রথম সূত্রধার হরকিষেন সিংহ সুরজিতের। সীতারামকে পুত্রস্নেহে গড়েপিটে নিয়েছিলেন তিনি। উত্তরসূরি শেষ দিন পর্যন্ত সুরজিতের দেখানো পথেই কাজ করে গেলেন। প্রথাগত ‘পাওয়ার ব্রোকার’ তিনি নন। ক্ষমতা, বিত্ত বা আধিপত্য সম্পর্কে নিস্পৃহ। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বহুত্ববাদ রক্ষার সঙ্কল্পে অবিচল।

তিনি মার্ক্সবাদী। সমাজবিজ্ঞানী। মেধাবী ছাত্র সীতারাম অনুধাবন করেছিলেন, সমাজ বদলায় সময়ের সঙ্গে। তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী বার বার নিজেকে বদলেছেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বাসভবনে ইন্দিরার পাশে দাঁড়িয়ে ইন্দিরারই পদত্যাগ দাবি করতে যে স্পর্ধা লাগে, সেই সাহস তিনি দেখিয়ে গেলেন তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ধর্মান্ধ হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়েও।

বহুভাষী, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিধারী সীতারাম হতে পারতেন নামকরা অর্থনীতিবিদ। শুনেছি, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবাদপ্রতিম অর্থনীতির অধ্যাপক নাকি বলতেন, তাঁর তিন শ্রেষ্ঠ ছাত্রের মধ্যে এক জন সীতারাম। বাকি দু’জনের এক জন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। অন্য জন এখন বিশ্বের এক জন প্রথম সারির তাত্ত্বিক অর্থনীতিবিদ। এই গল্পের সত্য-মিথ্যা যাচাই করা আমার সাধ্যের বাইরে। কিন্তু সীতারামের মেধাকে কী চোখে দেখা হয়, তার খানিকটা ধারণা পাওয়া যায় এই গল্পে।

সীতারাম হয়ে গেলেন রাজনীতিবিদ। নাস্তিক কমিউনিস্ট সাংসদের ভারতীয় শাস্ত্র এবং শ্লোকে প্রগাঢ় জ্ঞান অনেক সময়ই শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠত হিন্দুত্ববাদীদের। বিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস, দর্শন ও সাহিত্যের এই প্রজ্ঞা আজকের ভারতের রাজনীতিতে বিরল।

জীবন কাটিয়ে গেলেন স্ত্রী’র কেনা দু’-কামরার সরকারি আবাসনে। আর যাওয়ার আগে নিজের দেহ দিয়ে গেলেন বিজ্ঞানের কাজে। এত আধুনিক ব্যতিক্রমী মানুষ আজকের রাজনীতিতে আর কোথায়?

সুকান্ত ভট্টাচার্য, অর্থনীতি বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

পথের সন্ধানী

‘দুনিয়া বদলাচ্ছে, বুঝতেন ইয়েচুরি’ (১৩-৯) বলেছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাজনৈতিক কৌশল দলে পাশ করানোর কৃতিত্ব পেতে পারেন সীতারাম ইয়েচুরি। দিল্লির বর্তমান স্বৈরাচারী শাসককে কী ভাবে আসন থেকে সরানো যায়, জীবনের অন্তিম পর্বেও তা নিয়ে নিরন্তর রাহুল গান্ধী ও অ-বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে গিয়েছেন। তবে ইয়েচুরি সাধারণ সম্পাদক থাকার সময়েই বাংলায় সিপিএমের আসনসংখ্যা শূন্য থাকাও খাতায় থেকে যাবে। তিনি মানবতাবাদী ও ভারতীয় বহুত্ববাদে বিশ্বাস রাখা বাস্তববাদী নেতা। সীতারাম চলে যাওয়ার অর্থ, মার্ক্সবাদী চিন্তায় উদারবাদী পথ খোঁজার এক কারিগরকে হারানো। দুনিয়া যে বদলাচ্ছে, এই অনুভবে সীতারাম নির্দ্বিধায় পাঁচতারা হোটেলের মধ্যাহ্নভোজনে অংশ নিতেন। জনৈক সাংবাদিকের রসিকতার উত্তরে তিনি বলেন— কোথাও লেখা আছে নাকি এক জন কমিউনিস্ট পাঁচতারা হোটেলে খাবেন না।

সংসদে সীতারামের বক্তৃতা শুনে মাঝেমাঝে মনে হত, তিনি যেন বিজেপি-বিরোধী সমস্ত দলের সঙ্গে সমন্বয়-রক্ষা করার দায়িত্বে রয়েছেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে তাঁর একটি বক্তৃতায় নালন্দার ইতিহাস ও তার গুরুত্ব তুলে ধরে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি, তা সংসদকে অবাক করে দিয়েছিল। সংসদের ভিতরের রাজনীতি কী ভাবে রাস্তায় নিয়ে আসতে হয়, এই ব্যাপারে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তিনি চাইতেনও যে, সংসদের ভিতরের লড়াইটা বাইরের রাস্তাতেও অব্যাহত থাকুক।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

সজাগ প্রহরী

‘বিরোধী সূত্রধার ইয়েচুরির প্রয়াণ’ (১৩-৯) সংবাদটি পড়ে মর্মাহত হলাম। সীতারাম ইয়েচুরির জীবনাবসান দেশের মার্ক্সবাদী কমিউনিস্টদের মধ্যে এক গভীর শূন্যতা সৃষ্টি করে দিল। তিনি ছিলেন দেশের বামপন্থী আন্দোলনের অবিসংবাদী নেতা এবং সুপরিচিত মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক নেতা। আন্তর্জাতিকতাবাদী, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী, সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষতার সজাগ প্ৰহরী হিসাবে পরিচিত। প্রথম ইউপিএ সরকার গঠনে, এবং সম্প্রতি ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের সেতুবন্ধনে ইয়েচুরির নিঃশব্দ অবদান ছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী, দু’জনের সঙ্গেই তাঁর সখ্য ছিল যথেষ্ট। তাঁর বাচনভঙ্গি, ভদ্র আচরণ, এবং শরীরী ভাষা যে কোনও প্রগতিশীল মননকে বামপন্থার দিকে টেনে আনার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। যদিও তা সম্পূর্ণ সাফল্য পায়নি। প্রকাশ কারাট ও বৃন্দা কারাটের সঙ্গে আদর্শগত ভাবে তাঁর মতপার্থক্য ছিল তীব্র। তাঁর মতো অসামান্য বুদ্ধিজীবী, সাংসদ, সুদক্ষ লেখক ও বিচক্ষণ নেতার মৃত্যু দেশের সঙ্কট মুহূর্তে বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে নিঃসন্দেহে ক্ষতিকর।

তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া

অনুলেখক কই?

মধুমিতা দত্ত রাজ্যের কিছু প্রান্তিক মানুষের একটি বাস্তব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন ‘দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা অনুলেখক নিয়ে আতান্তরে’ (১৫-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনে। বেশ কিছু বছর ধরে দৃষ্টিহীন মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে এই সমস্যা অনুভব করছি আমরা। বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগুলিতে ও চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অনুলেখকের সাহায্য ছাড়া পরীক্ষা দেওয়া যায় না, কেননা ব্রেল পদ্ধতিতে উত্তর লেখার ব্যবস্থা নেই। অনুলেখক হতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা খুবই কম। অনুলেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা (পরীক্ষার্থীর থেকে এক ধাপ নীচে থাকতে হবে) সঙ্কট বাড়িয়ে তুলেছে। গ্রুপ ডি পর্যায়ের পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয়ের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির অনুলখক প্রয়োজন হয়। তারা নিজেদেরই পরীক্ষা নিয়ে যথেষ্ট ব্যস্ত থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়মাবলিতে অনুলেখকের সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। কিন্তু পরীক্ষা ব্যবস্থাপকরা এই সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

অনেক সময়ই পরীক্ষাকেন্দ্র অনেকটা দূরে দেওয়া হয়। অনুলেখকের অনুমোদন লাভ করার জন্য দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীকে বার বার সেই পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হয়। ইদানীং প্রতিটি প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষার আগে প্রতিবন্ধী শংসাপত্রটি হাসপাতালে গিয়ে আবার নতুন করে করতে হচ্ছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের পক্ষে সেই কাজটিও প্রচণ্ড দুর্ভোগের। আর একটি সমস্যার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অঙ্ক ও অ্যাপটিটিড প্রশ্নের রাফ ক্যালকুলেশন-এর জন্য প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে একটি করে কাগজ দেওয়া হয়। দৃষ্টিহীনদের হয়ে ওই ক্যালকুলেশন অনুলেখকেরই করে দেওয়ার কথা। কিন্তু পরীক্ষা হলের গার্ডরা একেবারেই সেটা করতে দেন না। তাঁরা দাবি করেন যে সেটা দৃষ্টিহীন প্রতিবন্ধীকেই মানসিক ভাবে করতে হবে, যা অত্যন্ত কঠিন।

অনুলেখকদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শিক্ষাগত মান সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে দেওয়া হোক। তাদের প্রতি আরও মানবিক আচরণ করা হোক।

কেতকী বাগচী, মধ্যমগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Sitaram Yechury CPM indian politics politician
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy