“প্রণামের তাড়ায় বিপর্যয়, অন্তরালেই ‘ভোলে বাবা’” (৪-৭) শীর্ষক খবরে প্রকাশ, উত্তরপ্রদেশে হাথরসে ধর্মীয় জমায়েতে যোগ দিতে গিয়ে পদপিষ্টের ভয়ঙ্কর ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১২১ জনের, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল অন্তত ২০ জনকে। এমন নারকীয় মৃত্যুমিছিলের শিকার অধিকাংশই মহিলা ও শিশু।
কার চূড়ান্ত দোষ বা অপদার্থতার কারণে এত সংখ্যক সাধারণ হতভাগ্য মানুষকে এ ভাবে লাশের স্তূপে পরিণত হতে হল? এক স্বঘোষিত ধর্মগুরু, সেবাদারেরা, ধর্মগুরুর ব্যক্তিগত রক্ষী এবং অনুগত আয়োজকরা মিলে যখন একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমূলক বিরাট কারবারের আয়োজন করে, তখন সব দিক পর্যবেক্ষণ না করে উচ্চ প্রশাসনিক বিভাগ কেন এমন বিশাল জমায়েত আয়োজন করার ঢালাও অনুমতি দেয়? সরকারি অনুমতিপ্রাপ্ত একটা ধর্মীয় আসরে আশি হাজার লোকের জায়গায় কী ভাবে আড়াই লক্ষ মানুষের বিপুল ভিড় ঢুকে পড়ে? জরুরি নিরাপত্তার বিষয়টি বিন্দুমাত্র খতিয়ে না দেখে কেন সেখানে যাতায়াতের পথের ব্যবস্থা করা হয়েছিল মাত্র একটি? পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি আধিকারিকেরা যদি এ ব্যাপারে সজাগ বা সচেতন থাকতেন, এমন ভয়ানক বিপর্যয়কে হয়তো ঠেকানো যেত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, ব্যবস্থাপনার বিষয়টি প্রশাসনের কাছে আগে জানানো সত্ত্বেও চূড়ান্ত অব্যবস্থায় এতগুলো লোককে বেঘোরে প্রাণ দিতে হল।
এই পরিপ্রেক্ষিতে আরও একটি জরুরি প্রসঙ্গ। আমাদের সমাজে নানা ধর্মীয় প্রতারণায় প্রতি দিনই লুট হচ্ছে বহু গরিব অসহায় বিশ্বাসী মানুষের সম্পদ, সম্মান এবং তাঁদের নিরাপত্তা। সাধারণত নিবেদিতপ্রাণ ভক্তরা এ সবের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চান না। এ ক্ষেত্রেও দেখা গেল, স্বঘোষিত গডম্যান নারায়ণ সাকার হরি ওরফে সুরজ পাল সিংহের চরণধূলি লক্ষাধিক ভক্তরা কাড়াকাড়ি করে নেওয়ার ফলে প্রচণ্ড ভিড়ের চাপে এমন বীভৎস ঘটনা ঘটল। এতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটির রক্ষীদের উপর দোষারোপ করা গেলেও তথাকথিত ধর্মগুরুর গুরুতর অপরাধ প্রমাণ করার কাজটি ঠিক কতটা কঠিন?
প্রসঙ্গত, ধর্মীয় অনাচার, প্রতারণা ও বুজরুকির বিরুদ্ধে প্রবল গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে গিয়ে ২০১৩ সালে নিহত হন মহারাষ্ট্রের যুক্তিবাদী আন্দোলনের অগ্রণী সংগঠক নরেন্দ্র দাভোলকর। তাঁর মৃত্যুর পরেই, অর্থাৎ ২০১৩ সালে জনমতের চাপে ‘কুসংস্কার বিরোধী বিল’টি অর্ডিন্যান্স হিসাবে মহারাষ্ট্রে পাশ হয়, যা পরে ওই রাজ্যের বিধানসভা অনুমোদন করে।
এতগুলি মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু মহারাষ্ট্রের সেই যুগোপযোগী দৃষ্টান্তমূলক আইনকে কি ফের মনে করিয়ে দেয় না? সব সচেতন যুক্তিবাদী মানুষের আজ এ নিয়ে সরব হওয়ার সময় কি আসেনি?
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
প্রাণের মায়া
‘দেহো আলো’ (৫-৭) শীর্ষক সম্পাদকীয় সম্পর্কে আমার এই পত্রের অবতারণা। ধর্মবিশ্বাস মানুষের তত দিনই মঙ্গলসাধন করে, যত দিন না তা অন্ধবিশ্বাসে পরিণত হয়। কিন্তু হাথরসের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে শতাধিক ভক্তের মৃত্যু ও অনেকের গুরুতর আহত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসেরই চরম পরিণতি। সৎসঙ্গের আসরে স্বঘোষিত ধর্মগুরু ‘ভোলে বাবা’-র পায়ের ধুলো নিতে গিয়ে এতগুলো প্রাণ ধুলোয় মিশে গেল। শুধুমাত্র ‘ভক্তি-অন্ধত্ব’ কেড়ে নিয়ে গেল এতগুলো প্রাণ। যাঁকে প্রণাম করতে হুড়োহুড়ি করে মারা গেলেন এত মানুষ, সেই ধর্মগুরু ভক্তদের পাশে না থেকে আপন প্রাণ বাঁচাতে নিরুদ্দেশ। নিজের প্রাণ নিজেকেই রক্ষা করতে হবে— অন্ধভক্তি আজ সেই বোধটুকুও গ্রাস করে ফেলেছে। আর একটি বিষয়, এই রকম দুর্ঘটনা ঘটলেই আঙুল ওঠে আয়োজক ও প্রশাসনের দিকে। এটা অযৌক্তিক নয়। কিন্তু সবার আগে সচেতন হতে হবে আমাদের, কোনটি ভাল, কোনটি মন্দ, তা আমাদেরই বিচার বিবেচনা করতে হবে। আবারও বলি, প্রাণ আমার, তাকে রক্ষা করার দায়িত্বও আমার।
সত্যকিঙ্কর প্রতিহার, দেশড়া, বাঁকুড়া
তিন কারণ
হাথরসে যে দুর্ঘটনা হল, তার গভীরতা চিন্তা করলে আতঙ্কের শিহরন জাগে। এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। তবু আমরা সচেতন হই না। এই দুর্ঘটনা আকস্মিক নয়। এটা মানুষের উন্মাদনার এক নিদর্শন। আমার মতে, এর জন্য তিনটি বিষয় একান্ত ভাবে দায়ী—
প্রথমত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভক্তবৃন্দ। তাঁদের জানা উচিত ছিল, এর ভয়াবহ পরিণতির কথা। যেখানে ত্রিশ-চল্লিশ হাজার সমাগমই ভয়াবহ, সেখানে লক্ষাধিক লোক যদি পাগলের মতো ছুটে আসেন একটি নির্দিষ্ট দিকে, সেখানে এই দুর্ঘটনা অনিবার্য। দ্বিতীয়ত, স্বঘোষিত ধর্মগুরু প্রকৃত গুরুজনের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর শাগরেদবৃন্দ তাঁকে নিরাপত্তা দান করতে কার্পণ্য করেননি। আত্মমুগ্ধ আত্মগরিমাযুক্ত এই সব ভুয়ো গুরুজন অযথা গুরুগিরি করে ধর্মভীরু মানুষকে বিভ্রান্ত করে তোলেন। তাঁদের অপরাধের সীমা নেই। তৃতীয়ত, প্রশাসনিক ব্যবস্থার উদাসীনতা ও ব্যর্থতা। এবং তাদের দূরদর্শিতার একান্ত অভাব। এমন এক পরিবেশে লক্ষাধিক লোক সমাগমের অনুমোদন কী ভাবে হতে পারে?
এই রকম দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য সকলকে সচেষ্ট ও সচেতন হতে হবে। ভোলে বাবার পায়ের ধুলো নেওয়ার জন্য উন্মত্তের মতো ছুটোছুটি হুড়োহুড়ি— এটা নির্বোধ ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষদের মধ্যেই দেখা যায়। বিজ্ঞান পড়লেই বিজ্ঞানমনস্কতা আসে না। তার জন্য মানসিক অনুশীলনের প্রয়োজন।
স্মরজিৎ রায়, উত্তরপাড়া, হুগলি
শাস্তির দাবি
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের হাথরসে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদপিষ্ট হয়ে ১২১ জন মারা গেলেন। অনেকে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঘটনার সূত্রপাত হাথরসে কয়েক লক্ষ মানুষকে নিয়ে সৎসঙ্গের আসরে। ওই জায়গায় প্রবেশ ও বাহির পথ একটাই ছিল। সংবাদে প্রকাশ, ১২টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান চলার পর স্বঘোষিত গুরু ‘ভোলে বাবা’ ওরফে নারায়ণ সাকার হরি ওরফে সুরজ পাল সিংহ অনুষ্ঠানপ্রাঙ্গণ থেকে বার হওয়ার সময় ভক্তরা তাঁকে কাছ থেকে দেখার জন্য, প্রণাম করার জন্য ধুলো তুলে নিতে দৌড়ে আসায় ধর্মগুরুর ব্যক্তিগত রক্ষী ও সেবাদারেরা ধাক্কা দিয়ে ভিড় সরাতে থাকে। এই সময় চরম বিশৃঙ্খলা অবস্থা সৃষ্টি হয়।
এতগুলো মানুষের প্রাণ চলে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, অনুষ্ঠানপ্রাঙ্গণে কত মানুষের জমায়েতের অনুমতি দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন? কত পুলিশ ওই বিশাল ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য ছিল? প্রশাসন প্রবেশ ও বাহির পথ আলাদা করার জন্য উদ্যোক্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন কি? একই জায়গায় এত মানুষের মৃত্যু শিউরে ওঠার মতোই। শুরু থেকে রাজ্য প্রশাসন ভিড় কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করলে এই দুঃখজনক ঘটনা হয়তো ঘটত না। ঘটনার দায় উত্তরপ্রদেশ সরকার অস্বীকার করতে পারে না।
ইতিমধ্যে উত্তরপ্রদেশ সরকার দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য তদন্তকারী দল গঠন করেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রায় সকলেই আর্থিক দিক থেকে খুবই গরিব। তাই আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ যত দ্রুত সম্ভব মৃতদের পরিবার বর্গের হাতে তুলে দেওয়া হোক। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ প্রশাসনকে ভোলে বাবাকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু শুধুমাত্র এইটুকুই যথেষ্ট নয়, ভোলে বাবা-সহ যাদের জন্য এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল, এতগুলো মানুষের প্রাণ গেল, তাদের সকলকে গ্রেফতার করে চরম শাস্তি দিতে হবে।
অপূর্বলাল নস্কর, ভান্ডারদহ, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy