—প্রতীকী ছবি।
নির্বাচনী বন্ড অসাংবিধানিক বলে শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছে। এই বন্ডের সুবিধাভোগে বিজেপি প্রথম, তৃণমূল দ্বিতীয়, তৃতীয় কংগ্রেস। আরও অন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক দল এই সুবিধা নিয়েছে। বামপন্থী বলে পরিচিত কোনও দল এই বন্ডের সুবিধা পেয়েছে বা নিয়েছে বলে উল্লেখ ছিল না। সেই দলগুলিও নির্বাচনে লড়ছে। বিজেপি ও তার সহযোগী কিছু দল বাদে সকলেই বলছে, বিজেপি বিপজ্জনক। একই কথা তৃণমূল, কংগ্রেস ও সিপিএম বলছে। অথচ, তৃণমূল ও কংগ্রেস অসাংবিধানিক বন্ডের সুবিধাভোগে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দল। বন্ড থেকে কিছু কম সুবিধা পেয়েছে বলে কি এই দু’টি দল কম বিপজ্জনক? কে কত বিপজ্জনক, সেই কম-বেশির বিচারে কি মানুষকে শাসক বাছতে হবে? সিপিএম বন্ডের সুবিধা পায়নি বা নেয়নি, এই বন্ডের বিরুদ্ধাচরণ করেছে। শুধু তা-ই নয়, তারা বন্ডের বিরুদ্ধে অন্যতম মামলাকারী ছিল। অথচ, কংগ্রেস ও সিপিএম নির্বাচনে একজোট।
নির্বাচন এলে জোট একটা বিষম বস্তু, যেখানে আসন সমঝোতা ছাড়া আর কিছু থাকে না। বিজেপির জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও সিপিএমের যৌথ প্রতিবাদ ছিল না, তবুও তারা জোট বাঁধে। এমন জোট বাঁধা ভোটের অঙ্কের এক রাজনৈতিক সমীকরণ হতে পারে, কিন্তু সেই সমীকরণে মানুষের সমস্ত সমস্যার একেবারে সমাধান হবে না। একটি বামপন্থী দল যখন শুধু ভোটে জেতার আশায় আর একটি বিপরীতধর্মী দলের সঙ্গে জোট বাঁধে, তখন মানুষের হয়ে আন্দোলন ও প্রতিবাদ সে ভাবে হতে পারে না।
বিপরীতধর্মী দলের সঙ্গে কমিউনিস্টরা জোট বাঁধতে পারে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে। বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধাচরণ যদি সেই কারণে হয়, তা হলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট যথার্থ বলে ধরে নিতে হবে। কিন্তু গত শতাব্দীর সত্তরের দশক দেখেছে কংগ্রেসের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের প্রকৃত রূপ। কংগ্রেসের সেই ডিএনএ শুদ্ধ হয়েছে বলে বামপন্থীরা নিশ্চিত হন কী করে? এমনকি কংগ্রেসের সেই চরিত্রের বিরুদ্ধাচরণ করেই বাংলায় সিপিএমের উত্থানের ইতিহাস এখনও লোকে বিস্মৃত হয়নি।
ঠিক এই অবস্থায় মানুষের কাছে বেছে নেওয়ার মতো কী আছে? হয় বিজেপি, নয় তৃণমূল, নয় কংগ্রেস-সিপিএম। এই বৃত্তে মানুষের সমস্যা কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী হয়ে চলেছে। সিপিএম-এর মতো বামপন্থী দলের নেতা-কর্মীরা সমর্থকদের নিয়ে যদি এই বৃত্তে ঘুরেই চলতে থাকেন, তা হলে মানুষের জন্য বিপ্লব কোন পথে হবে? কী করে তা দেশবাসীকে পথ দেখাবে? ভোটের এই সর্বজনীন পথে মানুষ তাদের সার্বিক মঙ্গল পায়নি বলেই কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতাহীন হয়েছে, ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকা সিপিএম পরাজিত হয়েছে। আর এখন বিজেপি ও তৃণমূলের প্রতি মানুষ বীতশ্রদ্ধ হলেও, সেই দলগুলি ক্ষমতাসীন। তাদের হাতে গণতন্ত্র নামক যন্ত্র মানুষের যন্ত্রণা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে আজ পথ দেখাবে কে!
নরেন্দ্রনাথ কুলে, কলকাতা-৩৪
রাজ্যপাল-কথা
মে মাসের প্রথম সপ্তাহে কলকাতা-সহ দেশের বহু সংবাদপত্রে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সম্পর্কে এক গুরুতর অভিযোগ উঠল। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে রাজ্যপাল সম্পর্কে এ-হেন অভিযোগ আগে ওঠেনি। বর্তমান রাজ্যপাল বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মত দেন। তাঁর সম্পর্কে যে অভিযোগ, তা তিনি জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। ৯ মে এক ইংরেজি সংবাদপত্রের প্রথম পৃষ্ঠার সংবাদ পড়ে ঠিক করলাম যে, এই বিষয়ে রাজ্যপাল কী বলেন, জানব। সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী সে দিন রাজভবন চত্বরে কী ঘটেছিল, সেই নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হবে। নাম তার ‘সচ কে সামনে’ (সত্যের মুখোমুখি)। নিয়ম মেনে রাজভবনে যাই। সকাল সাড়ে এগারোটায় অনুষ্ঠান শুরু করার কথা। অনুষ্ঠান শুরু হতে অন্তত চল্লিশ মিনিট দেরি হয়। সময়ানুবর্তী না হওয়া যদি রাজ্যপালের কর্ম হয়, তা হলে সাধারণ জনগণ কী শিখবে?
সংবিধানের ৩৬১ ধারা অনুযায়ী, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধমূলক আচরণের অভিযোগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের পদে থাকাকালীন আদালত কিছু করতে পারে না। কিন্তু রাজ্যপাল চলে গেলে আদালত পদক্ষেপ করতে পারে। রাজভবনের অনেক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলি। রাজভবনের ওয়েবসাইট দেখি। একটি বিষয়ে খটকা লাগে। কর্মস্থলে মহিলাদের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ থাকলে ‘ইন্টারনাল কমপ্লেন্টস কমিটি’ বলে একটি দফতর থাকা উচিত। সেটির বড় অভাব বোধ করলাম। এবং আজকের প্রেক্ষাপটে শুধু মহিলা কেন, কর্মস্থলে যে কোনও মানুষের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ থাকলে সেই দফতর থাকা উচিত।
অভিযোগ সত্যি কি না, পুলিশের দেখার কথা। সংবিধানের ২১ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করে মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করলে কেউ ছাড়া পেতে পারেন না। আইনজ্ঞদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে চর্চা হওয়া উচিত যে, মৌলিক অধিকার সংবিধানে আলোচনা সাপেক্ষ, না কি শুধু ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ক্ষমতাধারী পদে থাকলে তার অপব্যবহার করাই স্বাভাবিক হবে। ইদানীং আমাদের রাজ্যের রাজ্যপাল মন্ত্রিসভার কথা শোনেন না। আর দিল্লির সরকার এমন কিছু নির্লজ্জ ব্যক্তিদের পদে বসান যাঁরা মনে করেন যে, মন্ত্রিসভার কথা না শুনে শুধু দিল্লির সরকারের তাঁবেদারি করাই তাঁদের একমাত্র কর্তব্য। এ ভাবে রাজ্যপালের পদের গরিমা নষ্ট হয়। পশ্চিমবঙ্গের সমসাময়িক ইতিহাসে এমন রাজ্যপাল আর দেখা যায়নি। উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে যে ভয়ঙ্কর অরাজকতা চলছে, বিশেষ করে যাঁরা শিক্ষাবিদ নন এবং যাঁরা ইউজিসি-র নিয়ম না মেনেই উপাচার্য হয়েছেন, তাঁদের উপাচার্য করার ক্ষেত্রে যে ভূমিকা পালন করেছেন রাজ্যের রাজ্যপাল, তা অকল্পনীয়। ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা হচ্ছে, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে কনভোকেশন হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। অধ্যাপক ছুটির আবেদন করে ছুটি পান না। গবেষকরা কাজ করতে পারছেন না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যিনি হয়েছেন, তাঁর ইউজিসি-র নিয়মে যে যোগ্যতা থাকার কথা, সেই যোগ্যতা নেই। একই উপাচার্য একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকেন। রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের সঙ্গে প্রতি পদে ঝামেলা হচ্ছে। আর রাজ্য সরকারকে সামান্য বিষয়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। এই ভাবে দেশ এবং রাজ্য কিছুতেই চলতে পারে না।
মইদুল ইসলাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস, কলকাতা
ঠাকরে নয়
পেশায় প্রকাশক-সম্পাদক হিসেবে লন্ডন ডায়েরি (১২-৫)-তে “রবি ঠাকুরের ‘বিশ্বভরা প্রাণ’-এ মাতল লন্ডন” শীর্ষক লেখায় একটি ভুল দেখে হতবাক হলাম। বিখ্যাত ইংরেজ ঔপন্যাসিক, ভ্যানিটি ফেয়ার-এর লেখক উইলিয়ম মেকপিস থ্যাকারে-কে লেখা হয়েছে ঠাকরে। থ্যাকারের অপরাধ, তিনি কলকাতায় জন্মেছিলেন, তাই বলে তাঁকে বাল ঠাকরে-র আত্মীয় হতে হবে? আমি নিশ্চিত, আমার প্রিয় ছাত্রী বাসবী ফ্রেজ়ার এ ভুল করবেন না।
শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৯৫
চলমান সিঁড়ি
অনেক মেট্রো স্টেশনে নতুন আলো লাগানো হয়েছে। উজ্জ্বল আলোর ব্যবহারে স্টেশনগুলির চেহারা আগের চেয়ে অনেক বেশি ঝকঝকে হয়ে উঠেছে। কিন্তু স্টেশনে আলোর সাজের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বোধ হয় চলমান সিঁড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি করা। মেট্রো স্টেশনগুলিতে এখনও তার অভাব যথেষ্ট। যেগুলি আছে, তার মধ্যে বেশ কিছু চলমান সিঁড়ি প্রায়ই দীর্ঘ সময় খারাপ থাকে। ফলে সাধারণ সিঁড়ি দিয়েই অনেকটা ওঠানামা করতে হয়। প্রবীণ ও শারীরিক ভাবে অক্ষম মানুষদের পক্ষে যা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।
শতরূপা মিত্র, কলকাতা-৩৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy