কমছে মজুরি
লকডাউনের আগে তাঁতশিল্পীরা শাড়িপিছু ২৫০-৩৫০ টাকা মজুরি পেতেন। লকডাউনের পর থেকে সেই মজুরি ২০-৩০ টাকা কম ধার্য করা হয়েছে। সেটাও সম্পূর্ণ পাচ্ছেন না। শাড়িপিছু ১০০-১৫০ টাকা নগদ পাচ্ছেন, বাকি মহাজনের খাতায় জমা থাকছে। ফলে তাঁরা নিদারুণ আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন।
ব্যবসায়ীরা মহাজনের কাছ থেকে চৈত্রমাসের শেষে বাকি-বকেয়া বুঝে পান। ৯ চৈত্র লকডাউন ঘোষণা হওয়ার ফলে বিপুল অঙ্কের টাকা আটকে আছে। হাওড়া হাট, হরিসা হাট, বড়বাজারের পাইকারি দোকান বন্ধ থাকায় প্রচুর শাড়ি গুদামে পচছে। ফলে তাঁতশিল্পী ও ব্যবসায়ী, উভয়েই খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে। এমতাবস্থায় ‘তন্তুজ’ বিধান নগরের দফতরে সমবায় ও তাঁতশিল্পীদের কাছ থেকে শাড়ির নমুনা সংগ্রহ করেছে। কিন্তু তা তপ্ত মাটিতে কয়েক ফোঁটা জল মাত্র। সরকারকে গুরুত্ব সহকারে গঠনমূলক চিন্তা করে তাঁতশিল্পীদের সমস্যার সমাধান করতে হবে।
প্রশান্ত ভড়
আঁটপুর, হুগলি
আত্মনির্ভর?
‘ভারতাত্মা’য় (সম্পাদকীয়, ১৯-৮) যথার্থই বলা হয়েছে যে, ৭০ বছরের পুরনো ‘অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডলুম বোর্ড’ উঠিয়ে দেওয়া একটি বিতর্কিত প্রশাসনিক সংস্কার। আট দশক আগে জাতীয় পরিকল্পনা পরিষদ গঠন করে যখন সবাই শিল্পায়নের স্বপ্নে বিভোর, তখন প্রশ্ন ওঠে যে, হস্তচালিত তাঁতে বোনা খাদি কি শিল্পায়নের ছন্দে পা মিলিয়ে চলতে পারবে? কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করলেও স্বাধীন ভারতের একটি শ্রমনিবিড় গ্রামীণ ক্ষেত্র হিসেবে খাদিকে মেনে নেন জাতীয়তাবাদী নেতারা। গঠিত হয় ১৯৫২ সালে ‘অল ইন্ডিয়া হ্যান্ডলুম বোর্ড’। ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করে তাঁতশিল্প। সারা ভারতে প্রায় ৩১.৪৫ লক্ষ পরিবার (চতুর্থ সারা ভারত হ্যান্ডলুম সমীক্ষা অনুযায়ী) তাঁতশিল্পে জড়িত, যেখানে তফসিলি জাতি, জনজাতি বা অন্যান্য অনুন্নত সম্প্রদায়ের ৪৪ লক্ষেরও বেশি লোকজনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
আশির দশকের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী শরদ যাদবের নেতৃত্বে বোর্ডের পুনর্গঠন হয়। মাঝেমধ্যে এ বিষয়ে নানা বক্তব্য প্রকাশিত হলেও গত তিন দশকে এই শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়নি। যদিও বিশ্ববাজারে হাতে-বোনা তাঁত-সামগ্রীর চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ ভারত রফতানি করে। কত কুটিরশিল্প, ছোট ও মাঝারি শিল্প গড়ে উঠেছে, হারিয়েও যাচ্ছে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে। এক-একটি অঞ্চলের এই সব শিল্প চিহ্নিত করে সাহায্য করতে হবে সরকারকে। গ্রামীণ ভারতকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। এদের মূলধন আর উৎপাদিত সামগ্রী বাজারজাত করার নিশ্চয়তা সরকার দিলে সত্যিকারের আত্মনির্ভর ভারত গড়ে উঠবে।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
পুজো চাই
অনেকেই বলছেন, এই বছরে দুর্গাপুজোর প্রয়োজন নেই। তাঁদের বক্তব্য, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং কোভিডে মৃতদের শ্রদ্ধা, সম্মান জানাতে উৎসব বন্ধ রাখা হোক। এই সঙ্কটকালে উৎসবের কী প্রয়োজন? আমার মতে, অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার মানুষের রোজগারের উপায়। আমরা কি ভুলে গেলাম, অতিমারির ধাক্কায় কত কোটি মানুষের কাজ খোয়া গিয়েছে? এক দিকে কর্মহীনতা, অন্য দিকে সব জিনিসের আকাশছোঁয়া দাম। এই দুর্দিনে দুর্গাপুজোর মতো উৎসব বহু মানুষের কাছে উপার্জনের বড় রাস্তা হবে। থিমপুজোর দৌলতে প্যান্ডেলের কাঠামো, সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা তৈরি করেন যাঁরা, প্রতিমা নির্মাণে যুক্ত মৃৎশিল্পী, ঢাকি— এ সময়ের উপার্জন দিয়ে অনেকের সারা বছর সংসার চলে।
পুজো উপলক্ষে উদ্যোক্তারা এই বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প, লোক-সংস্কৃতিকে (যেমন, ছৌ নাচ, ঝুমুর নাচ, সাঁওতালি নৃত্য, বাউল গান) উৎসবে শামিল করান। প্রতিমা নির্মাণ শিল্পে ডাক সেট, প্রতিমার গয়না এবং চাঁদমালা কলকাতা-সহ সারা রাজ্যে সরবরাহের মাধ্যমে ‘মালাকার’ শ্রেণি সংসার চালানোর অনেকটা অর্থোপার্জন করেন। পুজোর জলসায় বহু সঙ্গীতশিল্পী এবং তাঁদের সহ-শিল্পীদের অর্থোপার্জনের সুযোগ ঘটে। প্রতি বছর পুজোর কয়েক দিন আগে থেকেই ধর্মতলার মোড়ে, শিয়ালদহ স্টেশনে বহু ঢাকি বরাত পাওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকেন। পুজো না হলে এঁদের কী হত? এই বিপুল আর্থিক ক্ষতি পূরণ করত কে? বুঝতে হবে, পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রাম থেকে শহর একটা বিশাল অর্থনীতির চাকা ঘুরতে থাকে।
অনেকে বলবেন, পুজো না করে, এঁদের কাছে সরাসরি টাকা পৌঁছে দিলেই হয়। কিন্তু, তাতেও সমস্যা আছে। প্রথমত, পুজো না হলে বিজ্ঞানপনদাতা, স্পনসররা এগিয়ে আসবেন না, লোকেরা চাঁদাও দেবেন না। শোনা যাচ্ছে, গত বছর যে স্পনসররা এক লাখ টাকা দিয়েছেন, এ বছর সেটা ১০-২০ হাজার টাকায় নামিয়ে এনেছেন। সুতরাং, পুঁজিবিহীন ক’টি ক্লাব সমাজকল্যাণমূলক কাজে উৎসাহ দেখাবে, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে।
অতিমারির দুঃসময়ে মানুষ হতাশায় ডুবে যাচ্ছেন। এই সময়ে মানুষের মনে আনন্দ দেবে উৎসবই। দুর্গাপুজো শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মনে, প্রাণে মিলিত হওয়ার সামাজিক উৎসবও বটে। আবেগ দেখিয়ে পুজো বন্ধ না করে, বরং আর্থিক সংস্থানের মাধ্যমে এই উৎসব অসংখ্য মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
অরুণ মালাকার
কলকাতা-১০৩
চাঁদার জুলুম
চাঁদার জুলুম এবার বন্ধ হবে কি? লকডাউনে মন্দার বাজারে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস অগ্নিমূল্য। বে-রোজগেরে মানুষ চাঁদার জুলমবাজির ভয়ে তটস্থ! অনুরোধ, চাঁদা তোলা নিষিদ্ধ হোক।
পিনাকীচরণ দে
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy