‘এলোপাথাড়ি গুলি, প্রাণ গেল তরুণীর’ (১১-৬) শীর্ষক সংবাদ পড়ে যুগপৎ বিস্মিত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। কলকাতা পুলিশে কর্মরত ছোডুপ লেপচা তাঁর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে অজস্র গুলিবর্ষণ করেন। এতে রিমা সিংহ নামে এক তরুণীর মৃত্যু হয় এবং কয়েক জন আহত হন। শেষে আত্মহত্যা করেন তিনিও। তাঁর এ-হেন কাণ্ডকারখানার অনুসন্ধান চলবে, তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। কিন্তু নিরপরাধ রিমা সিংহ আর ফিরে আসবেন না।
যদি ধরে নিই, এলোপাথাড়ি গুলি চালানোর পিছনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মানসিক অবসাদ অথবা পারিবারিক কোনও সমস্যা থেকে থাকে, তা হলে সরল নাগরিক মনে প্রশ্ন জাগে, এই মানসিকতা নিয়ে কত জন নিরাপত্তাকর্মী প্রতি দিন তাঁদের কাজ করে যাচ্ছেন? পুলিশের পোশাক যেখানে আমাদের আস্থা জোগায়, সেখানে স্রেফ মানসিক অথবা পারিবারিক কারণে তাঁরই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র থেকে গুলি নির্গত হলে ওই উর্দির প্রতি ভরসার জায়গাটা ভঙ্গুর হয়ে পড়ে! এর আগেও অনেক পুলিশকর্মী অথবা সেনা জওয়ান তাঁদের অস্ত্র দিয়ে কখনও সহকর্মীদের, কখনও সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছেন। জনসাধারণের পক্ষে তো বুঝে ওঠা সম্ভব নয় যে, কোন পুলিশকর্মী বা সেনা জওয়ান মানসিক অবসাদগ্রস্ত। বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের পিছনের রাস্তায় যে ঘটনা সম্প্রতি ঘটল, তাতে পুলিশকর্মী কিংবা সেনা জওয়ানদের অস্ত্র হাতে দেখলে এখন নিরাপদ দূরত্বে থাকাই বাঞ্ছনীয় বলে মনে হচ্ছে।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে বিনীত অনুরোধ, যে সব পুলিশকর্মী সত্যিই মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। তা হলে হয়তো এমন অনভিপ্রেত ঘটনা থেকে মুক্তি মিলবে।
রাজা বাগচী, গুপ্তিপাড়া, হুগলি
অযথা প্রাণহানি
কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল ছোডুপ লেপচা কিছু দিন আগে সংবাদ শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন। ভরদুপুরে তাঁর স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র থেকে বেপরোয়া ভাবে গুলি চলেছিল পার্ক সার্কাসের লোয়ার রেঞ্জে। খবরটি চমকে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। খাস কলকাতা এখন নিত্যনতুন খবরের চমকে ভরপুর। কিন্তু এমন ব্যতিক্রমী ঘটনায় সাধারণ মানুষ কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কাজে যোগদানের পূর্বে তাঁর ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছিল কি না, মানসিক স্থিতাবস্থার বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে কেন তাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র-সহ ডিউটিতে পাঠানো হল ইত্যাদি বিষয়ে। স্বল্পমেয়াদি কর্মজীবনে তাঁর কিছু সমস্যার কথা জানা যাচ্ছে। বাংলা ভাষায় অপটু ছিলেন তিনি। নিজের উপর অগাধ-আস্থায় নিজেকে ‘এনকাউন্টার স্পেশালিস্ট’ ভাবতেন। আর সেটা অসম্ভব জেনেই তিনি মনমরা হয়ে থাকতেন। তাঁর আচরণ নিয়েও অভিযোগ ছিল অজস্র। এসটিএফ-এ তাঁকে বহাল না রাখা এবং ছুটি শেষে কাজে যোগদানের পরই সশস্ত্র বাহিনীর পঞ্চম ব্যাটালিয়নে যোগ দেওয়ার নির্দেশের ফলেই কি তাঁর মানসিক বৈকল্য? ঘটনার দিনে কর্তব্যরত অবস্থায় আউট-পোস্ট থেকে বেরিয়ে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে ছুড়তে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার পূর্বে এক নির্দোষ তরুণীকে মেরে ফেলে কী প্রমাণ করতে চাইলেন তিনি? তাঁর বাড়ির আত্মীয়স্বজনেরা বলছেন, কোনও মানসিক সমস্যা বা অস্বাভাবিকতা ছিল না ছোডুপ লেপচার। এই দুর্ঘটনায় তাঁরাও স্বাভাবিক ভাবেই হতবাক।
আর এই অপরিণামদর্শী যুবকের ক্ষমাহীন আচরণের জন্য প্রাণ দিতে হল যে তরুণীকে, তাঁর জন্য সান্ত্বনা— মুখ্যমন্ত্রী প্রদত্ত ওই তরুণীর বাবা-মায়ের হাতে পাঁচ লক্ষ টাকা এবং তাঁদের ছেলেকে হোমগার্ডের চাকরি প্রদান। মেয়েটি আর ফিরবে না। এই ক্ষতিতে অর্থ প্রদান ও একটি চাকরির প্রতিশ্রুতি প্রলেপমাত্র। সুতরাং, বিরূপ সমালোচনা হবেই।
ধ্রুবজ্যোতি বাগচী, কলকাতা-১২৫
শ্রমিকের সন্তান
কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার স্কুলগুলি এ রাজ্যে অবহেলিত কেন? করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও এই স্কুলগুলো এখনও বন্ধ থেকে গিয়েছে। অনেক জেলায় আবার চিরতরে স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষাকর্মীরা যে সামান্য ভাতা পেতেন, তা-ও না পেয়ে তাঁরা নিরাশ। মুর্শিদাবাদ জেলার ১৪০টি স্কুল ২০১৫ সাল থেকে বন্ধ আছে। বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত জঙ্গিপুর মহকুমায় অবস্থিত এই সব স্কুলে ৪২০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত ছিলেন। কিন্তু কোনও রকম নির্দেশ ছাড়াই স্কুলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বকেয়া হাই কোর্টের নির্দেশের মাধ্যমে ২০২০ সালে মেটানো হলেও, এখনও ছাত্রছাত্রীদের স্টাইপেন্ড বাবদ প্রাপ্য টাকা মেটানো হয়নি। রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ থেকে কেষ্টবিষ্টু অনেকের কাছেই স্কুলগুলো পুনরায় চালু করার জন্য আবেদন-নিবেদন করলেও কোনও ফল হয়নি। নির্বাচন এলে স্কুলগুলো খোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও, ভোট পেরিয়ে যাওয়ার পর কোনও উদ্যোগ করা হয় না।
কেন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দেওয়া টাকায় স্কুলগুলো অনেক জেলায় বন্ধ হয়ে আছে, তার কোনও সদুত্তর নেই। সারা দেশ, তথা রাজ্যে কর্মহীন ছেলেমেয়ের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাদের কর্মসংস্থানের কোনও নিরাপত্তা নেই। শিক্ষান্তে এই সব ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা সরকারের নেই। নেই কোনও শিল্প-কারখানা স্থাপনের ভাবনা। কোনও কিছু করতে গেলেই বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করাই এখন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমজীবী পরিবারের শিশুদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করা দরকার। তাই শিশু শ্রমিকদের স্কুলগুলি খোলার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গৌতম সিংহ রায়, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ
পলিথিন ব্যবহার
আগামী ১ জুলাই থেকে কম মাইক্রনযুক্ত পলিথিন ব্যবহার করা যাবে না, এই মর্মে একটি নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যদিও কলকাতার মতো শহরে এখনও থার্মোকলের মতো নিষিদ্ধ জিনিস বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে, কিন্তু অনেক রাজ্যেই পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পলিথিন ব্যবহারে নজরদারির ফলে ওই সব স্থানে দোকানদাররা এগুলি রাখেন না। এটাই হওয়া উচিত। তা ছাড়া, পলিথিন তৈরি যদি না হয়, তা হলে বিক্রিও হবে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে ওই সব কারখানার শ্রমিকদের কী হবে? সহজ সমাধান হতে পারে, ওই সব কারখানায় অন্য ধরনের প্লাস্টিকের সরঞ্জাম তৈরি করা। দরকারে সরকারকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে হবে। পলিথিনের মাইক্রন বাড়িয়ে ব্যবহারের কথা দশ বছর আগেই ভাবা হয়েছিল। কার্যকর করার আগেই তৎকালীন সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।
রাজ্য সরকারের বর্তমান আদেশে বলা হয়েছে দোকানদার যদি ৭৫ মাইক্রনের নীচে পলিথিন ব্যবহার করেন, তবে তাঁকে পাঁচশো টাকা জরিমানা দিতে হবে। অন্য ক্রেতাদের পঞ্চাশ টাকা জরিমানা হবে। কিন্তু এই নজরদারি করবে কে? আগে আমরা মাছ, মাংস কিনলে দোকানদার তা শালপাতায় মুড়ে দিতেন। এই প্রথা ফিরিয়ে আনলে দু’ধরনের উপকার হবে। প্রথমত, শালপাতার ব্যবহার বাড়লে জঙ্গলমহলের মানুষের আয় নিশ্চিত হবে। দ্বিতীয়ত, পরিবেশ দূষণের হাত থেকে দেশ রক্ষা পাবে। আমাদের জনগণেরও দায়িত্ব হোক পলিথিনের কোনও জিনিসপত্র না নেওয়া এবং অন্য জনকে নেওয়া থেকে বিরত করা। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার বিষয়টি নিয়ে কড়া নজরদারি চালিয়ে যাক।
বীরেন্দ্র নাথ মাইতি, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy