Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বইমেলার বাস্তব

১৯৭৬ সালে কলকাতা বইমেলার সূচনা হয়। তার পর নানান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে এই বইমেলার উদ্বোধন হয়ে এসেছে।

শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৫২
Share
Save

অগ্নি রায়ের ‘তবু এখনও বই-মায়া’ (৮-২) শীর্ষক কলকাতা বইমেলা নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক প্রবন্ধটি পড়ে মুগ্ধ হলাম। ১৯৭৬ সালে কলকাতা বইমেলার সূচনা হয়। তার পর নানান আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে এই বইমেলার উদ্বোধন হয়ে এসেছে। সে-কালের ময়দানের কলকাতা বইমেলার সঙ্গে সেন্ট্রাল পার্কের বইমেলার তুলনা সাজে না। ময়দানের বইমেলা বহরে, আকারে, মননে সত্যিই ছিল আন্তর্জাতিক। সেই ধুলোমাখা বইমেলাকে এক বছর আগুন গ্রাস করলেও তার কৌলীন্য হারায়নি কখনও। প্রবেশমূল্য তুলে দিলেও বর্তমান বইমেলায় আগের মতো জৌলুস আর নেই। প্রবেশমূল্য তুলে দিয়ে মেলায় লোক বাড়ানো কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় নয়। তাতে কি বই বিক্রি বাড়ে? উল্টে মননশীল পাঠকরা বিরক্ত হন। বইমেলা-বিমুখ হন। অন্য দিকে, বইমেলাকে খাদ্যমেলা বানিয়ে ফেললে আরও বিপদ। বরং মা ক্যান্টিনের ধাঁচে সস্তায় সাধারণ ক্রেতা-পাঠকদের জন্য কিছু করা যায় কি না, তা ভাবা দরকার। অধুনা বন্ধ হওয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ব্যবস্থাপনায় রবীন্দ্র সদনের বিপরীতে ‘পশ্চিমবঙ্গ গ্রন্থ মেলা’ অনেক প্রবীণ, বয়স্ক পুস্তকপ্রেমীর স্মৃতিতে থাকবে।

একই দিনে সুমন কল্যাণ মৌলিক লিখিত‌ ‘শুধু আবেগে কাজ হবে কি’ প্রবন্ধটি কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশনা ‌নিয়ে আজকের বাস্তব চিত্রটি তুলে ধরেছে। বর্তমানে নিম্নমানের প্রকাশনায় ভরে গেছে কলেজ স্ট্রিট। মননশীল পাঠক ভাল বই খুঁজে পেতে হয়রান হচ্ছেন। লেখকরা ফেসবুকে নিজের অ্যাকাউন্টে বইয়ের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। বাজারে কবি, লেখকদের বইয়ের ছড়াছড়ি। সেখানে লেখক বেশি, পাঠক কম। টাকা খরচ করলেই বাজারে বই চলে আসছে। কবি, লেখক হওয়ার প্রবল বাসনায় বাজার নিম্নমানের বইয়ে ভরে গেছে। এগুলোই বইমেলায় পসরা হচ্ছে। লেখকের বয়স পঞ্চাশ উত্তীর্ণ হতে না হতেই প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা সেঞ্চুরি, অর্ধ সেঞ্চুরি পার করে ফেলছে। এখন ভেবে অবাক লাগে, বঙ্কিমচন্দ্র সারা জীবনে মাত্র ১৪টি উপন্যাস লিখে ‘সাহিত্য সম্রাট’ বলে খ্যাত হয়েছিলেন। ২৪টি উপন্যাস লিখে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘অমর কথাশিল্পী’ খেতাব পেয়েছিলেন।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

বইপাড়ার দুর্দিন

কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া নিয়ে সুমন কল্যাণ মৌলিকের প্রবন্ধ ‘শুধু আবেগে কাজ হবে কি’ প্রসঙ্গে কিছু সংযোজন। প্রবন্ধকার উল্লেখ করেননি, কিন্তু বাংলা বই প্রকাশনার আরও দুই প্রতিবন্ধকতা হল— প্রথমত, প্রতিবেশী দেশে এ-দেশের সদ্য প্রকাশিত বাংলা বই অননুমোদিত ভাবে ছাপা ও বিক্রি। দ্বিতীয়ত, হাতেগোনা যে ক’জন বাংলা বই পড়তে চান, তাঁদের অনেকের পিডিএফ-এ বিনামূল্যে পড়ার লোভ।

তা ছাড়া, মোবাইলের ইংরেজি হরফে লেখা নানা বিষয় আমাদের নিত্য চর্চার অঙ্গ। এই সব নানান ব্যবহারিক পরিবর্তনের কারণে বাংলা বই বিক্রি দিন দিন কমাই নিয়তি। তাই বেঁচে থাকার তাগিদে কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া অনলাইনে নতুন বই প্রকাশনার ব্যবস্থা করতে পারে। এর প্রসার বাংলা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে সুফল আনতে পারে। তা ছাড়া তারা হিন্দি বই প্রকাশনায় দৃষ্টি দিতে পারে। হিন্দিভাষী ভারতের ব্যাপ্ত পরিসর কাজে লাগাতে প্রথমে সমস্যা হলেও আখেরে বইপাড়াই বাঁচার রসদ পাবে। একই কথা প্রযোজ্য ইংরেজি বই প্রকাশনার ক্ষেত্রেও। সারা ভারত-সহ আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অস্তিত্ব এক দিন কায়েম করতে পারে আমাদের সাধের বইপাড়া। সঙ্গে বাংলা বইও ছাপা চলুক মাতৃভাষার প্রতি দায়িত্ব ও আবেগের টানে।

সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা-৯১

অমৃতধন

অগ্নি রায়ের ‘তবু এখনও বই-মায়া’ প্রবন্ধটিতে পেলাম কলকাতা বই-কুম্ভের স্মৃতিকাতরতা। সেখানে রচনাটি পড়তে পড়তে অধমের মনের পর্দায় ভেসে উঠল আশির দশকের শুরুতে ময়দান-কাঁপানো সেই বইমেলার কথা। তখনকার কলকাতার বইমেলার সঙ্গে আজকের কলকাতা বইমেলার বিস্তর ফারাক। লেখকের মতো আমরাও দেখেছি পূর্ণেন্দু পত্রীকে বইমেলা প্রাঙ্গণে ছবি আঁকতে, বইমেলার স্টলে প্রথিতযশা লেখকদের নতুন বইয়ে সই দিতে ও লেখকদের ময়দানে ঘোরাফেরা করতে। কেননা, তখন সিনেমা আর গল্পের বই ভালবাসার মধ্যে আবর্তিত হত যৌবন। নতুনের পাশাপাশি পুরনো মূল্যবান বইয়ের খোঁজে গোটা মেলা চক্কর দিতাম, যদি মেলে গুপ্তধন স্বল্প দামে। পেলে বে-রোজগেরের চোখেমুখে ফুটে উঠত চওড়া হাসি। এখনকার মেলায় চকচকে আলোর রোশনাই ও উন্মাদনা থাকলেও তাতে মনকেমন করা সেই ভাবটা উধাও।

এ বছরও সেই স্মৃতির টানে এক দিন সল্ট লেকে নানা প্রতিকূলতা সয়ে বইমেলায় হাজির হই। এখন নতুন বই কেনার একটু-আধটু সামর্থ্য থাকলেও আগের খিদেটা গিয়েছে মরে। তা ছাড়া এই প্রবীণ বয়সে আমার বাড়ি থেকে এতটা পথ পেরিয়ে যাওয়ার ঝক্কিটা কম নয়। এটা ঠিক যে, তখনকার দিনে ময়দান-পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলে বইমেলা মানেই ছিল ধুলোট উৎসবের চেহারা। বইসন্ধানীদের অদম্য উৎসাহ ও উন্মাদনার কোনও খামতি ছিল না। এক-এক জনের বইয়ের ঝোলা দেখলে তাক লাগত। আজ যদিও সল্ট লেকের মেলায় স্বতঃস্ফূর্ত বই-কুম্ভে অমৃত মন্থনের সেই স্বাদ মেলে না। তবু এসে ভাল লাগল লিটল ম্যাগাজ়িন প্যাভিলিয়নে। বন্ধুত্বপূর্ণ উদারতায় ভাব বিনিময়ে চা-পানও হল। বই কেনাকাটার সঙ্গে মিলনমেলায় এটুকুই বই-কুম্ভের অমৃতধন-প্রাপ্তি।

দীপককুমার দাস, কৃষ্ণনগর, নদিয়া

শিশুর অধিকার

‘বরাদ্দ ঔদাসীন্য’ (৭-২) শীর্ষক সম্পাদকীয় কলমে উঠে এল দেশের শিশু-কিশোরদের প্রতি সরকারি নীতির বঞ্চনাচিত্র। ঢাকঢোল পিটিয়ে সব সরকার সাফল্যের খতিয়ান দিলেও ব্যর্থতার পরিসংখ্যান এড়িয়ে যাওয়া কিংবা উপেক্ষাটাই রীতি। ভোটকেন্দ্রিক রাজনীতিতে শিশুদের অধিকার রক্ষার প্রশ্নটি অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় শিশুদের অধিকার রক্ষায় সরকারি দফতরের উপস্থিতি, শিশু-কিশোরদের জন্য আলাদা ভাবে বইয়ের সম্ভার চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এ সবে শিশু-কিশোরদের সার্বিক অধিকার রক্ষার সচেতন প্রয়াস থাকছে কি? লাল কেল্লায় স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা প্রদানের পর উপস্থিত শিশুদের সঙ্গে আলাদা ভাবে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। তাদের অধিকার রক্ষায় তিনি আরও একটু বেশি মনোযোগী হলে ভাল হত। শিশু-কিশোরদের পুষ্টি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা— এ সব ক্ষেত্রে বাজেটে বরাদ্দ কমলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আমাদের দেশের সূচক স্বস্তিদায়ক জায়গায় থাকবে না, যা উদ্বেগের। বর্তমানে নয়া শিক্ষানীতিতে বনিয়াদি শিক্ষা কার্যত কর্পোরেট সংস্কৃতিতে সীমাবদ্ধ। আমাদের রাজ্যে বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষায় যেখানে শিশু বিকাশ আর তাদের শিক্ষার ভিত গুরুত্বের ভিত্তিতে বিবেচিত হওয়া দরকার, সেখানে শিশুদের জন্য বরাদ্দটুকুও আশাব্যঞ্জক নয়।

এই অধোগতি ঠেকাতে দরকার সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে শিশু-কিশোরদের বাধ্যতামূলক শিক্ষা কর্মসূচিতে শ্রেণিকক্ষের পাঠ আর মূল্যায়নে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া। শিক্ষার শক্ত ভিতে বেড়ে ওঠা শিশু তো আগামী দিনে দেশের সচেতন নাগরিক। সম্পাদকীয় তথ্যে প্রকাশিত সংখ্যায় বিশ্বের সর্বাধিক শিশু-কিশোরদের বাসভূমি এই দেশের শিশুদের প্রতি সরকারের দৃষ্টি যদি উপেক্ষাসুলভ হয়, তা হলে কেন্দ্রের ঘোষিত আত্মনির্ভর ভারত গঠন কি কেবল কথার কথা?

আব্দুল জামান নাসের, চন্দননগর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

book fair Books Bengali Literature

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}