ভারতে চার জনের একসঙ্গে ফাঁসি দেওয়া হবে। অনেকে সেই ফাঁসির দাবিতে সরবও হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই ফাঁসি দেওয়া, রাষ্ট্রগৌরবের ইতিহাসে কি যুক্ত করবে নতুন পালক?
জঘন্য অপরাধের শাস্তি হিসেবে একসঙ্গে চার জনকে নৃশংস প্রক্রিয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার কাজটা কি একুশ শতকের মুখে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রের এক মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত ভূমিকাকে চিহ্নিত করে না? আসলে, যত দৃষ্টান্তমূলক ও কঠোরতম শাস্তির বিধানই হোক, কিছু কিছু দেশ, যারা এই আদিম প্রথাকে আজও চালু রেখেছে, তারা এই প্রথার দ্বারা খুন ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর অপরাধের নিশ্চিত ভাবে কোনও সমাধান করতে পারেনি। বরং বলা চলে, সেখানে অপরাধপ্রবণতা আরও কুটিল আকারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
দু’টি উল্লেখযোগ্য দেশের উদাহরণ উঠে আসে। ২০১৯ এপ্রিলের সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ২০১৮ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার শীর্ষ জল্লাদের ভূমিকায় যে দেশটি, তার নাম চিন; সরকারি হিসেবে সেই দেশের কোতলের সংখ্যা উক্ত বছরে কম করে ৬৯০ হলেও, রাষ্ট্রের গোপন স্বার্থে আরও হাজার জনকে নাকি লুকিয়ে নিকেশ করে দেওয়া হয়।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আরও এক রিপোর্টে প্রকাশ, সৌদি আরবে ২০১৯ সালে অপরাধের দৃষ্টান্তজনক শাস্তি হিসেবে ১৮৪ জনকে জনসমক্ষে হত্যা করা হয়েছে, যা বিগত ছয় বছরে সর্বাধিক। একাধিক অপরাধীকে প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ করে, পরে দেহগুলোকে উঁচু ক্রেনে বেঁধে শহরের কেন্দ্রস্থলে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
উক্ত দুই দেশের মৃত্যুদণ্ডের ধারাবাহিকতা থেকে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার সমীক্ষায় মূলত এটাই প্রতিপন্ন হয়— অধিক জনসংখ্যা অধ্যুষিত গণতন্ত্ররোধী সমস্যাকীর্ণ সমাজব্যবস্থা ও বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের স্বৈরকর্তৃত্ববাদই হল, অপরাধপ্রবণতার নেপথ্যের অন্যতম কারণ। মূলত এ ধরনের শ্বাসরোধী পরিস্থিতির হাত ধরে ক্রমশ বিকট উপসর্গের মতো নানা ভাবে বাড়তে থাকে ভয়ানক হিংস্রতা, উৎকট ঘৃণা, হিংসা-প্রতিহিংসা, চরম অশিক্ষা ও দারিদ্র, ধর্মীয় মৌলবাদ ইত্যাদি।
আশার কথা এটাই, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা জানাচ্ছে, এখন রাষ্ট্রপুঞ্জের সদস্য ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪২টি দেশ মৃত্যুদণ্ডকে বাতিল করেছে। কিছু দেশ আবার নীতিগত ভাবে মৃত্যুদণ্ড প্রথা বন্ধ রেখেছে। এই প্রসঙ্গে ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সপ্তম বিশ্ব সম্মেলনে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস-এর বার্তাটি স্মর্তব্য— দ্য ডেথ পেনাল্টি হ্যাজ় নো প্লেস ইন দ্য টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরি।
আর মহামান্য পোপ ফ্রান্সিস-এর বার্তাটি ছিল এই রকম: দ্য ডিগনিটি অব দ্য পার্সন ইজ় নট লস্ট, ইভন ইফ হি হ্যাজ় কমিটেড দ্য ওয়ার্স্ট অব দ্য ক্রাইমস... ইট ইজ় ইন আওয়ার হ্যান্ডস টু রেকগনাইজ় দ্য ডিগনিটি অব ইচ পার্সন অ্যান্ড টু ওয়ার্ক সো দ্যাট মোর লাইভস আর নট এলিমিনেটেড।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে গৃহীত রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ প্রণীত সনদ অনুসারে, ১০ অক্টোবর ‘আন্তর্জাতিক মৃত্যুদণ্ডাদেশ বিরোধী দিবস’ নামে পালিত হয়ে আসছে।
সার কথাটি হল— এক দিকে রাষ্ট্রক্ষমতার আদিম রক্তচক্ষু, অন্য দিকে মানবাধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বমানবিক মূল্যবোধের আপ্রাণ প্রচেষ্টা। একসঙ্গে চার জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ভারত তবে আজ ঠিক কোন পথের শরিক হতে চলেছে?
পৃথ্বীশ মজুমদার
কোন্নগর, হুগলি
সুহাসিনী
পিয়াস মজিদ লিখিত ‘এই মানুষেরা ছিলেন, আছেন’ (২৪-২) শীর্ষক নিবন্ধে, সিলেটের গাঁধীবাদী সমাজকর্মী সুহাসিনী দাসের উল্লেখ দেখে ভাল লাগল। এই প্রসঙ্গে কিছু সংযোজনের জন্যই এই চিঠি।
নোয়াখালিতে ১৯৪৬-এর ১০ অক্টোবর রাতে শুরু হওয়া সেই গণহত্যার অব্যবহিত পরে, অত্যাচারিত লাঞ্ছিত মহিলাদের ত্রাণ ও উদ্ধারের জন্য যে মুষ্টিমেয় সমাজকর্মী এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁদেরই এক জন ছিলেন এই সুহাসিনী দাস।
সিলেটের বাসিন্দা সুহাসিনী ছিলেন শ্রীহট্ট মহিলা সঙ্ঘের সদস্য। তিনি লিখেছেন, ‘‘সঙ্ঘের পক্ষ হইতে দুর্গতদের সাহায্যের জন্য আমরা নোয়াখালী যাইবার সিদ্ধান্ত নিলাম।’’
তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল দু’টি: বাস্তুহারা নিপীড়িতদের সেবা করা; দুই, গাঁধীজি দর্শন। তাঁর সঙ্গে মহিলা সঙ্ঘের আর যাঁরা গিয়েছিলেন: কিরণশশী দেব, লীলা দাশগুপ্ত, সরলাবালা দেব।
নোয়াখালির দাঙ্গাপীড়িতদের ত্রাণের জন্য অশোকা গুপ্ত, আভা গাঁধী, সুচেতা কৃপালানী, নেলী সেনগুপ্ত, সুশীলা নায়ার, বকুল গুহরায়, ঝর্ণাধারা চৌধুরী, ফুল্লরানী দাস, বেলা মিত্র, স্নেহরানী কাঞ্জিলাল প্রভৃতি সমাজকর্মীদের সমান্তরালে এঁরাও নোয়াখালির অত্যাচারিত, নিপীড়িত মহিলাদের উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসনে আত্মনিয়োগ করেছিলেন।
এঁদের মধ্যে অশোকা গুপ্ত এবং সুহাসিনী দাসই ওই গণহত্যা এবং ত্রাণকার্যের বিবরণ লিখে গিয়েছেন। অশোকা গুপ্ত লিখেছেন ‘নোয়াখালীর দুর্যোগের দিনে’, সুহাসিনী দাস দিনলিপির আকারে লিখেছেন ‘নোয়াখালী: ১৯৪৬’।
এই দিনিলিপিতে আছে, নোয়াখালিতে তাঁদের কাজের তারিখ ধরে লিখিত বিবরণ।
এই দিনলিপি প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল ‘সুহাসিনী দাস সম্বর্ধনা’ গ্রন্থে, ১৯৯৯ সালে। বইটি ওই সময়ের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। পশ্চিমবঙ্গের বেশির ভাগ মানুষের কাছেই সুহাসিনী এবং বইটি অজ্ঞাত বলেই মনে হয়।
বিনয়ভূষণ দাশ
গোপজান, মুর্শিদাবাদ
অপুর সংসার
ডাক্তারকে চড় মারা নিশ্চয় অপরাধ। কিন্তু সদ্য পত্নীবিয়োগের পর, বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ে হাসপাতালের ডাক্তারকে চড় মারার ঘটনার সঙ্গে, ‘অপুর সংসার’ চলচ্চিত্রের একটি বিখ্যাত দৃশ্যের সাদৃশ্য আমাদের চমকিত করে। অপু কাজ থেকে বাড়িতে ফিরে দেখে, অপর্ণার গ্রাম থেকে মুরারী একটি বার্তা নিয়ে এসে তার অপেক্ষায় দরজায় দাঁড়িয়ে। সন্তান প্রসব করতে গিয়ে অপর্ণা প্রাণ হারিয়েছে— এ কথা শোনার কয়েক মুহূর্ত পরেই অপুর প্রতিক্রিয়া: সেই বার্তাবাহকের মুখেই সপাটে একটি চড়।
তিল তিল করে বহু কাল ধরে গড়ে তোলা স্বপ্নের সৌধ আর সুন্দর ভবিষ্যতের রূপরেখা এক নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে যায় যখন, তখন অনেক সময়েই, সহজ সরল আপাত নিরীহ ব্যক্তির আচরণ ও প্রতিক্রিয়া তার নিজ আয়ত্তের বাইরে গিয়ে কী ভাবে সকল যুক্তি, তর্ক, রীতি, নীতির সীমা অতিক্রম করে যায়— জীবনদর্শী শিল্পীরা তাঁদের অনবদ্য সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টান্ত দিয়ে গিয়েছেন।
গল্প উপন্যাস সিনেমায় যখন আমরা কিছু পড়ি বা দেখি, তখন কাহিনির নায়কের দুঃখে অভিভূত হয়ে পড়ি। অথচ বাস্তবে সেই একই ঘটনা ঘটলে, আমরা ব্যক্তিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিই। বর্তমান ঘটনায় এর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ।
আবার বলি, ডাক্তারকে চড় মারা কোনও মতেই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু এটাও ভেবে দেখা দরকার, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে তা হয়েছে। আগের কোনও শত্রুতার বশে নয়, সঙ্ঘবদ্ধ আক্রমণের ফলে নয়, এটি হয়েছে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত এক ব্যক্তির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার একটি প্রকাশ রূপে।
কেবলমাত্র রোগীর চিকিৎসাই নয়, তাঁর নিকট পরিজনদের রোগীর অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত রাখাও চিকিৎসকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অবস্থা বিরূপ হলে, নিজেরা স্থির থেকে, পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার যোগ্যতাও তাঁদের থাকা জরুরি। এই বিষয়ে তাঁদের অক্ষমতাই অনেক ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণ হয়ে থাকে।
রণজিৎ চট্টোপাধ্যায়
পর্ণশ্রী, কলকাতা
ভ্রম সংশোধন
‘যোগের প্রচারে মেডিক্যাল কলেজের শল্য চিকিৎসক’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (কলকাতা, পৃ ১৪, ২৯-২) উল্লিখিত চিকিৎসক উৎপল বিট প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান। প্রতিবেদনে তাঁকে শল্য চিকিৎসা (সার্জারি) বিভাগের প্রধান লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy