সহধর্মিণীকে বিবাহবিচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হল শুধুমাত্র তিনি তাঁর স্বামীর রাজনৈতিক দলের বিরোধী দলের কর্মী হিসেবে নিজেকে যুক্ত করেছেন বলে (‘দল ছাড়তেই স্ত্রীকে ছাড়লেন সৌমিত্র’, ২২-১২)। স্তম্ভিত হলাম। আবার সেই সংবাদ রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে সর্বসমক্ষে ঘোষণা করলেন স্বামী। যিনি সাধারণ নাগরিক নন, লোকসভার সাংসদ। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের, সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা, তিনি এক জন জনপ্রতিনিধি। তিনি শুধু পুরুষদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাননি। লক্ষ লক্ষ মহিলাও ভোট দিয়ে তাঁকে সংসদে যাওয়ার ছাড়পত্র দিয়েছেন। আর তিনি কিনা তাঁর স্ত্রী’র পছন্দ অনুযায়ী রাজনীতি করার মৌলিক অধিকারকে নস্যাৎ করে বিবাহবিচ্ছেদের পথে হাঁটলেন? আর সেই সঙ্গে তাঁর পদবি ব্যবহারেও বিধিনিষেধ আরোপ করলেন?
ভারতের নারীরা এক সাংসদের কাছ থেকে নিশ্চয়ই এমন অন্যায় আচরণ আশা করেননি। কেবল তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রের মানুষ নয়, তাঁর এহেন আচরণে দেশের অগণিত মেয়ে দুঃখিত ও লজ্জিত। যতই এক-তৃতীয়াংশ নারীকে জনপ্রতিনিধি করার কথা বলা হোক, তা যে শুধুই ফাঁকা আওয়াজ, মাননীয় সাংসদ তা স্পষ্ট করে দিলেন। পুরুষশাসিত ভারতীয় সমাজে নারীর যে অবস্থান ছিল, আজও তা-ই রয়ে গিয়েছে। সৌমিত্র খাঁ-র এই কাজের পরে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মণিদীপা গুপ্ত, কলকাতা-১৫৭
কান্না কেন?
‘দল ছাড়তেই স্ত্রীকে ছাড়লেন সৌমিত্র’ প্রসঙ্গে বলা যায়, রাজনীতি যে শুধু জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙে তা নয়, স্বামী-স্ত্রী’র ঘরও ভাঙে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আদালতের নির্দেশে যখন সৌমিত্র খাঁ তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্রে যেতে পারেননি, তখন তাঁর স্ত্রী সুজাতা সৌমিত্রকে বিষ্ণুপুর কেন্দ্র থেকে জিতিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিজেপি এর জন্য সুজাতাকে দলের কোনও পদ দেয়নি। এখন তিনি যদি তৃণমূলে যোগ দেন, তাতে অন্যায়টা কোথায়? এর জন্য সৌমিত্র এত চোখের জল ফেলছেন কেন? তিনি যদি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসতে পারেন, তাঁর স্ত্রী কেন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে পারবেন না? ঘর এক হলেও ব্যক্তিগত চাহিদা আলাদাও হতে পারে।
বিজেপিতে যাওয়ার প্রশ্নে সুজাতা বলেন “বিজেপি এখন তৃণমূলের ‘বি’ টিমে পরিণত হচ্ছে। তা হলে আমি ‘বি’ টিমে কেন থাকব? ‘এ’ টিমেই চলে এলাম।” বিজেপি যদি তৃণমূলের ‘বি’ টিম হয়, তা হলে তো বিজেপি-তৃণমূল একই দল। শুধু ‘এ’ টিম আর ‘বি’ টিম। সুজাতা দেবী কি একই দলের আলাদা টিমে গেলেন?
মিহির কানুনগো, কলকাতা-৮১
বিভাজন
অনিতা অগ্নিহোত্রীর লেখা ‘লৌহকঠিন বিভাজনরেখা’ (১২-১২) স্মৃতি উস্কে দিয়ে গেল। শৈশবে আনন্দমেলা-র হাত ধরে পরিচয় ঘটেছিল আশাপূর্ণা দেবী, লীলা মজুমদার, নবনীতা দেব সেন, বাণী বসু, অনিতা অগ্নিহোত্রী, সুচিত্রা ভট্টাচার্য-সহ একাধিক লেখিকার সঙ্গে। সেই বয়েসে এই ‘অদৃশ্য’ বিভাজন বোঝার ক্ষমতা হয়নি। পরে আর একটু বড় হলাম যখন, এঁদের লেখা নিয়ে আলোচনার জন্য পুরুষ বন্ধু পেতাম না।
এক বার বইমেলায় দু’টি কিশোরের আলোচনা কানে আসে। তাদের ভাবনা ছিল, লেখিকাদের লেখা বিষয়গুলির সঙ্গে তারা ঠিক আত্মিক সম্পর্ক অনুভব করে না, তাই পড়ার আগ্রহও হয় না। প্রশ্ন করেছিলাম নিজেকে, সত্যিই কি তবে সাহিত্যে বিভাজনটি এতখানি স্পষ্ট, না কি এটি বাস্তবের লিঙ্গ অসাম্যের একটি প্রতিফলন? বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন হাতে আসে ভার্জিনিয়া উলফের লেখা আ রুম অব ওয়ান্স ওন। ওঁর ভাবনাগুলো বহু শতাব্দী পেরোলেও বোধ হয় একই অবস্থানে রয়ে যাবে, যেমন একই রয়ে যাবে কালি-কলম নিয়ে লিখতে বসা নারীর লড়াইয়ের গল্পগুলো।
অরুন্ধতী সরকার, কলকাতা-৮
ঐতিহ্যের মৃত্যু
অবিভক্ত ভারতে শারীরশিক্ষা শিক্ষক শিক্ষণের প্রথম কলেজটি মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) স্থাপিত হয় ১৯২০ সালে। আর যুক্ত বঙ্গে শারীরশিক্ষা শিক্ষক শিক্ষণের প্রথম সরকারি কলেজটি ১৯৩২ সালে বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে ডেভিড হেয়ার ট্রেনিং কলেজের নিকটবর্তী একটি ভাড়াবাড়িতে শুরু হয়। পরবর্তী কালে ১৯৫৭ সালে এই কলেজটি বাণীপুরে তার নিজস্ব জমিতে স্থানান্তরিত হয়েছে। মাদ্রাজের কলেজটির শতবার্ষিকী এ বছর নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে। আর ঠিক এই বছরেই পঠনপাঠনের উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায়, এবং নির্দিষ্ট শর্তগুলি পূরণ করতে না পারায় এনসিআরটি বাণীপুরের কলেজটির স্বীকৃতি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এর অর্থ, কলেজটি বন্ধ হয়ে যাবে। এক সময় পূর্ব ভারতের সব রাজ্য থেকে, এমনকি বাংলাদেশ থেকেও ছাত্ররা এই কলেজে ভর্তি হয়েছে। শুধু স্কুল-কলেজে নয়, শিক্ষণপ্রাপ্ত ছাত্ররা অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। ১৯৫৯-৬০ শিক্ষাবর্ষে আমি এই কলেজের ছাত্র ছিলাম। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, এই কলেজটি সরকারি অবহেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে আরও তিনটি সরকারি শারীরশিক্ষা শিক্ষক শিক্ষণ কলেজ আছে। সেগুলিও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
তপনমোহন চক্রবর্তী, কলকাতা-৯১
অপরিচয়
‘ঘুরপথে’ (সম্পাদকীয়, ২০-১২) নিবন্ধে অবাঙালি বিজেপি নেতাদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি শিক্ষার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরামর্শটি সদর্থক। কিন্তু বঙ্গভাষীদেরও কি বৃহত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার দায় নেই? ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্বপূর্ণ বাহন সাহিত্য। বাংলা ভাষায় যত ইংরেজি বা ফরাসি সাহিত্যের অনুবাদ হয়েছে, অন্য ভারতীয় ভাষার সাহিত্য অনুবাদ তার ভগ্নাংশও হয়নি। শিক্ষিত বাঙালি যতটা বিশ্বসাহিত্যের সংবাদ রাখতে উৎসুক, অত আগ্রহী নয় তেলুগু, কন্নড়, গুজরাতি, ওড়িয়া বা পঞ্জাবি ভাষা ও সাহিত্যের জন্য। এই ভাষার যশস্বী সাহিত্যিকরাও অপরিচিত— সাধারণের কাছে তো বটেই, ভাষা-সংস্কৃতির গবেষকদের কাছেও। ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট-এর উদ্যোগে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার অনুবাদ প্রকাশিত হলেও তা প্রয়োজনের বিচারে সামান্য। এ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিদেশি ভাষা শিক্ষার বিভাগ থাকলেও, অন্য ভারতীয় ভাষা শিক্ষার বিভাগ তেমন দেখা যায় না।
বহুত্বের সাধনায় দায় কারও একার নয়। বাঙালিকেও নিজের সংস্কৃতি নিয়ে উন্নাসিকতা ভুলে অন্য ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। “আপনি হিন্দি চালিয়ে যেতে পারেন”— ট্রেনের কামরায় জটায়ুকে ফেলুদার ব্যঙ্গোক্তিটিতে হাস্যরস থাকলেও, নিহিতার্থ গভীর। আমাদের মনও লালমোহনবাবুর মতোই ‘দুর মশাই’-এর আলস্যে আবদ্ধ।
কৌশিক চিনা, মুন্সিরহাট, হাওড়া
ফুলঝুরি
মেলার মাঠে এক জন বিক্রেতা চেঁচিয়ে বলছেন, “আসুন, আসুন, মাত্র দশ টাকায় সারা জীবন বসে খান।” বসে খাওয়ার লোভে সব লোক ছুটে গেল। দেখা গেল, তিনি আসন বিক্রি করছেন। ভোটের আগে পরিস্থিতি অনেকটা সে রকম। সামনে ভোট, তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের মুখেই প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। আসলে সব উন্নয়নের গল্পই ওই ‘সারা জীবন বসে খাওয়ার’ মতো। উন্নয়ন সত্যিই হলে প্রচারের দরকার হয় না।
জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ, বেড়ি পাঁচপোতা, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy