শীঘ্রই দেশে করোনা-সংক্রমণ রুখতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে সুইডেন। ছবি: লেখক।
কলকাতায় বাসিন্দা হলেও আমি একটি নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় অনসাইট লিড হিসাবে সুইডেনের গোথেনবার্গ নামে একটি ছোট্ট শহরে এখন কাজ করছি। প্রথম দিকে যখন করোনাভাইরাস সম্পর্কে শুনেছিলাম, তখন ভাবিনি যে, এটি এত বেশি আলোড়ন সৃষ্টি করবে। জানুয়ারিতে কলকাতায় গিয়েছিলাম। ৩১ জানুয়ারিতে এখানে ফিরে এসেছি।
এখানে ফেরার এক সপ্তাহ পর ইটালিতে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এই ভাইরাস। সুইডেন যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশ, এবং ইইউ দেশগুলির মধ্যে সহজেই আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বিকল্প বলে পরিচিত, তার ফলে এখানেও এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুনলাম যে, ইটালিফেরত গোথেনবার্গের এক বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ইটালি এবং চিনে সংক্রামণের হার দেখে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে শুরু করি আমরা। তবে প্রাথমিক ভাবে ভেবেছিলাম যে, ইউরোপীয় দেশগুলি অনেক উন্নত। ফলে এই ভাইরাসের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যাবে। হঠাৎ উভয় প্রতিবেশী দেশ নরওয়ে এবং ডেনমার্ক লকডাউন ঘোষণা করে।
আরও পড়ুন: ‘জীবাণুনাশক ইঞ্জেকশন নিন’, ফের বেফাঁস ডোনাল্ড ট্রাম্প
কয়েক দিন পরে আমাদের অফিসের এক জন করোনায় আক্রান্ত হলেন যিনি অস্ট্রিয়ার স্কি রিসর্টগুলির একটি থেকে ফিরে এসেছেন। আশপাশের কয়েক জন স্থানীয় নাগরিকও এই ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হতে শুরু করলেন। প্রাথমিক ভাবে তাঁরাও ভেবেছিলেন যে এটি সামান্য কোনও ভাইরাস। সাধারণত, সুইডিশ লোকেরা খুব ফিট। দৈনিক হাঁটা, এমনকি বৃষ্টি হলেও তাঁদের জন্য এক প্রকার বাধ্যতামূলক।
এখনও এখানে সমস্ত অফিস, মল, রেস্তরাঁ খোলা রয়েছে। এমনকি জুনিয়র স্কুলগুলিও খোলা। প্রথম দিকে এখানে পাঁচশোর বেশি লোকের জমায়েত নিষিদ্ধ ছিল। যা এখন নামিয়ে আনা হয়েছে পঞ্চাশে। তবে সব কিছুই খোলা। এখন আমাদের অফিস থেকে যতটা সম্ভব বাড়ি থেকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত চার সপ্তাহ থেকে বাড়ি থেকে কাজ করছি আমরা। আমার স্ত্রী, ছেলে, বাবা-মা এবং আত্মীয়স্বজন ভারতে রয়েছেন। আমি এখন তাঁদের সম্পর্কে উদ্বিগ্ন।
আরও পড়ুন: বাইরে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে গিয়ে আরও বিপদ ডেকে আনব না তো?
ইতিমধ্যেই এখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ১২ হাজার অতিক্রম করেছে। সংক্রমণের সংখ্যা দেখে এ দেশের সরকার একটি বিবৃতি জারি করেছে যে, খুব শীঘ্রই তারা কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারে। বিশ্বের মধ্যে সুইডেন একমাত্র দেশ, যা এখনও করোনার বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সুপারমার্কেটগুলি খোলা, অনলাইন কেনাকাটাও চলছে। প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য যা প্রয়োজন, তা আমরা অনলাইনেই অর্ডার করছি।
আগে যখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতাম, তখন বলতাম, আমার পরিবার যেন সুস্থ ও সুরক্ষিত থাকে। তবে এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পুরো বিশ্বকে যখন দেখছি, তখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, পৃথিবী-মা’কে যেন আবার স্বাভাবিক হয়। আশা করি, খুব শীঘ্রই সব কিছু স্বাভাবিক এবং সুরক্ষিত হয়ে উঠবে।
সাগ্নিক বসাক, গোথেনবার্গ, সুইডেন
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy