—ফাইল চিত্র।
স্মার্টফোনের যুগে ঘুড়ি ওড়ানোর ঐতিহ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু দীর্ঘ লকডাউনে ফিরে এসেছে বাংলার সেই হারিয়ে-যাওয়া সংস্কৃতি— ঘুড়ি ওড়ানোর বিকেলবেলা। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা এখন ঘরবন্দি। তাই বিকেলে একটু প্রাণের আনন্দ পেতে তারা ঘুড়ি ওড়াতে মেতে উঠেছে। বিকেলের আকাশে চোখ মেললেই ঘুড়ির লড়াই। অনেকে সমাজমাধ্যমে নিজেদের ঘুড়ি ওড়ানোর ছবিও পোস্ট করছেন।
মাঠের ফুটবল-ক্রিকেট খেলাও আজ বন্ধ করোনা-আতঙ্কে। তাই ঘুড়ি ওড়ানোর হিড়িক এ বার ছাপিয়ে গিয়েছে গত কয়েক বছরকে। ছাদে কিংবা মাঠে ঘুড়ি ওড়ালে ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’-ও যথাযথ বজায় থাকছে। সব মিলিয়ে এই বছর ঘুড়ির চাহিদা অনেক বেড়েছে। ক্রেতাদের ঘুড়ি, লাটাই ও সুতোর জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ঘুড়ি ব্যবসায়ীদের। বেশ লাভের মুখ দেখছেন তাঁরা।
আজকাল শিশুরা সাধারণত কম্পিউটার বা ভিডিয়ো গেম খেলেই সময় কাটায়। স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে থাকে তরুণ প্রজন্ম। এদের সবাইকে মাঠে ফেরাতে দারুণ কাজ করছে ঘুড়ি। করোনাভাইরাস বাঙালিকে কয়েকটি প্রাণের উৎসব থেকে বঞ্চিত করেছে ঠিকই, কিন্তু ঘুড়ি ওড়ানোর আনন্দ ফিরিয়ে দিয়েছে।
বিপদতারণ ধীবর
বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া
তাঁর পাড়া
‘গঙ্গার ঘাট থেকে বিসর্জনের প্রথম ধারাবিবরণীও তাঁর’ (রবিবাসরীয়, ১৩-৯) পড়ে অনেক অজানা তথ্য জানতে পারলাম। উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে রামধন মিত্র লেনে আজও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের স্মৃতি-বিজড়িত বসতবাড়িটি রয়েছে, এবং বাড়ির ফলকে তাঁর নাম, জন্মদিন ও মৃত্যুদিন উল্লিখিত আছে। রামধন মিত্র লেন ও তেলিপাড়ার সংযোগস্থলে তাঁর আবক্ষ একটি মূর্তিও আছে। কিন্তু ‘রামধন মিত্র লেন’ গলিটার নাম পাল্টে কি ‘বীরেন্দ্রকৃষ্ণ লেন’ বা ‘বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সরণি’ রাখা যেত না?
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁকে সশরীরে দেখার। যদিও তখন খুবই ছোট ছিলাম। তিনি যে কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন, প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল তখন, যখন ১৯৭৬ সালে রেডিয়োতে মহালয়ার দিন ভোর চারটের মহিষাসুরমর্দিনী বন্ধ করে প্রচার করা হয়েছিল ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তীর ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’। উত্তমকুমারের ভাষ্যপাঠ ও নতুন কথায়-সুরে এক ঝাঁক বিশিষ্ট শিল্পীদের দিয়ে তৈরি সেই অনুষ্ঠান ছিল ফ্লপ। পরে মহানায়ক নিজেও স্বীকার করেছিলেন, খুবই ভুল হয়েছে। সে বারেই যুগান্তর পত্রিকায় ‘আমার ক্ষোভ নেই’ শিরোনামে তাঁর ছবি-সহ সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল। এর থেকে বড় স্বীকৃতি আর কী থাকতে পারে? ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই উত্তমকুমার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বেলভিউ নার্সিংহোমে। পর দিন কেওড়াতলা মহাশ্মশানে অন্তিম যাত্রার ধারাভাষ্য দেন বিরূপাক্ষ, তথা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহাশয়। কাঁদতে কাঁদতে, অতুলনীয় বাচনভঙ্গিতে।
গৌতম মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-১০১
তিন সুরকার
শুভাশিস চক্রবর্তীর নিবন্ধটি থেকে জানতে পারলাম, রবীন্দ্রনাথের ‘‘দিনের শেষে ঘুমের দেশে’’ কবিতাটির প্রকৃত সুরের কাঠামোর স্রষ্টা হলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। পঙ্কজকুমার মল্লিক নন। এই প্রেক্ষিতে জানাই যে, এই গানটিতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও সুরারোপ করেছিলেন। যত দূর জানি, এই গানের ‘‘সাঁঝের বেলা ভাঁটার স্রোতে’’ স্তবকের ৪টি লাইনে সুরারোপ করা ছিল না। এবং পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে কোথাও শুনেছি বলে মনে হয় না। ১৯৭২ সালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নিজের প্রযোজিত, পরিচালিত ও সুরারোপিত অনিন্দিতা ছবিতে গানটি স্বকণ্ঠে রেখেছিলেন। সেখানে ওই স্তবকটিতে সুরারোপ করেছিলেন হেমন্ত। সুতরাং বলা যেতে পারে, রবীন্দ্রনাথের ওই গানটির সুরকার হলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজকুমার মল্লিক এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। যদিও এই গানের কৃতিত্ব হেমন্ত ভাগ করে নেননি। অনিন্দিতা (১৯৭২) ছবির টাইটেল কার্ডে তিনি পঙ্কজকুমার মল্লিকের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছিলেন। আসলে, মুক্তি (১৯৩৭) ছবিতে পঙ্কজ মল্লিকের কণ্ঠে এই গান শোনা গেলেও পরে সকলের স্মৃতি থেকে হারিয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ই গানটির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
বিশ্বনাথ বিশ্বাস
কলকাতা-১০৫
বাদ পড়েনি
গত পক্ষ কাল ধরে ফেসবুক প্রভৃতি সমাজমাধ্যমে একটি গুজব চলছে এই মর্মে যে, আন্দামানের সেলুলার জেলের সেন্ট্রাল টাওয়ারে খোদিত ফলকগুলি থেকে নাকি পাঁচ শতাধিক স্বাধীনতা সংগ্রামীর (অধিকাংশই বাঙালি এবং বামপন্থী!) নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এই গুজবে চিন্তিত হয়ে বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উত্তরসূরিদের দু’-এক জন এ ব্যাপারে খোঁজখবরও নিয়েছেন।
গত ৪ সেপ্টেম্বর এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন করা হয়েছিল এই তথ্যগুলি জানতে চেয়ে— ১) সেলুলার জেলের সেন্ট্রাল টাওয়ার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম-খোদিত কোনও ফলক সম্প্রতি সরানো হয়েছে কি না, ২) ১৯০৯-১৯৩৮ সালের মধ্যে সেলুলার জেলে বন্দি থাকা কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম সম্প্রতি মুছে দেওয়া হয়েছে কি না।
তথ্যের অধিকার আইন, ২০০৫-এর আওতায় ওই আবেদনের উত্তরে সেলুলার জেলের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক, যিনি পদাধিকার বলে জন-তথ্য আধিকারিকও, ১৪ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি মারফত এক শব্দে উত্তর দিয়েছেন ‘না’। অতএব, যাঁরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উত্তরসূরি এবং অনুরাগী, তাঁদের এই গুজবে চিন্তিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।
অনাদিরঞ্জন বিশ্বাস
পোর্ট ব্লেয়ার, দক্ষিণ আন্দামান
কবির বাড়ি
১৯৩৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কবি বিনয় মজুমদারের জন্মদিন। অকৃতদার এই কবির লেখা ফিরে এসো চাকা, অঘ্রানের অনুভূতিমালা, হাসপাতালে লেখা কবিতাগুচ্ছ, আমাদের বাগানে, নক্ষত্রের আলোয় প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। কৃত্তিবাস পুরস্কারের পাশাপাশি ২০০৫ সালে তিনি পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার ও সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার। ভাবতে অবাক লাগে, এক দিন শুধু কবিতাকে ভালবেসে চাকরি, বিত্ত, বৈভব সব কিছু ত্যাগ করেছিলেন তিনি। এক সময়ে তিনি ছিলেন স্বর্ণপদক-প্রাপ্ত দক্ষ প্রযুক্তিবিদ। পরবর্তী কালে তিনিই বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবি। জীবনের একটা বড় অংশই যাঁর ডুবে গিয়েছিল অভিমান-মিশ্রিত হতাশার অন্ধকারে। জীবিত অবস্থায় দীর্ঘ দিন স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা এই কবিকে নিয়ে চিত্রপরিচালক শংকর কর্মকার তৈরি করেন অন্য আলো, অন্য আঁধার তথ্যচিত্র। কবি বিনয়ের জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা সেলুলয়েডে বন্দি করেছেন তিনি।
২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বর কবির মৃত্যুর পর উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগর স্টেশন-সংলগ্ন শিমুলপুর গ্রামে তাঁর বসতবাড়িটি এখন ভগ্নদশায়। ভেঙে পড়েছে জানালা-দরজা, চার দিকে আগাছার জঙ্গল। প্রায় চার বিঘা জমির উপর কবির বাড়িতে রয়েছে অসংখ্য নারকেল, সুপুরি, তেঁতুল, লেবু, সবেদা গাছ। আর আছে একটি বড় জলাশয়। বেশ কয়েক বছর আগে স্থানীয় সাংসদ তহবিলের অর্থে বাড়িতে পাঁচিল দেওয়ার কাজ হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কবির বাড়ির দুর্দশা দেখলে বড় কষ্ট হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চুরি হয়ে যায় কবির সাহিত্য অকাদেমি পদক, ‘কবি বিনয় মজুমদার স্মৃতি গ্রন্থাগার’-এর আলমারি থেকে। সিআইডি পর্যায়ের তদন্ত হলেও হদিশ মেলেনি। এই ঘটনা বড় লজ্জার।
পাঁচুগোপাল হাজরা
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy