পরঞ্জয় গুহঠাকুরতার ‘লাগাম চাই হিংসার বার্তায়’ (২৯-৮) পড়ে উদ্বিগ্ন বোধ করছি। আমরা বুঝতেও পারি না, ঘৃণার বিষে কী ভাবে নিঃশব্দে বদলে যাচ্ছি। ক্ষমতা লাভের, কিংবা ধরে রাখার জন্য মিথ্যা আর ঘৃণার নিরন্তর প্রচার— এই দু’টি জিনিসের ওপর এখন ভরসা করে ক্ষমতাসীন দল। গত কয়েক বছরে বদলে গিয়েছে ভারতের প্রচলিত রাজনৈতিক ভাষ্যের বয়ান, মানুষের কল্যাণের কথা কিছুটা হলেও যেখানে ঠাঁই পেত। আর এ কাজে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায় সমাজমাধ্যম, যেমন ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ— যা নিয়ন্ত্রিত হয় এক জন ব্যক্তির দ্বারা। সারা বিশ্বেই আজ চরম দক্ষিণপন্থী দলের শাসন। ধর্মীয় আর জাতিগত বিদ্বেষের আড়ালে সম্পদ লুণ্ঠনই অর্থনীতির উদ্দেশ্য। সুতরাং, জনতাপিণ্ডকে ঘৃণা দিয়ে পৃথক করাটা আবশ্যক। মানুষকেও ‘হ্যাক’ করা যায়। আমি যা ভাবাব, সে তাই ভাববে, বলবে। বাস্তব-অবাস্তবের সীমারেখা মুছে দেওয়া যাবে তার মনে। বিশ্বের বহু শাসকের সঙ্গে ফেসবুক মালিকের তাই এত সখ্য।
মাসে ২০০ কোটি সক্রিয় ব্যবহারকারী, ৭০টি ভাষায় উপলব্ধ ফেসবুক আজ নিজেই একটা নিয়ন্ত্রণহীন রাষ্ট্র। শীঘ্রই এর বাজারমূল্য ১০০ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে যাবে, এমনই অনুমান। সুতরাং, রাশ টানার দাবি ন্যায্য হলেও কোথায় লাগাম লাগানো হবে, কী ভাবে? বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? মানুষের শুভবুদ্ধি ছাড়া হিংসার জয়রথ থামানোর কোনও পথ আছে?
অনিন্দ্য ঘোষ, কলকাতা-৩৩
দ্বিচারিতা
পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা বিখ্যাত সাংবাদিক, লেখক, চিত্র নির্মাতা, যাঁর ফেসবুক অনুসরণকারী এই মুহূর্তে ৯০০০ জনেরও বেশি। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ-এ নিজের উপস্থিতি বজায় রেখে, সমাজমাধ্যমের সম্পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা উপভোগ করে, ফেসবুককে হিংসার বার্তাবাহক হিসেবে ব্যাখ্যা করলেন তিনি। এ কি দ্বিচারিতা নয়? হিংসা প্রতিরোধে ব্যর্থতার দায় সমাজমাধ্যমের নয়, ব্যবহারকারী এবং প্রশাসনের। সমাজমাধ্যমের বিস্তৃত ডানায় ভর করে কেউ যদি বিদ্বেষ ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে, তবে তা চিহ্নিত করা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করার দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রশাসনের ব্যর্থতা আড়াল করে সমাজমাধ্যমকে দোষারোপ করা চলে না। জানতে ইচ্ছে করছে, সমাজমাধ্যমে হিংসা বন্ধের জন্য পরঞ্জয়বাবু প্রশাসনকে কত বার সজাগ করতে চেয়েছেন?
মূলস্রোতের মিডিয়া দীর্ঘ দিন যা করে উঠতে পারেনি, মাত্র এই ক’বছরে সমাজমাধ্যম তা পেরেছে। ব্যবহারকারীদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে। বারে বারে সোশ্যাল মিডিয়ার কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে মূলস্রোতের মিডিয়া। সংবাদপত্রের প্রচারসংখ্যা কমে যাওয়া, আয়তন ছোট হওয়া, ক্রোড়পত্র মূল সংবাদপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া, কর্মীসংখ্যা সঙ্কোচন, মহার্ঘ ভাতা সঙ্কোচন— এই সবেরই মূলে সমাজমাধ্যম। সমাজমাধ্যমের বিস্তার কখনওই লাভ করতে পারবে না মূলস্রোতের কাগজ-চ্যানেল। কারণ হল— তাদের পক্ষপাত, রাজনীতির আতিশয্য, বিজ্ঞাপন-নির্ভরতা। মূলস্রোতের মিডিয়া এখন কুয়োর ব্যাঙে পরিণত হয়েছে। সমাজমাধ্যমের ডানায় ভর করে বাঁচা ছাড়া কোনও উপায় তার নেই। এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক পরিসর তথা স্বাধীনতার দিক থেকে মূলস্রোতের মিডিয়ার চেয়ে কয়েকশো মাইল এগিয়ে আছে সমাজমাধ্যম।
দেবাশীষ দত্ত, কলকাতা-৬৩
এঁরা শিক্ষিত?
ফেসবুক মস্ত এক বহুজাতিক সংস্থা, যেখানে বিভিন্ন পদে উচ্চশিক্ষিত ও মেধাবী ব্যক্তিরা যুক্ত আছেন। তাঁদের পক্ষে কি সত্যিই অসম্ভব বাক্স্বাধীনতা ও গালাগালির মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া? যে ভিডিয়ো বা পোস্টগুলি সমাজের মধ্যে, দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্ম দিচ্ছে, দাঙ্গা ছড়িয়ে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটাচ্ছে, সেই ভিডিয়ো বা পোস্টগুলো যদি ‘বাক্স্বাধীনতা’-র যুক্তিতে খারিজ না করা হয়, তবে স্বাধীনতার সংজ্ঞা আজ বদলের খুব প্রয়োজন।
কোনও রাজনৈতিক দলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক কেন ব্যবহৃত হবে? এ ক্ষেত্রে ফেসবুকের কোনও নৈতিক দায়িত্ব থাকে না কি? তার চেয়ে ফেসবুক ঘোষণা করুক যে, অর্থ উপার্জনই তার প্রথম ও শেষ উদ্দেশ্য, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা দেখানোর তার কোনও সদিচ্ছা নেই।
ফেসবুকের এই লুকোচুরি আসলে নৈতিকতার সঙ্গে লুকোচুরি, মানবতার সঙ্গে ছলনা। অনেক শোরগোলের পর সম্প্রতি বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহকে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে নিষিদ্ধ করা হল। কিন্তু এত দেরিতে কেন? কর্তৃপক্ষ কোনও দিন ভেবে দেখেছেন, ইতিমধ্যে কত মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের সাধের এই সৃষ্টি? কত সাধারণ মানুষকে ভয়ে কুঁকড়ে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে ফেসবুককে হাতিয়ার করে? যদি এই ঘটনাগুলো তাঁদের মনকে না নাড়া দেয়, তা হলে তাঁরা নিজেদের ‘শিক্ষিত’ বলে দাবি করতে পারেন কি?
মহম্মদ মগদুম, কালিন্দি, পূর্ব মেদিনীপুর
থিমপুজো নয়
এ বছর দুর্গাপুজোয় বিভিন্ন পুজোকমিটি যে ভাবে পুজোর আয়োজন করতে চলেছে, তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কিছু পুজোকমিটি বিভিন্ন থিমের প্যান্ডেল করতে শুরু করেছে। এতে প্রচুর ভিড় হওয়ার আশঙ্কা। দূরত্ববিধি মেনে কী ভাবে কর্তৃপক্ষ ভিড় সামলাবেন? যতই অল্প করে মানুষকে ভিতরে ঢোকাক, বাইরে যে ভিড় থাকবে, সেখানে নিয়ম নিশ্চিত করা মুশকিল। সরকারের প্রতি আবেদন, অবিলম্বে ঘোষণা করা হোক যে, প্যান্ডেলের সামনের দিক পুরোটাই খোলা রাখতে হবে। ভিতরে প্রবেশ নয়, বাইরে থেকে হাঁটতে হাঁটতে দর্শন করতে হবে। কোথাও দড়ি ফেলে আটকানো যাবে না। পুজো ছোট করে সেই টাকা মানুষের মধ্যে বিতরণ করা উচিত।
তরুণ বিশ্বাস, কলকাতা-৩৫
শিকড়ের দিকে
পোল্যান্ডের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশেও প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় সাত বছর বয়স থেকে। আমরা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিক্ষা নিয়ে ভাবতে শুরু করি আর অন্নপ্রাশন হয়ে গেলেই নামকরা স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা পাকা করি। আড়াই বছর বয়স থেকে ৬ বছর পর্যন্ত শিশুকে যতটা পড়া শেখানো যায়, ৫ বছর বয়সে শুরু করলেও ৬ বছর বয়সে সে তা-ই শিখে নেবে। গলদটা গোড়াতেই। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তে প্রথমেই অভিভাবকদের জন্য বিশেষ নির্দেশ থাকা এবং আইন করার প্রয়োজন ছিল। শিক্ষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে পারলে শিশুশিক্ষার প্রাথমিক বিকাশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই হতে পারে। তবে শিক্ষানীতিতে ৩-৬ বছর, ও ৬-৮ বছর বয়সের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করা হয়েছে। সমস্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে তা মানানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
এই শিক্ষানীতির সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, শিকড়ের খোঁজ ও তাকে চেনার দিক নির্দেশ করা। দেশজ সংস্কৃতি সম্পর্কে না জানলে শিকড় অচেনা থেকে যাবে, যা অসম্পূর্ণ মানুষ তৈরি করবে।
বিভাসকান্তি মণ্ডল, পঞ্চকোট রাজ, পুরুলিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy