পৃথিবী-দিবসে ‘অসুস্থ পৃথিবী’ (সম্পাদকীয়, ২২-৪) সময়োপযোগী লেখা। গোটা বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ মানুষ জলসঙ্কটে প্রত্যক্ষ ভাবে আক্রান্ত। রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব জল উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ২০৩০ সালে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ ভয়াবহ জলাভাবের শিকার হবেন। জলের অপব্যবহার এই সঙ্কটকে আরও দ্রুত করে তুলছে। যে কোনও সঙ্কট থেকে সম্ভাবনার জন্ম হয়। এক সম্ভাবনার কথা বলব, যা রূপায়িত হলে কিছুটা হলেও সঙ্কট নিরসনে ভূমিকা নেবে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের ভূমিকা পালন করতে গিয়ে দেখলাম, একটি ভোটকেন্দ্রের জন্য ভোটের দিন নির্বাচন কমিশনের দেওয়া ব্যবহৃত কাগজগুলি হল— ১৪ পাতার স্পেশাল বুকলেট, ১৫১ পাতার পারফোরেটেড বুকলেট, ভোটারস স্লিপ, কিউ স্লিপ, বিভিন্ন আকারের পোস্টার ও খাম, ২৫টি টেন্ডার ব্যালট, পোলিং অফিসারের সাহায্য পুস্তিকা, প্রিসাইডিং অফিসার এবং প্রথম পোলিং অফিসারের ১৮৪ পাতার দু’টি হ্যান্ডবুক, প্রতিটি ৩৪ পাতার ৩টি ভোটার’স লিস্ট ইত্যাদি।
কোনও জিনিসের চাষে বা শিল্পোৎপাদনে কোন উৎস থেকে কত জল খরচ হয়, তার একটা মাপ আছে, যাকে বলে ‘ওয়াটার ফুটপ্রিন্ট’। লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক রিপোর্ট জানাচ্ছে, একটি ৮০ জিএসএম (গ্রাম প্রতি বর্গ সেমি) এ-ফোর সাইজ়ের (২৯.৭ সেমি x ২১ সেমি) কাগজ তৈরির জন্য ‘ওয়াটার ফুটপ্রিন্ট’ অনুযায়ী ১০ লিটার জল খরচ হয়। এ ক্ষেত্রে কাঠ থেকে কাগজ তৈরি হওয়ার হিসেবই ধরা হয়েছে।
প্রতি হেক্টরে ১০ ঘন মিটার কাঠ উৎপন্ন হয় এমন বনে প্রতি বছর প্রতি হেক্টরে ৬০০০ ঘন মিটার জল বাষ্পীভূত হয় যেমন হিসেবের মধ্যে আছে, তেমনই আছে এক টন কাগজ উৎপাদনের সময় ৬ ঘন মিটার জলের প্রয়োজন হয়। ২০১০-এ ইউনেস্কো’র দ্য গ্রিন অ্যান্ড ব্লু ওয়াটার ফুটপ্রিন্ট অব পেপার প্রডাক্টস: মেথডোলজিক্যাল কনসিডারেন্স অ্যান্ড কোয়ালিফিকেশন জানাচ্ছে, কাগজ তৈরির বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতি টনে ৩০০-২৬০০ ঘন মিটার জলের প্রয়োজন। এই সকল তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, একটি ভোটকেন্দ্রের জন্য কেবলমাত্র নির্বাচনের দিন ব্যবহৃত কাগজপত্র তৈরিতে কয়েকশো লিটার জল ব্যবহার হয়েছে।
তাই ইভিএম, ভিভিপ্যাটের যুগে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সময় কাগজের ব্যবহার কী ভাবে কমানো যায়, তার ভাবনাচিন্তা শুরু করুক। শতাংশের হিসেবে যা-ই হোক, এর ফলে জলসঙ্কট যেমন কমবে, তেমনই কমবে ভোটকর্মীদের কাজ।
নন্দগোপাল পাত্র , সটিলাপুর, পূর্ব মেদিনীপুর
বাংলা বিপর্যয়
ব্যক্তিগত কিছু কাজে সম্প্রতি জলপাইগুড়ি শহরের স্টেট ব্যাঙ্কের মেন ব্রাঞ্চে গিয়েছিলাম। কোভিড বিধি খুব কঠোর ভাবে মানা হচ্ছে দেখে ভাল লাগল। কিন্তু ওই ব্যাঙ্কের মেন গেটের বাইরে যে ই-কর্নার আছে, সেখানে কাচের দরজায় অনেকগুলো জায়গায় কোভিড বিধি মানার জন্য লাগানো লিফলেটগুলো দেখে আমার চক্ষু চড়কগাছ। লেখা আছে, ‘মাসক ছারা প্রবেস নিসেদ’। ব্যাঙ্কে এবং শহরে এত শিক্ষিত লোক। কারও কি চোখে পড়ে না? এত সুন্দর বাংলা ভাষা এত খারাপ ভাবে লেখা হতে পারে, চিন্তা করা যায় না! ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ, দ্রুত ওগুলো ছিঁড়ে ফেলুন।
সঞ্জয় কুমার মিশ্র, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি
ছুটিতেও ক্লাস
করোনা পরিস্থিতিতে গত বছর থেকে সমস্ত সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলো বন্ধ আছে। মাঝে কয়েক দিনের জন্য নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হলেও এই পরিস্থিতিতে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি স্কুলে এই এক বছর অনলাইন ক্লাস থেকে পরীক্ষা— সব নিয়ম মেনে করা হলেও সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলো সেই ব্যবস্থা করেনি। হয়তো পরিকাঠামোর অভাবে অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি। কিন্তু স্কুলের তরফ থেকে যদি নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়, তবে ছাত্রছাত্রীদের উপকার হয়। এই স্কুলগুলিতে সব ধরনের আর্থিক অবস্থার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। ফলে সকলের পক্ষে প্রাইভেট টিউটর রেখে পড়াশোনা করা সম্ভব নয়। গত ২১ এপ্রিল থেকে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলগুলোর গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য গরমের ছুটিতেও যদি অনলাইন ক্লাস চালু রাখা হয়, তবে পড়ুয়ারা উপকৃত হবে।
ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য, চুঁচুড়া, হুগলি
পড়ুয়ার চিন্তা
করোনা অতিমারির প্রভাব ছাত্রছাত্রীদের উপর যেন বিশেষ ভাবে বেশি। অনলাইনে পঠনপাঠন, গৃহবন্দি দশা, পরীক্ষার অনিশ্চয়তা, সর্বোপরি ভবিষ্যৎ-ভাবনা ছাত্রছাত্রীদের শরীরের পাশাপাশি মনেও প্রচণ্ড নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আমি একাদশ শ্রেণিতে পাঠরত। পরীক্ষা দিতে পারব কি না জানি না! স্বল্প সময়ের জন্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও, তা পুনরায় অতিমারির কবলে। ফলত, সর্বভারতীয় বোর্ডগুলি ও একাধিক রাজ্য তাদের পরীক্ষা বাতিল অথবা স্থগিত করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে, পর্ষদ অথবা সংসদ— কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি এযাবৎ। পরীক্ষা হলে স্বাস্থ্য ও প্রস্তুতির ভাবনা, আবার না হলে ভবিষ্যতের ভাবনা। করোনা এক দিন কেটে গিয়ে স্বাভাবিকতা ফিরলেও, শিক্ষার্থীদের মনের স্বাভাবিকতা ফেরানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
দেবার্পন মুস্তাফি, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
কার স্বার্থ?
‘পুনশ্চ’ (২১-৪) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে জানাই যে, লক্ষ লক্ষ কৃষক সিঙ্ঘু, গাজ়িপুর, টিকরি সীমান্তে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অবস্থান করছেন একটিমাত্র দাবিতে— কৃষি ও কৃষক স্বার্থবিরোধী তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হোক। এই আন্দোলনে তিনশোরও বেশি কৃষক মারা গিয়েছেন। অথচ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জনমতকে উপযুক্ত সম্মান দিতে নারাজ। কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই সরকার আলোচনায় সংশোধনে রাজি, অথচ ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টি-সহ কালা কৃষি আইন বাতিলের দাবি মানতে রাজি নয়। আবার মোদী সরকার প্রচার করছে নতুন কৃষি আইন কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবে, কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাবে। কিন্তু যাঁদের জন্য এই আইন, তাঁরাই বিশ্বাস-ভরসা করছেন না। কৃষকরা তাঁদের জীবন-জীবিকা সুরক্ষার দাবিতে অনড়। অন্য দিকে, সরকারের অসংবেদনশীলতা পরিস্থিতিকে জটিলতর করে তুলেছে।
স্বপন মুনশি, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
খাদ্য অপচয়
বর্তমান বিশ্বের এক জ্বলন্ত সমস্যা হল, প্রতি দিন বিপুল পরিমাণ খাবার নষ্ট হওয়া। ভারতও এই সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। বর্তমানে ভারতে খাদ্য উদ্বৃত্ত থেকে যায়। তা সত্ত্বেও বহু মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে ও অপুষ্টিতে থাকছেন। অন্যতম কারণ, অর্থনৈতিক ভাবে প্রান্তিক মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অভাব। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পোকামাকড়ের আক্রমণ, সঠিক উপায়ে খাদ্য মজুত না রাখা প্রভৃতি কারণেও প্রচুর খাবার নষ্ট হয়। উৎসবের দিনে খাবারের অপচয় হয় অনেক বেশি। খাদ্য অপচয়ের ফলে পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যে পরিমাণ খাদ্যের অপচয় হয়, তার উৎপাদনে ব্যবহৃত কৃষিজমিরও অপচয় হয়। সেই খাদ্য তৈরির জন্য যে জল ব্যবহার করা হয়েছিল, তারও অপচয় ঘটে। ফেলে দেওয়া খাবার থেকে তৈরি হওয়া মিথেন গ্রিনহাউস গ্যাস তৈরিতে সহায়ক। খাবারের অপচয় রোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। খাদ্য অপচয় দেশের মানুষের পুষ্টি, উৎপাদনশীলতা এবং অর্থনীতির উপর বড় আঘাত।
দীপঞ্জিৎ ঘোষ, কোলাঘাট, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy