Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Trees

সম্পাদক সমীপেষু: ক্রুশবিদ্ধ প্রতিবেশী

এ ছাড়া সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে ক্ষতিকর রং দিয়ে গাছের গোড়া রাঙিয়ে দেওয়া, বা গোলাকার বেদি নির্মাণের মতো কাজও চলতে থাকে সরকারি দাক্ষিণ্যে

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২১ ০৫:১৪
Share: Save:

ভোটযুদ্ধে নেতানেত্রীদের আকচাআকচির ভিড়ে পেরেকবিদ্ধ গাছের ছোট খবরটি নজর কাড়ল (‘দড়ির চেয়ে সহজ পেরেক পোঁতা, ক্ষতি গাছের’, ১৪-৪)। চটজলদি কাজ হাসিলের এই অবিবেচক কৌশলের বিস্তৃতি আজ সর্বত্র— বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং ঝোলানো থেকে অস্থায়ী ছাউনি বা মাচা নির্মাণ, ময়দানে প্যান্ডেল বা আলোকসজ্জা, সব কাজের সহজতম পদ্ধতি হিসেবে গাছই প্রথম টার্গেট। বছরভর গাছের ডালে সরকারি প্রকল্পের ফ্লেক্স বা ব্যানার আটকে থাকার দৃশ্যও বিরল নয়। এ ছাড়া সৌন্দর্যায়নের লক্ষ্যে ক্ষতিকর রং দিয়ে গাছের গোড়া রাঙিয়ে দেওয়া, বা গোলাকার বেদি নির্মাণের মতো কাজও চলতে থাকে সরকারি দাক্ষিণ্যে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুতের খুঁটির বিকল্পরূপে দীর্ঘাকৃতি গাছের ব্যবহার আশ্চর্য নয়। এই অনুষঙ্গে আসে রাজপথ সম্প্রসারণের জন্য নির্বিচারে বড় গাছ কেটে ফেলার মতো ঠিকাদারি দুষ্কর্মের দৃষ্টান্তও।

“রাজনৈতিক দলগুলির এহেন কাণ্ডজ্ঞানহীনতার প্রধান কারণ সরকারি উদাসীনতা ও নীরব প্রশ্রয়” (‘অত্যাচার’, সম্পাদকীয়, ১৯-৪)। বাস্তবিকই এদের মানসিকতায় ধরা দেয় না বৃক্ষপীড়নের অবশ্যম্ভাবী পরিণাম। পেরেক-বিদ্ধ গাছের অব্যক্ত যন্ত্রণায় যেন অনুরণিত হয় ক্রুশবিদ্ধ জিশুর কাতর আর্তনাদ, “পিতা, এদের ক্ষমা করো। এরা কী করছে তা জানে না।” কালক্রমে অনুভূত হয় প্রকৃতির প্রতিবাদ, তার ধ্বংসলীলার ক্ষত ফুটে ওঠে চরাচরে। কালান্তক ঝড়ের শেষে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে সাজানো গৃহকোণ। খরা, বন্যার প্রাবল্যে নিশ্চিহ্ন হয় জনপদ, ঘাতক জীবাণু দাঁত বসায় সমাজের বুনিয়াদে।

প্রকৃত অর্থেই উদ্ভিদজগৎ “নিশ্চল বা নীরব নহে, তাহাদের চলন-বলন ভিন্ন” (‘ভাষা’, সম্পাদকীয়, ২৮-২)। এই ভিন্নতাকে ন্যূনতম সম্মান না দিয়ে আমরা মেতে থাকি নির্বিচার সবুজনিধনে, উন্নয়নের জোয়ারে বাস্তুতন্ত্রের উপরে আঘাত হানি। অনিবার্য পরিণতি, অতি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ার দাবানল, ভারত ও পূর্ব আফ্রিকায় পঙ্গপালের হানা, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে আমপানের দাপট। আমাদের আগ্রাসী মনোভাব প্রতিফলিত হয় ঋতুচক্রের অস্বাভাবিক পরিবর্তনেও। প্রকৃতির নিয়মবিধিকে ধূলিসাৎ করে আমরা নিজেদের দুয়ারে যেন গণচিতার আয়োজন করে চলেছি।

সুপ্রতিম প্রামাণিক, আমোদপুর, বীরভূম

শাস্তি হোক

‘দড়ির চেয়ে সহজ পেরেক পোঁতা, ক্ষতি গাছের’ সংবাদে গাছের প্রতি অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে, যা পড়ে প্রকৃতি-প্রেমিকরা আর শিউরে ওঠেন না। এই ধরনের অত্যাচার এখন চোখ-সওয়া। ক্লাব, বিভিন্ন ধরনের সংগঠন, রাজনৈতিক দল, এমনকি ক্ষমতাসীন দল নিজেদের স্বার্থে বৃক্ষ ছেদনে বিন্দুমাত্র কসুর করে না। শৈশব থেকেই শুনে আসছি— একটি গাছ একটি প্রাণ। গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান। অথচ, এ সব কথার তোয়াক্কা করে না কেউ। হোর্ডিং, ব্যানার লাগাতে গাছের ডালে পেরেক পোঁতা, শক্ত করে লোহার তার দিয়ে বাঁধন দেওয়া গাছের বৃদ্ধি রোধ করে, মৃত্যুও ডেকে আনে। বিধি ভঙ্গের জন্য নির্বাচন কমিশন যদি প্রার্থীদের শাস্তি দিতে পারে, তবে নিজেদের স্বার্থে গাছের সর্বনাশকারী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করবে না কেন?

উজ্জ্বল গুপ্ত , কলকাতা-১৫৭

পরিণতি

‘অত্যাচার’ (১৯-৪) সম্পাদকীয়টিতে যথার্থই বলা হয়েছে, “গাছ দল বাঁধিয়া প্রতিবাদ, পথ অবরোধ করিতে পারে না”, তাই বিবেকহীন মানুষ তাদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালায়। মানুষ ভুলে যায় যে, পৃথিবীর বুকে মানবের আবির্ভাবের অনেক আগে বৃক্ষের আবির্ভাব। নৈতিকতার প্রশ্ন বাদ দিলেও মনে রাখা উচিত, গাছের ক্ষতি করলে মানুষেরও অপূরণীয় ক্ষতি করা হয়। পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত সাবধান করে চলেছেন, সুন্দরবনের গাছ কাটা অবিলম্বে বন্ধ না হলে কলকাতাকে ভয়ঙ্কর ঝড়ের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে না। গাছকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব সমান ভাবে বর্তায় সরকার ও জনগণের উপর।

“যখন খুশি অঙ্গচ্ছেদন করা যায়” প্রসঙ্গে একটি গাছের মর্মান্তিক পরিণতির উল্লেখ করি। আমি যে আবাসনে বাস করি, তার গেটের ধারে ভিতরের দিকে একটি ২৫-২৬ ফুট দীর্ঘ ‘আরুকারিয়া কলামনারিস’ গাছ রয়েছে। গাছটির বয়স ১৫ বছর। হঠাৎ এক জন কমিটিকে জানালেন যে, গাছটি বিপজ্জনক ভাবে এক পাশে হেলে আছে, যে কোনও সময় পড়ে যেতে পারে। ব্যস! তৎপর কমিটি অগ্র-পশ্চাৎ বিবেচনা না করে গাছটির মাথার দিক থেকে অর্ধেক কেটে বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা করল। যা ছিল একটি নয়নাভিরাম বৃক্ষ, তা এখন এক হাহাকারের রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে। অথচ একটু খোঁজ নিলে জানা যেত, ওই শ্রেণির সব গাছ বড় হলে বেঁকে যায়। গোড়া মজবুত হওয়ায় পড়ে যায় না।

সঞ্জিত ঘটক, কলকাতা-১০৩

প্রচারবৃক্ষ

সম্পাদকীয় ‘অত্যাচার’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা করেছে। তবে শুধু যে ভোটের সময় ফ্লেক্স, ফেস্টুন প্রভৃতি পেরেক দিয়ে গাছের গায়ে টাঙানো হয় তা নয়, অন্যান্য সময় দোকানের বিজ্ঞাপন, শাড়ির, মদ ছাড়ানোর, স্পোকেন ইংলিশ শেখানোর কত রকমের বিজ্ঞাপন যে পেরেক দিয়ে গাছে পোঁতা হয়, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ভাগ্যিস গাছ প্রতিবাদ করতে জানে না।

ধুমধাম করে বৃক্ষরোপণ হয়। কিন্তু তার পর সেই গাছগুলোর যত্ন আর করা হয় না। তাই চারা গাছগুলো বাঁচল, নাকি টিকল না, তার খবর আর কেউ রাখে না। ফলে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগও ব্যর্থ হয়। গাছের গোড়া বাঁধানো যে উচিত নয়, সব জায়গাতে সব গাছ বাঁচে না, এই সাধারণ জ্ঞানও নেই অধিকাংশের। নির্বিচারে চলে বৃক্ষ ছেদন, গাছের উপর নির্যাতন।

সর্বানী গুপ্ত , বড়জোড়া, বাঁকুড়া

এই শিক্ষা?

‘অত্যাচার’ সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলি, শুধু ভোট এলেই যে রাস্তার পাশের গাছগুলির উপরে অত্যাচার চলে, তা নয়। প্রায় বছরভর ধরে চলে এক শ্রেণির প্রাইভেট টিউটরদের অত্যাচার। এঁরা নিজেদের বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন স্কুল-কলেজের পাশে থাকা রাস্তার গাছগুলিকে। সেই গাছে পেরেক কিংবা গজালের সাহায্যে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন টাঙিয়ে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন। এতে অনেক সুস্থ গাছ ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ‘শিক্ষিত’ মানুষের দ্বারা সবুজের উপরে এই আক্রমণ অপরাধ।

রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

নির্ভীক

‘ভোটরঙ্গ’ ক্যাপশনে ছবি ও লেখা দেখে খুব ভাল লাগল (১৯-৪, পৃ ১২)। বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের এক বাসিন্দা পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর কাছে বিরক্তি প্রকাশ করছেন, অনুমতি ছাড়া তাঁর ফ্ল্যাটের দরজায় দলবল-সমেত পৌঁছে যাওয়ার জন্য। মারাত্মক কোভিড পরিস্থিতিতে নেতারা কাণ্ডজ্ঞানহীন হলেও, অনেক সাধারণ মানুষ কিন্তু যথেষ্ট সতর্ক। এ ঘটনা তারই প্রমাণ। সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের মুখের উপরে উচিত কথা বলতেও ভয় পান। কারণ ক্ষমতা ওঁদের হাতে, ক্ষতি হতে পারে। এ ক্ষেত্রে কিন্তু ভোটদাতা সে সবের তোয়াক্কা করেননি। প্রার্থীর সঙ্গে আরও যে দু’এক জনকে দেখা যাচ্ছে, তাঁদের মুখভাব দেখে বোঝাই যাচ্ছে, এই রকম পরিস্থিতিতে বোধ হয় তাঁরা আগে পড়েননি। আমরা বেশির ভাগই মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়েছি। ক্ষমতাশালী লোককে ভয় পাই। এই রকম সময়ে দাঁড়িয়ে ওই নির্ভীক মানুষটিকে ধন্যবাদ জানাই।

সুগত ত্রিপাঠী, মুগবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy