বায়ুদূষণ থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে ট্রামের মতো পরিবেশবান্ধব যান। ফাইল চিত্র।
‘ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটে আবার গড়াতে পারে ট্রামের চাকা’ (২৬-১০) খবরটি পড়ে আশা জাগল যে, কলকাতার রাস্তায় অন্তত আরও একটি রুটে ট্রাম চলতে পারে। কলকাতা যে ট্রামের শহর, সেটা আমরা ক্রমশ ভুলতে বসেছিলাম। আমপান ঘূর্ণিঝড়ের পর কেটে গিয়েছে প্রায় আড়াই বছর। এখনও কেন ধর্মতলা-খিদিরপুর রুটে ট্রাম চালু করা সম্ভব হল না? কলকাতা শহর থেকে যে ভাবে ট্রামকে প্রায় তুলে দেওয়া হল, তা ভাবলে দুঃখ হয়। মেট্রো রেল তৈরি হবে তো ট্রাম তুলে দাও। উড়ালপুলের অবস্থা ভাল নয়, তো ট্রাম তুলে দাও। প্রশ্ন জাগে, উড়ালপুল দিয়ে কি শুধু ট্রামই চলত? অনেকেই বলে থাকেন, কলকাতার রাস্তায় যানজটের জন্য ট্রামই দায়ী। এ এক অদ্ভুত যুক্তি। কলকাতা শহরে বায়ুদূষণ বাড়তে বাড়তে আজ এক ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছে। এ থেকে অনেকটাই মুক্তি দিতে পারে ট্রামের মতো ধোঁয়াবিহীন, পরিবেশবান্ধব যান। ট্রামকে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হোক। না হলে আগামী বছর ট্রামের সার্ধশতবর্ষ পূর্তির গুরুত্বই থাকবে না। সল্টলেক, নিউ টাউন-রাজারহাট, দমদম ও বেলঘরিয়ার মতো জায়গাকেও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত কলকাতার ট্রামের মানচিত্রে। নিউ টাউন-রাজারহাটের মতো সুপরিকল্পিত শহরে ট্রাম চালানোর কোনও পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি, এটা ভেবেই অবাক লাগে।
বিকাশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাকড়দহ, হাওড়া
গাড়ির রূপান্তর
‘অনেক সিএনজি গাড়িকে জরিমানা, নালিশ শিল্পের’ (২২-১০) সংবাদে জানা গেল, সিএনজি কিট বসিয়ে রূপান্তরিত গাড়িগুলি আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে নথিভুক্তি না হওয়ায় চড়া হারে জরিমানা দিতে হচ্ছে বেসরকারি মালিকদের। সরকারি নিগমের চিত্রটি কী? সিএনজি-র সহজলভ্যতার কারণে আসানসোল, দুর্গাপুর ও বর্ধমান ডিপো থেকে সরকারি পরিবহণ নিগম সিএনজি-চালিত বাস চালিয়ে আসছে ২০১৯ সাল থেকেই। তবে সিএনজি বাস হিসাবেই সেগুলি নির্মিত হয়েছিল, ডিজ়েল থেকে রূপান্তরিত হয়নি। অগস্ট ২০২১-এ পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে একটি ডিজ়েল-চালিত বাসে সিএনজি কিট বসিয়ে সেটিকে ‘যুগ্ম জ্বালানি-চালিত বাস’-এ রূপান্তরিত করে পথে নামানো হয়। সপ্তাহখানেকের মধ্যে যুগ্ম জ্বালানি-দহন ব্যর্থ হওয়ায়, বর্তমানে বাসটি টিয়া রং সাজে ডিজ়েল-চালিত রূপে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
সব পরীক্ষা সব সময়ে সফল হয় না। কত রকেটই তো উৎক্ষেপণের পরেই ভেঙে পড়ে। গোল বেধেছে অন্যত্র। উপরের ঘটনার পরেও যথাযথ প্রস্তুতি না নিয়ে ৭০টি ডিজ়েল-চালিত বাসকে ‘রেট্রোফিটমেন্ট কিট’ বসিয়ে রাতারাতি সিএনজি-চালিত বাসে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কাজের জন্য ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রথম পর্বে ১১টি বাসকে বেছে নেওয়া হয়েছিল, যেগুলির বয়স ১৫ বছর হতে বেশি দেরি নেই। বাসের জ্বালানি ডিজ়েল থেকে সিএনজি-তে রূপান্তরের পর্বে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ‘ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অটোমোটিভ টেকনোলজি’ বা ‘আইক্যাট’-এর নির্দেশিকা অনুসরণ করতে হয়। তার নানা ধাপ পেরিয়ে ‘ট্রায়াল রান’ বা পরীক্ষামূলক চালনায় সফল হলে, তবেই সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে যথাযথ নথিভুক্তির জন্য আবেদন করতে হয়। এর পর কেবলমাত্র সিএনজি-চালিত (‘ডেডিকেটেড সিএনজি’) বাস পথে নামানো যায়। সংসদে এ সংক্রান্ত আইন পাশ হয়েছে। কিন্তু পথ পরিবহণ যে-হেতু রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়, তাই নিজ নিজ আরটিও-গুলিকে অনুমতি রাজ্য সরকারকেই দিতে হয়। দেরিতে হলেও নবান্ন আজ নড়েচড়ে বসেছে। আইক্যাট নির্দেশিকা মেনে চলার ক্ষেত্রে পদে পদে বাধার সম্মুখীন হওয়ায় প্রথম পর্যায়ের ১১টি বাস গত এক বছরে অনেক ধকল সয়ে, আংশিক অঙ্গহানি ঘটিয়ে, বর্তমানে ডিপোতে বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তবে প্রযুক্তির দিক থেকে সফল হলেও এই বাসগুলি আরটিও-র অনুমোদন পেত কি না, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
জি রাজশেখর, শিবপুর, হাওড়া
বিপত্তির কারণ
‘বৌবাজারে বিপর্যয়’ (সম্পাদক সমীপেষু, ৪-১১) শীর্ষক চিঠিতে তুষারকান্তি চৌধুরী সাহস করে কতকগুলো অতি সত্য কথা লিখেছেন। তাঁর মতে, খনন কাজ চলার সময়ে সম্ভবত কোনও ইঞ্জিনিয়ার সাইটে ছিলেন না, ওয়েল পয়েন্ট নিষ্কাশন ব্যবস্থা চালু ছিল না, অথবা যথাযথ ছিল না। খুব সম্ভবত মেট্রো কর্তৃপক্ষ এবং কর্পোরেশনের অফিসাররা সঠিক ভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে ঠিকাদারের উপর সব ছেড়ে দিয়েছিলেন, ঠিকাদার আবার ছোট ঠিকাদারের উপর ভার দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন। সবাই যদি নিজের নিজের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতেন, তবে হয়তো বিপত্তি এড়ানো যেত, বা এতটা ক্ষতি হত না। আগে থেকে সাবধানতা অবলম্বন করলে এতগুলো মানুষকে হঠাৎ করে গৃহহীন হতে হত না। আর একটি কথা, প্রথমে ঠিক ছিল যে বৌবাজার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ মোড় হয়ে সুড়ঙ্গ যাবে, তার জন্য এক একর জমিও অধিগ্ৰহণ করা হয়েছিল। বৌবাজার, মহাকরণ হয়ে গঙ্গার তলা দিয়ে হাওড়া ময়দানে যাওয়ার কথা ছিল। কিছু ব্যবসায়ী আপত্তি করাতে সরল পথকে জটিল করে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরত্ব ও সময়ের অপচয় বাড়িয়ে কাজ করতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দিয়েছে।
এ বার কী ভাবে কাজ করলে বিপত্তি এড়ানো যায়, বা কম ক্ষতি হয়, সে বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা বলব। ১৯৯৭ সালে আমি ‘নিউ ইয়র্ক সিটি ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্টেশন’-এর প্রজেক্ট ম্যানেজার ছিলাম। সেই সময় নিউ ইয়র্ক শহরের কুইন্সে একটি ব্রিজ তৈরির কাজে যুক্ত ছিলাম। ব্রিজের তলা দিয়ে মাইক্রো টানেলিং হচ্ছিল। আমরা প্রতি মাসে, বা অবস্থা অনুযায়ী কমিউনিটি বোর্ডের সঙ্গে মিটিং করতাম, এবং মত বিনিময় করতাম। টেকনিক্যাল ব্যাপারে সমস্ত দায়িত্ব এবং সিদ্ধান্ত আমাদের ছিল, কিন্তু স্থানীয় মানুষের সুবিধা অসুবিধার ব্যাপারে কমিউনিটি বোর্ডের মতামত মেনে চলতে হত। এত সব করেও অত্যধিক কম্পনের ফলে একটি বাড়ির ভিতে সামান্য ফাটল দেখা দেয়। ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে ডিপার্টমেন্ট এবং কন্ট্র্যাক্টরকে আদালতে নিয়ে যান। মাত্র তিন মাসের মধ্যে আদালতের বাইরে অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়ে যায়। আমাদের এখানে এ রকম হয় কি? বোধ হয় হয় না, এখানে নেতা-নেত্রী যা বলবেন সেটাই বেদবাক্য, ভুল সিদ্ধান্ত হলেও কোনও অসুবিধা নেই, বিরোধিতা করার কেউ নেই, করলেই বা কে শুনছে? কোনটা ঠিক, কোনটি বিপজ্জনক, বেশির ভাগ মানুষ সেটাই জানেন না, জানলেও মুখ খোলার সাহস নেই।
ছোটবেলায় শিখেছি, সৎ না হলে কোনও মহৎ কাজ করা যায় না। আজ আমাদের শিক্ষার কোনও দাম নেই, একচ্ছত্র শাসন চলছে, দড়ি ধরে টান মারার মতো মানুষ কোথায়? সত্য যে, প্রাতিষ্ঠানিক অপদার্থতাই আজ আমাদের প্রধান সম্পদ।
অলোক সরকার, কলকাতা-৭৫
আঁস্তাকুড়
সরকারি উন্নয়নের পরিকল্পনায় শহরের আঁস্তাকুড় হয়ে উঠেছে গ্রাম। প্রচুর প্লাস্টিক-সহ শহরের যাবতীয় আবর্জনা ফেলা হচ্ছে গ্রামের তিন-ফসলি জমির পাশে, বা রাস্তার ধারে। যদিও এ কথা অজানা নয় যে, প্লাস্টিকের মতো বর্জ্য কতটা দূষিত করে উর্বর জমিকে। খাদ্য উৎপন্ন করে যে জমি, তাকে প্লাস্টিক এবং বিবিধ বিষাক্ত রাসায়নিকে দূষিত করা হচ্ছে। গ্রামের শিয়াল, কুকুর, গরু এবং নানা প্রজাতির পাখি বর্জ্যের স্তূপ থেকে ক্ষতিকর বস্তু খাওয়ার ফলে রোগগ্রস্ত হচ্ছে। আবর্জনার দুর্গন্ধে গ্রামের মানুষ, বা রাস্তা ব্যবহারকারী যাত্রীরাও টিকতে পারছেন না। ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানে গ্রামকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদ হোক।
মৌসম রায়, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy