—ফাইল চিত্র।
অভিজিৎ চৌধুরীর ‘নিট-এ ঢাকা অন্ধকার’ (২০-৬) প্রবন্ধটি সময়োপযোগী। নিট পরীক্ষার দুর্নীতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে প্রবন্ধকার সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের অবনমনের সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রের গ্লানিকে যুক্ত করে তার সঙ্গে পুঁজির খেলাকেও মিলিয়ে বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছেন।
যে চরম দুর্নীতি শিক্ষক নিয়োগ ও নিট পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, সেটা আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং দীর্ঘ দিন চলে আসা বেনিয়ম ও তার পথ ধরে পুঁজির অনুপ্রবেশের সম্মিলিত ফল। শিক্ষাব্যবস্থায় এই বেনিয়ম অন্যান্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যেরই পরিণতি। পুঁজিই যে সমস্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নিয়ন্তা, এ ব্যাপারে বিতর্কের অবকাশ নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচিত সরকারের ভূমিকা এই পুঁজির ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সেই পুঁজির সর্বগ্রাসী প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে অতন্দ্র প্রহরীরূপে সমাজরক্ষকের ভূমিকা পালন করা। কিন্তু নির্বাচিত সরকার যদি সমস্ত ব্যবস্থাকে সেই পুঁজির কাছেই সমর্পণ করে, তখন নিঃসন্দেহে রক্ষকই ভক্ষকের ভূমিকায় পরিবর্তিত হয়।
দেশের কিছু কোচিং সেন্টারের যোগসাজশে সিংহভাগ সরকারি নিয়োগ যে বেশ কিছু কাল ধরেই হয়ে আসছে, সে কথা জেনেও না জানার ভান করা হয়েছিল, না কি কর্তাব্যক্তিরা নিজেরাই এই অত্যন্ত ঝুঁকিহীন ও লাভজনক ব্যবসায় পুঁজি বিনিয়োগ করেছিলেন, তা কেবল কোনও নিরপেক্ষ তদন্তেই প্রকাশ হতে পারে। রঞ্জিত ডনের নাম এক বার কিছু দিনের জন্য সংবাদপত্রের শিরোনামে এসেছিল। মেডিক্যাল পরীক্ষা ছাড়াও ক্যাট ও সিবিএসই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছিল। রঞ্জিতকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়াও মধ্যপ্রদেশের ব্যপম কেলেঙ্কারির কথা আমরা সবাই জানি। বেশ কয়েক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা ফাঁস হতেই এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ৪০-এর বেশি মানুষের রহস্যজনক ভাবে মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হয়। লক্ষণীয় যে, এই সব বড় দুর্নীতির কোনও মাথাই কিন্তু কোনও তদন্তের রায়ে জনসমক্ষে আসেনি। এর কারণ এটাই যে, প্রশাসনিক কর্তারাও চাননি তাঁদের দুর্নীতি প্রকাশের মাধ্যমে তাঁদের স্বরূপ প্রকাশ পাক। তাই জনগণের স্মৃতি বিলোপের কথা মাথায় রেখে কমিটি গঠন করা হয়, যার খোঁজ পরে আর কেউ রাখেনি।
আর্থিক অসাম্যের ফলে মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে আসে অপরিমিত অর্থ। সেই অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে আরও বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলে। আর সেই বিনিয়োগের জন্য নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে রাজনৈতিক নেতাদের সাহায্য লাগে। ঠিক সে কারণেই ধনকুবের-রাজনীতিবিদের সন্ধি সামাজিক শক্তির নতুন উৎস হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। তাই আজ স্বাস্থ্য আর শিক্ষার মতো জনসেবামূলক ক্ষেত্রগুলিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বাণিজ্যিকীকরণের পথে।
সমাজে অসাম্যের বৃদ্ধি এক দিনে হয় না, আবার অসাম্যের হ্রাসও এক দিনে করা সম্ভব নয়। তবে মূল প্রশ্ন এটাই যে, অসাম্য দূরীকরণের ইচ্ছা শাসকের আছে কি না, আর সরকারের চালিকাশক্তি এই দূরীকরণের পক্ষে কি না। সরকারি নীতি যদি সমগ্র দেশকে লাগামছাড়া পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তা হলে এই বৈষম্য ক্রমশ চওড়াই হবে। গত কয়েক বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জনসেবামূলক ক্ষেত্রকে বর্তমান সরকার যে ভাবে বেসরকারি পুঁজির জন্য উন্মুক্ত করার উদ্যোগ করেছে, তা ভবিষ্যতে অসাম্য বৃদ্ধির দিকেই ইঙ্গিত করছে।
তড়িৎ দাস, কলকাতা-৬
সরকারের দায়িত্ব
‘অমৃতকালের পরীক্ষা’ (২১-৬) সম্পাদকীয়টির পরিপ্রেক্ষিতে বলি, সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা ‘নেট’ নেওয়ার মাত্র ৪০ ঘণ্টার মধ্যেই তা বাতিলের ঘোষণা ও নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা সত্যিই ‘আজ়াদি কা অমৃত মহোৎসব’-কালে দেশবাসীর কাছে চরম লজ্জার। নেট পরীক্ষা বাতিল হওয়ার কয়েক দিন আগেই সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিট-এ ব্যাপক অনিয়ম ও লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। দুটোই খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। যদি এই সব পরীক্ষায় স্রেফ টাকার জোরে অযোগ্যরা সুযোগ পেয়ে যায়, তা হলে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এই সব পরীক্ষায় ১০০ শতাংশ স্বচ্ছতা বজায় রাখা ভীষণ জরুরি। অথচ, অমৃতকালের সরকার তা দিতে ব্যর্থ।
যারা প্রশ্ন ফাঁস করেছিল, টাকা নিয়ে অযোগ্যদের নিট ও নেট পরীক্ষায় পাশের সুযোগ করে দিতে চেয়েছিল এবং যারা টাকা দিয়ে অন্যায় ভাবে সুযোগ পাওয়ার চেষ্টা করেছিল— এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা করা উচিত। কেন্দ্রে নতুন সরকার শপথ নেওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই নিট ও নেট পরীক্ষার অনিয়ম সামনে আসা, পরীক্ষা বাতিল হওয়া এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা সরকারকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কি এই ভুল শোধরানোর ক্ষেত্রে আদৌ উদ্যোগী হবে? না কি সেন্ট্রাল ভিস্টা, রামমন্দির, বুলেট ট্রেন-এর সারশূন্য আলোয় নিজেদের ঢেকে রাখবে? জনসাধারণ কিন্তু চান নিরাপদ রেলযাত্রা, পরীক্ষায় স্বচ্ছতা। শাসনকালের তৃতীয় দফায় সে দিকেই বেশি মনোনিবেশ করুক সরকার।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
স্বচ্ছতা কোথায়
যে কোনও শিক্ষার্থীর কাছে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য স্বপ্নের মতো। যাদের জেদ আছে জীবনে বড় হওয়ার, তাদের কাছে একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নিজেকে প্রমাণ করার প্ল্যাটফর্ম। এক জন পরীক্ষার্থীকে মানসিক প্রস্তুতিও নিতে হয় এতে সফল হওয়ার জন্য। এই অবস্থায় মেধাবী ছেলেমেয়ের কাছে বড় ধাক্কা হল কেন্দ্রের শিক্ষা-দুর্নীতি। সূক্ষ্ম ভাবে একটা ‘স্বপ্নভঙ্গ’ চাপিয়ে দেওয়া হল এদের উপরে। এ এক অদ্ভুত ‘ক্রোনোলজি’। প্রথমে নিট পরীক্ষা নিয়ে দুর্নীতি, তার পর ইউজিসি নেট পরীক্ষা নিয়ে পরের দিনই বাতিল হওয়া এবং সিএসআইআর নেট বেশ কিছু দিনের জন্য স্থগিত রাখা। এর পর নবতম সংযোজন নিট-পিজি পরীক্ষার আগের দিন রাতে পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া।
স্বাধীনতার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ বরাবরই ছিল। তার পরেও দেশের রাজনৈতিক অস্থির পরিস্থিতি ব্যতীত সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাগুলো তুলনামূলক ভাবে স্বচ্ছতা এবং ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছিল। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের দুর্নীতিমুক্ত বলে প্রচার করে বটে। কিন্তু নিট ও নেট-এর বেনিয়মেই সেই প্রচার অসার হয়ে গেল।
তন্ময় রায়, কলকাতা-১২৩
মেয়েদের জয়
গত ২৮ জুন চেন্নাইয়ে স্মৃতি মন্ধানার ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গড়ল বেশ কিছু রেকর্ড! শেফালি বর্মা ও স্মৃতি দু’জনের ওপেনিং জুটিতে উঠল ২৯২ রান, স্মৃতি করলেন শতরান, আর শেফালি করলেন মেয়েদের টেস্ট ক্রিকেটে দ্রুততম শতরান ও পরে দ্বিশতরান। ভারত ৬ উইকেটে ৬০৩ রান করে, যা আর এক রেকর্ড!
দুর্ভাগ্যজনক, এই রেকর্ডের এখানেই ইতি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড, কেন্দ্রীয় সরকার— কেউই একে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি! কিন্তু এই রেকর্ড পুরুষ ক্রিকেটাররা করলে দেশ ও বিশ্ব জুড়ে মাতামাতি হত। হত পুরস্কারের ছড়াছড়ি! এই যে ভারতীয় ক্রিকেট দল টি২০ বিশ্বকাপ জিতল, এ নিয়ে তুমুল মাতামাতি হচ্ছে, প্রচুর পুরস্কারও পাবেন তাঁরা। এটা উচিত অবশ্যই। তবে ভিন্ন নিয়ম বা বৈষম্যমূলক আচরণ দেখিয়ে নয়। কেন মহিলা ক্রিকেট দল এত ভাল করেও এর সমান মানসম্মান বা আর্থিক পুরস্কার পাবেন না?
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy