বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়ার ঘটনাকে নেহাতই ছোট ঘটনা বলে মনে করা উচিত হবে না। ফাইল ছবি।
পর পর দু’দিন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোড়ার ঘটনাকে নেহাতই ছোট ঘটনা বলে মনে করা উচিত হবে না। এই ঘটনা আসলে আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ। যারা এই ঘটনার পিছনে আছে, তাদের মানসিক সঙ্কীর্ণতা পরিণামে আমাদের রাজ্যের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করেছে। মানসিকতার অধঃপতন না হলে এই ধরনের ঘৃণ্য কাজ করা কখনও সম্ভব নয়। এদের পুলিশ বা প্রশাসন নিয়েও কোনও ভয় নেই। দেশের প্রতি সামান্যতম ভালবাসা ও ভক্তি-শ্রদ্ধা থাকলে এই ধরনের কাজ করা সম্ভব নয়। এই উন্মত্ততার কারণ সামাজিক অবক্ষয়, যার জন্য দায়ী সকল রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাদের ভোটসর্বস্ব রাজনীতি। বর্তমানে সব ঘটনাকেই রাজনীতির রঙে রাঙিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, অন্য দলকে দোষী দেখিয়ে যে কোনও মূল্যে নিজ দলের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর জন্য দেশ ও জাতির ক্ষতি হলেও নেতাদের হেলদোল দেখা যায় না।
শুধুমাত্র পুলিশ দিয়ে এই ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব নয়। এর জন্য চাই আমজনতার মানসিকতার পরিবর্তন। আর এই পরিবর্তন আনতে পারে সকল রাজনৈতিক দল ও নেতাদের আন্তরিক সদিচ্ছা ও দেশভক্তি। এখন দল মত নির্বিশেষে সবাইকে এই ঘটনার নিন্দা করা ছাড়াও দলীয় কর্মীদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও দেশের প্রতি ভরসা ও ভালবাসা তৈরি করতে হবে এবং তাদের বোঝাতে হবে যে, জাতীয় সম্পত্তির ক্ষতির অর্থ নিজেদের ক্ষতি। আসলে আমরা সবাই দেশভক্ত, শুধু চাই সঠিক পথ দেখানোর মতো কিছু আদর্শবান নেতা। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে এক সময়ে বাঙালিদের ইউনিয়নবাজ ও ‘চলছে না-চলবে না’র সমার্থক মনে করা হত। এই জন্য অন্য রাজ্যে বাঙালিদের কাজে নিতে ভয় পেত। ইউনিয়নবাজির তকমা যেতে না যেতেই শিল্পবিরোধী জাতির তকমা লাগানোর একটা চেষ্টা চলছিল। এখন যদি ট্রেনে পাথর ছোড়ার মতো ঘটনা শক্ত হাতে দমন করা না যায়, আমাদের ‘উন্নয়ন-বিরোধী’ তকমা পেতেও বেশি দেরি হবে না।
তাই সকল দলের নেতাদের কাছে অনুরোধ, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠুন। রাজ্যের মঙ্গলের জন্য উস্কানিমূলক মন্তব্য না করে, সবাই মিলে এমন কিছু করুন, যেটা সমগ্র দেশের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং বাঙালি তার হৃতগৌরব ফিরে পায়।
তপন কুমার সরকার, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
দুরন্তের মন্দ গতি
বন্দে ভারত এক্সপ্রেস প্রসঙ্গে দু’টি পত্রের (‘কেবলই চমক’ ও ‘কুড়ি মিনিট’, ৪-১) পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। বন্দে ভারতের এই ট্রেনসেট বোধ হয় ভারতীয় রেলের ভবিষ্যৎ। আগামী পাঁচ বছরে ইঞ্জিনবিহীন ট্রেনসেট দিয়ে রাজধানীও চলতে পারে। বর্তমানে বন্দে ভারত ৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিটে হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি যাচ্ছে, শতাব্দী নিচ্ছে ৮ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। এই ট্রেনের সময়সূচি এমন ভাবেই বানানো হয়েছে, যাতে লোকাল ট্রেনের জন্য এই ট্রেনের লাইন ফাঁকা পেতে কোনও সমস্যা না হয়। ভারতীয় রেল ইতিমধ্যেই হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পথে লাইনের গতি বাড়ানোর কাজ শুরু করেছে। অনেকে বলছেন, আগে পরিকাঠামো সংস্কার করে নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তার পর বন্দে ভারত ট্রেন চালাতে হত। কিন্তু তাতেও আমরা সম্ভবত ‘বন্দে ভারত থেকে বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে’ বলে অনুযোগ করতাম। তা ছাড়া এত দিন ওই পথে শুধুমাত্র শতাব্দী চলত। সম্ভবত একটিমাত্র প্রিমিয়াম ট্রেনের জন্য টাকা খরচ করে পরিকাঠামো সংস্কার হয়নি আগে। একই কারণে উত্তর ভারতে নিউ দিল্লি-দেহরাদূন শতাব্দী, নিউ দিল্লি-কাঠগোদাম শতাব্দী এখনও ১১০ কিমি গতিতেই চলে।
এখন হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারতের সূচনার ফলে উত্তরবঙ্গের দিকে দু’টি প্রিমিয়াম ট্রেন হল। এই ধাক্কায় পূর্ব রেল ও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল তাদের পরিকাঠামো সংস্কার করছে। ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে, বন্দে ভারত কমবেশি ১৫ মিনিট আগে মালদহ পৌঁছে যাচ্ছে, ১৫ মিনিট আগে হাওড়া ঢুকছে। আশা করি, রেল কর্তৃপক্ষ সময়সূচি পরিবর্তন করে যাত্রার সময় আরও কমিয়ে দেবেন। লাইনের গতি বাড়ানোর কাজ হয়ে গেলে হয়তো আরও তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবে ট্রেন।
কেউ কেউ বলছেন, ফেরার যাত্রা শুরু করতে দেড় ঘণ্টার মতো সময় নিউ জলপাইগুড়িতে দাঁড়িয়ে থাকছে বন্দে ভারত, যদিও ওই ট্রেনে ইঞ্জিন খোলা-লাগানোর ব্যাপার নেই। এখানে জেনে রাখা ভাল, দুপুর দেড়টার আশেপাশে নিউ জলপাইগুড়িতে ডাউন ডিব্রুগড় রাজধানী, আগরতলা রাজধানী, উত্তর-পূর্ব সম্পর্কক্রান্তি, গুয়াহাটি-বেঙ্গালুরু, বিবেক এক্সপ্রেস প্রভৃতি অনেক ট্রেনের আনাগোনা লেগে থাকে। তাই নিউ জলপাইগুড়ি থেকে মালদহ পর্যন্ত ফাঁকা পেতে হলে বন্দে ভারতকে বেলা তিনটের পরেই ছাড়তে হবে।
পত্রলেখকদের কেউ বলছেন, ১৯৮৩ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ৯ ঘণ্টা ১০ মিনিটে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়া আসত। আজ ওই ট্রেনের স্টপ কিন্তু ১৯৮৩ সালের চেয়ে নিশ্চিত ভাবেই অনেক বেশি। আর এই স্টপ দেওয়ার ব্যাপারটাও কিছুটা রাজনৈতিক লাভের জন্য (সব ক্ষেত্রে নয়)। যেমন, কিছু বছর আগে হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেসে আসানসোলে স্টপ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যেটা বোধ হয় অপ্রয়োজনীয়। কারণ শিয়ালদহ রাজধানী প্রথম থেকেই আসানসোলে চার মিনিটের স্টপ দেয়। কিন্তু আসানসোলে স্টপের জন্য হাওড়া রাজধানীর হাওড়া থেকে ছাড়ার সময় ১৬:৫৫ থেকে ১৬:৫০ করা হয়, অর্থাৎ যাত্রার সময় ৫ মিনিট বৃদ্ধি পায়। আসানসোলের জন্য শিয়ালদহ রাজধানীতে একটি বা দু’টি কোচ বাড়িয়ে দিলেই হত। প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক কারণে হাওড়া রাজধানীকে পরেশনাথ স্টেশনেও দাঁড়াতে হচ্ছে বিগত দশ-বারো বছর ধরে; তার আগে হাওড়া রাজধানী হাওড়া থেকে বিকেল পাঁচটায় ছাড়ত, নিউ দিল্লি পৌঁছত সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে।
বর্তমানে রেল কর্তৃপক্ষ পরিকাঠামো উন্নয়নে নজর দেওয়ায় ব্যান্ডেল থেকে নিউ ফরাক্কা ডাবলিং এবং বৈদ্যুতিকরণ প্রায় শেষ। অক্টোবর ২০২২ থেকে ওই লাইনে অধিকাংশ ট্রেনের সময়সূচিতে প্রায় ১ ঘণ্টা সময় কমানো হয়েছে। ও দিকে রঙ্গিয়া হয়ে গুয়াহাটি পর্যন্ত বৈদ্যুতিকরণ হয়ে যাওয়ায় কামরূপ এখন গুয়াহাটি পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে চলে। এখানে হাওড়া-বর্ধমান মেন রুটে ব্যান্ডেল থেকে শক্তিগড় তৃতীয় লাইন হয়ে গিয়েছে, হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনে চতুর্থ লাইন হচ্ছে, নৈহাটি-রানাঘাট তৃতীয় লাইন হচ্ছে, মুর্শিদাবাদে নশিপুর ব্রিজের কাজ আবার শুরু হয়েছে। খড়্গপুর থেকে টাটানগরের দিকে তৃতীয় লাইন অনেকটা হয়ে গিয়েছে এবং ওই লাইনে ট্রেনের গতি বাড়িয়ে ১৩০ কিমি করা হয়েছে।
কিন্তু আয়বৃদ্ধির অজুহাতে দূরপাল্লার মেমু/ প্যাসেঞ্জারগুলোকে এক্সপ্রেস বানানো, তুফান/ অমৃতসর/আপার-ইন্ডিয়া প্রভৃতি ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। বাস্তবে এই কারণেই পূর্বা, কুম্ভ ইত্যাদি একদা নামকরা ট্রেনগুলোতে এখন জেনারেল যাত্রীদের বাহুল্য বেশি। বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারকে এখনও স্পেশাল ট্রেন হিসেবে চালানো হচ্ছে প্রতিটি সংরক্ষিত টিকিটে অতিরিক্ত চার্জ আদায় করার জন্য। ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার, রাজগীর প্যাসেঞ্জার, শিরোমণি প্যাসেঞ্জারকে এক্সপ্রেস বানানোর পিছনে কোনও প্রযুক্তিগত কারণ নেই। অন্য দিকে, ১২২৭৩/৭৪ হাওড়া-নিউ দিল্লি দুরন্ত এক্সপ্রেসকে ধানবাদ-গয়া রুট থেকে সরিয়ে জসিডি-পটনা রুটে চালানোটা হাস্যকর। এর ফলে দুরন্তও পূর্বার মতো ২২ ঘণ্টা নিচ্ছে নিউ দিল্লি পৌঁছতে, অথচ যাত্রীদের দুরন্ত এক্সপ্রেসের ভাড়া দিতে হচ্ছে, যা পূর্বার চেয়ে অনেক বেশি।
বন্দে ভারতে পাথর না ছুড়ে আমরা যদি এই জিনিসগুলো তুলে ধরে প্রতিবাদ করি, এবং রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি, তা হলে সবার মঙ্গল।
রোহিতাশ্ব দে, শ্রীবাসনগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy