—প্রতীকী চিত্র।
তূর্য বাইন-এর ‘ভাগ্যিস লেখাপড়া করিনি’ (১৫-৮) শীর্ষক সময়োপযোগী প্রবন্ধটি পাঠ করে স্মৃতির সরণি ধরে অতীতকে মনে করার চেষ্টা করলাম। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে কলেজের পাঠ শেষে, আমাদের মধ্যে কয়েক জন বন্ধুবান্ধব বিভিন্ন রিক্রুটমেন্ট বোর্ড ও সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় নিজেদের শিক্ষালাভের ফলাফল যাচাই করতে উঠেপড়ে লেগেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, জীবিকা নির্বাহের জন্য পেশা প্রবেশ। পেশাগত জীবনে প্রবেশের সরকারি ছাড়পত্র পাওয়ার পর দেখা গেল, মাধ্যমিকের পর পড়াশোনার ময়দান থেকে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া লাস্ট বেঞ্চের কয়েকটি ছেলে দু’চাকার বাহন নিয়ে হুস করে পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে। রাজনীতির গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে শাসক দলের সঙ্গ-লাভের সৌজন্যে তাদের কেউ সরকারি ঠিকাদার, জমি-বাড়ির দালাল, কেউ ইমারতি দ্রব্যের একচ্ছত্র কারবারি। সে সময়েও সমান তালে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক, স্কুল-কলেজ-পুরসভা-পঞ্চায়েতে করণিক শ্রেণি ও অন্যান্য সরকারি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে নিয়োগের বিষয়টি অস্বীকার করার উপায় নেই।
তখন বুঝেছিলাম, পড়াশোনা করার সঙ্গে গাড়ি-ঘোড়া চড়ার সম্পর্ক অতি ক্ষীণ। তা সত্ত্বেও সে সময় মানুষ মনে করতেন, ছেলেমেয়েদের পেটে বিদ্যার কিছু আঁচড় থাকলে সেই যোগ্যতা অনুযায়ী হয়তো তার কর্মসংস্থান হবে। একটু-একটু করে ধারণাটা বদলে যেতে লাগল। পেটে শিক্ষার বুদবুদ থাকার পরিবর্তে, যে কোনও উপায়ে পেটের ভাত জোগাড় করা বেশি জরুরি বলে মনে হল। আর সে কারণেই জীবিকা নির্বাহের প্রশ্নে শিক্ষালাভের পরিবর্তে, নীতি বহির্ভূত যে কোনও পথ বেছে নিতে অনেকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন। সেটা রাজনৈতিক স্বজন-পোষণ হোক কিংবা অনৈতিক অর্থনৈতিক লেনদেন। অর্থাৎ, বিষবৃক্ষের সেই বীজ বপন করা হয়েছিল বহু আগেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা মহীরুহে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষায় আমূল সংস্কার, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং নিয়োগ ক্ষেত্রে যোগ্যতাকে প্রাধান্য দেওয়া ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সেটা বাস্তবায়িত করতে হবে। এ সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ ঘটলে অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে সমগ্র প্রশাসনিক ব্যবস্থা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
দুর্নীতি সর্বত্র
তূর্য বাইনের প্রবন্ধটি সময়োচিত ও প্রাসঙ্গিক। শিক্ষায় কি এক সার্বিক বিপর্যয় শুরু হয়ে গিয়েছে? ছেলেমেয়েরা কি শিক্ষার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে এবং শিক্ষায় কি এই ব্যাধির সংক্রমণ অনেক গভীরে? এ ধরনের নানা প্রশ্নের মুখে আজ রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা। প্রথমেই স্মরণ করা যেতে পারে যে, এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের হাজিরা চার লক্ষের বেশি কমে গিয়েছিল। সেটা নিয়ে রাজ্য সরকারের তেমন কোনও হেলদোল পরিলক্ষিত হল না। শুধু তা-ই নয়, জুলাইয়ের শেষে জানা গেল রাজ্যের কলেজগুলিতে অর্ধেকেরও বেশি আসন খালি রয়েছে। বেশ কিছু নামী কলেজে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও গণিত বিভাগে ভর্তির সংখ্যা এতটাই কম যে, কোর্স চালানো সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাঁকা আসন প্রায় চল্লিশ হাজার। ফলে, যে সব কলেজে খালি আসন আছে, সেখানে ভর্তির সময়সীমা বাড়ানো হয়। এ বিষয়ে শিক্ষক মহলের ধারণা, অনার্স-সহ ডিগ্রি কোর্স তিন বছরের জায়গায় চার বছর করাতে অনেকেই এই প্রথাগত কোর্সের পিছনে এত সময় ব্যয় না করে পেশাগত শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। কারণ, তাতে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একটি বড় অংশের শিক্ষাবিদের মতে, শিক্ষার শেষে চাকরি না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশির ভাগ নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে। শিল্পহীন এই রাজ্যে স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগের হাল খুবই অনিয়মিত। এমনিতেই দুর্নীতির করাল গ্রাসে আজ শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি। যোগ্যদের বসিয়ে রেখে অযোগ্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সমস্ত নিয়োগপত্র। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। অন্য দিকে, সরকারি চাকরি দেওয়ার দায়িত্ব যে কমিশনের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেই কমিশনের বিরুদ্ধেও উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। মেধা বিক্রি হয়ে গিয়েছে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে। সমস্যার গভীরতা সত্যিই অতলস্পর্শী। শিক্ষায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে ব্যাপক কর্মসংস্থানের প্রয়োজন। কিন্তু কী ভাবে এবং কোন পথে, জানা নেই।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
বেহাল শিক্ষা
তূর্য বাইনের প্রবন্ধ সম্পর্কে কিছু বলার আগে মুর্শিদাবাদ জেলার বিষয়ে কিছু অনভিপ্রেত ঘটনার উল্লেখ করতে চাই, যে-হেতু কর্মসূত্রে আমি জেলার প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিলাম। জেলাটি বিরাট। কলকারখানা তেমন নেই, তবে বিড়ি শিল্পের রমরমা। আগে প্রায় চারশো-পাঁচশো কোটি টাকা বিনিয়োগ হত বিড়ির কারবারে। পদ্মা, ভাগীরথী, আরও কিছু নদীর জলস্ফীতির জন্য প্রতি বছর বন্যা হয়। সরকারি অর্থানুকূল্যে নদীর পাড় বাঁধানো হয়েছে নদী বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কিছু করা সম্ভব হয়নি। প্রায় দু’শো কিলোমিটার আন্তর্জাতিক সীমানা বাংলাদেশের সঙ্গে। সুতরাং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর দাপটে সাধারণ মানুষ তটস্থ! দারিদ্র, নিরক্ষরতা এবং ঊর্ধ্বমুখী মা ও শিশুমৃত্যুর হার জেলাটিকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে রাখে। এক বার পালস পোলিয়ো-র প্রচারে গিয়েছিলাম। একটি পরিবারের দশ-বারোটি সন্তানের মধ্যে দু’টি ছেলে পোলিয়ো আক্রান্ত, সেই উদাহরণ দিতে, বাড়ির কর্তা বললেন, “আরে, পোলিয়ো না হলে তো ছুটে, খেলে বেড়াত। বিড়ি বাঁধত কি? তবে না দু’টি পয়সা আসছে!” সুতরাং, প্রবন্ধকারের আশ্চর্য হওয়ার কোনও কারণ নেই। আর এই জেলার রাজমিস্ত্রিদের দক্ষতা সর্বজনবিদিত। কলকাতার বিল্ডাররা তাঁদের অগ্রিম দাদন দিয়ে হাতে রাখে। সুতরাং, যখন সারা দেশে কাজকর্মের আকাল, তখন উচ্চশিক্ষিত হয়ে নিজের কষ্টলব্ধ দক্ষতা কাজে লাগাতে পারবে, এ যুক্তি অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। প্রবন্ধকার উচ্চশিক্ষায় মন্দার কথা বলেছেন। এর কারণ সহজেই অনুমেয়। এক সময় অনেকেই এঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারি পড়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সাধারণ পাঠক্রম পছন্দ করতেন। উচ্চশিক্ষা নিয়ে এক দল স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করতেন, আর এক দল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসে সরকারি চাকরি করতেন। শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার আশা এখন হাস্যকর। তবে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি সত্ত্বেও এখনও সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে চাকরি পাওয়া যায়। যদিও স্বজনপোষণ যে হয় না, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। আর ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি এঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যাল কলেজে কাঞ্চনমূল্যে ভর্তির ব্যবস্থা থাকলেও আসন তো ফাঁকা থাকবেই! তবে, প্রবন্ধকার শেষ ছত্রে যা বলেছেন, তার সঙ্গে আমি সহমত— বিভিন্ন সার্ভিস কমিশনগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। অবশ্যই সেখানে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সদস্য হিসাবে থাকবেন না। থাকবেন শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন ক্ষেত্রের অবসরপ্রাপ্ত প্রথিতযশা মানুষজন।
সুবীর ভদ্র, কলকাতা-১৫১
নোট চাই
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে দশ ও কুড়ি টাকার নোটের আকাল চলছে। বিশেষ করে দশ টাকার নোটগুলোর ভয়ঙ্কর দুর্দশা। বেশির ভাগ দোকানি, টোটো ও ভ্যান চালকরা পঞ্চাশ বা একশো টাকার খুচরো দিতে চান না। তবে, তাঁদের কাছেও পর্যাপ্ত খুচরো থাকে না। শুনেছি অন্য অনেক রাজ্যে এই ধরনের সমস্যা নেই। অবিলম্বে এ রাজ্যে দশ ও কুড়ি টাকা নোটের যথেষ্ট সরবরাহ করা হোক।
অমিতাভ দাশ, কলকাতা-১২৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy