Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Netaji Subhas Chandra Bose

সম্পাদক সমীপেষু: রাইটার্স অভিযান

রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের সময়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের অফিস রাইটার্সে ছিল না। পুলিশ কমিশনারের অফিস ছিল সদর দফতর লালবাজারে।

A Photograph of Netaji Subhas Chandra Bose

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৪:১৫
Share: Save:

কানাইলাল জানার প্রবন্ধের সূত্রে (শাসকের আজ্ঞাবাহী হওয়া আমার বিবেকবিরুদ্ধ, রবিবাসরীয়, ২২-১) এই চিঠি। ৮ ডিসেম্বর, ১৯৩০ যে ঐতিহাসিক রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান ঘটে, সে প্রসঙ্গে প্রবন্ধকার লিখেছেন, বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স নেতাজিরই সৃষ্টি। ১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেসের সময়ে বিভিন্ন দল ও উপদলে বিভক্ত বাংলার বিপ্লবী তরুণ ও যুবরা সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে পারস্পরিক ভেদাভেদ ভুলে যে ভাবে ঐক্যবদ্ধ হন, তা ছিল অভূতপূর্ব। অভ্যর্থনা সমিতির তরফে কংগ্রেস অধিবেশন সুশৃঙ্খল ভাবে পরিচালনার জন্য একেবারে সামরিক কায়দায় গড়ে তোলা এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর প্রধান (জিওসিইনসি) ছিলেন সুভাষচন্দ্র। এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী লোকমুখে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ নামটি যে সুভাষচন্দ্র বা কংগ্রেস নেতৃত্বের অন্য কারও দেওয়া নয়, তা বোঝা যায় ১২ ডিসেম্বর, ১৯২৮ সালে আনন্দবাজার পত্রিকা’য় প্রকাশিত সুভাষচন্দ্রের একটি বিবৃতি থেকে, যেখানে তিনি ‘কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী’ কথাটি ব্যবহার করছেন, এবং নিজেকে ‘জেনারেল অফিসার কমান্ডিং’ বলে পরিচয় দিচ্ছেন। বিবৃতির কোথাও ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ কথাটির উল্লেখ নেই। যা-ই হোক, সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বাধীন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের ভূমিকা এতটাই গৌরবোজ্জ্বল ছিল যে, পরবর্তী কালে ঢাকা মুক্তিসঙ্ঘের স্রষ্টা হেমচন্দ্র ঘোষ তাঁর সংগঠনের নাম বদলে করে দেন‌ ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ বা ‘বিভি’। বিভি-র নেতৃত্বে যে রাইটার্স অভিযান হয়েছিল, তার সঙ্গে নেতাজির কোনও সংস্রব ছিল না, ছিল হেমচন্দ্র ঘোষ ও তাঁর সহকর্মী বিপ্লবীদের।

দ্বিতীয়ত, রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের সময়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের অফিস রাইটার্সে ছিল না। বরাবরই পুলিশ কমিশনারের অফিস ছিল সদর দফতর লালবাজারে। তৃতীয়ত, সর্বভারতীয় রাজনীতিকদের মধ্যে নেহরু ছাড়া আরও কেউ কেউ (যেমন ১৯২১-২২ সালে আবুল কালাম আজ়াদ) আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে দেশবন্ধু ও সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে কিছু দিন বন্দি ছিলেন। আলিপুর সেন্ট্রাল জেলকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মরণে মিউজ়িয়মে পরিণত করা হলেও অনেক খ্যাতনামা স্বাধীনতা সংগ্রামী— যেমন কাজী নজরুল ইসলাম, বিপ্লবী বাঘা যতীন, নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (এম এন রায়), যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়, ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, ভূপেন্দ্র কুমার দত্ত প্রমুখ যে এই জেলে বন্দি ছিলেন, সেটা তুলে ধরা হচ্ছে না কেন বোঝা যাচ্ছে না। সর্বোপরি, ১৯২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ অগস্ট পর্যন্ত আলিপুর সেন্ট্রাল জেলের যে সেল-এ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন বন্দি ছিলেন বলে মিউজ়িয়ম কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, তা যে সম্পূর্ণ ভুয়ো, তা দেশবন্ধু-কন্যা অপর্ণাদেবীর লেখা মানুষ‌ চিত্তরঞ্জন বইটি পড়লে জানা যায়।

শুভেন্দু মজুমদার, কল্যাণী, নদিয়া

নেতাজি

নেতাজি কন্যা অনিতা বসু নেতাজির মতাদর্শের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক তুলে ধরেছেন, যা এ দেশে নেতাজি-চর্চায় খুব বেশি আলোচিত হয়নি (সুভাষের উল্টো পথে সঙ্ঘ, দাবি কন্যা অনিতার, ২২-১)। সেই সুযোগেই আরএসএস-বিজেপি নিজেদের নেতাজি-বন্দনার ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করছে। নেতাজি সরাসরি হিন্দুত্ববাদীদের বিরোধিতা করেছিলেন। ১৪ জুন, ১৯৩৮ সালে কুমিল্লায় একটি ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “...হিন্দুরা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলিয়া হিন্দুরাজের ধ্বনি শোনা যায়। এগুলি সর্বৈব অলস চিন্তা।... শ্রমসিক্ত জনসাধারণ যে সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সম্মুখীন, সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি তার কোনটির সমাধান করিতে পারিবে কি? কিভাবে বেকারত্ব, নিরক্ষরতা, দারিদ্র প্রভৃতি সমস্যার সমাধান হইবে সে সম্বন্ধে তাহারা কোনও পথ নির্দেশ করিয়াছে কি?” চল্লিশের দশকের গোড়ায় তিনি সাম্প্রদায়িক শক্তি সম্পর্কে গভীর উদ্বেগে সতর্ক করে বলেছিলেন, “হিন্দু মহাসভা... অত্যুগ্র সাম্প্রদায়িকতা পোষকতা করতে শুরু করেছে, বাংলাদেশের এবং অন্যত্র হিন্দুদের মন বিষিয়ে দেবার উদ্দেশ্যে দিনের পর দিন সাম্প্রদায়িক বিষ উদ্গার করে চলেছে।... হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগের মত সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলি আগের থেকে অনেক বেশি সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছে।” (ফরোয়ার্ড ব্লক পত্রিকায় স্বাক্ষরিত সম্পাদকীয়, ৪ মে, ১৯৪০)। ওই একই বছর ঝাড়গ্রাম শহরে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, “ধর্মের সুযোগ নিয়া ধর্মকে কলুষিত করিয়া হিন্দু মহাসভা রাজনীতি ক্ষেত্রে দেখা দিয়াছে। হিন্দুমাত্রেরই এর নিন্দা করা কর্তব্য।” (আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ মে, ১৯৪০)। তিনি হিন্দু মহাসভার কথা না শোনার জন্য আবেদন করেছিলেন।

দারিদ্র, নিরক্ষরতা ও ব্যাধি দূর করা, বিজ্ঞানসম্মত উৎপাদন ও বণ্টনের সমস্যা সমাজতান্ত্রিক উপায়েই সমাধান করা যেতে পারে বলে নেতাজি মনে করতেন। তাঁর নানা রচনায় সে কথা মেলে। মার্ক্সের দর্শনকে তিনি ঊনবিংশ শতকে মানব সভ্যতায় জার্মানির উল্লেখযোগ্য একটি অবদান বলে মনে করেছেন। মথুরায় ১৯৩১ সালে একটি জনসভায় তিনি বলেছিলেন, কমিউনিজ়মের বিশ্বজনীন এবং মানবিক আবেদন সত্ত্বেও ভারতে তার বেশি অগ্রগতি হয়নি। তার প্রধান কারণ, কমিউনিজ়মের সমর্থকরা যে সব পদ্ধতি এবং কলাকৌশল অবলম্বন করেছেন, সেগুলি মানুষকে আকর্ষণ করে বন্ধু ও সহযোগী বানানোর চেয়ে বরং শত্রুভাবাপন্ন করে তুলেছে।

অতএব ‌অনিতা বসু সঠিক মূল্যায়ন করেছেন, এবং আরএসএস-বিজেপির মুখোশ খুলে দিয়েছেন। দেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ তৈরিতে সক্রিয় শক্তি সম্পর্কে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।

সুব্রত গৌড়ী, কলকাতা-১২

দেরিতে কেন?

পরঞ্জয় গুহ ঠাকুরতার ‘সরকার কত মূর্খ হতে পারে’ (২৪-১) শীর্ষক লেখাটির প্রসঙ্গে বলতে চাই, ২০০২ সালে গুজরাতে ঘটা দাঙ্গার কথা ২০১৪ বা ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে যতই তুলে ধরেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, ততই কিন্তু বিজেপির আসন সংখ্যা বেড়েছে। ওই ঘটনার কুড়ি বছর পরে বিবিসি-র গুজরাতের দাঙ্গা বিষয়ে তৈরি করা তথ্যচিত্র প্রকাশের কারণটাই বা কী? এটা কি সত্যিই মানবাধিকার বজায় রাখার নিরবচ্ছিন্ন চেষ্টা, না কি এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে? গণতান্ত্রিক ভারতের অন্যতম স্তম্ভ যে বিচারব্যবস্থা, সেই সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নরেন্দ্র মোদী কিন্তু নিরপরাধ। তা সত্ত্বেও প্রায়শই গুজরাতের ওই দাঙ্গার কথা উল্লেখ করার অর্থ, দেশকে অস্থির করে তোলা। ওই অতীত যত তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া যায় ততই মঙ্গল। স্বভাবতই ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার চাইবে ওই তথ্যচিত্র ভারতের কোনও জায়গাতেই যাতে প্রকাশিত না হয়। এতে মূর্খামির কিছু নেই।

অমিতকুমার চৌধুরী, কলকাতা-৭৫

দাঙ্গার কারণ

২০০২ গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কিন্তু সরল সত্য হল, অনেক মানুষ মারা গেলেন ধর্মের নামে। রাতারাতি দাঙ্গা হওয়া সম্ভব নয়। দাঙ্গা হওয়ার পিছনে কিছু মানুষের হাত কাজ করে, যারা কোনও ভাবেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঙ্গা করেন না। দাঙ্গার চিত্রনাট্য তৈরি করেন। প্রশাসন সীমিত ক্ষমতা নিয়ে চেষ্টা করে তা রোধ করার। বড় আকারে দাঙ্গা হলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার, কী ভাবে মোকাবিলা সম্ভব। দেরি হলে অনেকটাই সমস্যা বাড়ে। গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে নানা মত থাকাই স্বাভাবিক। তাই প্রশ্ন, বিবিসি এ বিষয়ে কোনও তথ্যচিত্র তৈরি করলে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে কেন? আমরা যদি ওই সময়ের কোনও সংবাদপত্রের ঝাঁপি খুলি, তা হলে সহজেই বুঝতে পারব, সে সময়ে কী ঘটেছিল।

সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Netaji Subhas Chandra Bose Writers’ Building
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy