—প্রতীকী ছবি।
দেবমাল্য বাগচীর ‘সাংবাদিক মানেই অপরাধী?’ (৮-৫) শীর্ষক প্রবন্ধটি সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক। গত তিন-চার বছর ধরে সাংবাদিক-হেনস্থার ঘটনাগুলি শাসকের ভাবমূর্তিকে বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়েছে। তার প্রমাণ মিলেছে উত্তরপ্রদেশের হাথরসে খবর সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পানকে গ্রেফতার ও হাজতবাসের ঘটনায়। এ রাজ্যেও সাংবাদিকদের হয়রানি, নানা মামলা রুজু করার ঘটনা চলছেই। সম্প্রতি সন্দেশখালিতে বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারকালীন গ্রেফতার করা হয়েছে সাংবাদিক সন্তু পানকে। সন্দেশখালি কাণ্ডে আরও কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি চলেছে। সাংবাদিকরা যদি নিরাপদ না হন, তা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কতটুকু? তাঁদের আলাদা কোনও রক্ষাকবচ নেই। সুশাসক তাঁরাই হন যাঁরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন। সাংবাদিকরা শাসকের ভুল তুলে ধরেন শাসক তথা জনগণের সামনে, সংশোধনের জন্য। সাংবাদিকরা আছেন বলেই সরকার নিজের কাজের ভাল-মন্দের বিশ্লেষণ করার সুযোগ পায়।
গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের কারিগর সাংবাদিকরা। যে দেশের সংবাদমাধ্যম যত স্বাধীন ও সার্বভৌম, সে দেশের গণতন্ত্র তত শক্তিশালী। নিরপেক্ষতা সংবাদপত্রের প্রধান শর্ত। দেশের মানুষের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য সাংবাদিকরা সম্মানহানি ও বন্দি হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও কাজ করে চলেন। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকলে তবেই অম্লান থাকে দেশের গণতন্ত্রের গৌরব। ভারতের স্বাধীনতায় সংবাদপত্রের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় মানুষের মধ্যে সামাজিক চেতনার বিকাশ ঘটায়। বিভিন্ন দেশের স্বৈরাচারী সরকার যখনই সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করতে চেয়েছে, তখনই গর্জে উঠেছেন সাংবাদিকরা। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে যে সাংবাদিকরা নিহত, বা কারাবন্দি হয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
সাংবাদিকরা মানুষের শব্দ ও কণ্ঠস্বর। যাতে তাঁরা আরও ভাল কাজ করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করা দরকার সরকারের।
বিপদতারণ ধীবর, বেলিয়াতোড়, বাঁকুড়া
হেনস্থার কারণ
দেবমাল্য বাগচীর লেখা প্রসঙ্গে কিছু কথা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেখেছি সংবাদমাধ্যম থেকে শত হাত দূরে থাকতে ভালবাসেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নিজের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের বাইরে কাউকেই ঘেঁষতে দেন না তাঁর কাছে। প্রবন্ধকারকেও সৎ সাংবাদিকতার খেসারত দিতে হয়েছিল। আসলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিশ্বাস না থাকলে একের পর এক সাংবাদিক হেনস্থার ঘটনা ঘটতে থাকবেই। সেটা এ দেশে বা বিদেশে যেখানেই হোক না কেন।
সৎ সাংবাদিকদের দিকে দেশের কোটি কোটি জনগণ তাকিয়ে আছে। তাঁরা যথাযথ সংবাদ পরিবেশন করুন। গণতন্ত্রের সুরক্ষার কাজে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যান।
বীরেন্দ্র নাথ মাইতি, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
অপরাধী কে
‘সাংবাদিক মানেই অপরাধী’ অবশ্যই নয়। নিরপেক্ষ সাংবাদিক কখনওই অপরাধী নন। পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিক ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধী হন। তদন্তের ভিত্তিতে সাংবাদিক সরকারের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিকটা পাঠকের দরবারে তুলে ধরেন। তখন তিনি সরকারের কাছে অপরাধী বলে গণ্য হন। আবার ওই সাংবাদিক যখন সরকারের কাছে নানা ধরনের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেন, তখন তিনি পাঠকের কাছে অপরাধী। আমাদের সমাজে এই দু’ধরনের সাংবাদিকই আছেন। তার ফলে পাঠক-দর্শকদের মধ্যেও পক্ষপাত তৈরি হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে কেবল সাংবাদিকরাই অপরাধী হন না, তাঁর সংস্থার সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকেও ‘অপরাধী’ বলে গণ্য করেন পাঠক-দর্শক। যার প্রতিফলন ঘটে ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে।
তবে এই সাংবাদিকদের অপরাধী হিসাবে প্রতিপন্ন করতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা এক রকম। তার ফলে পরঞ্জয় গুহঠাকুরতা, প্রবীর পুরকায়স্থ, সিদ্দিক কাপ্পানের মতো সাংবাদিকরা হয়রান হচ্ছেন। সবাইকে আইন মেনেই চলতে হয়, কিন্তু আইন যখন শাসকের হাতের পুতুল হয়ে যায়, তখনই ভয়ের কারণ দেখা যায়।
দেবাশীষ দত্ত, কলকাতা-৬৩
ছুটির দৈর্ঘ্য
শুভ্রা সামন্তের ‘নীতিগত দায়’ (৩০-৪) চিঠির প্রেক্ষাপটে এই পত্র। বিগত কয়েক বছর থেকেই দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হলেই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলিতে গ্রীষ্মের ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বিদ্যালয়গুলির পঠনপাঠন দিবস অনেকটাই কমে যাচ্ছে। দরিদ্র-নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান, যারা মিড-ডে মিলের মাধ্যমেই কিছুটা পুষ্টি লাভ করে, তারা বঞ্চিত হচ্ছে। পত্রলেখিকা বিকল্প হিসাবে সকালে ক্লাসের কথা ভাবতে বলেছেন। কিন্তু এই প্রস্তাবের গ্রহণযোগ্যতা কম। একটা সময় গ্রামাঞ্চলে নিয়মিত ভাবেই প্রায় মাস দেড়েক সকালে ক্লাস হত। তখন বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হত পরিচালন সমিতির হাত দিয়ে। শিক্ষকদের অধিকাংশই হতেন স্থানীয় অধিবাসী। দু’-চার জন শিক্ষক বহিরাগত হলেও যানবাহনের অপ্রতুলতার জন্য তাঁরা সাধারণত বিদ্যালয়-এলাকাতেই থাকতেন। ফলে সকালে ক্লাস হলেও সমস্যা হত না। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠনের পরে অধিকাংশ শিক্ষকই এখন বাইরে থাকেন। বিদ্যালয়ের অবস্থান প্রত্যন্ত এলাকায় হলে তাঁরা কাছাকাছি শহরে থাকেন। সেই সব শহর থেকে অত সকালে বিদ্যালয় পৌঁছনোর মতো পরিবহণ ব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নেই। পত্রলেখিকা ওই সময় তাঁদের বিদ্যালয়ের কাছাকাছি বাসা ভাড়া নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু স্বল্প সময়ের জন্য বাসা ভাড়া দিতে ক’জন রাজি হবেন? তা ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকায় ভাড়া দেওয়ার মতো পরিকাঠামো ক’জনের বাড়িতে থাকে? শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ।
তাই একটি বিকল্প প্রস্তাব রাখছি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ একটি মডেল ছুটির তালিকা প্রকাশ করুক, যেখানে এপ্রিল মাসের শেষের দিক থেকে জুনের ১০ তারিখ পর্যন্ত গ্রীষ্মের ছুটি উল্লিখিত হোক। রবিবার বাদ দিয়ে চল্লিশ দিন ওখানে ধরা থাক। পুজোর ছুটিকে রবিবার বাদ দিয়ে যদি সাত দিনে নামিয়ে আনা যায়, তা হলে এই দু’টি বড় ছুটিতে ৪৭ দিন ব্যয় হল। বাকি ছুটির দিনগুলির জন্য সর্বাধিক ২৩ দিন ব্যয় হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান বাৎসরিক ৬৫ দিন ছুটির তালিকাতে সামান্য বৃদ্ধি ঘটিয়ে বিষয়টির একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান করা যেতে পারে।
প্রদীপ, নারায়ণ রায়শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ
স্কুলের মান
বিগত কিছু বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের মাধ্যমিকের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কলকাতার সরকারি স্কুলগুলি থেকে মেধা তালিকায় খুব বেশি ছাত্রছাত্রীর স্থান হচ্ছে না। এই সব স্কুলে যাঁরা শিক্ষকতা করেন, তাঁদের যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। তাঁদের বেতনের তুলনায় বেসরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের বেতন কমই বলা যায়। তা সত্ত্বেও মেধা তালিকায় এই সব বেসরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই জায়গা করে নিচ্ছে। তা হলে কি সরকারি স্কুলে পঠনপাঠনের মানের অবমূল্যায়ন হয়েছে? দিল্লিতে শুনেছি সরকারি, অবৈতনিক স্কুলের মানের উন্নতি হয়েছে। অভিভাবকরা বেসরকারি স্কুল থেকে ছাড়িয়ে সরকারি স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন। অথচ, এ রাজ্যে বিপরীত চিত্র। ফলে সরকারি স্কুলের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
বদ্রিনাথ দাস, কলকাতা-২৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy