সুবোধ ঘোষ।
‘তিনি এলেন, দিলেন, জয় করলেন’ (পত্রিকা, ২৫-১) নিবন্ধের জন্য ধন্যবাদ। সুবোধ ঘোষ ‘আনন্দ’ পুরস্কার ছাড়াও পেয়েছিলেন ‘জগত্তারিণী স্বর্ণ পদক’। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী শেঠনারের উপস্থিতিতে তৎকালীন রাজ্যপাল ডায়াসের হাত থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভামঞ্চে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তিনি পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন। ওই শ্রেণির এক জন বহুমুখী প্রতিভাধর সৃষ্টিশীল লেখকের যে সম্মান (রবীন্দ্র বা সাহিত্য অকাদেমি) পাওয়া উচিত ছিল, তিনি তা পাননি।
এই প্রসঙ্গে ‘সুবোধ ঘোষ স্মৃতি সংসদ’ থেকে আশ্বিন, ১৩৯৮ সালে প্রকাশিত ‘ভরা থাক... সুবোধ ঘোষ স্মৃতি-তর্পণ’ অমূল্য গ্রন্থটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যেখানে লেখার জগতের প্রায় সব ব্যক্তিত্বই সুবোধ ঘোষের পুরস্কার পাওয়া নিয়ে একই অভিমত প্রকাশ করে দুঃখ ব্যক্ত করেছেন।
এ ছাড়াও বলি, সেই অনবদ্য ও অবিস্মরণীয় সম্পাদকীয়ের কথা, যা সুবোধ ঘোষের পরলোকগমনের পরের দিন, ১০ মার্চ, ১৯৮০ সালে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল— ‘‘...তিনি কি পারিয়াছেন তাহা খোলা পাতার মত উত্তরপুরুষের সম্মুখে প্রসারিত রহিল। তিনি কি পাইয়া গেলেন? না, সাহিত্য আকাডেমী বা রবীন্দ্র পুরস্কার কোনটাই তিনি পান নাই, এই লজ্জাকর কাণ্ডটা নিয়া আজ আক্ষেপ করিব না। যে প্রাপ্তি তাঁহাকে মহত্তর করিত না, বরং দাতাকেই ঐশ্বর্য্য আনিয়া দিত— কোন্ কৃপণতা কেমন করিয়া সেই দীনতাই প্রকট করিল, সে আলোচনা আজ থাক। লেখকের জীবনের সর্বোত্তম পুরস্কার পাঠকদের প্রীতি এবং শ্রদ্ধা যাহা তিনি তাঁহার প্রথম রচনা হইতে শুরু করিয়া জীবন সায়াহ্ন পর্যন্ত পাইয়া গেলেন।’’
মুকুল বাগচী
ডানকুনি, হুগলি
সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে
‘সুভাষচন্দ্রের আজাদি ভুলিয়ে দিচ্ছে বিজেপি’ (২৪-১) শীর্ষক প্রতিবেদন পড়ে দু’একটি কথা।
আক্ষরিক অর্থেই সুভাষচন্দ্র ছিলেন ক্ষুদ্র ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে অবস্থিত এক বৃহৎ বাঙালি। চিত্তরঞ্জন দাশকে সুভাষচন্দ্র হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের মূর্ত প্রতীক রূপেই মনে করতেন। এবং তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে তিনি ছিলেন অঙ্গীকারবদ্ধ।
১৯২৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মান্দালয় জেল থেকে তিনি হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তকে লেখেন, ‘‘ভারতে হিন্দু-জননায়কদের মধ্যে দেশবন্ধুর মতো ইসলামের এত বড় বন্ধু আর কেহ ছিলেন বলিয়া আমার মনে হয় না— তিনি হিন্দুধর্মকে এত ভালোবাসিতেন যে, তার জন্য প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিলেন, অথচ তাঁর মনের মধ্যে গোঁড়ামি আদৌ ছিল না। এই জন্য তিনি ইসলামকে ভালোবাসিতে পারিতেন। আমি জিজ্ঞাসা করি কজন হিন্দু-নায়ক বুকে হাত দিয়া বলিতে পারেন, তাঁহারা মুসলমানকে আদৌ ঘৃণা করেন না? কজন মুসলমান-জননায়ক বুকে হাত দিয়া বলিতে পারেন, তাঁহারা হিন্দুদের ঘৃণা করেন না? দেশবন্ধু ধর্মমতে বৈষ্ণব ছিলেন। কিন্তু তাঁহার বুকের মধ্যে সকল ধর্মের লোকের স্থান ছিল।’’
জাতীয়তাবাদী রাজনীতি থেকে ধর্মকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রাখার ক্ষেত্রে সুভাষচন্দ্রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সম্যক পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর বিভিন্ন ভাষণ, বিবৃতি, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র ও অন্যান্য লেখায়। ১৯২৮ সালের ৩ মে পুণেয় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ মহারাষ্ট্র প্রাদেশিক সম্মেলনের সভাপতির ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক ক্ষত আরোগ্যের জন্য প্রয়োজন হলে জোড়াতালি ব্যবস্থার নিন্দা না করেও, সাম্প্রদায়িক গোলযোগের জন্য আমাদের গভীরতর কোনও প্রতিকার আবিষ্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর আমি গুরুত্ব দিতে চাই। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের পরস্পরের রীতি, আদর্শ এবং ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। কারণ সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা সাম্প্রদায়িক শান্তি এবং ঐক্যের পথ প্রস্তুত করবে।’’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘একজন মুসলমান কৃষক এবং একজন মুসলমান জমিদারের মধ্যে যতটা মিল, তার চেয়ে ঢের বেশি মিল একজন মুসলমান কৃষক ও একজন হিন্দু কৃষকের মধ্যে। তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থ কোথায় নিহিত আছে জনসাধারণকে শুধু সেই শিক্ষা দিতে হবে। এবং একবার এই কথাটা বুঝতে পারলে তাঁরা আর সাম্প্রদায়িক বিবাদে নিজেদের ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করতে দিতে রাজি হবেন না।’’ এই বক্তৃতায় আমরা পাচ্ছি সম্পূর্ণ আধুনিক মনের অধিকারী সুভাষচন্দ্রকে।
১৯৩৭ সালে লেখা তাঁর জীবনীমূলক গ্রন্থ ‘ভারত পথিক’-এ সুভাষচন্দ্র ভারতবর্ষের ইতিহাসের প্রচলিত সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে গ্রহণ করতে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। এবং ভারত ইতিহাসের ‘মুসলিম যুগ’-এর চালু ধারণাটিকেই খারিজ করে দিয়েছিলেন। এই বইতে পলাশির যুদ্ধকে অঙ্কিত করেছিলেন সাধারণ শত্রু ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংগ্রামে হিন্দু-মুসলমান সহযোগিতার এক অসামান্য দৃষ্টান্ত হিসেবে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে সিরাজউদ্দৌলার যে প্রধান সেনাপতি পরাজিত হন, তিনি ছিলেন একজন হিন্দু এবং ১৮৫৭ সালে যে বিদ্রোহে হিন্দু-মুসলমান ইংরেজদের বিরুদ্ধে পাশাপাশি দাঁড়িয়েছিল, তা পরিচালিত হয় বাহাদুর শাহ নামে একজন মুসলমানের নেতৃত্বেই।’’
ব্রিটিশ-পূর্ব বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা সুভাষের চোখে ছিলেন এক জন ‘জাতীয়-নায়ক’ এবং ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক’।
সুভাষচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত আজাদ হিন্দ বাহিনী ছিল সাম্প্রদায়িক ঐক্য ও সম্প্রীতি সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গির এবং জাতীয়বাদী রাজনীতি থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন রাখার ক্ষেত্রে তাঁর আন্তরিক প্রয়াসের মূর্ত রূপ।
অঞ্জন সাহা
কলকাতা-৫১
যানের গতি
উন্নয়নের জোয়ারে বিগত বছরগুলোতে যানবাহন চলাচলে গতি বাড়াতে অনেক রাস্তাই যথেষ্ট পরিমাণে চওড়া করা হয়েছে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, রাস্তা চওড়া হয়েছে বটে, কিন্তু একেবারে হারিয়ে যাচ্ছে ফুটপাত। ফলে পথচারীরা ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। তাই বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। যান-চলাচলের গতিও এতে ব্যাহতই হবে।
আলোক রায়
কলকাতা-১১০
ট্রেনের স্বচ্ছতা
স্টেশন চত্বর বা ট্রেন পরিষ্কার রাখার প্রয়াস হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি, কিন্তু সাফাইকর্মী থেকে যাত্রীরা খাবারের পরিত্যক্ত অংশ (বর্জ্য) রেললাইনেই ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন! এ কোন স্বচ্ছতা? ট্রেনের প্রতিটি কামরায় অন্তত একটি করে আবর্জনা ফেলার ঝুড়ি রাখলে, ট্রেনলাইন অনেকটাই আবর্জনামুক্ত হতে পারে।
বাঁধন চক্রবর্তী
আগরতলা, ত্রিপুরা
স্মারক হয়নি
২০১০ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি মাওবাদী হানায় শিলদায় ২৪ জন ইএফআর জওয়ানের মৃত্যু হয়। ঘটনার পর শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরের ওই জায়গাটি থেকে ক্যাম্পটি তুলে নেওয়া হয়। পরিবর্তে কিছুটা দূরে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের স্ট্র্যাকো জওয়ানদের ক্যাম্প করা হয়।
প্রতি বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি জওয়ানদের মৃত্যুস্থলটি জঞ্জাল ঢাকতে সাদা কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। পুলিশের উদ্যোগে সেখানে শহিদ স্মরণের অনুষ্ঠান হয়।
২০১৪ সালে শিলদার এক প্রশাসনিক জনসভায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এখানে শহিদ স্মারক ও শহিদ উদ্যান তৈরি করা হবে।
২০১৫ সালে এখানে অনুষ্ঠানে এসে তৎকালীন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্তও জানিয়েছিলেন, শীঘ্রই মূল জায়গায় একটি শহিদ মিনার করা হবে। কিন্তু এত দিনেও কিছু হয়নি।
গোকুলানন্দ লাহা
শিলদা, ঝাড়গ্রাম
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy