প্রকৃতি ধ্বংসেরই প্রতিফলন। নিজস্ব চিত্র।
জয়া মিত্রের ‘প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করার ফল’ (১০-১০) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে আমার এই চিঠি। প্রবন্ধকার কিছু দিন পূর্বের মাল নদীর হড়পা বান প্রসঙ্গ নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রকৃতির উপর অত্যাচারের নানা ঘটনার উল্লেখ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, দেশ যখন স্বাধীন হয়নি, তখন থেকেই চলেছে প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর মারাত্মক অত্যাচার। দেশের তৎকালীন শাসক ইংরেজরা অন্যায় ভাবে পাহাড়-জঙ্গল লুট করেছে। শহর গড়তে গিয়ে বুজিয়ে দিয়েছে অসংখ্য ছোটখাটো জলাশয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের আগেই দেশের আদিবাসী সাঁওতালরা নদীমাতৃক বঙ্গভূমির উপর ব্রিটিশদের এ-হেন আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে জঙ্গল রক্ষার সংগ্রাম শুরু করেন। দরিদ্র সাঁওতালদের উপর নিপীড়ন চালিয়ে সেই সংগ্রামকে স্তব্ধ করে দেয় ব্রিটিশ পুলিশ। আর তার পর থেকেই দেশের জঙ্গল বিপন্ন হতে শুরু করে।
স্বামী বিবেকানন্দ পরিব্রাজক হয়ে দেশভ্রমণ করতে গিয়ে দেশ জুড়ে প্রকৃতির উপর অন্যায় দেখেছেন। তিনি পরিবেশ ও প্রকৃতিকে বাঁচানোর জন্য একটি ভাবনা তত্ত্বের মোড়কে উপস্থাপন করেন, যে তত্ত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিশিষ্ট স্কটিশ বিজ্ঞানী ও নগর পরিকল্পনার পথিকৃৎ প্যাট্রিক গেডেস। প্রাবন্ধিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ‘পরিবেশ: পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক প্রবন্ধে পরিব্রাজক বিবেকানন্দের একটি উদ্ধৃতি আছে— “বিবেকানন্দ বলেছিলেন— হুঁ বলি এই বেলা এ গঙ্গা মা-র শোভা যা দেখবার দেখে নাও, আর বড় একটা কিছু থাকছে না। দৈত্য-দানবের হাতে পড়ে এ সব যাবে। ওই ঘাসের জায়গায় উঠবে ইটের পাঁজা, আর থাকবে ইটখোলার গর্তকুল। যেখানে গঙ্গার ছোট ছোট ঢেউগুলি ঘাসের সঙ্গে খেলা করছে, সেখানে দাঁড়াবে পাট বোঝাই নৌকো, আর সেই গাধা বোট, আর ওই তাল-তমাল আর আঁব লিচুর রং, ওই নীল আকাশ, মেঘের বাহার ওসব কি আর দেখতে পাবে? দেখবে পাথুরে কয়লার ধোঁয়া আর মাঝে মাঝে ভূতের মতো অস্পষ্ট দাঁড়িয়ে আছে কলের চিমনি।”
স্বামীজির এই কথাগুলো নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করা বা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তাঁর কথা সত্যি হয়ে গঙ্গার ধারে গড়ে উঠেছে অজস্র ইটভাটা, কলকারখানা। বর্তমান সময় আরও খারাপ। পাহাড় কেটে ধূলিসাৎ করে দেওয়া হচ্ছে। নদ-নদীর বালি অন্যায় ভাবে উত্তোলন করা হচ্ছে। সরকারি জঙ্গল জমিচোরেরা অন্যায় ভাবে চুরি করছে। নদনদীর পার-পাহাড়ের উপর বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে। ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের যা সর্বনাশ হওয়ার, হচ্ছে। একই সঙ্গে সর্বনাশ হচ্ছে মানুষ এবং জীবজন্তুর। জলপাইগুড়ি জেলার অন্যতম বড় নদী মালের হড়পা বান সেই প্রকৃতি ধ্বংসেরই প্রতিফলন। অতীতে কোনও শাসক দল প্রকৃতি ধ্বংসের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা করেনি। সমকালীন সময়ের সরকারও তেমন কোনও ব্যবস্থা করবে বলে আশা জাগে না।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়, এক্তেশ্বর, বাঁকুড়া
সাহায্যের হাত
‘প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করার ফল’ শীর্ষক লেখাটি সময়োপযোগী। শুধু না জেনে নয়, অনেক সময় জেনেশুনেও আমরা এমন সব কাজ করি, যা প্রকৃতির চরম ক্ষতি করে। যেমন— এক বার ব্যবহারের উপযোগী প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, তবু সর্বত্র এর ব্যবহারে আমরা কুণ্ঠিত নই। গাছ আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত, তবু আমরা তাকে ধ্বংস করে চলেছি যথেচ্ছ ভাবে। খরস্রোতা নদী, সে তো প্রতিশোধ নেবেই। আর যে কোনও ঘটনা ঘটলেই এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ তাদের সমর্থকদের চাঙ্গা রাখতেই হোক, আর ভোটে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতেই হোক, সুযোগ নিতে চেষ্টা করেন। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়!
তবে আমরা এক শ্রেণির সাধারণ মানুষও তেমন কিছু না করে শুধু সমালোচনা আর নেতিবাচক দিকগুলোরই চর্চা করি। আবার অনেকে আছেন, যাঁরা আন্তরিক ভাবে মানুষের পাশে থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আমাদের এখানে একটা ক্লাব আছে, যারা জাঙ্গিপাড়া কালীতলার মোড়ে একটা হাসপাতাল তৈরি করেছে। সেখানে সামান্য খরচে বিশিষ্ট চিকিৎসকদের দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হয়। শুধু তা-ই নয়, এই ক্লাব জাঙ্গিপাড়া থেকে রহিমপুর বা প্রসাদপুর কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশে আম, কাঁঠাল, দেবদারু, নিম প্রভৃতি ফল ও ফুলের গাছ লাগিয়ে নিয়মিত তার পরিচর্যা করছে। এবং এত কিছু করছে রাজনীতি থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই।
বাসুদেব সেন, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি
মাটির প্রদীপ
বেশ কয়েক বছর হল, বাজারে মাটির প্রদীপের আদলে ফাইবারের বাহারি চাইনিজ় ইলেকট্রনিক্স প্রদীপ পাওয়া যাচ্ছে। পঞ্চ-প্রদীপ ও ১০৮ প্রদীপ-সহ ইলেকট্রিক কৃত্রিম প্রদীপ ও বিভিন্ন মনোহারি চাইনিজ় আলো বাজারে অনেক দিন আগেই এসে গিয়েছে। ইলেকট্রিক মোমবাতি, এলইডি, চোখ-ধাঁধানো চাইনিজ় মিনিয়েচার আলো— এগুলো তো পুরনো বিষয়। যদিও প্রথা বা রীতি অনুযায়ী, পুজো-পার্বণ বা অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে মাটির প্রদীপের উপস্থিতি খুবই মাহাত্ম্যপূর্ণ, তবু দীপাবলির রাতে কম সংখ্যক লোকই এখন মাটির প্রদীপ ব্যবহার করে গৃহকে আলোকিত করে থাকেন। মাটির প্রদীপে ঠিকমতো তেল ঢালা, তুলো পাকিয়ে উপযোগী সলতে বানানো ও মাঝে মাঝে খড়কে কাঠি দিয়ে শিখাকে উস্কে দেওয়া— এমন নানা হ্যাপা সামলানোর সময় এখন কারই বা আছে! তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য সারা রাত গোটা বাড়িতে মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখা আর্থিক কারণে সবার পক্ষে সম্ভবও নয়। প্রদীপ বানানোর জন্য মাটির খরচ, আগুনে পোড়ানো, রঙের প্রলেপ— এমন সব মূল্যও বাজারে অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। খবরে প্রকাশ, মাটির প্রদীপের বিক্রি শোচনীয় ভাবে কমে যাওয়ার দরুন, মৃৎশিল্পীদের অনেকেই বিকল্প পেশায় চলে যাচ্ছেন। অনেকে আবার মাটির অন্য উপকরণ তৈরি করছেন। দীপাবলির মতো আলোর উৎসবে মাটির প্রদীপের মহিমা কি এ ভাবেই হারিয়ে যাবে?
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
এক আসনে
‘প্রার্থী লড়ুন এক আসনে, সুপারিশ কমিশনের’ (৮-১০) শীর্ষক সংবাদটি ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে অতি আনন্দদায়ক এবং গণতন্ত্রকামীদের নিকট স্বস্তিদায়ক। এক জন ব্যক্তিকে একের অধিক আসনে একই সময়ে ভোটে লড়তে দেওয়ার অধিকার খর্ব হওয়া উচিত। ভারতের মতো দেশে কি মানুষ কম আছে যে, এক ব্যক্তিকে একাধিক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে লোকসভা বা বিধানসভার নির্বাচনে? এক জন দু’টি আসনে ভোটে জয়লাভ করে একটি আসনে পদত্যাগ করলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে দেশের এবং জনগণের ক্ষতি। সরকারি অর্থ এবং মানবসম্পদের অপচয় ঘটে। পাশাপাশি উপনির্বাচনের কারণে পুনরায় স্কুল-কলেজ ছুটি থাকে, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভোটের কাজে ব্যবহার করা হয়, যানবাহন কম চলে রাস্তায়, বাজার অনেক ক্ষেত্রে বন্ধ থাকে, চাষি ও ছোট ব্যবসায়ীরা ফসল বেচতে অপারগ হন, দিন-আনা-দিন-খাওয়া মানুষদের পেটে টান পড়ে। আবার একটি জেতা আসন থেকে পদত্যাগ করলে সেখানকার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়।
অন্য দিকে, একই রকম আচরণ করা হয় যখন ভোটে জিতে কেউ দলবদল করে। তাই কমিশনের ‘এক প্রার্থীর এক আসনে লড়া’র আইন কার্যকর করার সুপারিশের পাশাপাশি দলবদল করার নিয়ম সম্পর্কে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। মেয়াদ ফুরানোর পূর্বে দলবদল করলে পুনরায় ভোটে প্রার্থী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত। জনপ্রতিনিধিদের দলবদল করাকে আইনের চোখে অপরাধ হিসাবে মান্যতা দিলে কোনও সরকারের পতন ও উত্থান দুই-ই রোধ করা যাবে।
অভিজিৎ কাপাস, রাজনগর, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy