—প্রতীকী চিত্র।
সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে একটি স্কুলে ছাত্র নিগ্রহের ঘটনা অনেক প্রশ্ন তুলে ধরে। এই নিগ্রহের ঘটনা শিক্ষিকার নির্দেশে তাঁর সামনেই ঘটেছে। ছাত্রটি আবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। প্রথমে শিক্ষিকা এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলেও, পরে এটা ‘সামান্য ঘটনা’ বলে সমস্ত অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাই শুধু প্রশ্ন নয়, তার উত্তর খুঁজতে হবে গভীরে। শিক্ষিকার নির্দেশে অন্য ছাত্ররা যখন এক সংখ্যালঘু ছাত্রকে নিগ্রহ করে, তখন সেই ঘটনাকে তিনি যদি সামান্য বলেন, তা হলে বলা যায় হয় ওই শিক্ষিকা জেনেবুঝেই এ কাজ করেছেন, নয়তো এ ঘটনার গভীরতা তিনি অনুভব করতে পারেননি। মনে হয়, ওই শিক্ষিকা আসলে অনুতপ্ত নন, জেনেবুঝেই নিগ্রহের ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
এমন ঘটনা বিচ্ছিন্ন বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় কি? বিশেষত উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে, যেখানে জাত-ধর্ম-বর্ণের বিদ্বেষে ঘৃণার উদ্গিরণ নতুন কোনও ঘটনা নয়। এমন নিপীড়নকে ‘সামান্য ঘটনা’ বলার পিছনে অন্য শক্তির সমর্থন আছে কি, যে শক্তির কাছে এমন ঘটনা ‘সামান্য’ হিসাবে চিহ্নিত হয়। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষাক্ষেত্রে এই শক্তি সমাজকে গড়ার বদলে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।
এমন শক্তির প্রতিফলন আর এক ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে এই ঘটনার প্রায় এক মাস আগে। জয়পুর-মুম্বই এক্সপ্রেসের কামরায় এক আরপিএফ জওয়ানের হত্যালীলা। সেই হত্যালীলায় তিন সংখ্যালঘু ব্যক্তি ও এক দলিত জওয়ান প্রাণ হারিয়েছেন ওই জওয়ানের হাতে। অপরাধী জওয়ানের মানসিক অসুস্থতা ছিল বলে পরিবার ও প্রশাসনের বিবৃতি পরোক্ষে খুনির অপরাধকে আড়াল করে। অপরাধী জওয়ানের মানসিক অসুস্থতার খবর আগে থেকে জানা সত্ত্বেও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে রেলযাত্রীর সুরক্ষার দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হল কেন, তার উত্তর অবশ্য কখনও পাওয়া যাবে না।
এই শক্তির সার্বিক সাফল্য তখনই, যখন শিক্ষক থেকে অপরাধী জওয়ানের মতো মানুষজন সমাজের নানা স্তরে নিজে থেকে এমনতর সামান্য ঘটনা ঘটাতে থাকবে। ছাত্ররা নিজেরাই জড়িয়ে পড়বে এমন ঘটনায়। তখন এই শক্তিকে শিক্ষক, ছাত্র, সমাজ আলাদা করে আর চিনে নিতে বা বুঝে নিতে সক্ষম হবে না। এমন চিত্রনাট্য সমাজের চেহারাটা অচিরেই বদলে দিতে পারে, যার সম্ভাবনা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে।
নরেন্দ্রনাথ কুলে, কলকাতা-৩৪
হেল্পলাইন
অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী র্যাগিং বিরোধী চব্বিশ ঘণ্টার হেল্পলাইন নম্বর চালুর কথা ঘোষণা করেছেন। বিলম্বে রাজ্য প্রশাসনের বোধোদয় নিয়ে ‘আশ্বাসে মেলায় বস্তু?’ (২৬-৮) সম্পাদকীয়টি কেবলমাত্র সময়োপযোগী নয়, অভিভাবকদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও। দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা র্যাগিং নামক একটি বিকৃত মানসিক ব্যাধি কুরে কুরে খেয়েছে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। সমস্ত স্তর থেকে অপরাধ দূর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যে প্রয়োজন, সে কথা অতীতের কোনও সরকারই গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি। যাদবপুরের সাম্প্রতিক ঘটনা না ঘটলে এই গভীরে প্রোথিত জীবাণু হয়তো আরও বিস্তার লাভ করত। মন্দের ভাল, এ বার প্রশাসন একটি সুনির্দিষ্ট ভাবনা নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। তবে এটাও ঠিক, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিরাময়কল্পে, আর্ত-পীড়িত মানুষের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে ঘটা করে একাধিক হেল্পলাইন চালু হওয়া সত্ত্বেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সেগুলি কাজে আসেনি। তা ছাড়া ইন্টারনেটের নাগাল পাওয়ার আর্থিক ক্ষমতাও বহু লোকের নেই। তাই, হেল্পলাইনের অস্তিত্ব সম্পর্কে যেখানে সাধারণ মানুষ অজ্ঞ, সেখানে একমাত্র জনসচেতনতাই হতে পারে র্যাগিং-বিরোধী হাতিয়ার। ছাত্ররাই পারবে শিক্ষাঙ্গনে সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করতে। বন্ধ হবে র্যাগিং এবং তাকে ঘিরে আশ্বাসের ফুলঝুরি।
প্রবীর কুমার সরখেল, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
ভাষায় লাগাম
‘নেতার কুকথা’ (২২-৮) শীর্ষক ছোট একটি সংবাদ নজরে পড়েছিল। সংবাদ সূত্রে প্রকাশ, বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের এক বিধায়ক গাইঘাটায় দলীয় কর্মী সভায় রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক পদাধিকারীদের উদ্দেশে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন। এ ধরনের মন্তব্য তাঁর মতো মানুষের মুখে শুধু বেমানানই নয়, আত্ম-অবমাননাকরও বটে।
দিনকয়েক আগে, বাড়ি সংলগ্ন রাস্তায় কয়েক জন ছাত্রের কথোপকথনের অংশবিশেষ কানে এসেছিল। এক ছাত্রের কথায় তাদের স্কুলের ‘তার কাটা’ জনৈক শিক্ষক নাকি ‘ষাঁড়ের মতো’ চেঁচান এবং সেটা নিয়ে অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা ‘খিল্লি’ করেন! ভোটগ্রহণ করতে গিয়ে দেখেছি, যান্ত্রিক গোলযোগ অথবা ভোটদাতাদের অনভিজ্ঞতার কারণে দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের সমস্ত ক্রোধ গিয়ে পড়ে ভোটকর্মীদের উপর। ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, রেল স্টেশনে যান্ত্রিক কারণে পরিষেবা বিঘ্নিত হলেও, সাধারণ মানুষের যাবতীয় ক্রোধের নিশানা হয়ে ওঠেন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা। ফলস্বরূপ যাবতীয় কটূক্তি, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে হুমকি তাঁদের নীরবে সহ্য করতে হয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের নৈতিক অধঃপতন কিংবা সাধারণ মানুষের অসংবেদনশীল মানসিকতা তৈরি হওয়ার পিছনে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের প্রকাশ্যে বলা কুকথা ও কু-মন্তব্যের অবদান এবং দায় নেই, সে কথা বলা যাবে না। ভাষায় লাগাম না পরাতে পারলে সামাজিক শৃঙ্খলা ও ব্যক্তিমর্যাদা রক্ষা করা অদূর ভবিষ্যতে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
হিন্দু হস্টেল
১৯৮৬ সালে মহাসমারোহে গভর্নমেন্ট ইডেন হিন্দু হস্টেলের শতবার্ষিকী পালিত হয়েছিল। কিন্তু শ্রী নবকৃষ্ণ ঘোষের প্যারীচরণ সরকার (জীবনবৃত্ত) বই থেকে জানা যায়, মফস্সলের ছাত্রদের থাকার জন্য লালবাজারের ভাড়াবাড়িতে প্যারীচরণ সরকারের স্থাপিত হস্টেলটি ইংরেজ সরকার ১৮৬২ সালের জুন মাসে অনুমোদন পেয়েছিল। যার অর্থ হস্টেলটি স্থাপিত হয় ১৮৬২ সালেরও আগে।
প্যারীচরণ সরকার (জীবনবৃত্ত) থেকে জানতে পারি, “যে কারণ পরম্পরায় প্রণোদিত হইয়া প্যারীচরণ বারাসত স্কুলে ছাত্রাবাস স্থাপন করিয়াছিলেন, হেয়ারস্কুলে কর্ম্ম করিবার সময় তিনি কলিকাতায় সেই সকল কারণ অধিকতর পরিমাণে বিদ্যমান দেখিলেন। তিনি দেখিলেন এই রাজধানীতেও প্রবাসী ছাত্রগণ সুবিধা অভাবে যথেচ্ছা বাসা করিয়া অবস্থান করিতে বাধ্য হয়, এবং সে স্থানে নানা অবস্থায় ও ভিন্ন ভিন্ন কার্য্যে নিযুক্ত লোকেদের সহিত সংসর্গে বাস করাতে তাহাদের পাঠের ব্যাঘাত হয়। পরন্তু অভিভাবক বিহীন অবস্থায়, কলিকাতার ন্যায় প্রলোভন পরিপূর্ণ স্থানে, তাহাদের নৈতিক অকল্যাণ ও শারীরিক বিপদের সমূহ সম্ভাবনা। এই সকল কারণ জ্ঞাপন করিয়া প্যারীবাবু গবর্ণমেন্টের নিকট কলিকাতায় গবর্ণমেন্ট বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি ছাত্রনিবাস সংস্থাপনের আবশ্যকতা জ্ঞাপন করিলেন। রাজকীয় সহানুভূতি পাইয়া লালবাজারে প্রথমে ৪৫ জন ছাত্রের বাসোপযোগী, মাসিক ৪০ টাকা ভাড়ায় একটি বাটি গ্রহণ করিয়া ঐ ছাত্রনিবাস উন্মুক্ত করিলেন।... তৎকালীন শিক্ষাবিভাগের ডাইরেক্টর অ্যাটকিনসন্ সাহেবের বিশেষ প্রশংসা ও অনুরোধে গবর্ণমেন্ট ইং ১৮৬২ সালের জুন মাস হইতে এই ছাত্রাবাসের সাহায্যার্থে কার্য্যাক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইলেন...”। অতএব, হিন্দু হস্টেল ১৮৮৬ সালে নয়, স্থাপিত হয়েছে ১৮৬২ সালের জুন মাসেরও আগে। আগামী বছর জুন মাসে হিন্দু হস্টেলের জন্মদিন পালনের জন্য প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ রাখছি।
কৈলাসপতি মণ্ডল, কলকাতা-২৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy