Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Government hospitals

সম্পাদক সমীপেষু: পরিষেবা মেলে কি

সরকার এত ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলায় যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করল, তাতে কি পর্যাপ্ত পরিষেবা মেলে? প্রায়ই শোনা যায়, হাসপাতালে বেড নেই, ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই।

গরিব মানুষ যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই আছেন।

গরিব মানুষ যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই আছেন। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৫৭
Share: Save:

“‘এত টাকা কোথায় পাব’! মায়ের দেহ কাঁধে ছেলে” (৬-১) খুবই মর্মান্তিক ও লজ্জাজনক ঘটনা। যার পর ওড়িশার কালাহান্ডি ও ছত্তীসগঢ়ের ‌সরগুজার সঙ্গে একই সারিতে চলে এল পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি। দেশে শুধুই উন্নয়নের ফাঁকা ঢাক বাজানো হচ্ছে। গরিব মানুষ যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরেই আছেন। তাঁরা সরকারি হাসপাতালে আসেন সুলভে চিকিৎসা পাওয়ার জন্য। তাঁদের কাছে অত টাকা কই যে, তিন হাজার টাকা খরচ করে মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাবেন? টাকা থাকলে তাঁরা তো বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে যেতেন। শুধু ঝাঁ-চকচকে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করলেই চলবে না, দরকার হাসপাতালে সর্বাঙ্গীণ পরিকাঠামো ও পরিষেবা। গরিব মানুষের জন্য যেমন সুলভে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা থাকবে, তেমনই মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য সুলভে বা বিনামূল্যে গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে সব সরকারি হাসপাতালকেই।

প্রশ্ন তোলা যায়, সরকার এত ঢাকঢোল পিটিয়ে জেলায় যে সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরি করল, তাতে কি পর্যাপ্ত পরিষেবা মেলে? প্রায়ই শোনা যায়, হাসপাতালে বেড নেই, ওষুধ নেই, ডাক্তার নেই। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের যে সব কর্মী সে দিন মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মৃতের পরিবারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি, তাঁদের কেন অবহেলার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে না? একই সঙ্গে, যে সব বেসরকারি গাড়ি চালক মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা করা হোক। দোষী প্রমাণিত হলে প্রয়োজনে তাঁদের এক বছরের জন্য লাইসেন্স বাতিল করা হোক।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

ভুল নীতি

ওড়িশার দানা মাঝি বা জলপাইগুড়ির রামপ্রসাদ দেওয়ান, পয়সার অভাবে মৃতদেহ নিয়ে কেউ ১২ কিলোমিটার, কেউ ১০ কিলোমিটার হেঁটেছেন। এগুলো কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রচারে আসে না বলে আমরা অনেক ঘটনাই জানতে পারি না। যেগুলো প্রচারে আসে, সেগুলো নিয়ে ‘অমানবিক’-সহ কিছু বিশেষণ দিয়ে কিছু দিন আলোচনা চলে। অন্যের উপর দোষারোপ চলে। ভবিষ্যতে এর থেকে আরও ভয়ঙ্কর ঘটনা আমরা দেখতে পাব। কারণ, নানা পরিষেবার সঙ্গে সরকার স্বাস্থ্যকেও বেসরকারিকরণের দিকে দ্রুত নিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, পয়সা যার, পরিষেবা তার। সংবাদে প্রকাশ, দেশে বছরে ৩৬ লক্ষের বেশি মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যান। বেসরকারিকরণ সেটাকে কোন ভয়ঙ্কর জায়গায় নিয়ে যাবে, সহজেই অনুমেয়।

নিখিল কবিরাজ, রামনগর, হাওড়া

ওড়িশা বাংলা

মায়ের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে ছেলের গৃহাভিমুখে পদযাত্রার সচিত্র সংবাদ আদৌ বিস্মিত করে কি পশ্চিমবঙ্গবাসীকে? ছেলের সঙ্গী ছিলেন তার বাবা, মৃতার স্বামী। শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও যাঁকে প্রাণে বাঁচানো যায়নি, সেই লক্ষ্মীরানি দেওয়ান ক্রান্তির বাসিন্দা, হাসপাতাল থেকে যেখানকার দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। বাড়ি থেকে রোগীকে হাসপাতালে আনতে ৯০০ টাকা ইতিমধ্যেই ব্যয় করেছেন তাঁরা। তাই ফের বাড়িতে লক্ষ্মীরানির মৃতদেহ নিয়ে যেতে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স চালকদের দাবি অনুযায়ী তিন হাজার টাকা দিতে পারেননি বাবা-ছেলে। ইতিমধ্যে সহায়তা প্রদান না করে হাসপাতাল কর্মীদের একাংশ এই দৃশ্যের ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনাটির সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন সংবাদ প্রতিবেদক ওড়িশার কালাহান্ডির বাসিন্দা দানা মাঝি বা ছত্তীসগঢ়ের ঈশ্বর দাসের, যাঁরা ইতিপূর্বে একই ভাবে মৃতদেহ কাঁধে দীর্ঘ পথ হেঁটেছিলেন। মেডিক্যাল কলেজের সুপার তথা প্রিন্সিপাল জানিয়েছেন, হাসপাতালের কর্মীদের মানবিক মূল্যবোধের পাঠ দিতে ব্যবস্থা গৃহীত হচ্ছে। হাসি পায় তাঁর এ-হেন কথা শুনে। যখন বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা প্রদানকারীরা তিন হাজার টাকার কমে মৃতদেহ পৌঁছে দিতে নারাজ ছিলেন, কথাবার্তা চলছিল উভয় পক্ষের মধ্যে, তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মানবিকতা কোথায় ছিল?

ঘটনাটি জনসমক্ষে আসা ইস্তক সমালোচনার ঝড়, রাজনৈতিক তরজা শুরু হতে বিলম্ব হয়নি। জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন খোদ স্বাস্থ্যসচিব। অ্যাম্বুল্যান্স চালকরাও সরব হয়েছেন। তাঁরা হাসপাতাল চত্বরে ভাড়ার তালিকা টাঙানোর ব্যবস্থা করছেন। স্থির হয়েছে, শববাহী গাড়ি বা উপযুক্ত পরিবহণ আসার পরেই হাসপাতাল থেকে দেহ ছাড়া হবে, নিরাপত্তারক্ষীরা তদারকিতে থাকবেন। এ সবই নিঃসন্দেহে সাধু উদ্যোগ। তবে, ঘটনা ঘটার পরেই আমাদের টনক নড়ে, এ সত্য আরও এক বার প্রমাণিত হল জলপাইগুড়ির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

প্রসঙ্গত মনে পড়ল সমাজমাধ্যমে প্রাপ্ত এক ব্যক্তির বাস্তব অভিজ্ঞতার কথা। সপরিবারে পুরী বেড়াতে গিয়ে বাঙালির কাছে সুপরিচিত একটি হোটেলে উঠেছিলেন ভদ্রলোক। হঠাৎই রাতে তাঁর মেয়ে অসহ্য পেটের ব্যথায় কাবু হয়ে বারংবার বমি করতে থাকে। অত রাতে কোথায় যাবেন তিনি? কাছাকাছি এক ওষুধের দোকানে গিয়ে তাঁর অসহায়তার কথা জানাতে এক ভদ্রলোক তাঁকে একটি আপৎকালীন পরিষেবার নম্বরে ফোন করতে বলেন। ফোন করতে সঙ্গে সঙ্গেই এক অ্যাম্বুল্যান্স হাজির। চালক ভদ্রলোক অত্যন্ত দ্রুততায় মেয়েটিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেন। অক্সিজেন, স্যালাইনের ব্যবস্থা, ভর্তি করানো, সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজেই যাবতীয় তদারকি করে ফের মেয়েটিকে সুস্থ করে হোটেলে ফিরিয়ে আনেন। বিনিময়ে কোনও অর্থ দিতে হয়নি ভদ্রলোককে। বিস্মিত পিতা প্রশ্ন করেছিলেন, ওড়িশা সরকার যদি এ রকম একটি পদক্ষেপ করতে পারে, আমাদের রাজ্য পারে না কেন?

পারে না কেন, সাধারণ ভুক্তভোগীরাই জানেন। লম্বা হাত না হলে গালভরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা পাওয়াও সম্ভব হয় না। ‘রেফারেন্স’ এবং রাজনৈতিক যোগাযোগও এর মধ্যে পড়ে। ফেলো কড়ি, মাখো তেল, এটি আর প্রবাদ নয়, অন্তত এ রাজ্যের ক্ষেত্রে। তাই নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের শাস্তিপ্রদান— এই সবই অলীক কথা মনে হয়। বাস্তবায়িত না হলে মনের ধন্দ কাটতে চায় না কিছুতেই!

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী, কলকাতা-১২৫

হুঁশ কই?

মায়ের দেহ কাঁধে ছেলে হাঁটছে, এই ছবি ও খবরে চোখ পড়লে ধিক্কার দিতে ইচ্ছে করে ওই অ্যাম্বুল্যান্স চালককে। কতখানি অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে বাড়তি টাকা হেঁকে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা এমন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাতে পারেন, জলপাইগুড়ির সংবাদটি পড়লে সে প্রশ্ন জাগে। ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। বিবেক, বিচারবুদ্ধি, কিছুই কি তাঁদের নেই? সব বিসর্জন দিয়ে কি শুধুই এ ভাবে মৃত মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে? অবিলম্বে কড়া নজরদারিতে সর্বত্র এ সব বন্ধ হওয়া দরকার। মান আর হুঁশ দিয়েই তৈরি হয় মানুষ। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াটাই মানবিকতা,তখনও কেন টাকার পরিমাণটাই দেখা হবে, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো হুঁশই জাগবে না? আকছার এমন নানা ঘটনা ঘটেই চলেছে। এক শ্রেণির চালকদের বেহিসাবি দর হাঁকার নির্লজ্জ স্বেচ্ছাচারিতা আর কবে বন্ধ হবে?

গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১

অন্য বিষয়গুলি:

Government hospitals West Bengal Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy