—প্রতীকী চিত্র।
স্বাগতা দাশগুপ্তের প্রবন্ধ ‘বেলাইন রেলসুরক্ষা’ (৩০-৬) পড়লে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। ‘ক্যাগ’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী যে তথ্য এখানে তুলে ধরা হয়েছে, তা গভীর ভাবে ভাবলে রেলের বার্থে শুয়ে সহজে ঘুম আসবে কি না সন্দেহ। বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটলে তার তদন্তও যে গোঁজামিলে ভর্তি, মানুষকে আশ্বস্ত করার, মানুষের বিক্ষোভকে প্রশমিত করার কৌশলী পদক্ষেপ— তাও প্রবন্ধটিতে উঠে এসেছে।
‘ট্র্যাক রেকর্ডিং কার’-এর নিয়মিত পরিদর্শন, যা রেলপথগুলির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে, ট্রেনের লাইনচ্যুতির সম্ভাবনা নিরূপণ করে, তা রীতিমতো হতাশাজনক। বিভিন্ন জ়োন-এ যত পরিদর্শন হওয়ার কথা, পরিদর্শন সংখ্যায় তার খামতি রয়েছে ৩০ থেকে ১০০ শতাংশ। আবার ‘রাষ্ট্রীয় রেল সংরক্ষা কোষ’-এর হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন সুরক্ষা সংক্রান্ত খাতে বরাদ্দে খামতি রয়েছে ৭৯ শতাংশ। অথচ, ব্যাপক দুর্নীতি সত্ত্বেও ভারতীয় রেল একটা লাভজনক সংস্থা। লাভের অঙ্ক ক্রমাগত বাড়ানোর উদ্দেশ্যে একটার পর একটা ব্যবস্থাও করছে রেল। বরিষ্ঠ নাগরিকদের টিকিটের ছাড় তুলে দেওয়া, প্ল্যাটফর্ম টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেওয়া, কোনও রকম চরিত্রগত পরিবর্তন ছাড়াই প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলিকে এক্সপ্রেসের তকমা লাগিয়ে যাত্রীদের থেকে অনেক বেশি ভাড়া আদায়, ডায়নামিক প্রাইসিং (তৎকাল/ প্রিমিয়াম তৎকাল)-এর নাম করে যাত্রীদের থেকে যথেচ্ছ টাকা আদায়, নিয়ম লঙ্ঘনের অপরাধে যাত্রীদের থেকে জরিমানার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করা, জরিমানার পরিমাণ বৃদ্ধি— প্রভৃতি পদক্ষেপ এ সবের কিছু নমুনা মাত্র।
আমরা রেলে নিয়মিত যাতায়াত করছি। সরকারের কাছে আমাদের জীবনের দাম খুব বেশি নয়। দুর্ঘটনা ঘটলে তারা হয়তো দেখে যে, দেশের কিছু ভোটার বা হবু ভোটার কমে গেল। এর বেশি কিছু নয়। মৃতদের পরিবার বা আহতদের হাতে কিছু টাকা তুলে দিলে সেটাও ভোটে শাসক দলকে কিছু ডিভিডেন্ড দেয়। সেটাই বা কম কিসে! তাই তারা এ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে রাজি নয়। ফলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের প্রাণের নিরাপত্তা দেবে কে— সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।
গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
আদি ঘোড়া
দুই বাংলায় সমকালীন গানের জগতে অবাধ বিচরণ যাঁদের, তাঁরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন এই বাংলার ব্যান্ড সঙ্গীতের জগতে পথপ্রদর্শক গানের দল ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র নাম। অদ্ভুত এই নামকরণ করা হয়েছে ‘নির্জনতম কবি’ জীবনানন্দ দাশের সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮) কাব্যগ্রন্থের ‘ঘোড়া’ শিরোনামের কবিতার দ্বিতীয় পঙ্ক্তি থেকে— “মহীনের ঘোড়াগুলো ঘাস খায়/ কার্তিকের জ্যোৎস্নার প্রান্তরে।” এ-হেন মহীনের ঘোড়াগুলির ‘আদি ঘোড়া’ তাপস দাস (বাপিদা)-এর জন্ম ১৯৫৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতায়। সুরের ক্ষেত্রে তাঁর পছন্দ ছিল বৈচিত্রময়তা। বোহেমিয়ান বাপিদা (ডাক নামেই তিনি সমধিক পরিচিত) তাঁর কলেজ জীবনেই গিটারের ছয় তারের সঙ্গে সখ্য। রাজনীতি, দারিদ্র, অর্থনীতি, অন্যায়-অবিচার, বিপ্লব, ভালবাসা, একাকিত্ব, ভিক্ষাবৃত্তি-সহ বহুমুখী বিষয় নানা সময়ে প্রতিধ্বনিত হয়েছে তাঁর কণ্ঠে। এক রকম সম্মোহনী ক্ষমতা নিয়ে বাপিদা তাঁর কণ্ঠে বব ডিলান, বিঠোফেন, পণ্ডিত রবিশঙ্করের মতো সঙ্গীতজ্ঞের সুরকে তুলে নিয়েছিলেন, তৈরি করেছিলেন তৎকালীন সিনেমা-কেন্দ্রিক বাংলা গানের অতিরিক্ত প্রেমপ্রবণ গানের ঘরানা থেকে আলাদা, নিজস্ব এক ঘরানা। জীবনমুখী গান এবং নৈতিক সঙ্গীতদর্শনের কারণে তাঁদের এই গানের দলকে বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতের পুরোধা বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
নবারুণ ভট্টাচার্য এক বার যথার্থই বলেছিলেন, “রেবেলদের ভাগ্য দুঃখেরই হয়।” এ বছরের জানুয়ারি মাস নাগাদ প্রকাশ্যে আসে বাপিদার অসুস্থতার খবর। তিনি ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন জেনেই পাশে এসে দাঁড়ান দুই বাংলার সঙ্গীতশিল্পীরা। শিল্পীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে একাধিক কনসার্টের আয়োজন হয় শহরেই। পরে অবশ্য তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেয় রাজ্য সরকার। কিন্তু ২৫ জুন সব চেষ্টাই ব্যর্থ হল। বাংলা ব্যান্ডের জগৎকে অভিভাবকহীন করে দিয়ে চলে গেলেন বাপিদা।
তবে স্রষ্টারা চলে গেলেও তাঁদের কীর্তি থেকে যায় অমলিন। ১৯৭৫ সালে তৈরি হওয়া বাংলার এই ব্যান্ড প্রায় পঞ্চাশ বছর পরও আজও সমান প্রাসঙ্গিক। বাপিদা চলে গেলেও রেখে গেলেন মহীনের ঘোড়াগুলি-র বহু কালজয়ী গান— ‘পৃথিবীটা নাকি’, ‘তোমায় দিলাম’, ‘মানুষ চেনা দায়’, ‘ভালবাসি’, ‘ঘরে ফেরার গান’। এই গানগুলির মাধ্যমেই শ্রোতাদের মনে চির-রঙিন হয়ে থাকবেন তিনি।
অমিয় বিশ্বাস, গোবরডাঙা, উত্তর ২৪ পরগনা
আশ্রয়হীন
‘আশ্রয়ের খোঁজে’ (৩০-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয় এক মর্মস্পর্শী নিবেদন। বাস্তবিকই এই রাজ্যে বহু আশ্রয়হীন শিশু এখনও নিরাপদ ও সুনিশ্চিত আশ্রয়ের অপেক্ষায় হোমগুলিতে দিন গুনছে। অথচ, নানান আইনি জটিলতার ফাঁদে পড়ে নিঃসন্তান দম্পতিদের আবেদন দীর্ঘ দিন অশ্রুত থেকে যায়। সরকারি প্রচেষ্টায় সম্প্রতি ‘ফস্টার কেয়ার’-এর উদ্যোগ শুরু হলেও তার পরিসর এখনও সীমিত। তা হলে সেই শিশুদের কী হবে? শিশুরা নিরাপত্তা, আশ্রয় ও ভালবাসা চায়। যারা শৈশবেই সেই আশ্রয় হারিয়েছে, তারা অত্যন্ত অসহায়। অথচ, তারাও তো এই দেশেরই ভবিষ্যৎ নাগরিক। তাদের কথা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে বইকি।
তবে এটাও সত্যি যে, শিশুকে আশ্রয় দেওয়ার নাম করে, এমনকি শিশু সুরক্ষার কথা বলে এই দেশে শিশু পাচার, শিশু বিক্রির মতো জঘন্যতম কাজের সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ। দেখাশোনার অছিলায় শিশুশ্রমিক হিসাবেও তাদের নিয়োগ করা হয় দোকানে, বাজারে। এমন ফাঁদে যেন কোনও শিশু না পড়ে, সেই দিকে লক্ষ রাখা উচিত। এর জন্য চাই একনিষ্ঠ কর্মী, বিশেষ করে যাঁরা হোমগুলিতে থাকা শিশুদের দেখভাল করার দায়িত্বে আছেন। তাঁদের সচেতন থাকতে হবে, কারা শিশুদের ভার নিতে চাইছেন সে বিষয়ে যথেষ্ট খোঁজখবর করে তবেই যেন শিশুটির দেখাশোনার ভার তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
কুহু দাস, দশগ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর
অগ্নিমূল্য
বাজারে আনাজপাতির মূল্য হঠাৎ যেন আকাশছোঁয়া হয়ে গেছে। আদার কথা ছেড়েই দিলাম। কাঁচালঙ্কা, বেগুনের মতো আনাজের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে একশো থেকে দেড়শো শতাংশ। বিক্রেতারা দোহাই দিচ্ছেন দীর্ঘ দিন ধরে চলা বৃষ্টিহীন অতি গরমের। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে দাবদাহ চললেও উত্তরবঙ্গে ভালই বৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া দক্ষিণবঙ্গে যে সমস্ত জেলায় চাষাবাদ হয়, সেখানে অনেক জায়গাতেই সেচের সুবিধা রয়েছে। ফলনের অপ্রতুলতা ধীরে ধীরে অনুভূত হয়। কিন্তু মাত্র দিনকয়েকের ব্যবধানে আনাজপাতির দামের ঊর্ধ্বগতি শেয়ার মার্কেটকেও হার মানিয়েছে। বুঝতে অসুবিধা হয় না, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এবং ফড়েদের কারসাজিতে বাজারের এমন হাল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের কারণে সরবরাহে বিঘ্নের অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা কিছু কাল হয়তো এমনই সক্রিয় থাকবেন।
ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy