Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ভাগবত উবাচ

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএস-এর ভূমিকা, অর্থাৎ ব্রিটিশ রাজের প্রতি তার নিঃশর্ত সমর্থনের কথা সকলের কমবেশি জানা।

Mohan Bhagwat.

মোহন ভাগবত। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৪:৫৭
Share
Save

শতবর্ষ উদ্‌যাপনের প্রাক্কালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা দিবসে, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের বক্তৃতার বিশ্লেষণ করে দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ‘এ বার মার্ক্স ও আম্বেডকর?’ শীর্ষক উত্তর সম্পাদকীয়টি তাৎপর্যপূর্ণ (১-১১)। কমিউনিস্টরা সঙ্ঘের চোখে ঘোষিত শত্রু, এ বার মোলায়েম করে ‘সাংস্কৃতিক মার্ক্সবাদী’ ও তথাকথিত ‘জাগ্রত নাগরিক’-দের সম্পর্কে দিক নির্দেশ করেছেন সঙ্ঘপ্রধান। গোল বাধল সংবিধান সভায় বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেডকরের শেষ দু’টি ভাষণ পড়ার পরামর্শ দেওয়ায়। উচ্চবর্ণের বিরুদ্ধে দলিত শ্রেণির মসিহা আম্বেডকর আবার কবে সঙ্ঘ পরিবারের প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন! হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির যে সুপবনে দলিত কন্যা ধর্ষিত হন উচ্চবর্ণের বিধায়কের হাতে, দলিতকে প্রহার করে মুখে প্রস্রাব করার ছবি ভাইরাল হয়, সেখানে আম্বেডকর বন্দনা সত্যিই বিস্ময়কর।

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আরএসএস-এর ভূমিকা, অর্থাৎ ব্রিটিশ রাজের প্রতি তার নিঃশর্ত সমর্থনের কথা সকলের কমবেশি জানা। ১৯৩০-এর সত্যাগ্রহ আন্দোলন বা ১৯৪২-এ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যখন দেশবাসী ঝাঁপিয়ে পড়েছে, সার্কুলার জারি করে আরএসএস তার কর্মীদের এই আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে চেয়েছে। দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক হিন্দুদের আহ্বান জানিয়েছিলেন এই বলে, “হিন্দুরা ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তোমাদের শক্তি নষ্ট কোরো না, তোমাদের শক্তি সঞ্চিত রাখো আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ শত্রু মুসলিম, খ্রিস্টান ও কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।” জাত, ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে চায় কমিউনিজ়ম। বৃহৎ পুঁজির ধারক-বাহক, শোষণ ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার পক্ষপাতী আরএসএস-এর কাছে কমিউনিস্টরা তাই বরাবরই চক্ষুশূল। ফ্যাসিবাদী চরিত্রের এই সংগঠনটি গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। ফ্যাসিবাদের বিপদ সম্পর্কে থার্ড কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, ফ্যাসিবাদ হল লগ্নিপুঁজির সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল, সর্বাধিক উগ্র জাতীয়তাবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী অংশের সর্বাধিক প্রকাশ্য সন্ত্রাসমূলক একনায়কতন্ত্র।

ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতা-দলের অন্যতম সদস্য আম্বেডকর লিখেছিলেন, “যদি ভারতে মুসলিমরা একটি পৃথক জাতি হয়, তা হলে অবশ্যই ভারত একটি জাতি নয়।” তাঁর আরও একটি পর্যবেক্ষণ ছিল, “যদি হিন্দুরাজ বাস্তব হয়ে ওঠে, তা হলে নিঃসন্দেহে সেটা হবে এই দেশের সবচেয়ে বড় দুর্দশা।” হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের প্রবক্তাদের মুখে রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার প্রতি সদা সতর্ক আম্বেডকরের স্মরণ তাই বিস্ময়কর!

আরও বেশি ভাবনা জাগায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কথাগুলি— “ধর্মস্থানে তাণ্ডব যারা করে তাদের নিয়ে যত না দুশ্চিন্তা, বেশি দুশ্চিন্তা হয়, যদি প্রতিবাদকারীর সংখ্যা কমে যায়।” (‘সুপ্ত সাম্প্রদায়িকতাই সবচেয়ে ভয়ের’, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১০-১২-১৯৯২)।

সরিৎশেখর দাস, কলকাতা-১২২

অদক্ষ কে?

পরন্তপ বসুর প্রবন্ধ ‘অদক্ষ শ্রমিক বৈষম্যের শিকার’ (৭-১১) স্পষ্ট করেছে, ভারতের কাজের বাজারের ধরন আর পাশ্চাত্য দেশের কাজের বাজারের ধরন এক নয়। ওই সব দেশে মানুষ নিজে যে বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেছেন, সেই ক্ষেত্রে চাকরি পান। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয় না। এক জন পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েও, শিক্ষা জগতে চাকরি না পেয়ে হাসপাতালে সাফাই কর্মীর কাজ করতে যান। তাই এত শিক্ষিত হয়েও তিনি অদক্ষ শ্রমিক হিসাবেই বিবেচিত হন। যে দেশে একটি পদের জন্য কয়েক লক্ষ আবেদনপত্র জমা হয়, সেখানে দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক বিভাজন হাস্যকর। এখানে মানুষ যা পান, তাই গ্রহণ করেন। তাই তো ইংরেজিতে এম এ পাশ করে, বিএড ডিগ্রি নিয়েও চায়ের দোকান খুলতে বাধ্য হন। শুধুমাত্র অদক্ষ শ্রমিকরা নন, বহু দক্ষ কর্মীও শোষিত হন। তাই এ দেশে প্রথম প্রয়োজন কর্মসংস্থান বাড়ানো। তার পর দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক বৈষম্যের আলোচনা করা যেতে পারে।

সর্বানী গুপ্ত, বড়জোড়া, বাঁকুড়া

স্কুলের ছুটি

‘ছুটির ফাঁদে’ (২৫-১০) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে এই চিঠি। “মাগো আমায় ছুটি দিতে বল, সকাল থেকে পড়েছি যে মেলা”— এই বোধ এখন আর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তৈরি হয় না। কারণ, সরকারি ভাবে ছুটি বেলাগাম। পঠনপাঠনের দিনের সংখ্যা কমছে, পাঠ্যক্রম শেষ হচ্ছে না। শিক্ষা দফতর সরকারের চাপে দর্শকের ভূমিকায়। অতিরিক্ত গরমের ছুটি, পঞ্চায়েত ভোট, বিভিন্ন স্কুলে ভোট-পরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনীর অবস্থান, পুজোর ছুটি— এ সব মিলিয়ে যখন পঠনপাঠনের দিন কমে গেল, তখন সরকারি স্কুলও লক্ষ্মীপুজোর পরে খুলতে পারত। অথবা পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বছরে তিনটি পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের পরিবর্তে দু’টি নেওয়া যেতে পারত। এর ফলে, পঠনপাঠনের জন্য অনেক কর্মদিবস পাওয়া যেত।

অরুণ মালাকার, কলকাতা-১০৩

পশুবলির যুক্তি

শতবর্ষ আগের (২ নভেম্বর, ১৯২৪) একটি ঘটনা নিয়ে তৎকালীন আনন্দবাজার পত্রিকা-য় প্রকাশিত একটি খবর পুনরায় প্রকাশিত হয়েছে (‘বলির মহিষের অদ্ভুত কাণ্ড’, ৩-১১)। খবরটি মনকে খুব ছুঁয়ে গেল। সংবাদটি এ রকম: দুর্গাপুজোয় মোষ বলি দেওয়ার আগে হাইদগাঁও গ্রামের জনৈক ব্যক্তির প্রদত্ত প্রাণীটি এমন ভাবে কেঁদে ওঠে, “তাহাতে উপস্থিত সকলেরই মন করুণার্দ্র হইয়া উঠিল। তখন সামান্য রুধির লইয়া মহিষটিকে ছাড়িয়া দেওয়া হইল।”

আধুনিক কালের সমাজবিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, জনসমক্ষে নৃশংস ভাবে পশুবলি অনেকের মনে হানিকর প্রভাব ফেলতে পারে। প্রসঙ্গত, দেশে ১৯৬০ সালে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রতিরোধ আইন প্রবর্তিত হলেও, ধর্মের প্রয়োজনে পশুপ্রাণীদের কোনও নির্মম প্রথায় হত্যা করার বিষয়টি ওই আইনের ২৮ নম্বর ধারায় বিশেষ ছাড় পেয়েছে। সম্প্রতি ‘পিপল ফর দি এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট অব অ্যানিম্যালস’ (পেটা), ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডক্টর মণিলাল বালিয়াতে ভারতের পশু কল্যাণ পর্ষদের কাছে সুপারিশ জমা দিয়ে জানিয়েছেন, ভারত যখন মহাকাশ মিশনে যাত্রা করছে, পশুবলির এমন প্রাচীন প্রথাকে শাস্তিযোগ্য নিষ্ঠুরতা হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।

সনাতন ধর্মের বহু শ্লোকে পশুবলি নিয়ে সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন ব্রহ্মপুরাণে আছে, “দেবকার্য্যে পিতৃশ্রাদ্ধে তথৈব চ মাঙ্গল্যকর্ম্মণি।/ তস্যৈব নরকে বাসঃ যঃ কুর্য্যাৎ জীবঘাতনম্।।” (যে ব্যক্তি দেবকার্যে, শ্রাদ্ধে অথবা কোনও শুভকর্মে জীববধ করে, তার নরকে বাস হয়।) আবার যোগোপনিষদে পাই—“যূপং কৃত্বা পশূন্ হত্বা কৃত্বা চ রুধিরকর্দ্দমং।/ যদি স্বর্গং নরঃ যাতি নরকং কেন গম্যতে।।” (যূপকাঠে পশুবধ করে ও রক্তের কর্দম সৃষ্টি করে যদি মানব স্বর্গে গমন করে, তব নরকে গমন করে কীরূপে?”)। অবশ্য, এর বিপক্ষেও বক্তব্য মজুত। যেমন মুণ্ডমালাতন্ত্র ও বৃহৎসারতন্ত্রে আছে, শক্তির উদ্দেশ্যে ছাগ বলি দিলে বাগ্মী হয়, মেষ বলি দিলে কবি, মহিষ বলিতে সম্পদ বৃদ্ধি, মৃগ বলি দিলে মোক্ষফল ভাগী হওয়া যায়, গোধিকা বলি দিলে মহাফল লাভ করা যায় আর নরবলি দিলে মহাসমৃদ্ধি লাভ হয়, অষ্টসিদ্ধির অধিকারী হওয়া যায়, ইত্যাদি।

ধর্মকে জড়িয়ে পশুহত্যা বিষয়ক সমস্ত রকম তরজা-কূটকচালি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে, মানুষকে সবার আগে হতে হবে পরম মানবিক। একশো বছর আগে ঘটা বলির মহিষটি উপস্থিত কিছু সত্যিকারের মানবিক বোধসম্পন্ন লোকের মুখোমুখি হয়েছিল বলেই তাকে সে দিন বলির যূপকাঠে প্রাণ দিতে হয়নি!

পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Mohan Bhagwat RSS

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}