Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
SAIL

সম্পাদক সমীপেষু: অস্তাচলে অস্ত্রও?

কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আবহে ১৭৫ বছরের পুরনো অস্ত্র কারখানাগুলির ‘কর্পোরেটাইজ়েশন’ নামক গালভরা বুলির আড়ালে বেসরকারিকরণ সম্পন্ন হল।

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২১ ০৪:৪২
Share: Save:

‘ইস্পাত-কঠিন’ (২২-৬) সম্পাদকীয় নিবন্ধে লেখা হয়েছে, “নরেন্দ্র মোদীর শাসনকালে একের পর এক বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, এবং অন্তত দুইটি বড় ব্যাঙ্কের প্রধান দফতর সরিয়াছে কলিকাতা হইতে। আরও কয়েকটি সংস্থার প্রধান দফতর সরিতে পারে, আশঙ্কা রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর।” সাম্প্রতিক অতীতে ২০১৭ সালে হিন্দুস্থান স্টিল ওয়ার্কস কনস্ট্রাকশনস, ২০১৮ সালে স্টেট ব্যাঙ্কের সেন্ট্রাল অ্যাকাউন্টস হাব, ২০২০ সালে ইউবিআই হেড কোয়ার্টার্স, কোল ইন্ডিয়া, ইস্টার্ন কোল ফিল্ডস, ভারত কোকিং কোল-এর সদর দফতর একই প্রক্রিয়ায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অমিত মিত্র সেল-এর ঠিকাকর্মীদের ভবিষ্যৎ ও করোনা পর্বে স্থায়ী কর্মীদের বদলির বিষয়টি চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন। তৎকালীন ইস্পাতমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান মূল প্রসঙ্গটি সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়ায় সংশয় ও আশঙ্কা দৃঢ়তর হয়েছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের আবহে ১৭৫ বছরের পুরনো অস্ত্র কারখানাগুলির ‘কর্পোরেটাইজ়েশন’ নামক গালভরা বুলির আড়ালে বেসরকারিকরণ সম্পন্ন হল। দেশব্যাপী ৪১টি অস্ত্রনির্মাণ কারখানার শতাব্দীপ্রাচীন চারটি গুরুত্বপূর্ণ কারখানা এই বাংলায় অবস্থিত, দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা কারখানাগুলির সদর দফতর কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে। কোভিডের সুযোগে ঢাকি-সুদ্ধ প্রতিমা নিরঞ্জন সেরে ফেলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

প্রায় ১ লক্ষ ৬৪ হাজার কর্মীর নিরলস প্রচেষ্টা ও দক্ষতায় স্থল-বিমান-নৌবাহিনীর অধিকাংশ ছোট-বড়-মাঝারি অস্ত্র, ট্যাঙ্ক-বিমান বিধ্বংসী প্রতিরোধী যন্ত্র, বোমা, মিসাইল, লঞ্চার, গ্রেনেড, আর্মড ভেহিকল, প্যারাশুট এই কারখানাগুলিতে উৎপাদিত হয়। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও আয়ুধ নির্মাণ বাহিনী ‘প্রোডাকশন টার্গেট’ সম্পূর্ণ করেছে। তা সত্ত্বেও ৮৭টি উৎপাদিত প্রতিরক্ষা-সম্পর্কিত পণ্য (এর মধ্যে ৩৭টি যুদ্ধাস্ত্র) বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া, ১২টি কারখানার দায়িত্বভার বৃহৎ শিল্পপতিদের হাতে অর্পণ করা হল। নীরবে এই কারখানাগুলি থেকে শ্রমিক-কর্মচারীদের ‘অতিরিক্ত কর্মী’ সেলে পাঠানো শুরু দেখে সিঁদুরে মেঘ দেখেছিলেন অনেকেই। শতকরা ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ সরঞ্জাম সফল ভাবে এ দেশের ‘অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি’তে তৈরি হয়ে আসার পর, ঠিক কী যুক্তিতে প্রতিষ্ঠানটিকে নিগম তৈরির দিকে ঠেলে দেওয়া হল তা ‘অচ্ছে দিন’-এর ফেরিওয়ালারাই জানেন। ৪১টি কারখানা, সাতটি কর্পোরেটে ভেঙে আপাতত সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।

সরিৎশেখর দাস

ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

শিল্পবিস্মৃত

বিপ্লবকেতন শর্মার ‘ইস্পাতের শনির দশা’ (৫-৭) প্রবন্ধটির সঙ্গে সংযোজন করতে চাই, শুধু ইস্পাত ক্ষেত্রে নয়, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন শিল্পের নিয়ামক সংস্থা অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের অফিসটিও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিছু দিন আগেই কলকাতায় সদর দফতর অবস্থিত, এ রকম দু’টি ঐতিহ্যশালী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অস্তিত্ব বিলোপ করে সেগুলির সম্পত্তি বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আবার টাটা টি তাদের দফতর অসম থেকে কলকাতায় স্থানান্তর করতে চাইলে সেটা কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে স্থগিত হয়েছে। টি বোর্ডের অফিস তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। কলকাতায় একটিমাত্র বৃহৎ ব্যাঙ্কের সদর দফতর টিকে আছে। বাঙালি কত কিছু নিয়ে প্রতিবাদে মুখর হয়। অথচ, এই সব জরুরি বিষয়ে আমরা নীরব দর্শক রয়ে গেলাম।

কিছু দিন আগে বিশাখাপত্তনমে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগমের কারখানা বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে অন্ধ্রের মানুষকে আমরা রাস্তায় নামতে দেখেছি, যার ধাক্কায় কেন্দ্রীয় সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। এই গণবিক্ষোভে সমর্থন ছিল সেখানকার ক্ষমতাসীন সরকারের। পশ্চিমবঙ্গের সব সরকার কেন্দ্রের বঞ্চনার কাঁদুনি গায়। অথচ, এই জ্বলন্ত বিষয়গুলিকে জনমত সংগঠিত করার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে প্রতিরোধের সদর্থক পথে হাঁটে না। সত্যিই আত্মঘাতী জাতি আমরা। তা না হলে প্রাথমিক বা স্কুলশিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা বছরের পর বছর আইনি লড়াই করে সক্রিয়তার স্বাক্ষর রাখে, তারা শিল্পের বিষয়ে নিষ্ক্রিয় কেন? এই ভাবে স্থানীয় চাকরির সুযোগ নিয়ত সঙ্কুচিত হচ্ছে।

আশিস সেনগুপ্ত

কলকাতা-৩৭

চাই শিক্ষানবিশি

‘চাকরি তো হল, আর শিক্ষা?’ (১২-৭) প্রবন্ধে সুকান্ত চৌধুরী যথার্থ একটি প্রশ্ন রেখেছেন। সেই অর্থে কোনও সরকারি চাকরিই উৎপাদনের উৎকর্ষের দায়িত্ব বহন করে না। শিক্ষাক্ষেত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। যেখানে নিশ্চয়তা, সেখান থেকেই শুরু হয় নিজের দায়িত্বের প্রতি অবহেলা। প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শ্রেণিগুলিতে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ জন্মালেই শিক্ষাকে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় উৎসাহিত হতে পারে ছাত্রছাত্রীরা। কেবলমাত্র অধিক শিক্ষক নিয়োগ করেই শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যাবে, এমন নয়। শিক্ষক-শিক্ষিকার গুণগত মান এবং পড়ানোর আন্তরিকতা ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ায়, শুধু পরিকাঠামোগত বাহ্যিক উন্নয়ন দিয়ে তা হয় না। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর ব্যক্তিগত শিক্ষার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ, তাই সরকারি স্কুলগুলিতে বুনিয়াদি শিক্ষায় পরিকাঠামো পরিবর্তন তাঁর অগ্রাধিকারের মধ্যে গণ্য হয়েছে। পাশাপাশি জলের সমস্যার সুরাহা এবং বিদ্যুৎ বিলে আংশিক ছাড় দিল্লিবাসীদের অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে, যা আপাতদৃষ্টিতে বাহ্যিক মনে হলেও তার একটি পরোক্ষ রাজনৈতিক সমীকরণ আছে। দিল্লির উদাহরণ থেকে আমরা একটা শিক্ষা নিতে পারি। সেখানে অভিভাবকরা বেসরকারি স্কুলের থেকে সরকারি স্কুলগুলিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। আমাদের ছাত্রাবস্থায় স্কুলে এক জন শিক্ষক অন্তত তিন-চারটি বিষয় পড়াতেন। কিন্তু আমাদের বুনিয়াদি শিক্ষায় খামতি ঘটেনি। শিক্ষকের চেষ্টা, আন্তরিকতাই প্রধান বিচার্য।

দলতন্ত্রের উপরে উঠে যদি রাজ্যের শিক্ষাবিদদের এবং শিল্পের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে রাজ্যের শিক্ষা পরিকাঠামোর রূপরেখা তৈরি করা যায়, তা হলে প্রথাগত এবং পুঁথিনির্ভর শিক্ষার একটি পরিবর্তন অবশ্যই সম্ভব। বৃত্তিমূলক, পেশাদারি বা প্রথাগত শিক্ষা, যা-ই হোক না কেন, সেটি শিল্প এবং শিক্ষাক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী উন্নত মানের মানবসম্পদ তৈরিতে সহযোগী হতে পারে। পাকাপাকি ভাবে শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়ার আগে যোগ্য প্রার্থীকে বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষানবিশ হিসেবে নিয়োগ অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে, যা শিল্পক্ষেত্রে একটি ধারাবাহিক নিয়ম। যে হেতু শিক্ষার পেশা আর পাঁচটা সরকারি চাকরির মতো নয়, তাই এর প্রেক্ষিতটাও কেবল চাকরিপ্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা আর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার নম্বরের উপর নির্ভরশীল হতে পারে না। অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি এক শিক্ষক-পদপ্রার্থীর কাউন্সেলিং এবং হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ সমান ভাবে জরুরি।

পিনাকী রুদ্র

কলকাতা-১২৪

প্রথম অটোপ্সি

‘অন্য ইতিহাস’ (কলকাতার কড়চা, ১৭-৭) প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত মে মাসে দেশের এবং সেই সঙ্গে এশিয়ার প্রথম ‘প্যাথোলজিক্যাল অটোপ্সি’ করা হল ব্রজ রায়ের দেহে। তথ্যটি ঠিক নয়। দেশের প্রথম ‘প্যাথলজিক্যাল অটোপ্সি’-টি হয়েছিল ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজের প্যাথলজি বিভাগে। উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান সাবিত্রী সান্যাল, আমি নিজেও। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ও এই কাজের চিফ কোঅর্ডিনেটর বিশিষ্ট চিকিৎসক রণেন সেন এবং ব্রজ রায় নিজেও উপস্থিত ছিলেন। সিপিএম-এর এক নেতা দেহটি দান করেছিলেন। এর পরে, আরও একটি মরদেহের অটোপ্সি করা হয়েছিল।

কেয়া বসু

প্রাক্তন অধ্যাপক, ডব্লিউবিএমইএস

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy