বাংলা সংবাদপত্র পাঠকরা যাঁদের কাছে ঋণী, তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য বলে বিবেচিত হতে পারেন সন্তোষকুমার ঘোষ। আনন্দবাজার পত্রিকাকে সমৃদ্ধ করতে যে যে উদ্যোগ তিনি করেছিলেন, তা আমার মতো প্রবীণ পাঠকের কাছে এক উজ্জ্বল স্মৃতি হিসেবে বিরাজ করছে। অনেকেই তাঁর প্রসঙ্গ উঠলে বলেন, তিনি সংবাদ লেখায় সাধু ভাষার পরিবর্তে চলিত ভাষার প্রচলন করেন। যেন তাঁর অবদান ওইখানেই সীমাবদ্ধ। তা নয়। এমন কিছু নতুন বিভাগ তিনি শুরু করেছিলেন, যে সবের জুড়ি মেলা ভার। যেমন ‘মাঠ ময়দান’, ‘ভূমিলক্ষ্মী’ এবং ‘তরুণদের জন্য’। প্রথম দুটো কিছু দিন স্থায়ী হলেও তৃতীয়টি বেশি দিন চলেনি। তবে এই বিভাগগুলো খোলার মধ্যে দিয়ে সন্তোষবাবুর সাংবাদিকতায় দক্ষতার পরিচয় মেলে।
তাঁর সম্পর্কে সাহিত্য পাঠকদের মনস্তাপ বুঝি। শ্রীচরণেষু মাকে যিনি লিখেছিলেন, সেই সন্তোষবাবু হয়তো চেয়েছিলেন তাঁর লেখকসত্তা ঢাকা পড়ে যাক সাংবাদিকসত্তায়। তাই হয়তো চাইতেন, সংবাদ সাহিত্য হয়ে উঠুক। সাহিত্য কীর্তির জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৭২) এবং আনন্দ পুরস্কার (১৯৭১) পেয়েছিলেন তিনি।
তাঁর জন্ম ৯ সেপ্টেম্বর, অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুরে। এ বছরটি তাঁর জন্মশতবর্ষ। এখন বাংলা সাংবাদিকতায় সন্তোষবাবুর অনুপস্থিতি বড় বেশি টের পাই।
অজিত মুখোপাধ্যায়
কোন্নগর, হুগলি
সংবাদে, সাহিত্যে
চেরাপুঞ্জির আকাশ চেরাপুঞ্জির মাটিকে প্রতিটা ঘণ্টায়, প্রতিটা মিনিটে, প্রতিটা মুহূর্তে ভাসিয়ে দেয় বৃষ্টিতে। জয়সলমিরের আকাশ কদাচিৎ বৃষ্টি ঢালে রুক্ষ জমি, বালিয়াড়িতে। কিন্তু হাতে নিয়ে দেখলে দুটো বৃষ্টিই এক, যা আঙুলে কেবল স্পর্শ রেখে যায়, কোনও দাগ রেখে যায় না। খবরের কাগজকে ভিন্ন মননের প্রত্যেক পাঠকেরই পড়ার উপযোগী করার কথা সর্বপ্রথম যিনি ভেবেছিলেন, সেই সন্তোষকুমার ঘোষের সাংবাদিকতায় গগনচুম্বী সাফল্যের কথা আমরা জানি। কর্মজীবনের মধ্যেই যাঁরা জীবন্ত কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন, তিনি তাঁদেরই এক জন। নিল আর্মস্ট্রং চাঁদের মাটিতে পা রাখার পর দিন তিনি খবরের কাগজের পাতা সাজিয়েছিলেন, ‘‘মানুষ চূর্ণিল আজ নিজ মর্ত্যসীমা’’-র মতো শিরোনাম দিয়ে। পাশাপাশি, তাঁর গল্প-উপন্যাসের অসংখ্য পঙ্ক্তিতে বুনে গিয়েছেন মর্তমায়ার অলীক সুখ-দুঃখ। বেদনাই যেখানে শকুন্তলার হাতের আংটি, যাকে হারিয়ে ফেললে সম্পর্কই হারিয়ে যায়। দুঃখের অভিজ্ঞানে সুখকে দেখার সাধনা সন্তোষকুমার ঘোষ ছড়িয়ে গিয়েছেন তাঁর উপন্যাসে।
তাঁর মৃত্যুর ৩৫ বছর পেরিয়ে এসে আমরা অনুধাবন করতে পারি তাঁর ভিতর সেই বিশাল বৈপরীত্যকে, যা এক দিকে পাল্টে দিচ্ছিল বাংলার সংবাদ পরিবেশনের রীতিকে, বাংলার খবরের কাগজকে নিয়ে যাচ্ছিল আন্তর্জাতিক স্তরে, যেখানে চায়ের পেয়ালায় তুফান তোলে মস্কো থেকে মিয়ামি। আর উল্টো দিকে নিজের সাহিত্যে বাঁচিয়ে রাখতে চাইছিলেন ‘কিনু গোয়ালার গলি’-কে, যার স্যাঁতসেঁতে, আলোহীন ঘরগুলোতে ভালবাসার মানুষের মুহূর্তের উপস্থিতিতে তৃণগুচ্ছ জ্বলে ওঠে আগুনে, ঢেউ এসে বিপর্যস্ত করে দেয় চেতনা, আর জোয়ার চলে গেলেও থেকে যায় রোমাঞ্চের স্বেদ।
পাখি উপন্যাসের শেষে আমরা পড়ি, ‘‘অরিন্দমের মতো অস্থির হঠকারীর অদৃষ্টে অতঃপর কী ঘটেছিল বলতে পারব না, সেটা এই গল্পের আওতার ভিতরে আসে না। খালি একটা খটকা বাকী থাকে। অরিন্দমের মতো আরও অনেকে ছোটো-বড়ো হরেক অপরাধ করে, করে চলে, সেটা ঠিক। কিন্তু যা অপরাধ তাই কি পাপ?’’ অপরাধ থেকে পাপকে যিনি আলাদা করতে পারেন, তিনিই শিল্পী।
কিনু গোয়ালার গলি-তে আমরা দেখি ক্যালকাটা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট-এর জরিপ থেকে প্রমথর দোকান বেঁচে গিয়েছে। সে সেখানে তালার ওপর তালা লাগাচ্ছে। শান্তি আর ইন্দ্রজিতের প্রেম স্ফুলিঙ্গ হয়ে মিলিয়ে গিয়েছে ক্ষণকালের ছন্দে। কাউকে পছন্দ না করেও যে ভালবাসা যায়, সন্তোষকুমারের গল্প, উপন্যাসে তার অজস্র উদাহরণ।
গত কাল তাঁর শতবর্ষ পূর্ণ হল। তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে মনে হয়, তিনি যেন একই সঙ্গে গত কালের, আজকের এবং আগামী কালের। যখন তাঁর কিনু গোয়ালার গলি কিংবা শেষ নমস্কার: শ্রীচরণেষু মাকে অথবা সুধার শহর পড়ি, তখন গত কালের একটা পৃথিবী জীবন্ত হয়ে ওঠে আমাদের পাঠ অভিজ্ঞতায়। যখন ‘সোমেশ হাজরার খুন’-এর সুমিতা কিংবা ‘মুখোশ মানুষ’-এর সমীরণ, কিংবা ‘আমাদের মুখ নেই’-এর রমেন মিত্তিরের কথা পড়ি, তখন মনে হয় তাঁর গল্পগুলো আজকেরও। আর যখন আর্কাইভ থেকে তাঁর লেখা সম্পাদকীয় কিংবা সংবাদপত্রে প্রকাশিত নিবন্ধ পড়ি, বুঝতে পারি কী ভাবে আগামী কালগুলিকে তিনি প্রতিস্থাপন করেছেন অতীতের গর্ভে।
কাল, আজ, কাল এই তিনটিকেই যিনি ধারণ করতে পারেন, তিনিই তো বেঁচে থাকেন মৃত্যুর পরও। বহু কাল।
রিমি মুৎসুদ্দি
সেক্টর-৯, দিল্লি-১১০০৮৫
নয়া মোড়ক
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের নিবন্ধে (‘তুমি কি কমিউনিস্ট?’, ২৮-৮) লেখক মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী-কর্তৃক প্রকাশিত বই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘কমিউনিজ়মের প্রতি পুঁজিবাদী কনজ়ারভেটিভ এবং লিবারাল গণতন্ত্রীদের ভয় এতই প্রবল যে, এই স্থিতাবস্থার রক্ষীরা... কেবলই প্রমাণ করতে চায় কমিউনিজ়ম ব্যর্থ হয়েছে। তা কোনও বিকল্প হতেই পারে না... ধনতন্ত্রই একমাত্র গতি।’’ তিনি ধনতন্ত্রের যে বিকল্প পথের কথা বলেছেন, তা কি যুক্তিযুক্ত?
এই বিকল্প কী? না, ‘‘দুনিয়া জুড়ে নানা দেশে এমনকি ট্রাম্পের আমেরিকায় বা মোদীর ভারতেও কৃষি সমবায় থেকে শ্রমিকদের পরিচালিত সংস্থা... স্থানীয় অর্থনীতি থেকে পরিবেশ বান্ধব জীবনযাপনের যৌথ উদ্যোগ...।’’ তা আসলে নতুন মোড়কে পুঁজিবাদী ব্যবস্থাই নয় কি? পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আরও একটু সহনীয় করার পথ নয়? এর একমাত্র বিকল্প সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা। পুঁজিবাদী সমাজের ওপর সমাজতান্ত্রিক আদর্শের ছায়া অবশ্যম্ভাবী ভাবে এসে পড়ে এবং পড়ছেও। মুনাফাসন্ধানী পুঁজির নির্মম শোষণ থেকে মানুষকে রক্ষা করবে কোন আদর্শ, কোন ব্যবস্থা? একমাত্র সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাতেই এটা সম্ভব। যেখানে লাভের উদ্দেশ্যে উৎপাদন হয় না, শ্রমিক শোষণ হয় না, শ্রমিককে মানুষ হিসেবে দেখা হয়। আর এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘‘সমাজতন্ত্র বললেই স্ট্যালিন আর উত্তর কোরিয়ার ভয় দেখান এক দল।’’ সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা লেনিন এবং তাঁর সুযোগ্য ছাত্র হিসেবে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের বিকাশে স্ট্যালিনের অবদান অনস্বীকার্য। লেনিনবাদকে তিনি দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছেন, এ কথা পুঁজিবাদী দুনিয়ার কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। তাই কুৎসা করেও তাঁর নাম বারে বারে উচ্চারণ করতে হয়।
সোমা নন্দী
কলকাতা-৯
ডাকঘর
ডাকঘরে ঠিকমতো চিঠি বা অন্য জিনিস ডেলিভারি হচ্ছে না। রামপুরহাট হেড পোস্ট অফিস থেকে জীবনবিমার টাকা পাওয়ার চিঠি পাচ্ছি না। প্রয়োজনের তুলনায় এখানে কর্মিসংখ্যা কম। ফলে পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
গৌর গোপাল সরকার
রামপুরহাট, বীরভূম
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy