E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: দুর্ঘটনার দায়িত্ব

দুর্ঘটনা রোধের জন্য যে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি আজ বিশ্বের নানা দেশে রেলব্যবস্থায় এসেছে, তা ভারতীয় রেলে প্রয়োগ করা হচ্ছে না।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ০৫:৪৪
Share
Save

রেলে দুর্ঘটনা বাড়ছে, চলছে মৃত্যুর মিছিল। কিছু দিন আগেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়ল। মালগাড়ি পিছন থেকে এসে সেটিকে ধাক্কা মারল। মালগাড়ির চালক-সহ বহু মানুষ অকালে প্রাণ হারালেন, আহত হলেন। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী নিহত ও আহতদের জন্য কিছু অর্থমূল্য ঘোষণা করলেন। কিন্তু কেন এই দুর্ঘটনা? কয়েকটি কারণ উল্লেখ্য। প্রথমত, গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু লাইন বাড়ছে না। দ্বিতীয়ত, প্রতি বছর দক্ষ এবং অভিজ্ঞ অফিসার ও ইঞ্জিনিয়ার অবসর নিচ্ছেন, তাঁদের শূন্যস্থান পূরণ হচ্ছে না। তৃতীয়ত, হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাঁকা রয়েছে, নতুন নিয়োগ হচ্ছে না। চতুর্থত, রেলে নানা ধরনের কাজের ‘আউটসোর্সিং’ বাড়ছে, কাজের গুণগত মান কমছে। পঞ্চমত, রেলব্যবস্থা যে একটা পরিষেবা, সেই মনোভাব থেকে সরে এসে একে কর্পোরেট দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালনা করা হচ্ছে। ষষ্ঠত, দুর্ঘটনা রোধের জন্য যে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি আজ বিশ্বের নানা দেশে রেলব্যবস্থায় এসেছে, তা ভারতীয় রেলে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। সপ্তমত, পরিকাঠামোর উন্নতি না ঘটিয়ে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা সঙ্কীর্ণ স্বার্থে দ্রুতগামী ট্রেন চালু করছেন।

সর্বোপরি, রেল-দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান ও তার প্রতিকারের চেষ্টা না করে নিচুতলার কর্মীদের উপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়ানো হচ্ছে। এই সমস্ত সমস্যার প্রতিকার না হলে রেল-দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন উঁচু স্তর থেকে একেবারে নিচুতলা পর্যন্ত সৎ, দায়িত্বশীল ও দক্ষ পরিচালকমণ্ডলীর। এই সমস্ত সমস্যার সমাধান না করে দুর্ঘটনার পর রেলমন্ত্রীর দুর্ঘটনাস্থলে আগমন নিঃসন্দেহে লোকদেখানো। মৃত ও আহতদের পরিবারের মানুষদের কাছে তা এক প্রকার প্রতারণার শামিল। প্রতি বার এই প্রতারণা বন্ধ হোক। মানুষ নির্ভয়ে রেলে যাতায়াত করুক। রেলব্যবস্থা প্রকৃত অর্থে গণপরিবহণে পরিণত হোক, এটাই কাম্য।

তাপস বেরা, আন্দুল, হাওড়া

স্টেশনের হাল

সম্প্রতি হাওড়া স্টেশন চত্বরে বেড়েছে ভিখারি ও ভবঘুরেদের আনাগোনা। বড় ঘড়ি সংলগ্ন যাত্রীদের বসার জায়গায় এঁরা শুয়ে থাকেন। অনেকের সঙ্গে থাকে বিশাল বস্তা। যাত্রীদের দাঁড়ানোর জায়গাটুকুও থাকে না। এক-একটি দল ট্রেন ধরার অপেক্ষায় থাকে বলে দাবি করে। না হয় এদের চেকিং, না তল্লাশি। প্রতি দিনই দীর্ঘ সময় নতুন নতুন দল প্ল্যাটফর্মের দখল নেয়। ভিক্ষা চেয়ে বিরক্ত করেন। বোতল, কম্বল, বস্তা যত্রতত্র ছড়ানো থাকে। অনেকে হাঁড়ি, বাসন ইত্যাদিতে রান্না করা খাবার এনে খাচ্ছেন, প্ল্যাটফর্মের খাবার জলের কলেই সমস্ত দৈনন্দিন কাজ সারেন। এঁদের ভিড়ে সম্প্রতি স্টেশন পরিষ্কারের কাজেরও ব্যাঘাত ঘটছে। তাঁদের বর্জ্যের দুর্গন্ধে সাবওয়েতে চলাফেরা দুষ্কর। পাশাপাশি চলে গাঁজা আর আঠার নেশা করা। আরপিএফ, রেল কর্তৃপক্ষ কেউই দেখেও দেখেন না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, তাঁরা বলেন এর কোনও অভিযোগ দায়ের নাকি হয় না! এর প্রতিকারে কোনও আইন নেই!

মেট্রো হওয়ার পর ভিড় বেড়েছে, আর ব্যস্ততার সময়ে যাত্রী আধিক্য মিলে এক শোচনীয় অবস্থার মুখোমুখি রোজই হতে হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দয়া করে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করুন।

অরিত্র মুখোপাধ্যায়, চাতরা, হুগলি

সেতুর উদ্দেশ্য

শিয়ালদহ-লালগোলা লাইনের মুর্শিদাবাদ ও হাওড়া-ব্যান্ডেল-কাটোয়া-ফরাক্কা লাইনের আজিমগঞ্জ যুক্ত হয়েছে ভাগীরথী নদীর উপরে নির্মিত নসিপুর সেতুর মাধ্যমে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে আর একটি দিগন্ত খুলতে পারে এই সংযোগ। এই সেতুর উপরে ট্রায়াল রান সফল হয়েছে। জানি না, রেলওয়ের সেফটি কমিশনার অব ট্র্যাফিকের দিক থেকে নিরাপত্তা-পাশের উপযুক্ত সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে কি না। রেলের তরফে এক অদ্ভুত নীরবতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কেন এই নীরবতা? আমরা জানতে চাই, নসিপুর সেতু কি পাকাপাকি ভাবে শুধুমাত্র মালগাড়ি পারাপারের জন্যই ব্যবহৃত হতে চলেছে? যদি তা-ই হয়, রেল কর্তৃপক্ষ জানাক এই সেতু নির্মাণের কী উদ্দেশ্য ছিল? আর কেনই বা মানুষকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, শীঘ্রই যাত্রিবাহী ট্রেন এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল শুরু করবে?

বিপ্লব গুহরায়, চাকদহ, নদিয়া

সিট দখল

লালগোলা-শিয়ালদহ লাইনের ভাগীরথী এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরার অব্যবস্থা নিয়ে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রথমত, সংরক্ষিত কামরায় যখন-তখন যে কেউ এসে উঠে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ভাগীরথী এক্সপ্রেস সন্ধ্যা ৬টা ২০-তে যখন শিয়ালদহ থেকে ছাড়ছে, তখন থেকেই সাধারণ যাত্রীরা সংরক্ষিত কামরায় উঠে বসে যাচ্ছেন, এবং আসন ছাড়তে বললে ঝগড়া করছেন। পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, সংরক্ষিত কামরার যাত্রী-স্বাচ্ছন্দ্য যাতে বজায় থাকে, এবং সাধারণ যাত্রীরা যাতে সংরক্ষিত কামরায় উঠতে না পারেন, সে জন্য উপযুক্ত নজরদারি করা হোক।

অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

গলদ গোড়ায়

এই সংবাদপত্রে প্রকাশিত ‘কাকে দিতে হয়েছে কত? হকারদের মুখে মুখে ঘুরছে ফুটপাতের দর,’ এবং ‘এন্টালিতে বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে নিগৃহীত পুলিশ ও পুরকর্মীরা’ (২৭-৬) শীর্ষক পাশাপাশি দু’টি প্রতিবেদনে চোখ আটকাল। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, সরকারি ভাবে টিনের ছাউনি দেওয়া ফুটপাত দখলের পাকা ব্যবস্থা করা হয়েছে, তবে তার মধ্যেও ভাড়াটে দোকানদার বসিয়ে টাকা রোজগার হচ্ছে। কানাঘুষো জানা যাচ্ছে, এই লেনদেন জড়িয়ে আছে শাসক দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে। কে টাকা নিয়েছে, কে বসিয়েছে— স্থানীয় স্তরে খোঁজ নিলে সেই লোকদের চিহ্নিত করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।

তেমনই, এন্টালির বাড়ি ভাঙতে যাওয়ার আগে বাড়িটির প্ল্যান পাশ করা থেকে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট দেওয়া অবধি যিনি ফাইলের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁকে চিহ্নিত করলেই কাজ সহজ হয়ে যায়। পুর এলাকায় নজরদারিও খুব দুর্বল। বাড়িটির বেআইনি স্থায়ী নির্মাণে তিন বছর ধরে বাসিন্দারা বসবাস করলেও পুরসভা খোঁজই রাখেনি। যাঁরা স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি কেনেন, তাঁরাই বা কেন সারা জীবনের সঞ্চয় ঢেলে অবৈধ একটি বাসস্থান কেনেন! তাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়ে গেলেও মালিকানা নিজের নামে হল কি না, ছাপোষা মানুষ দেখে না। মালিকানা সরকারি নথিতে না থাকলে, ওই বেআইনি বাড়ি বা ফ্ল্যাট কোনও দিন হস্তান্তরযোগ্য হয় না। উপরন্তু ঘাড়ে নেমে আসে স্থানীয় প্রশাসনের ভাঙাভাঙির খাঁড়া, কোর্ট-কাছারি।

বামফ্রন্ট আমলে ১৯৯৬ সালের ‘অপারেশন সানশাইন’ থেকে এ পর্যন্ত ফুটপাত দখল নিয়ে যা চলছে, তা দেখেশুনে নগরবাসী বিভ্রান্ত। শুরুতে চিকিৎসা করতে হয়, তা হলে সমস্যা গভীর হয় না, জনগণের ভোগান্তিও হয় না।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Railways Train accident

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।