Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Financial Crisis

সম্পাদক সমীপেষু: শ্রমের ন্যায্য মূল্য 

সামনেই দুর্গাপুজো। যেমন তেমন ভাবে তা পালন করতেও সকলেরই কিছু অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সেই অর্থের জোগান আসে পুজো বোনাসের মাধ্যমে।

An image of Abhishek Banerjee

দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৪:২২
Share: Save:

দেবাশিস ভট্টাচার্য “কিছু ‘পাওনা’ হল” (৫-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে রাজ্যের শাসক দল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতির টানাপড়েনের হাতেগরম পরিস্থিতির যথার্থ ভাবেই উপস্থাপনা করেছেন। তবে, রাজ্যের পাওনা অর্থ আদায়ে প্রচেষ্টা এবং তার বিপরীতে কেন্দ্রীয় সরকারের কু-নাট্যের ফলে প্রকৃত যাঁরা বঞ্চিত, তাঁরা কী পেলেন? তাঁরা তো যে তিমিরে ছিলেন, সেখানেই পড়ে রইলেন।

সামনেই দুর্গাপুজো। যেমন তেমন ভাবে তা পালন করতেও সকলেরই কিছু অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে সেই অর্থের জোগান আসে পুজো বোনাসের মাধ্যমে। অর্থবানদের সে বিষয়ে মনে হয় না বিশেষ চিন্তিত হতে হয়। কিন্তু গ্রামগঞ্জের গরিব খেটে খাওয়া ‘দিন আনি দিন খাই’ মানুষগুলো কোথা থেকে সেই অর্থ আনবেন? চুরি তো করবেন না? কারণ সেই সুযোগ বা সামর্থ্য তাঁদের নেই। তাই সৎ পথে থেকে গায়েগতরে খেটে যেটুকু পাওনা তাঁদের হাতে আসত, সেটাও তো অধরা রয়ে গেল! তা হলে কি এই পুজো তাঁদের ঘরের কচিকাঁচা, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মা-বাবা-আত্মীয় পরিজনের জন্যে নয়? এ থেকে কি মনে হয়, আজকের দিনে গ্রামের রাজনীতি-সচেতন মানুষগুলোর দেশের শাসক দল এবং তাদের সহযোগী রাজ্য নেতাদের প্রতি কোনও সহানুভূতি থাকবে? চুরি তো তাঁরা করেননি। তাঁরা খেটেছেন, তাঁদের শ্রমের মূল্য চাইবেন।

এই চুরির বিষয়ে একটা প্রশ্ন, কোনও পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে এক জন সংসারে দেওয়া অর্থ চুরি করল। সেখানে কি শাস্তিস্বরূপ অন্য সন্তানদের শ্রমের মূল্য না-দিয়ে তাদেরও অন্ন বন্ধ করে দেওয়া হয়? ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনায় চুরি হয়েছে, এ কথা মেনে নিয়েও বলতে হয়, যাঁরা আজকের বিরোধী দলনেতা, তাঁরা অনেকে শাসক দলেই উচ্চপদে আসীন ছিলেন যখন ওই দুর্নীতি চলছিল। তখন কি তাঁরা কোনও প্রতিবাদ করেছেন? দেশের সংবিধানে কোথায় বলা রয়েছে, এক জনের চুরির জন্য অন্য জনও তাঁর ন্যায্য শ্রমের মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন? এ বিষয়ে দেশের আইন-আদালত অবিলম্বে উপযুক্ত ব্যবস্থা করলে মনে হয় ভাল হবে। কারণ, তাতে শ্রমদানকারী গরিব মানুষগুলো প্রকৃতই উপকৃত হবেন।

রামেশ্বর দত্ত, কলকাতা-৭৪

একপেশে

আকাশ বিশ্বাসের ‘এখানে জায়গা হবে না’ (২৮-৯) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে কিছুটা একপেশে বলেই মনে হয়েছে। কারণ এই প্রবন্ধ পড়লে মনে হয়, কলকাতা ও তার আশপাশের অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতে গেলেই এক ভয়ানক বৈষম্য ও তিক্ত পরিস্থিতির শিকার হতে হয় তাঁদের। কিন্তু বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কলকাতা ও শহরতলির বহু এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষরা (প্রবন্ধকার অবশ্য মুসলমান সম্প্রদায়ের কথাই বলেছেন) স্বাভাবিক জীবনযাপন ও শান্তিতে বসবাস করছেন। দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়া ও কসবা সংলগ্ন এলাকায় আমি বহু দিন বাস করেছি। সেই সুবাদে প্রত্যক্ষ ভাবে জানি, এখানে বহু মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ ফ্ল্যাট কিনে অথবা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছেন। সামাজিক ভাবে কোথাও তাঁদের কোনও বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হতে হয়নি। রাজারহাট, সেক্টর ফাইভ বা নিউ টাউনেও একই ছবি আমরা অনেকেই দেখেছি। প্রবন্ধকার কোথা থেকে, কোন পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে এই প্রবন্ধটি রচনা করেছেন জানি না, কিন্তু এই পত্রলেখক দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারে, বাস্তব চিত্রটি মোটেও প্রবন্ধে বর্ণিত পরিস্থিতির মতো অতটা ভয়াবহ নয়।

একটি অংশে প্রবন্ধকার বলেছেন, প্রোমোটারের হাতে জমি তুলে দেওয়ার আগে গৃহপতিরা সেই প্রোমোটারকে অনুরোধ করেন, তাঁর পূর্বপুরুষের ভিটেয় কোনও অ-হিন্দুকে যেন ফ্ল্যাট বেচা না হয়। যদি তা-ই হত, তা হলে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার এক বিস্তীর্ণ অংশে সংখ্যালঘু-সহ নাগরিকরা ফ্ল্যাট কিনে বাস করতে পারতেন না। তা ছাড়া, উপযুক্ত ক্রেতা পেলে প্রোমোটার তাঁর নির্ধারিত মূল্যে যে কাউকেই ফ্ল্যাট বিক্রি করেন। তিনি হিন্দু না মুসলমান, তা বিচার করতে গেলে তাঁর ব্যবসা চলবে না।

অনুরূপ চিত্র দেখা যায় বাইপাসের ধারের আবাসনগুলিতে। বিশেষত বাইপাস এক্সটেনশন, যাকে সাদার্ন বাইপাস বলা হচ্ছে, তার দু’ধারের বহুতলগুলিতে যথেষ্ট সংখ্যক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন। বরং এর একটি বিপরীত চিত্রও আছে। খিদিরপুর, গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াবুরুজ-এর মতো প্রাচীন এলাকায় কর্মসূত্রে রোজ যেতে হয়। দেখেছি, গত পঁচিশ বছরে বহু হিন্দু এ সব জায়গা থেকে পাট চুকিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। কেন, সেটা নিয়েও আলোচনা হওয়া দরকার বলে মনে করি।

কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-২৪

দায়বদ্ধতা

ঈশানী দত্ত রায়ের ‘তা বলে কি প্রেম দেব না’ (৩০-৯) শীর্ষক প্রবন্ধটি চমকে দিয়েছে আমাদের। শাসক দলের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই তাঁকে জেলে যেতে হবে। কিন্তু সরকারি ছানা-পোনাদের বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও অকুতোভয়, নিজের পেশার প্রতি ‘দায়বদ্ধ’ কলমচিদের থামানো চাট্টিখানি কথা নয়। কারণ, সরকারের অনুগত, দাসানুদাস নন তাঁরা। সুতরাং, বাংলা-হিন্দি সিনেমার ধাঁচের খলনায়কপনা, পৈশাচিক হাসি, প্রয়োজনে শারীরিক নিগ্রহ— সবই সয়ে যেতে হয় তাঁদের। কিন্তু, বলিউডি বাদশার নির্দেশকে অক্ষরে অক্ষরে মান্যতা দিয়ে দর্শকদের মধ্যে ক’জনই বা সরকারি ছানা-পোনাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন? সোজাসাপ্টা সরল-নগ্ন-সত্য উচ্চারণকারীদের ঋজু শিরদাঁড়াকে ভেঙে দিতে তাই চলে নিত্যনতুন কায়দা-ফিকির। ঘটমান অন্যায়গুলো প্রত্যক্ষ করলেই সেই হিমশীতল সাবধানবাণী কানে আসে, “আপনি কিছুই দেখেননি!” কিন্তু, কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা যাঁদের মজ্জাগত, যাঁরা পালিয়ে যান না, তাঁদের বাড়ির দোরগোড়ায় রাত গভীর হলে ভারী বুটের শব্দ সারা পাড়াকে সচকিত করে। প্রতিবেশীরা ঘরের আলো নিবিয়ে জানলা ঈষৎ ফাঁক করে দেখে নেন, তাঁদের পরিচিত যুবকটিকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু কাজের প্রতি দায়বদ্ধ যিনি, তাঁকে কাজের শর্ত মেনে নিজের কাজটা করেই যেতে হয়। সে কাজ হতে পারে লিখে যাওয়া বা ছবি তোলা। দুর্ঘটনার সচিত্র-সংবাদ পাঠক ভাল খায়। কিন্তু, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে যখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়ে, তখন তদন্তকারী অফিসারের চেয়ে সাংবাদিকের অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি এবং কলমের জোর সরকারি ছানা-পোনাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। “যাহা বলিব, সত্য বলিব”— আদালত কক্ষের দৃশ্য যেন। তাঁদের হাত-পা বেঁধে পর্যুদস্ত করার নিরন্তর প্রয়াস চলে। কিন্তু, ‘পরান বান্ধিবি কেমনে’? আমরাও প্রবন্ধকারের সঙ্গে চকিতে অনুভব করি, এই গানটিতে একটা রাজনৈতিক গন্ধ আছে। রং যা-ই হোক, অন্তর্নিহিতার্থটি চমকে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

বড়ই আশ্চর্য জিনিস এই ‘শব্দ’। শব্দের ভেলায় ভেসে যেমন কোথাও উত্তীর্ণ হওয়া যায়, শব্দের ঠোক্কর লেগে তেমনই ডুবেও যাওয়া যায়। শব্দেরই বাতাসে আমরা শ্বাস নিচ্ছি, শব্দের অন্নেই আমরা পুষ্ট হচ্ছি, সত্যিই এই ‘শব্দ’ বড় আশ্চর্যের বিষয়— লিখেছিলেন নবনীতা দেব সেন, তাঁর ‘শব্দ পড়ে টাপুর টুপুর’ শীর্ষক রম্যরচনায়। এখানেও চমক আছে। একটা গূঢ় অর্থ আছে। ‘শব্দের অন্নেই পুষ্ট’ হওয়া যেন শব্দের প্রতি ‘দায়বদ্ধতা’র পরিপূরক।

যে শব্দ রচনার মাধ্যমে রুটি-রুজির সংস্থান হয়, তাকে হেলাফেলা করা যায় কি? না। কবির সচেতন শব্দ ব্যবহারে, গদ্যকারের নিখুঁত পর্যবেক্ষণ উন্মোচনে, সাংবাদিকের কলমের জোরে প্রকৃত সত্যটি উন্মোচিত হয়। শব্দমালা সাজানোর প্রতি এই প্রেমই বাঁচিয়ে রাখে দায়বদ্ধতাকে। সত্য উচ্চারণে উজ্জীবিত করে তাদের।

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী, কলকাতা-১২৫

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy