Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Medical Education

বেনজির সুপারিশ

এটা শুধু যে ভাল ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি করবে তা-ই নয়, একই সঙ্গে সমগ্র চিকিৎসাবিজ্ঞানেরও যথেষ্ট ক্ষতি করবে। কারণ, ডাক্তারদের হাতে অসুস্থ মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৩৮
Share: Save:

‘শূন্যের ভিতরে এত ডাক্তার’ (২৭-৯) প্রবন্ধে বিষাণ বসু ডাক্তারি শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশের একটি জ্বলন্ত সমস্যা তুলে ধরেছেন। দক্ষ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যান্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তৈরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণের বিধি কার্যকর না করাই মঙ্গলজনক। কারণ, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে উন্নতি এবং অগ্রগতির জন্য দক্ষতাকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। তা সত্ত্বেও সংরক্ষণের গেরো অনেক ক্ষেত্রেই চেপে বসে আছে। পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এন্ট্রান্স পরীক্ষার ক্ষেত্রেও যোগ্যতামান কমাতে কমাতে বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশনকে শূন্য পার্সেন্টাইলে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ, পোস্টগ্র্যাজুয়েটের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় যাঁরা সকলের শেষে র‌্যাঙ্ক করবেন, তাঁরাও এ বার থেকে এমডি/এমএস পড়তে সুযোগ পাবেন।

এটা শুধু যে ভাল ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি করবে তা-ই নয়, একই সঙ্গে সমগ্র চিকিৎসাবিজ্ঞানেরও যথেষ্ট ক্ষতি করবে। কারণ, ডাক্তারদের হাতে অসুস্থ মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে। অনেক জটিল রোগ সারিয়ে রোগী এবং তাঁর আত্মীয়দের কাছে অনেক ডাক্তার চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আবার ভুল চিকিৎসা করা চিকিৎসকদের সংখ্যাও খুব কম নয়। এই অবস্থায় মেডিক্যাল কলেজগুলির উপযুক্ত পরিকাঠামো দেখে অনুমোদন দেওয়া এবং পড়ার ক্ষেত্রে উপযুক্ত যোগ্যতামানের উপর গুরুত্ব দেওয়া একান্ত দরকার। এ রাজ্যের অবস্থা দেখে সহজেই বোঝা যায়, অনেক ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না। এ বার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার ক্ষেত্রেও মুড়ি-মুড়কিকে একই পঙ্‌ক্তিতে ফেলে দেওয়া হল। বিষয়টি দেখে মনে হচ্ছে, সরকারের কাছে চিকিৎসকের যোগ্যতামান অপেক্ষা চিকিৎসকের সংখ্যা অধিকতর প্রয়োজনীয়।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এমন বেনজির সুপারিশ নিয়ে তাই প্রশ্ন থেকে যায়। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, বিচারপতি নিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্র কেন্দ্রীয় শাসকের নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রচেষ্টা চালানো হলেও সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে এখনও তা সম্ভব হয়নি। নির্বাচিত মেডিক্যাল কাউন্সিলের পরিবর্তে নিজেদের পছন্দের লোক বসিয়ে মেডিক্যাল কমিশন মনোনয়নের কাজটি কেন্দ্র নির্বিঘ্নে সেরে ফেলেছে। ফলে কমিশন যে মন্ত্রকের অনেকটা আজ্ঞাবহ হবে, সে কথা অনুমান করলে ভুল হবে না। যেখানে সরাসরি মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িয়ে, সেখানেও এ ভাবে রাজনৈতিক লাভ ঘরে তোলার কি খুব প্রয়োজন ছিল?

প্রদ্যোৎ পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

ভুল বাড়বে

বিষাণ বসুর প্রবন্ধে জানা গেল, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রক ন্যাশনাল মেডিক্যাল কাউন্সিলকে বার্তা পাঠিয়েছে, পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এন্ট্রান্স পরীক্ষার যোগ্যতামান কমিয়ে শূন্য পার্সেন্টাইলে নামিয়ে আনা হোক। এই ধরনের পরীক্ষাতে নেগেটিভ মার্ক থাকে। ফলে ভুল উত্তরের সংখ্যা বেড়ে গেলে মাইনাস নম্বর পর্যন্ত পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এ দেশে লোকসংখ্যা পিছু ডাক্তারের সংখ্যা খুবই কম। সরকারি পরিকাঠামোর মাধ্যমে ডাক্তারের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। মূল কারণ স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বাজেট কম। উপায়, বেসরকারি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পঠনপাঠনের অনুমোদন দেওয়া। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে খরচ অনেক বেশি। সাধারণ পরিবারের ছেলেমেয়েরা ভর্তি হতে পারবে না। অনেক ছাত্রছাত্রী বিদেশে ডাক্তারি পড়তে যাচ্ছে। কারণ, দেশের বেসরকারি ডাক্তারি পড়ার খরচের তুলনায় অন্য অনেক দেশে কম টাকায় তা পড়া যায়। বর্তমান নিয়ম চালু হলে আরও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলবে। সেখানে আরও সহজে ডাক্তার হওয়া সম্ভব হবে। মেধাবী ছাত্রছাত্রী না হয়েও যাঁরা ডাক্তার হবেন, তাঁরা কতটা সাধারণ মানুষের উপকারে আসবেন? নিঃসন্দেহে ভুল চিকিৎসার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

একই ব্যক্তি

কণাদ সিংহের ‘দুই সময়ের সন্ধি’ (১-১০) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। ১৭৮৩ সালে কালীঘাট গুপ্ত মুদ্রাভান্ডার আবিষ্কারের পরে স্বর্ণমুদ্রাগুলি ওয়ারেন হেস্টিংসের হাত ঘুরে লন্ডনে এসে পৌঁছয়। ১৮২৫-এ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অফিসার উইলিয়াম মারসডেন তাঁর নিউমিসমাটা ওরিন্টালিয়া ইলাস্ট্রাটা গ্রন্থে পরিষ্কার লেখেন যে, হিন্দুরাজাদের এই স্বর্ণমুদ্রায় চন্দ্র, লক্ষ্মী এবং ‘শ্রী বিক্রমঃ’ উৎকীর্ণ রয়েছে। তাই প্রবন্ধকারের মতে, এই লিপির গুরুত্ব তখন ‘কেউ বোঝেননি’ যত দিন না পর্যন্ত জেমস প্রিন্সেপ ব্রাহ্মী লিপির পাঠোদ্ধার করেন, এটি ভুল তথ্য।

প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় সালের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এই লেখায় ব্রাহ্মী লিপির পাঠোদ্ধার প্রসঙ্গে জেমস প্রিন্সেপ-এর যে সাল উল্লেখ রয়েছে, সেটি ঠিক নয়। রিচার্ড সলমন তাঁর গ্রন্থে পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন যে, সাঁচির ব্রাহ্মী লিপির পাঠোদ্ধার জেমস প্রিন্সেপ ১৮৩৭ সালে করেন, প্রবন্ধে উল্লিখিত ১৮৩৬ সালে নয়।

প্রবন্ধকার লিখেছেন যে, কাচগুপ্ত ছিলেন সমুদ্রগুপ্তের বৈমাত্রেয় ভ্রাতা, এবং রামগুপ্ত দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। ২০১৭-য় প্রকাশিত তাঁর গ্রন্থে সঞ্জীব কুমার প্রমাণ করে দিয়েছেন, রামগুপ্ত এবং কাচগুপ্ত একই ব্যক্তি। বিদিশা থেকে প্রাপ্ত রামগুপ্তের অশ্বমেধ শ্রেণির তাম্রমুদ্রায় মুখ্য দিকে কাচ এবং গৌণ দিকে রামগুপ্ত ম[হারাজা] গুপ্ত ব্রাহ্মী লিপিতে উৎকীর্ণ রয়েছে। মুদ্রায় উৎকীর্ণ অশ্বের গলায় যে উড্ডীন ফিতাটি রয়েছে, তার সঙ্গে প্রথম সমুদ্রগুপ্ত এবং প্রথম কুমারগুপ্তের অশ্বমেধের ঘোড়ার সাদৃশ্য রয়েছে। রামগুপ্তের অপর একটি একক দিকে উৎকীর্ণ তাম্রমুদ্রায় চক্র (কাচগুপ্তের চক্রধ্বজ শ্রেণির মুদ্রার চক্রের অনুরূপ চক্র) এবং রাম লিপি একই সঙ্গে উৎকীর্ণ হতে দেখা যায়। শুধু তা-ই নয়, অশ্বিনী আগরওয়াল তাঁর লেখায় বলেছেন যে, কাচগুপ্তের চক্রধ্বজ শ্রেণির মুদ্রা পরোক্ষরূপে অশ্বমেধ যজ্ঞের কথা বলে। কে কে থাপ্লিয়াল আরও উল্লেখ করেন যে, নৃপতিদের মধ্যে পূর্বপুরুষের নাম গ্রহণ করা রাজবংশগুলির একটি প্রচলিত নিয়ম ছিল। তাই রামগুপ্ত তাঁর পিতৃপুরুষ ঘটোৎকচগুপ্তের নাম গ্রহণ করে স্বর্ণমুদ্রা প্রচলন করেছিলেন। সঞ্জীব কুমারের মতে, রামগুপ্তই বিদিশার গভর্নর থাকাকালীন তাম্রমুদ্রাগুলির প্রচার করেন, সেখানকার আঞ্চলিক টাঁকশাল থেকে টঙ্কন করিয়ে।

সিংহাসন আরোহণের (৩৮২-৮৩ খ্রিস্টাব্দ) পর তিনি চক্রধ্বজ শ্রেণির স্বর্ণমুদ্রাগুলির প্রচলন করেন। উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের কুষাণ সম্রাট মাগ্র বা মিশ্র-র চক্রধ্বজ শ্রেণির স্বর্ণমুদ্রার সঙ্গে কাচগুপ্তের চক্রধ্বজ শ্রেণির মুদ্রার যথেষ্ট সাদৃশ্য। তাই এই মুদ্রাকে কাচগুপ্তের চক্রধ্বজ শ্রেণির মুদ্রার আদিরূপ বলে অনায়াসে পরিগ্রহ করা যায়। শঙ্কর বসু এবং নোমান নাসির কাচগুপ্তের চক্রধ্বজ শ্রেণির চক্রকে ধর্মচক্র বলে বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু কাচগুপ্তের চক্রধ্বজ শ্রেণির একাধিক মুদ্রার চক্রগুলির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে দেখা গিয়েছে এগুলি ষড়অরযুক্ত চক্র, যা বিষ্ণুর চক্র এবং বৈষ্ণব ধর্মের সঙ্গে সংযুক্ত।

কুষাণ এবং গুপ্তযুগের ইতিহাস ৪০-৫০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ইতিহাসবিদ এবং পুরাবিদদের কাছে রোম সভ্যতার সমান গুরুত্ব এবং সম্মান পেয়ে আসছে। ২০১৫-২০২২-২৩ সালের মধ্যে কুষাণ এবং গুপ্তযুগ নিয়ে বহু আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্র এবং গ্রন্থ রচনা হয়েছে। ভারতের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দু’টি যুগ আজ কেবল আর জাতীয়তাবাদী বা মার্ক্সবাদীদের সীমার মধ্যে আবদ্ধ নেই, তা সারা বিশ্বে ব্যাপ্ত। সমকালীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও সাহিত্য রচনা থেকে প্রাপ্ত উপাত্তের ঐতিহাসিক ব্যাখ্যার ভিত্তিতেই গুপ্তযুগকে ধ্রুপদী সংস্কৃতি বলা সম্ভব হয়েছে। ঐতিহাসিক গুরুত্বের ভিত্তিতেই গুপ্তযুগ ধ্রুপদী সংস্কৃতি। প্রবন্ধটির উপরিভাগে ‘ধ্রুপদী সংস্কৃতি ছাড়াও গুপ্তযুগের আছে এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব’ কথাগুলি তাই বিস্ময়কর।

শুভশ্রী বণিক, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Education Doctors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy