কোনও মহানগরের আসল পরিচয় তার পরিবহণ ব্যবস্থায়। —ফাইল চিত্র।
‘বিভীষিকা’ (৫-৭) সম্পাদকীয় মহানগরীর পরিবহণ ব্যবস্থার বেহাল দশাটিকে সামনে নিয়ে এসেছে। এ কথা সত্যি যে, কোনও মহানগরের আসল পরিচয় তার পরিবহণ ব্যবস্থায়। তার কারণ নাগরিক জীবনে ব্যস্ততা অত্যন্ত বেশি। যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে এই ব্যস্ততা। বাড়ছে মানুষের সময়ের দাম। এই অবস্থায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত পৌঁছনোটা অত্যন্ত জরুরি। মহানগরীর সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থাটি কবেই উঠে গিয়েছে। পরিবর্তে সেটিকে যে বেসরকারি ব্যবস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তা কোনও ব্যবস্থা না বলে এক চরম বিশৃঙ্খলা বলাই ভাল। সম্পাদকীয়তে সঠিক ভাবে এর জন্য অনেকাংশে দায়ী করা হয়েছে বেসরকারি বাসচালক ও কন্ডাকটরদের কমিশন-ভিত্তিক রোজগারকে। বেশি রোজগারের জন্য তাঁদের বেশি যাত্রী তোলার যে ঝোঁক, তার জন্য অফিসটাইমেও নাগরিকদের বহু মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। কিন্তু নাগরিকদের থেকে বাসমালিকরা অনেক বেশি সংগঠিত। পূর্বের সরকার হোক বা বর্তমান, সেই মালিকদের অনেকেই সরকারি দলের নেতা, কেউ কেউ মন্ত্রীও। তুলনায় নাগরিকরা চূড়ান্ত অসংগঠিত। ফলে কোপ পড়ে যাত্ৰী তথা নাগরিক স্বার্থে।
ভাড়া সমস্যার সমাধানও সরকারি অনীহায় ঝুলে রয়েছে। কোভিড-উত্তর পরিস্থিতিতে কম যাত্রীর কারণে ভাড়া বাড়ানোর যে অধিকার বাসমালিকদের দেওয়া হয়েছিল পরবর্তী সময়ে সেটাকেই স্থায়ী করে ফেলেছেন তাঁরা। বাসগুলিতে আজ আর ভাড়ার চার্টও নেই। কন্ডাক্টরের বিবেচনাই ভাড়ার সীমা নির্ধারণ করে। মাঝে মাঝে হয়তো কোনও যাত্রীর ক্ষীণ কণ্ঠের প্রতিবাদ শোনা যায়। এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশকেও পরিবহণ কর্তারা হেলায় হারিয়ে দিয়েছেন। ফলে মহানগরীর পরিবহণ ব্যবস্থায় অব্যবস্থাই স্থায়ী হয়ে দেখা দিয়েছে।
ইন্দ্র মিত্র, কলকাতা-৩১
আলাদা পথ
‘সাইকেল যেন এক মহা আবিষ্কার’— এক জন সাইকেলপ্রেমী কবির প্রথম লাইনটির কথা মনে পড়ে গেল মোহিত রায়ের প্রবন্ধ ‘গরিবের বাহন বলেই’ (২০-৬) পড়ে। একদা প্রাণের চেয়েও প্রিয় এই বাহনটির আজ যেন প্রয়োজন ফুরিয়েছে, বিশেষত নগরাঞ্চলে। কত না কথার সেতু ছিল এই সাইকেল, মনের কথা হৃদয়ের কথার আদান-প্রদান চলত। এ ছাড়া বিপদে-আপদে এই দ্বিচক্রযানটি ছিল ভরসাস্থল। শহরাঞ্চলে এর কার্যকারিতা কমেছে অন্যান্য যানের বাহুল্যের কারণে। লেখকের সদিচ্ছা টের পাওয়া গেলেও পরিবেশবান্ধব এই বাহনটি নিশ্চয়ই কলকাতার বড়বাজার, মহাত্মা গান্ধী রোড, বালিগঞ্জ-গড়িয়াহাটের মতো ব্যস্ত জায়গায় চলবে না। কেননা এই সব রাজপথে সাইকেল চলার জায়গা নেই, আলাদা কোনও ব্যবস্থা করাও অসম্ভব। তা ছাড়া ভ্যান-রিকশা, টানা-রিকশা বা মালবাহকের ট্রলিগুলি কোথায় যাবে? বাস্তবিকই এই রাস্তাগুলি যান আর মানুষের গা ঘেঁষাঘেঁষি করার জন্যেই যেন তৈরি হয়েছিল এবং এখনও এর ব্যত্যয় হয়নি। তাই এই সব অঞ্চলে লেখকের ইচ্ছে অনুযায়ী আলাদা সাইকেল লেন করার ভাবনাটাও অবাস্তব। তা ছাড়া এই অঞ্চলের ফুটপাত, রাস্তা আর মানুষজন একাকার হয়ে গিয়েছে। তবুও সল্ট লেক, নিউ টাউন-রাজারহাটের মতো নতুন যে সব নগরের পত্তন হয়েছে, সেখানে সাইকেল চলাচল ভালই চোখে পড়ে। এবং দেখা গিয়েছে, ওই সব অঞ্চলের যুবসমাজের মধ্যেও সাইকেলপ্রীতি ভাল রকমই রয়েছে।
অন্য দিকে, গ্রামাঞ্চল অথবা মফস্সলে, সাইকেলের এখনও যথেষ্ট কদর রয়েছে। গ্রামের দিকে বরাবরই দেখেছি দূর থেকে দূরে পাঁচ-দশ মাইলের পথ ঠেঙিয়ে ছেলেমেয়েরা প্রতি দিন স্কুলে যাচ্ছে। আর ইদানীং সবুজসাথীর সাইকেল পেয়ে সাইকেলের ব্যবহার আরও জনপ্রিয় হয়েছে। কলকাতার বাইরে ছোট শহরে যথেষ্ট সাইকেল ব্যবহারকারী থাকলেও অজস্র অটো-টোটো-মোটর সাইকেলের আগ্রাসী দৌড় আর হর্নের কর্ণভেদী চিৎকারে অনেকেই আজ সাধের সাইকেলটি ঘরেই বন্দি রেখেছেন। গ্রামের ছেলেমেয়েদের দেখেছি রাস্তায় আলাদা একটি ধার ঘেঁষে সাইকেল নিয়ে এগিয়ে যেতে। কিন্তু মফস্সলে কি সম্ভব হতে পারে না পৃথক একটি সাইকেল লেন?
অথচ, বিদেশে, বিশেষত ইউরোপের শহরগুলিতে আলাদা ভাবে সাইকেল-পথ আছে। প্রচুর মানুষ সেই নির্দিষ্ট রাস্তা ধরেই কাজের জায়গায় যাতায়াত করেন। কিন্তু সেই রাস্তা ধরে পথচারীদের হাঁটা-চলা একেবারেই নিষেধ। লন্ডনে টেমস নদীর ধার বরাবর দেখেছি স্তূপীকৃত সাইকেল লাইন দিয়ে দাঁড় করানো রয়েছে। অর্থাৎ, এই সব সাইকেলে চেপে মানুষজন প্রতি দিন অফিসে আসেন, গ্যারাজে সাইকেলটি রাখেন এবং কাজ শেষে সেই সাইকেলে চেপেই বাড়ি ফিরে যান। ইউরোপের শহরগুলিতে বরাবরই সাইকেল একটি জনপ্রিয় যান এবং যথাযথ ভাবে তার ব্যবহারও হয়।
পরিশেষে, প্রবন্ধকারের আক্ষেপের সুরেই বলতে হয়, নিত্যনতুন রাস্তা বা নগরের পরিকল্পনা হলেও আলাদা ভাবে এখনও কোথাও সাইকেল লেন তৈরির কথা ভাবা হয় না। এটাই নগর পরিকল্পনাকারদের চরম অপরিণামদর্শিতা।
শ্যামলজিৎ সাহা, চুঁচুড়া, হুগলি
শুধুই গরিবের?
‘গরিবের বাহন বলেই’ প্রবন্ধটি অত্যন্ত যথাযথ লেখা। সাধারণের অজানা আইনকানুনের আধো-অন্ধকার ক্ষেত্রে আলো ফেলে প্রবন্ধকার প্রকৃত ছবিটি প্রাঞ্জল করে তুলেছেন। দেখা যাচ্ছে, সাইকেল আরোহীরা নেহাত অজ্ঞানতার কারণে আইনসম্মত পথগুলিতেও ভয়ে ভয়ে চলেন এবং আইনের রক্ষকদের অনেক সময় নজরানা দিতে বাধ্য হন। ঠিক কোন কোন রাস্তায় বাইসাইকেল চালানো নিষেধ, রাস্তায় ঢোকার মুখে বোর্ডে সেই নির্দেশনামা সুস্পষ্ট ভাবে বিজ্ঞাপিত হওয়া দরকার।
প্রবন্ধটির শিরোনামে সাইকেলকে গরিবের বাহন বলা হয়েছে, সে বিষয়ে একটু ভিন্নমত পোষণ করি। সাইকেল চড়েন শুধু গরিবরাই— এ কথাটা উন্নত অনেক দেশে খাটে না। কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারী, জেনারেল ম্যানেজার এমনকি দেশের প্রেসিডেন্ট সাইকেলে সওয়ার হয়ে কর্মক্ষেত্রে যাচ্ছেন, এমন ছবিও চোখে পড়ে। তা ছাড়া, আধুনিক সুবিধাযুক্ত একটি নতুন সাইকেলের দাম কিন্তু খুব কম নয়। এ দেশের অনেক গরিবের নাগালের বাইরে। তবে সাইকেলের সুবিধার কথা বলে শেষ করা যাবে না। শুধু পরিবেশবান্ধব যানই নয়, স্কুটার-বাইকের তুলনায় সাইকেলে দুর্ঘটনার সংখ্যা তুলনায় অনেক কম। নাগরিকেরা সামান্য একটু পরিবেশসচেতন হলেই বায়ুদূষণ থেকে অনেকখানি বাঁচা যায়। আলোচিত প্রবন্ধে তার একটা মূল্যনির্ধারণ করে সাইকেল চালকদের পরিবেশ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাবটি অভিনব ও সমর্থনযোগ্য।
শুধু বড় শহর কেন, মফস্সলে কিংবা গাঁয়ে-গঞ্জে সাইকেল আরোহীদের অসুবিধার দিকে নজর দেওয়া দরকার। বসতিপূর্ণ এলাকার অনেক জায়গাতেই প্রায় বাস-ট্রাক চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত থাবা বাড়াচ্ছে দোকানপাট। অনেক জায়গায় রাস্তায় বার বার পিচ-পাথরের প্রলেপ পড়তে পড়তে রাস্তাটি উঁচু হয়ে গিয়েছে, অথচ পাশের পথটি নিচু, এবড়োখেবড়ো। ফলে অবধারিত ভাবে ঘটে দুর্ঘটনা।
প্রত্যেক বড় রাস্তার সংলগ্ন সাইকেল চালানোর পরিসর বাধামুক্ত ও সুগম করতেই হবে। বেশ কয়েক বছর হল, স্কুলে বালক-বালিকাদের সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রত্যন্ত এলাকাতেও সাইকেল আরোহীদের সংখ্যা বাড়ছে। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। নিরাপদে তাদের সাইকেল চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় রাস্তা বানানোর বিষয়টি এখনই ভাবা প্রয়োজন। সাইকেলের চাকা বাধাহীন স্বচ্ছন্দে গড়াক। জাতির অগ্রগমনের গতি বাড়বে।
বিশ্বনাথ পাকড়া, শিশ্রীরামপুর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy