ভিআইপি রোডের ধারে শ্রীভূমির পুজো এ বছরও মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি করে চলেছে। —ফাইল চিত্র।
পুজোর আনন্দ কি সত্যিই উপভোগ করা যায়, যদি তা জনসাধারণের জন্য হয়ে দাঁড়ায় যানজট যন্ত্রণা? পাঁচ দিনের পুজো কেন পক্ষকালব্যাপী? কারা অনুমতি দেয় পক্ষকাল রাস্তা বন্ধ রেখে, মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে পুজো করার? তা ছাড়া, এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি করার কি কোনও অধিকারও আছে এই সব পুজো কমিটির? ভিআইপি রোডের ধারে শ্রীভূমির পুজো বিগত বছরগুলোর ন্যায় এ বছরও মানুষের ভোগান্তির সৃষ্টি করে চলেছে। ভিআইপি রোড ধরে যাঁরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বা বিমান ধরতে যান, তাঁদের দুর্ভোগ আর উৎকণ্ঠার শেষ থাকে না। দীর্ঘ ক্ষণ যানজটে আটকে থাকতে হয় তাঁদের। আটকে পড়ে বহু শিশু, হাসপাতালগামী অসুস্থ রোগী। যে পুজোকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে নাজেহাল হচ্ছেন, এমন পুজো কমিটিকে কেন পুজো করার অনুমতি দিচ্ছে কলকাতা পুলিশ, এমনকি প্রশাসনও?
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীভূমি পুজোর কর্ণধার সেচমন্ত্রী সুজিত বসুকে অনুরোধ বা নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তাঁর পুজোকে কেন্দ্র করে যানজট সৃষ্টি না হয়। মানুষ সমস্যায় না পড়েন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের কর্ণপাত না করে গত বছরের ন্যায় এ বছরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে চলল। বছর কয়েক আগে দেশপ্রিয় পার্কে সর্বোচ্চ দুর্গাপ্রতিমার পুজো পুলিশ ভিড়ের দোহাই দিয়ে মাঝ পথে বন্ধ করে দিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে অন্যথা কেন? শাসক দলের মন্ত্রী বলেই কি আইনের আওতা থেকে শ্রীভূমি-র সাত খুন মাফ?
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি
নিজের সংস্কৃতি
বাঙালির প্রিয় দুর্গাপুজোয় দেবীর বোধন থেকে বিসর্জন, বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ভাবে পুজো সম্পন্ন হয়। দুর্গাপুজো নিয়ে নানা ঐতিহাসিক কাহিনি বর্ণিত থাকলেও শরৎকালে রামচন্দ্রের সৃষ্ট এই পুজোকে আমরা ‘অকালবোধন’রূপে চিহ্নিত করে থাকি। ষষ্ঠীতে আমন্ত্রণ ও অধিবাস পর্ব দিয়ে শুরু করে সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান, অষ্টমীতে কুমারীপুজো, সন্ধিপুজো এবং নবমীতে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে দশমীতে সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রথা আজও চলে আসছে।
মহিষাসুরমর্দিনীকে কখনও তাঁর বরাভয়দাত্রী, কখনও রণচণ্ডী, কখনও স্নিগ্ধ অপার স্নেহময়ী মায়ের রূপে প্রতিমায় বিম্বিত হতে দেখি। শিল্পীর তুলির টানে আর মুনশিয়ানায় দেবী প্রতিমার বিশেষ বিশেষ রূপ তৈরি হয়ে যায়। সাবেক দেবী প্রতিমাগুলির বিচার করলে লক্ষ করা যাবে বিশেষ বিশেষ শিল্পরীতির ছাপ তাতে স্পষ্ট। একে চলতি কথায় ‘ঘরানা’ বলা হয়। এ ক্ষেত্রে দু’টি নাম খুবই জনপ্রিয়— বিষ্ণুপুর ঘরানা আর কংসনারায়ণ ঘরানা। এ ছাড়াও দেবীর প্রতিমার পাশাপাশি চালচিত্রের এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে। সব মিলিয়েই দুর্গাপ্রতিমার শিল্পরীতি পূর্ণ হয়ে ওঠে। বহু আগে দুর্গাপ্রতিমা নির্মিত হত পাথর দিয়ে। মাটির প্রতিমার তখনও সে রকম চল হয়নি। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রাজা জগৎমল্ল এবং রাজশাহীর তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণকেই প্রথম উদ্যোগ নিয়ে মাটির দেবী প্রতিমা নির্মাণ করাতে দেখা যায়। ফলে তাঁদের হাত ধরেই দুর্গাপ্রতিমার দুই ঐতিহ্যবাহী শিল্পরীতির জন্ম হয়।
রাজা জগৎমল্লের নির্দেশেই বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মাতার মূর্তি প্রথম নির্মিত হয়। সময়টা ৯৯৭ বঙ্গাব্দ। সেই প্ৰথম বিশেষ রীতিতে জগৎমল্ল দেবী মূর্তি নির্মাণ করান আর সেটাই বিষ্ণুপুর রীতির প্রতিমা বলে চিহ্নিত হয়ে যায়। বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মন্দিরও তাঁরই তৈরি। বাঁকুড়ার বিভিন্ন প্রান্তে এবং বাংলার কিছু কিছু স্থানে এই রীতিতে নির্মিত দেবী প্রতিমায় দেখা যায় একই চালের মধ্যে উপরের দিকে অধিষ্ঠিত আছেন গণেশ এবং কার্তিক আর নীচের দিকে লক্ষ্মী ও সরস্বতী। চালচিত্রের পিছনে এই রীতিতে কোনও চিত্রকলা অঙ্কিত থাকে না। তার বদলে দেখা যায় শিব এবং নন্দী-ভৃঙ্গীকে।
অন্য দিকে, কংসনারায়ণ রীতির প্রতিমার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ বাংলায় এক বার সাড়ম্বরে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন, যা আজ বাঙালিদের মধ্যে কিংবদন্তির রূপ নিয়েছে। কারও মতে মোগল আমলে, আবার কারও মতে পঠান যুগে কংসনারায়ণ এই পুজো করেছিলেন যাতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় সাত-আট লক্ষ টাকা। তাহেরপুরের রাজা হলেও সে কালের বাংলায় তিনি বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম ছিলেন। এই কংসনারায়ণের প্রবর্তিত যে বিশেষ রীতি তাতে লক্ষ করা যায়, তা বিষ্ণুপুর রীতির ঠিক উল্টো অবস্থান। অর্থাৎ, গণেশ ও কার্তিক এই রীতিতে নীচের দিকে অধিষ্ঠিত আর সরস্বতী এবং লক্ষ্মী আছেন উপরের দিকে। এই রীতিতে প্রতিমার পিছনে থাকা অর্ধচন্দ্রাকার চালচিত্রের মধ্যে অঙ্কিত দশমহাবিদ্যার রূপটি বিশেষ নজর কাড়ে। শোনা যায়, নদিয়ার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র কংসনারায়ণ রীতিকে প্রভূত জনপ্রিয়তা দিয়েছিলেন। গাঢ় হলুদ বর্ণের দেবী দুর্গার প্রতিমা আজও কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে গেলেই দেখা যায়। দেখা গিয়েছে যে, বাংলার বেশির ভাগ সাবেক বনেদিয়ানার পুজোতে এই রীতির প্রতিমাই পুজো করা হয়ে থাকে।
অন্য দিকে, চালচিত্রের কারুকার্যও বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে, যা দুর্গাপ্রতিমার শিল্পরীতিরই অঙ্গ। সাবেক প্রতিমার ক্ষেত্রে টানা চাল, বাংলা চাল, মঠচৌড়ি চাল কিংবা মার্কিনি চাল লক্ষ করা যায়। এক-একটি চালচিত্রের এক-এক রকম রীতি। প্রতিমার পিছনে তিনটি চালি যদি উঠে যায় চূড়ার মতো, তাকে বলা হয় মঠচৌড়ি চাল। অন্য একটি ক্ষেত্রে দেখা যায় শুধুমাত্র দুর্গা, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর মাথার পিছনেই তিনটি ছোট অর্ধবৃত্তাকার চাল রয়েছে, যাকে টানা চাল বা টানাচৌড়ি চাল বলা হয়। কার্তিক আর গণেশের বিগ্রহ এক বিশেষ প্রকার চালিতে খানিকটা বাইরের দিকে থাকে, তাকে বলা হয় মার্কিনি চাল। এই চালচিত্রই বেশির ভাগ বনেদি পুজোয় দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, হাটখোলার দত্তবাড়ির সাবেক পুজোয় দেবীপ্রতিমার মঠচৌড়ি চালি দেখা যায়। আবার রানি রাসমণির জানবাজারের পুজোয় দেবীর চালচিত্র বাংলা চাল রীতির। দর্জিপাড়ার রাজকৃষ্ণ মিত্রবাড়ির যে বনেদি দুর্গাপুজো, তাতে প্রতিমায় মঠচৌড়ি চালের উপস্থিতি লক্ষণীয়। এ ছাড়াও আরও ভিন্ন শ্রেণিতে চালচিত্রগুলি পৃথক করা হত। চালচিত্রে কী আঁকা হচ্ছে, তার উপরে হয় নামকরণের রীতি— বৃন্দাবনী, রামচন্দ্রী, দশাবতারি বা কৈলাসী চাল। বর্তমানে থিমের পুজো আর পাঁচ চালার ঠাকুর হওয়াতে চালচিত্রের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্য আর নেই।
দুর্গাপুজো বাঙালি সমাজের কাছে সুদূর অতীত থেকে চলে আসা এক চলমান সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মধ্যে থাকে মার্জিত মানসিকতা, পূর্ণতার সাধনা। সমাজবদ্ধ মানুষের বেদনার বহিঃপ্রকাশের যে আচার-অনুষ্ঠান, তাই হল সংস্কৃতি। যা গড়ে ওঠে মানুষের ধর্মীয়-সামাজিক বিশ্বাস, চিত্ত বিনোদনের উপায় হিসাবে। পরিবর্তনের স্রোতের সঙ্গে যুঝতে না পেরে বিলুপ্ত হতে চলা বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্যে এই পুজোর রীতিও অবলুপ্ত হতে বসেছে। সংস্কৃতির সঙ্গেই উৎসব পালনের রীতিনীতি জুড়ে থাকে। সংস্কৃতি ভুলে উৎসব পালন নিছকই নিজ আনন্দ উদ্যাপন ছাড়া কিছু নয়। সেখানে ব্যয় হয় সময়, অর্থ। কিন্তু চিরাচরিত অতীত যে সমৃদ্ধির জোগান দিতে পারে, সেটা ভুললে নিজস্ব সংস্কৃতি অচিরেই হারিয়ে যাবে। নিজেদের স্বার্থেই বাঙালিদের এই সংস্কৃতি ধরে রাখায় উদ্যোগী হতে হবে।
শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০
এত ভাড়া
পুজোর সময় অটোয় ওঠা দায়। ওই ক’দিন চালকরা যথেচ্ছ ভাড়া দাবি করেন। শুধু তা-ই নয়, এঁদের মেজাজ আরও বেড়ে যায়। অনেক সময় অকারণে হেনস্থা হতে হয়। ট্র্যাফিক পুলিশেরা যেখানে পুজোর দিনগুলোয় দক্ষতার সঙ্গে যান নিয়ন্ত্রণ করেন, সেখানে এই অটোচালকদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না কেন?
সৌর চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৩২
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy