Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
madhyamik exam

সম্পাদক সমীপেষু: বিকল্পের সন্ধান

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব সময় তাদের মতো করেই আবেদনকারীর মেধা বা যোগ্যতা বিচার করে থাকে।

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২২ ০৫:৩৬
Share: Save:

সীমান্ত গুহঠাকুরতার ‘যিনি তোমাকে মুক্তি দেবেন’ (১১-৩) প্রবন্ধটিতে যেন স্ব-বিরোধিতার ছায়া খুঁজে পেলাম। নাবালক ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক পরীক্ষার আয়োজনে রাষ্ট্রের সুরক্ষার বজ্র আঁটুনির বহর দেখে লেখকের উদ্বেগ এবং একই সঙ্গে তার যৌক্তিকতাও ব্যক্ত হয়েছে। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীদের সৎ, শ্রদ্ধাবান, সংযমী এবং বিনয়ী হওয়ার শিক্ষা না দিলে, তার দায় থেকে অভিভাবকরা মুক্ত থাকতে পারেন কি? চরিত্র গঠনে প্রথাগত শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে গৃহের পরিবেশ কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এই প্রসঙ্গে কলকাতার এক নামী বেসরকারি স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে অফলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে অভিভাবকদের একাংশের প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করা যায়।

একই সঙ্গে উল্লেখ করা যায়, গত বছর স্নাতক স্তরের ফলাফলের প্রেক্ষিতে সংবাদপত্রে প্রকাশিত বেথুন, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষাদ্বয়ের অসহায়তার কথা। সততা বজায় রেখে ছাত্রীরা অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ায় এবং অধ্যাপিকারাও খাতা দেখায় কোনও আপস না করায় দু’টি কলেজের কোনও ছাত্রীরই প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে স্নাতকোত্তর স্তরের একাধিক বিষয়ে নিজেদের কলেজেই ভর্তির মেধা তালিকায় স্থান হয়নি। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় সততার পাঠ পুরোপুরি নিষ্ফল হয়েছে, বলা যাবে কি?

ক্রমবর্ধমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা, উচ্চশিক্ষা-সহ চাকরি বা কর্মক্ষেত্রের চাহিদা এবং জোগানে বিস্তর ফারাক এবং সর্বোপরি ভোগবাদের হাতছানি থেকে ছাত্রছাত্রীদের দূরে সরিয়ে রেখে রাষ্ট্র বা কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটির পক্ষে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা রাতারাতি ঐচ্ছিক করে বাস্তবসম্মত বিকল্প পথের সন্ধান দেওয়া সম্ভব কি? কেবলমাত্র বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে নয়, নামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব সময় তাদের মতো করেই আবেদনকারীর মেধা বা যোগ্যতা বিচার করে থাকে।

যুগের সঙ্গে চিন্তাধারাও বদলাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের ‘অচলয়াতন’-এর দাদাঠাকুরের উক্তির যথার্থতা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ওই সময়কালকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব কি?

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭

দায়ী শিক্ষাব্যবস্থা

‘মাধ্যমিকে কড়াকড়ি কেন! স্কুলে বিক্ষোভ’ (১২-৩) খবরের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। দাবি, বিক্ষোভ, আন্দোলনের একটা সুচিন্তিত, সামাজিক, নৈতিক ও যুক্তিযুক্ত বিষয় থাকা উচিত সব ক্ষেত্রেই। এটা ঠিক যে, কোভিড পরিস্থিতির কারণে গত দু’বছর মাধ্যমিকের লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই পরীক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ করা হয়। কিন্তু চলতি বছরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হ‌ওয়ায় লিখিত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়েছে। শ্রেণিভিত্তিক পঠনপাঠন সম্ভব হয়নি। তাই বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যসূচির মূল অংশ থেকে কিছু কিছু অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে, যাতে পড়ুয়ারা কম সময়ের মধ্যে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নম্বর বিভাজনের ক্ষেত্রেও আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে অনেক আগেই। প্রশ্নপত্র পাঠ ও প্রশ্নের উত্তর নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময়। এই সমস্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে যাতে পরীক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের লিখিত উত্তর সম্পন্ন করতে পারে ও অধিক নম্বর পেয়ে জীবনের প্রথম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে। এত সুবিধা সত্ত্বেও এক অভিনব বিক্ষোভে শামিল হয় পরীক্ষার্থীরা। কী চায় তারা? ব‌ই দেখে বা অসৎ উপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে? শিক্ষালাভের প্রথম ডিগ্রি অর্জন করার পরীক্ষায় যদি এমন দাবি ওঠে, পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতে আরও কী কী দাবি উঠতে পারে, তা সহজেই বোঝা যায়। শিক্ষার মূল্য কি এই? এই ভাবে ডিগ্রি অর্জন করার মানে কী? প্রশ্ন নানা মহলে।

এর জন্য দায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রের নিয়মাবলি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা প্রয়োজন। তা হয়নি বলে এই ধরনের বিক্ষোভে শামিল পরীক্ষার্থীরা।

নরসিংহ দাস, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

বিতর্ক নয়

প্রতি বছরই মাধ্যমিকের ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে কিছুটা কৌশলী প্রশ্ন থাকে। ইতিহাস মানেই মুখস্থবিদ্যার ফুলঝুরি ছোটানো যে নয়, সেটা ‘পেপার সেটার’রা জানান দিতেন। তবে খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এর হেরফের সে ভাবে ধরা পড়ত না। লিখলেই নম্বর। ইতিহাসের মেধাবীরা, অর্থাৎ যাদের ভাষায় দখল আছে, পয়েন্ট-নির্ভর নির্ভুল তথ্য পরিবেশন এবং বিশ্লেষণী দক্ষতা আছে, বঞ্চিত হত। অপ্রাসঙ্গিকতা বর্জন করে স্মৃতির আধার থেকে দীর্ঘ অনুশীলনে রপ্ত বিষয়টিকে পরীক্ষার হলে খাতায় ফুটিয়ে তুলতে চাই ত্যাগ ও সাধনা। প্রতিটি পরীক্ষার শুরুর পনেরো মিনিট প্রশ্নপত্র পড়ার জন্য বরাদ্দ আছে। বিশ বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এই পনেরো মিনিটেই ভবিষ্যৎ তৈরি হয়। এক দল ব্যস্ত হয়ে পড়ে ‘হল কালেকশন’-এ। এরাই সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি। আর হাতেগোনা কয়েক জন পড়ুয়া তন্নিষ্ঠ সাধনায় রপ্ত করা বিদ্যা উজাড় করে দেওয়ার পরিসর খোঁজে ওই পনেরো মিনিট সময়ে। আগামীর স্বপ্নে বিভোর দলছুট ওই সত্তাগুলির আশাভঙ্গ হতে সময় বেশি লাগে না। দুপুর বারোটা থেকে তারাও মুখস্থবিদ্যার ঝুলি উপুড় করে দেয়। কৌশলী প্রশ্নগুলো তারাও এড়িয়েই যায়। তার কারণও আমরা, যারা অভিভাবক ও অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা বলে নিজেদের দাবি করে এসেছি এত কাল। ‘কমফর্ট জ়োন’-এর বাইরে না যাওয়ার মগজ ধোলাই তো আমরাই করেছি তাদের। অতিমারি কালে ক্লাস বঞ্চনার ব্যাখ্যা দিয়ে এ দৈন্যতা চাপা যাবে না।

এই মধ্যমেধার মহাযজ্ঞের বিরুদ্ধে আক্রমণ শাণিয়েছে এ বারের মাধ্যমিক ইতিহাসের প্রশ্নের ধরন। ‘কমফর্ট জ়োন’-এর বাইরে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে গোটা শিক্ষাসমাজটাকে। বিতর্কটা আসলে সেটা নিয়ে। ঠিক একই বিতর্ক হয়েছিল ১৯৯৪ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার অঙ্কের প্রশ্ন নিয়ে। উদারনীতির হাওয়ায় বিজ্ঞানের পালেও হাওয়া লাগতে শুরু করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপক সমাজ বুঝে নিতে চাইছিলেন আমাদের বাংলা মিডিয়ামের বিজ্ঞান বুকে নিয়ে বড় হওয়া আগামীর স্বপ্ন-সন্ধানীরা আসলে কতটা তৈরি! ব্যর্থ হয়েছিলেন। বিতর্কটাই বড় হয়ে দেখা দেয়। আবার পরীক্ষা নিতে হয়েছিল।

ইতিহাসের ক্ষেত্রে হয়তো সে রকমটা হবে না। যাঁরা দাবি করছেন আবার পরীক্ষার, তাঁদের আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন আছে। অন্য দিকে, মাননীয় অধ্যাপক সমাজের কাছে অনুরোধ, দয়া করে স্মৃতিনির্ভর, কুইজ় ধরনের প্রশ্নের বিকল্প সন্ধান শুরু করুন। এটা প্রজন্মের দাবি। কারণ, সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ইতিহাস অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিতর্ক নয়, চাই সর্বাত্মক আত্মানুসন্ধান।

পার্থপ্রতিম চৌধুরী, কোন্নগর, হুগলি

গিনিপিগ নাকি

কোভিডের কারণে গত দু’বছর ধরে অনেক ছাত্রছাত্রী বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন থেকে দূরে সরে ছিল। তাদের সে ভাবে পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি। গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষাও নেওয়া হয়নি। কিছু সচেতন পরীক্ষার্থী ছাড়া অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী পাঠানুশীলন সে ভাবে করে উঠতে পারেনি। বিশেষত গ্রামীণ অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা। সেই কারণেই এই বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ইতিহাস পরীক্ষায় বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়েছে।

ইতিহাসের বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্ন বা অনেক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন দেখে মনে হয় যেন জেনারেল নলেজের প্রশ্ন করা হয়েছে। যে সব প্রশ্ন চার নম্বর মানের হওয়া উচিত, তা আট নম্বরের করা হয়েছে। এই বছরের প্রশ্ন সাধারণ মানে করাই বিধেয় ছিল। উদ্ভট প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষার্থীদের গিনিপিগ করার কোনও অর্থ হয় কি?

নিশানাথ ভট্টাচার্য, আনগুনা, পূর্ব বর্ধমান

অন্য বিষয়গুলি:

madhyamik exam offline exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy