Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Child Marriage

সম্পাদক সমীপেষু: বিয়ে যেন নিরাপদ

আগে এবং এখনও এমন হচ্ছে যে, পুলিশ, প্রশাসনের লোকজন এসে বিয়ে বন্ধ করছে।

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৪২
Share: Save:

স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘ভোট-বয়সে বিয়ে শুধু মেয়েদের’ (২৫-৩) প্রসঙ্গে এই চিঠি। লকডাউনের পর আমার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে তাদের বাবা-মা বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। বোঝাতে গিয়েছিলাম ওঁদের। মায়েরা বলেছিলেন, “মেয়ে আমার ডাগর হয়্যাছে, আমরা মাঠে ঘাটে দিনমজুর খাটতে যাই, স্কুল তো বন্ধ, কোথায় কে যে ফুসলে নিয়ে যাবে, তাই তো ভয়ে বিহা দিই।” এ রকম আরও কয়েকটি ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে বুঝেছি, মেয়েদের নিরাপত্তাবিধানই বাবা-মায়ের মাথাব্যথার প্রধান কারণ। আর এই মাথাব্যথা কমাতে মেয়েটির তড়িঘড়ি বিয়ের আয়োজন করেন তাঁরা।

আগে এবং এখনও এমন হচ্ছে যে, পুলিশ, প্রশাসনের লোকজন এসে বিয়ে বন্ধ করছে। মা-বাবা তখন বিয়ে দেবেন না বলে অঙ্গীকার করছেন, তার পরও লুকিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। অথচ, মেয়ের ইচ্ছে থাকে না এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার। আঠারোর লগ্নে অন্যরা যখন ভোট প্রক্রিয়ায় স্ব-মত প্রকাশের অধিকার অর্জন করে, তখন এই মেয়েদের স্বাধিকার খর্ব হয়। কেননা কন্যাশ্রী টু-র টাকায় তাদের বাবা-মা তৎপর হয়ে তার বিবাহের আয়োজন করে, আঠারো বছর বয়স বলে পুলিশ-প্রশাসনও বাধা দেয় না। হবু শ্বশুরবাড়ি মেয়েকে পড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখে না। তাই ওই মেয়ের পড়াশোনা, স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন, সৃজনশক্তি, সম্ভাবনা সবই ক্রমশ তলিয়ে যায়! কেউ খোঁজ রাখে না এ সবের!

মেয়েদের নানা সুবিধা, নানা প্রকল্প চালু করলেও নিরাপত্তা তো কোনও রাজনৈতিক দলই সুনিশ্চিত করতে পারেনি। অগত্যা বাবা-মা মেয়ের মতামত উপেক্ষা করেই বিয়ে দিয়ে নিরাপত্তাবিধানে মরিয়া চেষ্টা চালায়। কোনও কোনও মেয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শেষরক্ষা হয় না। পাচার, অকালমাতৃত্ব, নির্যাতনের শিকার হয়! করোনার পর উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে নাবালিকার বিয়ে, ছাত্রীরা অনেকেই স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন, ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প এই মুহূর্তে অনেকাংশে দিশা হারিয়ে ফেলছে। মেয়েদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে না পারলে বিয়ের বয়স বাড়ানো যাবে না, অনেক প্রকল্পও আশানুরূপ সাফল্য পাবে না। নিজের শর্তে বাঁচতে চায় মেয়েরা, তাদের চাই স্বাধীনতার নিরাপত্তা।

শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর

কেন ধর্ষণ

স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘মেয়েদেরও মতামত আছে?’ (পুস্তক পরিচয়, ৬-৩) নিবন্ধে হোয়াই মেন রেপ বইটির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইটি এখনও পড়ার সুযোগ হয়নি। তবে লেখাটি পড়ে কিছু কথা যোগ করতে চাই। রাস্তাঘাটে প্রায়শই পুরুষদের মুখে শুনি যে, মেয়েরা সাজপোশাক করেন পুরুষদের আকর্ষণ করার জন্যই। সুতরাং, মেয়েদের গায়ে হাত দিতে গেলে আলাদা করে সম্মতি লাগে না। এদের পরিধেয় ও আচরণই যথেষ্ট সম্মতি এবং ইশারা। অনেকেই হয়তো ভাবেন যে, এই মেয়েদের শিক্ষা না দিলে যদি ঘরের বৌ-মেয়ে এদের মতো বিদ্রোহী হয়ে ওঠে— রাস্তায় বেরিয়ে নিজের জীবনটা নিজের মতো করে বুঝে নিতে চায়? এই সঙ্কীর্ণ মানসিকতায় বেড়ে ওঠা পুরুষরাই হয়তো ধর্ষণ করছে। ধর্ষণের মূলে কোথাও রয়েছে অশিক্ষা ও শৈশব থেকে দেখে-আসা মেয়েদের উপর হওয়া অন্যায়ের স্বাভাবিকীকরণ।

পুরুষরা আজও পারে না মেয়েদেরকে সমদৃষ্টিতে দেখতে। যারা আজ ধর্ষণের আসামি হয়ে জেলে বসে, তাদের সঙ্গে ধর্ষিতাদের মুখোমুখি আলোচনা দরকার। তাদের বোঝা দরকার যে, তারা অপরাধ করেছে। শুধু ফাঁসিকাঠে তাদের ঝুলিয়ে দিলেই এই অপরাধ বন্ধ হবে না। গবেষকরা আসামিদের সঙ্গে কথা বলে বুঝুন যে, ধর্ষণের ঠিক আগে কী মানসিকতা কাজ করে তাদের ভিতর। তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক মূলগুলির অনুসন্ধান হোক। তার পর সেই মানসিক বিকৃতিকে আলাপচারিতা ও বোধের শিক্ষার মধ্যে দিয়ে পাল্টানোর চেষ্টা হোক। তা হলে হয়তো তারা কাল আর পাঁচটা মেয়েকে ধর্ষণের হাত থেকে বাঁচাবে।

নিশান মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৪

মেয়েদের জমি

“কৃষকবধূ কেন ‘কৃষকবন্ধু’ হতে পারেন না?” (২৩-৩) শীর্ষক প্রতিবেদনে স্বাতী ভট্টাচার্য বলেছেন, “লক্ষ লক্ষ চাষি মেয়ে উচ্ছেদ হয়েছে শ্বশুরের জমি-ভিটে থেকে।” মেয়েদের জমির মালিকানা থেকে বঞ্চনা শুধু শ্বশুরবাড়ি করে না। বাপের বাড়ি থেকেও মেয়েদের বঞ্চনার শিকার হতে হয়। জমি সম্পত্তির অধিকার পেতে বি‌ধবা নারীদের বহু ক্ষেত্রে চক্রান্তের শিকার হয়ে নাজেহাল হতে হয়। জমির মালিকানা থাকাটা সরকারি প্রকল্পের জন্য জরুরি— কৃষি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে তার বড় ভূমিকা আছে। তবু মেয়েদের জমির মালিকানার স্বীকৃতি দিতে পরিবারের কর্তা ও অন্য সদস্যদের সদিচ্ছার অভাব চোখে পড়ে‌। খেতমজুরির ক্ষেত্রে মহিলা শ্রমিকরা পুরুষদের চেয়ে কম পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়েদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় সকলে দায়বদ্ধ। সরকারের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না।

মহঃ নূরেন্নবী, ময়ূরেশ্বর, বীরভূম

রাষ্ট্রের দোষ?

স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘মুসলিম নেতৃত্ব বলতে দল এখনও বোঝে পুরুষ’ (২৪-৩) শীর্ষক নিবন্ধটি পড়ে অবাক ও মর্মাহত হলাম। স্বাধীনতা লাভের ৭৩ বছর পরও মুসলিম সমাজে নারীর দুর্দশা, অসহায়তা মনকে ভারাক্রান্ত করে। অবাক হলাম, লেখক তাঁদের জীবনের দুর্ভোগের জন্য মূলত রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক দলগুলিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। অভিযোগের আঙুল রাষ্ট্রের দিকে উঠলে কিছু জরুরি প্রশ্নও মনে জাগে।

১) রাষ্ট্র এবং দেশের অধিকাংশ মানুষ যেখানে তিন তালাকের বিরোধী, সেখানে পুরুষতান্ত্রিক মুসলিম সমাজের গরিষ্ঠ অংশ কেন এই বর্বর প্রথাকে টিকিয়ে রাখতে এত সচেষ্ট? ২) একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সংবিধান অনুসারে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষের ক্ষেত্রে একাধিক বিবাহ দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও মুসলমানেরা কেন একাধিক বিবাহ করবেন? ৩) আধুনিক পৃথিবীতে মুসলমান পুরুষের ইচ্ছায় কেন মুসলমান মেয়েরা পর্দানশিন ‌থাকবেন?

অনস্বীকার্য, মুসলমান সম্প্রদায়ের অনগ্রসরতার সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থ চরিতার্থে সচেষ্ট। সেই কারণেই মুসলমান সমাজ ও তার মেয়েরা যে তিমিরে, সেই তিমিরেই থাকে।

কুমারশেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

গোপনে

ভোট এলে একটা স্লোগান সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রচারে শোনা যায়, “মা-বোনেদের বলে দিন, অমুক চিহ্নে ভোট দিন।” কখনও শুনবেন না, “ভাই-দাদাদের বলে দিন” বা “বাবা-কাকাদের বলে দিন!” অর্থাৎ, নারী কাকে ভোট দেবেন, তা নির্ভর করবে পরিবারের পুরুষের সিদ্ধান্তের উপর। ভাগ্যিস ভোটযন্ত্র গোপন কক্ষে রাখা হয়!

শুভদীপ হালদার, সরিষা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Security Child Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy