—প্রতীকী ছবি।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী অর্থনীতিবিদ পরকলা প্রভাকরের মতে, নির্বাচনী বন্ড কেবল এ দেশের নয়, গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। তাঁর অভিমত, এ জন্য বিজেপি ভোটারদের থেকে কঠোর শাস্তি পাবে। বিজেপি কী শাস্তি পাবে জানি না, তবে ভোটাররা যে শাস্তি পাচ্ছেন এবং পরবর্তী কালেও পাবেন, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। পুঁজির মালিকদের থেকে ভোটসর্বস্ব রাজনৈতিক দলগুলি টাকা নিচ্ছে বহু দিন থেকে। এক সময় গান্ধীজিকে লালা লাজপত রাই বলেছিলেন, কংগ্রেস যদি পুঁজিপতিদের থেকে টাকা নিয়ে চলে, তা হলে কংগ্রেসের রাজনীতিকে তারাই প্রভাবিত করবে। দেশের সাধারণ মানুষের কাছে টাকা চাইতে হবে, তারাই তহবিল ভরে দেবে। গান্ধীজি তা শোনেননি। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। এর সব খবর সর্বসমক্ষে আসত না। নির্বাচনী বন্ড এটাকে আড়ালে রেখে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট একে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে আনার কথা বলেছে।
এখানে যে পরিমাণ অর্থ বিভিন্ন ভান্ডার থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ঢুকেছে, তার শুধু পরিমাণগত দিক বিচার করেই তিনি সম্ভবত এটাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হিসাবে অভিহিত করেননি। এ দেশে এখনও যতটুকু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রয়েছে, এই বন্ডের মাধ্যমে তাকে উপেক্ষা করার, বিপন্ন করার চেষ্টাও যুক্ত রয়েছে। জনগণকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করা, আর ক্ষমতায় গিয়ে সেগুলিকে জুমলা আখ্যা দিয়ে পূরণ না করে মোটা অঙ্কের অর্থদাতাদের তুষ্ট করা— এই মন্ত্র গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী। সে কারণেই ‘বিকশিত ভারত’-এর মধ্যে আজ এমন আর্থিক বৈষম্য, যা গত একশো বছরে মানুষ দেখেনি, বেকার সমস্যা গত ৪৫ বছরের সমস্ত রেকর্ডকে ম্লান করে দিয়েছে। রাজনীতির নৈতিকতা ধ্বংসের বীজ রয়েছে এই প্রক্রিয়ার মধ্যে। ভোটসর্বস্ব রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতি ও মূল্যবোধহীনতা আজ উন্মোচিত হয়েছে। তাঁদের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা তলানিতে ঠেকেছে। অনেকেই তীব্র ঘৃণার পাত্র। আর্থিক বন্ড এই জন্যই সর্বনাশা।
মরমি সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় একদা বলেছিলেন, দেশসেবা মানবের শ্রেষ্ঠ সাধনা। স্বার্থের গন্ধ, নাম-যশের আকাঙ্ক্ষা, প্রাণের ভয়, কিছুই থাকা চলবে না। কিন্তু সেই দেশসেবকরা আজ কোথায়? অধিকাংশ নেতার লক্ষ্য, কী ভাবে ধনকুবেরদের তুষ্ট করে, জনগণকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাংসদ, বিধায়ক হয়ে কোটি কোটি টাকা পেতে পারেন।
নির্বাচনী বন্ড এই প্রক্রিয়াকে খোলাখুলি দেখিয়ে দিচ্ছে।
গৌরীশঙ্কর দাস, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
শুধু স্লোগান
‘বেকারত্বের দাওয়াই নেই, উপদেষ্টা বচনে প্রশ্নে মোদীও’ (২৮-৩) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে জানাই, দেশে বেকারের পরিসংখ্যানে বিজেপি সরকার সব রেকর্ড ভেঙেছে। এ কথা নতুন নয়, তবে ‘বিরোধীদের কুৎসা’ বলে বিজেপি ইতিপূর্বে এই তথ্য এড়িয়ে গিয়েছে। এখন আর তার উপায় নেই। কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরনও এড়াতে পারেননি। ‘ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট-২০২৪’ তিনি ফাঁস করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার অনুষ্ঠানে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে বেকারদের মধ্যে ৮৩ শতাংশই যুবক-যুবতী। তা হলে ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’ শুধুই স্লোগান? অধিকাংশ যুবক-যুবতী কর্মহীন, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের স্থান নিম্নগামী, অথচ ভারত আগামী ২০২৭ সালে পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে যাবে— এই মত এই আর্থিক উপদেষ্টা ব্যক্ত করেছিলেন গত বছর জুন মাসে। ২০১৯ সালের ব্রিকস-এর সভাতেও বলেছিলেন। আবার গত বছর অগস্টে জোহানেসবার্গের ব্রিকস-এর সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছিলেন, আগামী কিছু দিনের মধ্যেই ভারতের অর্থনীতি পাঁচ লক্ষ কোটি ডলার ছুঁয়ে ফেলবে। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বেকারত্ব নিরসন ও ক্ষুধা নিবারণ করার প্রয়োজন নেই তা হলে! ‘অমৃত ভারত’ তা হলে কাদের জন্য অমৃত?
পাঠক মিত্র, কলকাতা-৩৪
বন্ড-নকশা
২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বন্ডের মাধ্যমে নেওয়া টাকার যে হিসাব পাওয়া গিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ শিল্পসংস্থাই প্রায় সব বড় দলকে টাকা দিয়েছে, কাউকে বেশি, কাউকে কম। রাজ্যে রাজ্যে যারা ক্ষমতায় রয়েছে, সেই সব রাজ্যে ব্যবসারত সংস্থাগুলি তাদের দিয়েছে বেশি। যেমন লটারি ব্যবসায়ী স্যান্টিয়াগো মার্টিনের সংস্থা ‘ফিউচার গেমিং’ তৃণমূলকে দিয়েছে ৫৪২ কোটি টাকা। এ রাজ্যে ওই সংস্থার লটারির রমরমা ব্যবসা। ওই সংস্থা বিজেপিকে দিয়েছে ১০০ কোটি টাকা, কংগ্রেসকে ৫০ কোটি টাকা, ডিএমকে পেয়েছে ৫০৩ কোটি টাকা। আবার, কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক বড় মাপের প্রকল্প তৈরির কাজে যুক্ত হায়দরাবাদের সংস্থা মেঘা এঞ্জিনিয়ারিং মোট ৯৮০ কোটি টাকা চাঁদার ৫৮৪ কোটি টাকা দিয়েছে বিজেপিকে (‘লটারি-রাজার ৫৪২ কোটি তৃণমূলে, পদ্মকে চাঁদা সবার’, ২২-৩)। এ রাজ্যে বিদ্যুতের একচেটিয়া ব্যবসা করা সিইএসসি তথা আরপিজি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গোষ্ঠী এবং তাদের নানা শাখা কোম্পানি মিলিয়ে তৃণমূল ও বিজেপিকে মোটা টাকা দিয়েছে।
ফল, এই দলগুলির পরিচালিত সরকার এই কোম্পানিগুলির দুর্নীতি কিংবা নীতিহীন কাজ থেকে মুখ ঘুরিয়ে থেকেছে। তাই এ রাজ্যে লটারি ব্যবসা রমরমিয়ে চলে, গরিব মানুষ সর্বস্বান্ত হতে থাকেন। আবার কয়লার দাম ৪০ শতাংশ এবং জিএসটি সাত শতাংশ কমলেও বিদ্যুতের দাম এ রাজ্যে বহাল তবিয়তে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ থেকে যায়। চাঁদা প্রদানকারী সংস্থাগুলি বড় বড় কেন্দ্রীয় সরকারি প্রোজেক্টের বরাত হাতিয়ে নিয়েছে। বহু কারখানা, খনি, তেল, গ্যাস প্রোজেক্টগুলির বিরুদ্ধে পরিবেশ সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের দীর্ঘ দিনের অভিযোগ সত্ত্বেও সেগুলি রমরমিয়ে চলছে, যদি প্রকল্পে যোগদানকারী সংস্থা চাঁদা দিয়ে থাকে। আবার ৩৫টি ওষুধ সংস্থা প্রায় হাজার কোটির বন্ড কিনেছে। এর মধ্যে গুণমান নিয়ে প্রশ্ন ওঠা সাতটি সংস্থা রয়েছে। বন্ড কেনার পর তাদের বিরুদ্ধে আর কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে এটা স্পষ্ট, বন্ড ব্যবস্থা বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির এক অবৈধ আর্থিক সম্পর্ক ছাড়া আর কিছু নয়। সুপ্রিম কোর্টও সে কথাই বলেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বলি দেওয়া হয়েছে জনস্বাস্থ্য-সহ সব রকমের জনস্বার্থকে।
সমর মিত্র, কলকাতা-১৩
আচরি ধর্ম
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’-এর প্রচার অনবরত করে চলেছে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশ। একটাই প্রশ্ন করতে চাই— পুলিশকর্মীদের প্রিয়জন কি তাঁদের অপেক্ষায় থাকেন না? কোনও দিন রাস্তায় কোনও পুলিশের গাড়ির চালক, বা সামনের সিটে বসে-থাকা পুলিশকর্মীকে সিট বেল্ট পরতে দেখিনি! কেন? যাঁরা সিট বেল্ট না পরার জন্য বহু টাকা জরিমানা করেন, তাঁরা নিজেরা আইন মানার বেলায় কেন লবডঙ্কা?
সচেতন নাগরিকের কাছে আবেদন জানাই, নিয়মভঙ্গকারী পুলিশকর্মীকে দেখলে অবশ্যই প্রতিবাদ করবেন।
সৌমিত্র বিশ্বাস, কলকাতা-২৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy