পথিক গুহ-র লেখা ‘মহাশূন্যে মেগাসায়েন্স’ প্রবন্ধটি (রবিবাসরীয়, ১৯-৯) পাঠ করে বিজ্ঞান গবেষণায় দেশ-কাল নির্বিশেষে যে পারস্পরিক সহযোগিতার ধারা বহমান, তা আবারও অনুভব করলাম। এক হাজার বিজ্ঞানী একই বিষয়ে গবেষণায় যুক্ত, যা অবিশ্বাস্য। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ব্যাখ্যা করে রাশিয়ান বিজ্ঞানী ফ্রিডম্যান প্রসারণশীল বিশ্বের তত্ত্ব উপস্থাপন করেন। অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানী ডপলারের তত্ত্ব ব্যবহার করে আমেরিকান বিজ্ঞানী এডউইন পাওয়েল হাবল প্রসারণশীল বিশ্বের ধারণা প্রমাণ করেন। তাঁর নামানুসারেই ১৯৯০ সালে মহাকাশে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ পাঠানো হয়।
ডপলার এফেক্ট কী ভাবে প্রসারণশীল বিশ্বের ধারণা প্রমাণে সাহায্য করে, সেটি খুব উৎসাহব্যঞ্জক। বিভিন্ন রঙের আলোর কম্পাঙ্ক বিভিন্ন হয়। এখন আলোক উৎস যদি স্থির হয়, তবে দর্শক উৎসের সেই রংই দেখবেন, যেটি তার আসল রং। কিন্তু যদি উৎস সচল হয়, তবে যে কোনও মুহূর্তে নিঃসারিত আলোর দর্শকের কাছে পৌঁছতে যে সময় লাগবে, তার পরের মুহূর্তে নিঃসারিত আলোর তার চেয়ে কম বা বেশি সময় লাগবে। সুতরাং, যদি উৎসের গতি দর্শকের দিকে হয়, তবে দু’টি তরঙ্গের শীর্ষের দূরত্ব তাদের প্রকৃত দূরত্বের চেয়ে কম হবে। অর্থাৎ, তাদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম হবে। কোনও তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য এবং কম্পাঙ্ক যে হেতু ব্যস্তানুপাতে থাকে, সে হেতু দর্শকের কাছে যে আলো পৌঁছবে, তার কম্পাঙ্ক প্রকৃত কম্পাঙ্কের চেয়ে বেশি হবে। অর্থাৎ, ব্লু শিফট হবে। একই ভাবে উৎস দূরে চলে গেলে তার রেড শিফট হবে। এটিই ডপলার এফেক্ট, যা কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানী হাবল বিশ্বের প্রসারণশীলতা প্রমাণ করেছিলেন।
রাকেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
ময়নাডাঙা, চঁুচুড়া
বিজ্ঞান আন্দোলন
‘বিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে ক’জন’ (১৫-৯) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। মাধ্যমিকে ৪৫ শতাংশ নম্বর পেলে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পড়া যায়, এমন নির্দেশ থাকলেও বেশির ভাগ স্কুল ৬০-৮০ শতাংশ পাওয়া ছাত্রছাত্রীদেরই ভর্তি নেয়। ফলে, সাধারণ মানের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান থেকে অনেক দূরে। বহু ভাল নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীও বইয়ের আয়তন, সিলেবাস, অল্প সময় ইত্যাদি দেখে ভয় পায়। শিক্ষক, অভিভাবকরাও বিজ্ঞানভীতি প্রদর্শন করেন। বাস্তবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সিলেবাসের আয়তন, স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক, পরীক্ষাগার-সহ উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকার কারণে বিজ্ঞানশিক্ষা ব্রাত্য হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞান নিয়ে পড়া নিম্নবিত্তের পক্ষে অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। বইপত্র, আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম, টিউশন ফি— সব মিলিয়ে মাসে কয়েক হাজার টাকা জোগান দেওয়া অনেক পরিবারের ক্ষেত্রেই বেশ কষ্টকর। তাই সেই পরিবারের ছেলেমেয়েদের প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞানশিক্ষা থেকে দূরত্ব তৈরি হয়। তা ছাড়া কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া কর্মক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সুযোগ বেশি নেই। সেই সুযোগ ও আর্থিক সমতা থাকলে বিজ্ঞান শিক্ষার ক্ষেত্র প্রসারিত হতে পারত।
শিক্ষা দফতরের কাছে সাধারণ শিক্ষকের মতামতের কোনও মূল্য নেই। ‘ইন্টার ডিসিপ্লিনারি স্কিম’, অর্থাৎ বিষয় বাছাইয়ের উদারীকরণ-এর হাত ধরে নম্বর তোলার ঝোঁক বেড়েছে। বর্তমানে বিজ্ঞানের বিষয় হিসাবে ফিজ়িক্স ও কেমিস্ট্রির সঙ্গে নিউট্রিশন ও জিয়োগ্রাফি নেওয়া যায়। এমন কম্বিনেশনে ভাল নম্বর তোলা গেলেও সুসংহত বিজ্ঞান-চিন্তা গড়ে উঠতে পারে না। পূর্বসূরিরাও ‘কেরিয়ারিস্ট’ হওয়া ছাড়া বিজ্ঞান পড়তে উত্তরসূরিদের কমই উৎসাহিত করেছেন। সমাজে বিজ্ঞান আন্দোলন গড়ে উঠেনি। অথচ, প্রাক্-স্বাধীনতা পর্বে বিজ্ঞান আন্দোলন বিজ্ঞানশিক্ষাকে প্রসারিত করেছিল। বিজ্ঞান সংগঠন, অভিভাবকরাও শিক্ষা দফতরের কানে এর প্রয়োজনীয়তা তোলেননি। বিজ্ঞান আন্দোলনের হাত ধরে শিক্ষায় এবং সমাজে বিজ্ঞানমনস্কতা বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।
শংকর কর্মকার
হালিশহর, উত্তর ২৪ পরগনা
পুজোয় সংক্রমণ
শহরে কোভিড আশঙ্কায় “পুজো-ভিড়ে ‘না’ কেন্দ্রের” খবরে (২৪-৯) উল্লিখিত কেন্দ্রের নির্দেশ, যে জেলাগুলোয় করোনা সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের বেশি, সেখানে কোনও রকমের জনসমাগমের অনুমতি যেন না দেয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা জেলাতেই সংক্রমণের হার পাঁচ-দশ শতাংশের মধ্যে। তাই কলকাতার পুজোমণ্ডপগুলোতে ভিড় এড়ানো বাঞ্ছনীয়। রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের আবেদন, আগামী তিন মাসে করোনা সংক্রমণ যাতে নতুন করে গতি না পায়, তার জন্য এই বছরটিতে বাড়িতে থেকে আনন্দ করুক সকলে। যেখানে সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের কম, সেখানে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতিসাপেক্ষে জনসমাগম হতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি মানুষের ভিড় করা যাবে না। এই জমায়েতের উপর কড়া নজরদারি করবে স্থানীয় প্রশাসন। এই রাজ্যে সরকারি অনুদানে পুষ্ট পুজোর সংখ্যা ৩৬,০০০। সেখানে মণ্ডপ ও তার আশপাশের রাস্তায় নজরদারি করতে মণ্ডপপ্রতি পাঁচ জন পুলিশকর্মী মোতায়েন হলেও মোট ১ লক্ষ ৮০ হাজার পুলিশ বা সরকারি গ্রিন পুলিশ প্রয়োজন। বিগ বাজেটের বড় পুজোয় তো জনা পঞ্চাশেক পুলিশকর্মী নিয়োগ করতেই হবে শান্তিশৃঙ্খলা ও সরকারি বিধির নজরদারিতে। বড়-ছোট পুজো মিলিয়ে মোটের উপর দু’লক্ষ পুলিশকে পুজোর কাজে লাগালেও কে বা কারা ভাইরাস বহন করছে, তা বেছে আলাদা করা বা আটকানো যাবে— এমনটা বাস্তবে সম্ভব নয়। পুজোর কর্মকর্তারা এই জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে সায় দেবেন না। কারণ, দর্শনার্থীর ‘ফুট-ফল’ বাড়ানোর সেরা পুরস্কার জেতার হাতছানি আছে। তাই প্রশ্ন জাগে, নিয়মের মধ্যেই নিয়ম ভাঙার একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত রয়ে যাচ্ছে না তো?
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
নদী বাঁচলে
‘প্রকৃতিকে অতিশাসনের ফল’ (২৩-৯) শীর্ষক প্রবন্ধ, এবং ‘জলতলে’ (২৪-৯) সম্পাদকীয়ের বক্তব্য ভীষণই প্রাসঙ্গিক। নদী বাঁচাতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে । নদী বাঁচলে প্রকৃতি বাঁচাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিবৃষ্টির ফলে শহরাঞ্চলে জমে যাওয়া জলের নিকাশির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করলে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষই উপকৃত হবেন। নদীর জলে পলিথিন, প্লাস্টিক, বর্জ্য ফেলা যাবে না। নদীর রক্ষণাবেক্ষণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নদীগুলোর প্রাণ ফেরাতে তৎপরতা প্রয়োজন।
মুন্সি দরুদ
সিউড়ি, বীরভূম
লজ্জাজনক
এএফসি কাপের ইন্টার জ়োনাল সেমিফাইনালে এটিকে মোহনবাগান ৬-০ গোলে উজবেকিস্তানের নাসাফ এফসির কাছে পরাস্ত হল। এই পরাজয় ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান অবস্থানের অনেকগুলো দিক চিহ্নিত করল। এটিকে মোহনবাগানের ছয় গোলের ব্যবধানে পরাজয় আগামী দিনের ভারতীয় ফুটবলের আরও পরিমার্জনের প্রশ্নটি তুলে ধরেছে। জয়-পরাজয় খেলার অঙ্গ। কিন্তু একটা দল সামান্য প্রতিরোধও গড়ে তুলতে পারবে না?
আইএসএল ফুটবল না কি আন্তর্জাতিক ছোঁয়া এনেছে। এটিকে মোহনবাগানের খেলায় তার ছিটেফোঁটাও ধরা পড়ল না। গতি, নিখুঁত পাস, জায়গা পরিবর্তন, বল ধরা-ছাড়া— প্রতিটি বিষয়ে একটা ভারতীয় ফুটবল ক্লাব কত পিছিয়ে, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল নাসাফ এফসি। ভারতীয় ফুটবল ক্লাবগুলির আরও বেশি বিদেশি ক্লাবের বিরুদ্ধে ও বিদেশের মাটিতে খেলা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্য দিয়েই ত্রুটি শোধরানো সম্ভব।
দেবদূত মণ্ডল
ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy