‘বাঙালির মাছ আর কত দিন’ (রবিবাসরীয়, ২৬-৯) প্রবন্ধে সুমনা সাহা বিভিন্ন মাছের বিলুপ্ত হয়ে ইতিহাসের পাতায় চলে যাওয়া নিয়ে যে ভাবে আলোকপাত করেছেন, তা প্রশংসনীয়। সাবধানবাণীও বটে। মাছ সংরক্ষণের জন্য শুধু নতুন আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, সেগুলি প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারেও সতর্ক হওয়া চাই। কিন্তু নজরদারির অভাব খুবই প্রকট। ২০০-৩০০ গ্রামের ইলিশ, যা ধরা এবং বিক্রি করা আইনত অপরাধ, তা প্রতিটি বাজারে চোখের সামনে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোনও উপযুক্ত ব্যবস্থা করেনি। অথচ, আমাদের প্রতিবেশী বাংলাদেশ এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা করে সাফল্য পেয়েছে। তার নিদর্শন আমরা দেখতে পাচ্ছি, যখন তাদের দেশ থেকে টন টন ইলিশ আমাদের রাজ্য তথা দেশে রফতানি করা হচ্ছে। এখানে প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাবের সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বেআইনি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
মাছের বিভিন্ন প্রজাতিকে বিলুপ্ত না হতে দেওয়ার জন্য গবেষণাগারে যেমন বাস্তুতান্ত্রিক প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্য নেওয়া উচিত, তেমন ভাবেই দরকার জলাশয় সংরক্ষণের। প্রয়োজন মাছ চাষের জন্যে চিহ্নিত জলাশয়গুলোর চার ধার না বাঁধিয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ বজায় রাখা, যা জলাশয়ে প্রভূত অক্সিজেন জোগাতে সাহায্য করে। ব্যাঙ ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ জলাশয়ের ভারসাম্য রক্ষা করে, যা মাছের বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক। সরকার যদি এই মাছ চাষের জন্যে সঠিক পরিকাঠামো গড়ে মানুষকে উৎসাহিত করে, তবে আগামী প্রজন্ম যেমন বঞ্চিত হবে না বিভিন্ন মাছের স্বাদ আস্বাদন থেকে, তেমনই মাছ চাষে বিনিয়োগ পথ দেখাবে কর্মসংস্থানেরও। এতে আখেরে লাভ হবে রাজ্যেরই।
অশোক দাশ
রিষড়া, হুগলি
‘মুশকিল নিস্ত’
‘পাথরে ফুল ফোটার আফগানি কিস্সা’ (রবিবাসরীয়, ২৬-৯) শীর্ষক প্রবন্ধে প্রত্যক্ষদর্শী আজহারুল হকের কথা নিপুণ ভাবে তুলে ধরেছেন ঋজু বসু। আফগানিস্তানে আজ পদে পদে বিপদ, খাদ্য নেই, শিক্ষা নেই, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি ধ্বংসের পথে। ক্ষতিগ্রস্ত নারীসমাজ, যাঁদের অন্ধকার গৃহবন্দি জীবন কাটছে বোরখার অন্তরালে! নেই শিক্ষার অধিকার, কাজের অধিকার। প্রতিবাদীদের জুটছে অকথ্য অত্যাচার ও মৃত্যু। ভাবতে অবাক লাগে, সেখানকার মানুষ প্রতিটি কথার শেষে বলেন ‘মুশকিল নিস্ত’ মানে ‘কোনও সমস্যা নেই’! কী গভীর আত্মপ্রত্যয়, কী নিদারুণ উদাসীনতা! একটি বাচ্চা মেয়ে পাহাড়ি পথ দিয়ে তিন ঘণ্টা ছুটে চলেছে লেখাপড়া করার তাগিদে। অপরাজিতা কিশোরী শুকরিয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে দরকার আফগান নারীশক্তির জাগরণ। সে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ভীত-সন্ত্রস্ত আফগান মহিলারা বোরখার আড়াল থেকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ শুরু করেছেন। এখন সারা বিশ্বকে তাঁদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আফগানিস্তানের সঙ্গে আমার পরিচয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কাবুলিওয়ালা’ পড়ে। পরে তপন সিংহের পরিচালনায় সিনেমাটি দেখে মন ভরে গিয়েছে। পণ্ডিত রবিশঙ্করের সুর ও রহমতের ভূমিকায় ছবি বিশ্বাসের অনবদ্য অভিনয়ে প্রতিবেশী এই দেশটির প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে। গভীর ভালবাসায় ভরা ওঁদের বাৎসল্য, অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস ও আতিথেয়তা মনকে আকৃষ্ট করেছে। পড়ে ফেলেছি সৈয়দ মুজতবা আলির দেশে বিদেশে। এর পর পড়লাম খালেদ হোসেইনির উপন্যাস দ্য কাইট রানার। এতে আছে কাবুলের জেলা শহর উজির আকবর খানের বাসিন্দা আমির ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর গল্প। গল্পটিতে প্রাসঙ্গিক ভাবে এসেছে সোভিয়েট সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে আফগানিস্তানের রাজতন্ত্রের পতন। এই সব অশান্ত ঘটনার কথা লেখকের কলমে ফুটে উঠেছে। দেশটির সম্বন্ধে পড়তে পড়তে ছবি বদলাতে শুরু করেছে। ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য আফগানিস্তান এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।
আফগানিস্তানের ইতিহাস-ঐতিহ্য সুপ্রাচীন। বহু মানুষের ধারা এই দেশে এসেছে। দেশটির বর্তমান গোষ্ঠীগত, জাতিগত ও ভাষাগত বৈচিত্র এই ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তির সঙ্গে আফগানদের যুদ্ধের ইতিহাসও বহু পুরনো। আধুনিক যুগে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক শক্তি, সোভিয়েট ইউনিয়ন এবং পরে আমেরিকার মতো সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সঙ্গে লড়াই করেছে আফগানরা। এখন মৌলবাদী তালিবানদের দখলে এই দেশ। আমেরিকা সেনা সরানোর পরে আফগানিস্তানকে ঘিরে বৃহৎ শক্তিগুলোর দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা নিচ্ছে।
মানবিকতার স্বার্থে বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর দেশগুলিকে সংযত হতে হবে। আফগানিস্তানের অমূল্য খনিজ সম্পদের উপর থেকে দৃষ্টি সরাতে হবে। সাহায্যের নামে আফগানিস্তানের মাটি কিনে নেওয়ার অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। আজহারুলের মতো যাঁরা ওই দেশে গিয়েছেন, তাঁরা এর আকর্ষণে বার বার যেতে চান। আপাত রুক্ষ দেশটির মানুষগুলোর হৃদয় জুড়ে যে প্রেমের ফল্গুধারা বইছে, তাকে রক্ষায় বিশ্বকে কঠিন পদক্ষেপ করতে হবে।
গৌতম পতি
তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
শুধু ডুবুরি নয়
‘মঙ্গল পাণ্ডে ঘাটে তলিয়ে গেল কিশোর’ (২৭-৯) প্রতিবেদনের একটি অংশে লেখা হয়েছে, দুপুর ২টো নাগাদ লাটবাগান পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরিরা আসেন।
লাটবাগানের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর এক জন আধিকারিক হিসাবে মাত্র দুটো বিষয়ের উপর আমি আলোকপাত করতে চাই। প্রথমত, এই ধরনের উদ্ধারকার্যে শুধুমাত্র ডুবুরি যান না, তাঁর সঙ্গে বাহিনীর প্রশিক্ষিত মেডিক্যাল সাপোর্ট স্টাফও থাকে। সুতরাং, ডুবুরি না বলে ‘কর্মী’ বললে হয়তো আরও যুক্তিযুক্ত হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের বাহিনী ঘটনার দিন, অর্থাৎ ২৬ তারিখ সকাল ৮টার সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছে তল্লাশি শুরু করে, দুপুর ২টো নাগাদ নয়। পাঠক যদি দেখেন, সকাল ৬টায় ডোবার ৮ ঘণ্টা পরে ঢিল-ছোড়া দূরত্ব থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা আসছেন, পুলিশের প্রতি ভুল ধারণা তৈরি হবে। এ ব্যাপারে একটু সতর্ক হলে বাধিত থাকব।
আবির লাল বিশ্বাস
ষষ্ঠ আরক্ষা বাহিনী, ব্যারাকপুর
বাংলার ঝুলন
খেলার পাতায় ‘চাকদহ থেকে চক দে রূপকথা’ (২৮-৯) সংবাদের প্রেক্ষিতে ‘চাকদহ এক্সপ্রেস’ নামে খ্যাত বাংলার স্বনামধন্য ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামীর সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানাতে চাই। যে সময়ে মহিলাদের কাছে ক্রিকেট খেলা ‘আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ ছিল, সেই সময়ে বাংলার ঝুলন গোস্বামী চাকদহের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে কাকভোরে লোকাল ট্রেনের ঠাসাঠাসি ভিড়ে, তার পর সাধারণ বাসে চেপে কোচিং সেন্টারে হাজির হতেন। এই প্রচেষ্টার ফসল ঘরে তুলতে সমর্থ হয়েছেন তিনি। মহিলা ক্রিকেটারদের এক সময় ট্রেনে যাতায়াত করে, সাধারণ হোটেলে গাদাগাদি করে থেকে ময়দানের ক্রিকেট যুদ্ধে নিজেদের প্রমাণ দিতে হত। ঝুলনদের এই নিরলস প্রয়াস আজ মেয়েদের ক্রিকেটকে সমান মান্যতা দিচ্ছে। আইসিসি-র বর্ষসেরা ক্রিকেটার ঝুলনকে নিয়ে ‘বায়োপিক’ হতে চলেছে, যার মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করবেন বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা। এ খবর শুধুমাত্র চাকদহ নয়, সমগ্র বাংলা তথা দেশের কাছে বিরাট গর্বের। ঝুলন আজ ভারতীয় নারীদের কাছে এক দৃষ্টান্ত।
উজ্জ্বল গুপ্ত
কলকাতা-১৫৭
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy