Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Crackers

সম্পাদক সমীপেষু:পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন

পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি কী, কোথায় পাওয়া যায়, তা সোনার পাথরবাটি, না অন্য কিছু— কেউই জানেন না।

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২৬
Share: Save:

ছোটবেলায় কালীপুজোর দু’-তিন দিন ছাদে বাজি ফাটাতাম। ঠাকুর দেখে ফিরে ছাদে ওঠার তখন ওটাই ছিল মজা। খুব রাগ হত তখন যদি কেউ বলত “বাজি পোড়ানো টাকা পোড়ানোর সমান।” এখন খুব ভাল লাগে যখন কেউ বলেন “বাজি পোড়ানো পরিবেশ পোড়ানোর সমান।” সবুজ বাজি বলে আসলে যেটির কথা বলা হচ্ছে, সেটি থেকে ৩০ শতাংশ কম দূষণ ছড়ায় সাধারণ বাজির তুলনায়। অর্থাৎ খানিকটা এ রকম— আপনি একটি সিগারেটের ৭০ শতাংশ খেলেন, বাকিটা ফেলে দিলেন। তার ফলে আপনার ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা ৩০ শতাংশ কমে গেল। এই যুক্তি হাস্যকর! অর্থাৎ, কোনও বাজিই সত্যিকারের সবুজ হয়ে উঠতে পারেনি।

সম্প্রতি গ্লাসগোয় জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করেছিল ব্রিটেন ও ভারত। সেখানে জি-২০’র সমস্ত দেশের নেতারাই যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে আসেন, এমন তো নয়। জার্মানি যেমন ২০১৫-র প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী ২০২০-র মধ্যে তাদের সব ক’টা কয়লার খনি বন্ধ করে দিয়েছে। এক সময় বিশ্বের কার্বন নিঃসরণে প্রথম চারটি দেশ ছিল— চিন, আমেরিকা, ভারত ও জার্মানি। জার্মানি তাদের শর্ত পূরণ করেছে, তাই আর তালিকায় নেই। বর্তমানে চতুর্থ স্থানে রয়েছে রাশিয়া। ভারত এখনও তৃতীয় স্থানেই। নেতারা কী ভাবে দেশের কার্বন নিঃসরণ বন্ধ করবেন, সেটা তাঁদের ভাবনা। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কী ভাবে আরও ভাল পরিবেশ, উন্নত সমাজ এবং সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলব, সেটা ভাবতে হবে আমাদেরই।

আমরা এতটাও গভীরে গিয়ে ভাবি না ঠিকই, কিন্তু কিছুটা হলেও পারি নতুন চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে। যেমন আর বাজি না পোড়ানোর সিদ্ধান্ত। এটা করা অতটাও অসম্ভব নয়। করোনা-উত্তর সমাজের এটাই বৈশিষ্ট্য হোক।

সৌম্যদ্বীপ দত্ত

কাশীপুর, হাওড়া

দায়ী কে

দুর্গাপুজোয় আদালতের নির্দেশ অমান্য করে, সরকারি ও প্রশাসনিক অনুরোধকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে জনতরঙ্গ নেমেছিল কলকাতা ও রাজ্যের সব জেলায়। করোনাবিধির পরোয়া করেননি কেউ। ফলে উৎসব শেষে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার অবশ্যই বেড়েছে। কিন্তু কলকাতা-সহ রাজ্যবাসীর তাতে কিছু যায় আসে না। তথাকথিত শিক্ষিত বা অশিক্ষিত, কেউই চাইছেন না যে, দেশ ও রাজ্য দ্রুত করোনামুক্ত হোক। কালীপুজোতেও একই চিত্র দেখা গেল। সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশিকা অমান্য করে ফাটল অজস্র নিষিদ্ধ শব্দবাজি। শহরে কিছুটা কম হলেও জেলায় জেলায় বাজি ফাটানোর যে বাড়াবাড়ি দেখা গিয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অনভিপ্রেত।

অনেকের বক্তব্য, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ও প্রশাসন নাকি তাদের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। কিন্তু শুধু পুলিশ ও প্রশাসনকে দায়ী করলেই আমজনতার দায়িত্ব পালন শেষ— এ কথা বলা যায় না। মানুষ যদি অশিক্ষিতের ন্যায় আচরণ করেন, সচেতন না হন, তবে পুলিশ কী করবে? তারা সংখ্যায় তো আমজনতার তুলনায় নগণ্য। তা ছাড়া পুলিশ যদি লাঠি চালায়, গ্রেফতার করে, তা হলে তারা সমালোচিত হয়। আর নমনীয় হলে প্রশ্ন ওঠে, কেন দায়িত্ব পালন করেনি? তা হলে কোন দিকে যাবে পুলিশ ও প্রশাসন? তাদের অবস্থা তো শাঁখের করাতের মতো।

পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজি কী, কোথায় পাওয়া যায়, তা সোনার পাথরবাটি, না অন্য কিছু— কেউই জানেন না। পুলিশ অনেক কড়াকড়ি ও অভিযান চালানো সত্ত্বেও পরিবেশবান্ধব বাজির মোড়কে শব্দবাজি বিক্রি হয়েছে আকছার। নিষিদ্ধ বাজির খোঁজ করলে বা চাইলে, ফোন নম্বর নিয়ে বাড়ি বাড়ি নিষিদ্ধ ও শব্দবাজি পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে, যা বেআইনি। কিন্তু কে শোনে কার কথা? বাজি ফাটানোই আসল। নিয়মবিধি মানা বা অন্যের অসুবিধা হচ্ছে কি না, বয়স্ক ও শিশুরা কতখানি বিপন্ন হয়েছে বা হচ্ছে, তা জানার প্রয়োজন নেই। এমনকি পথের কুকুর, বিড়াল ও পাখিরাও যে কত অসুবিধায় পড়ে, সে নিয়ে ভাবনাচিন্তার বালাই নেই। নিজের আনন্দটাই বড় কথা। অনেক জায়গাতেই সন্ধ্যা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত বাজি ফাটানো হয়েছে। ফলে বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেড়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে হলে মানুষকে সচেতন হতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে বায়ুদূষণ ও শব্দদূষণের পাঠকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সব কাজ পুলিশ, আদালত, প্রশাসন করবে— এটা ভাবা ভুল। সবাইকে নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে হবে। তবেই পরিবেশ দূষণ আটকানো যাবে।

পঙ্কজ সেনগুপ্ত

কোন্নগর, হুগলি

সংযমের সীমা

কলকাতা হাই কোর্ট অতিমারি ও পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে নির্দেশ দেয় যে, কালীপুজো-সহ সমস্ত উৎসবে বাজি পোড়ানো নিষিদ্ধ। পরে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ খারিজ করে পরিবেশবান্ধব বাজি পোড়ানোয় সম্মতি দেয়। যে দেশে মাদক দ্রব্যের উপর কয়েকটি রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সেগুলোর চাহিদা কমে না, উল্টে তাদের জোগানদার চুপিসারে কারবার চালিয়ে যায়, সেই দেশে বাজি পোড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বাজির বাজার ও চাহিদা হ্রাস পাবে কি? আর তাঁদেরই বা কী হবে, যাঁরা এই শিল্পে দক্ষ, কিন্তু অন্য কোনও শিল্পে দক্ষতা অর্জন করার মতো বয়স বা পুঁজি নেই? ছোটবেলায় অভিভাবকেরা বাজি পোড়ানোর অনুমতি দিতেন। কিন্তু সেগুলি ফুলঝুরি, রংমশাল, তুবড়ি ও চরকির মধ্যেই সীমিত থাকত। যখন আকাশে হাউই-রকেট বাজির ঝলকানি দেখতাম, তখন বেশ খারাপ লাগত। এখন ভাবলে মনে হয়, অভিভাবকেরা তখন বাধা দিয়ে ভালই করতেন। কিন্তু বৃহৎ জনতার ক্ষেত্রে সংযমের এই সীমারেখা কে টানবে? রাষ্ট্র? বাজির বাজার? না কি ক্রেতা নিজে?

সুমন সেনগুপ্ত

কলকাতা-৬৭

সবুজ নয়

সবুজ বাজি নিয়ে কালীপুজোর বাজার সরগরম। সবুজ বাজি ফাটানো হবে, না কি সাধারণ বাজি, তা নিয়ে সব মহলেই জোর তর্ক। আসলে এই সবুজ বাজির ব্যবহার এখনও পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে চালুই হয়নি। সবুজ বাজির স্বরূপ কী? মালমশলা কোথায় পাওয়া যায়? কাঁচামাল কী ভাবে তৈরি হয়— এই সব কিছুই এখনও বঙ্গের বাজারে বিরাট গবেষণার বিষয়। অথচ, বাজারজাত সব বাজিতে রয়েছে বিষাক্ত বেরিয়াম সল্ট। তাই আইনের ফাঁক গলে সবুজ বাজির নামে তীব্র পরিবেশ দূষণকারী চিরাচরিত বাজিই শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করল।

অন্য দিকে, পরিবেশবান্ধব বাজির উৎপাদন কেন মাস তিনেক আগেও শুরু হল না, সেই প্রশ্ন আমাদের সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে। দূষণ যে হারে বাড়ছে, তাতে যাঁরা বাজির আনন্দে মেতে থাকেন, তাঁরা কিছুতেই বুঝবেন না কী সর্বনাশটা হচ্ছে। উৎসব হোক, কিন্তু দূষণ নয়— এই স্লোগান কবে শক্তিশালী হবে?

বিবেকানন্দ চৌধুরী

কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

বাড়ল দূষণ

‘বিধি উড়িয়ে দৌরাত্ম্য শব্দবাজির’ (৫-১১) প্রসঙ্গে জানাই, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ না মেনেই দীপাবলি ও কালীপুজোতে চলল শব্দবাজির দৌরাত্ম্য। বিকট শব্দ আর বিষাক্ত ধোঁয়ায় রাতের শহর ভরে গেল। কলকাতার বাতাসে ওই দিনগুলোতে প্রতি ঘন মিটারে ধুলোকণার উপস্থিতি গত বছরের তুলনায় বেশি ছিল। বাজির দূষণের কুপ্রভাব নিয়ে যথেষ্ট প্রচার হয়েছে, কিন্তু কে কার কথা শোনে?

সুব্রত পাল

শালবনি, বাঁকুড়া

অন্য বিষয়গুলি:

Crackers glasgow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy