অভিরূপ সরকার ‘ব্যর্থতা ঢাকার নতুন কৌশল’ (৯-২) প্রবন্ধে যথার্থই বলেছেন যে, ডিজিটাল শিক্ষার ঢাকঢোল না পিটিয়ে লেখাপড়া শেখার পিছনে সরকার আর একটু খরচ করলে ভাল হত। লেখাপড়ায় বিশ্বমানের জন্য ডিজিটাল শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। উচ্চশিক্ষায় বিশ্বায়ন উদ্ভাবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। স্কুলছুট, শিশুশ্রম কমানোয় অত্যন্ত সফল মিড-ডে মিল প্রকল্প, কিন্তু তার দিকে ততটা নজর না দিয়ে এ বছরের বাজেটে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসারের দিকে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। তা হোক, গোড়া কেটে আগায় জল দিলেও গাছ যদি বাঁচে তাতে কার কী বলার আছে? গ্রামেগঞ্জে নেটওয়ার্ক না থাকা, বিদ্যুৎ না থাকা, প্রান্তিক মানুষের ফোন না থাকা, প্রভৃতি বঞ্চনাকে সরিয়ে রেখেও বলা যায়, বনিয়াদি শিক্ষায় ডিজিটাল মাধ্যম কতটা কার্যকর, বা আদৌ কার্যকর কি না, সেই আলোচনা হয়েছে কি? স্কুলমাঠের ঘাস, বেঞ্চের ধুলো, শিক্ষক-শিক্ষিকার স্পর্শ ব্যতিরেকে শিশুর অন্তর্নিহিত সত্তার বিকাশ ঘটতে পারে কি? অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বাড়ি বাড়ি বলে আসা সত্ত্বেও, স্মার্টফোন থাকা সত্ত্বেও, অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি ১৫-২০ শতাংশের বেশি হয়নি। প্রথম, দ্বিতীয় প্রজন্মের পড়ুয়ার কথা বাদই দিলাম।
এ সব প্রাথমিক সমস্যা সত্ত্বেও ‘গো ফর ডিজিটাল’-এর মোড়কে প্রগতিশীলতাকে সংজ্ঞায়িত করার এই অপচেষ্টা ভয়ঙ্কর এক মুনাফার খেলা। উৎপাদন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ এখন বিশেষ লাভজনক নয়। মুনাফার নিরাপদ দু’টি ক্ষেত্র শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এখন বিনিয়োগকারীদের পাখির চোখ। ইন্ডিয়া ও ভারতে লড়াই যত তীব্র হবে, বশংবদ শ্রেণির আয়তন যত বাড়বে সরকারের তত লাভ। বিনিয়োগকারীর তত মুনাফা। মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে টার্গেট করার এই প্রবণতা আগেই দেখা গিয়েছে, কোভিড অতিমারি তাকে ত্বরান্বিত করেছে মাত্র। নিত্য-নতুন অনলাইন অ্যাপ, স্বপ্ন ছোঁয়ার ঝাঁ চকচকে উপস্থাপনার আড়ালে আমাদের প্রশ্ন করতে ভুলে যাওয়ার অভ্যাসই যে বিনিয়োগকারীদের মূলধন, সেটা আমরা কবে বুঝব?
তাপস মণ্ডল
নতিবপুর, হুগলি
এই অমৃত?
‘সুদূর অমৃত’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১১-২) চিঠি প্রসঙ্গে কিছু কথা। চিঠির শেষে ‘অমৃত’ লাভ করার জন্য আমজনতার অপেক্ষার প্রসঙ্গটি তোলা হয়েছে। কিন্তু তত দিন ভুখা পেটে আমজনতা বেঁচে থাকবে তো! প্রসঙ্গত বলি, অর্থমন্ত্রী বাজেট ভাষণে বললেন, স্বাধীনতার ১০০তম বছরে ভারত অমৃতকালকে স্পর্শ করবে। অর্থাৎ, দীর্ঘ ২৫ বছর পর ভারতের জনগণ অমৃতলাভ করবেন। অমৃতলাভের স্বপ্নের পিছনে আবার ভারতের জনগণকে অমৃতলোকে পাঠানোর গল্পের প্রেক্ষাপট রচনা করা হল না তো! কারণ, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরেই ২০১৫ সালের বাজেট ভাষণে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছিলেন, দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে এই সরকার দেশের অমৃতকাল উদ্যাপন করবে। আর এই ৭৫তম বর্ষে দেশের মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। প্রতিটি জিনিসের বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে। সরকারি চাকরিতে কোনও নিয়োগ নেই, চরম বেকারত্ব। সরকারি সংস্থার বেসরকারিকরণ, বিশেষ করে ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের ফলে মানুষের জীবিকা ও জীবন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলেছে, দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারে। এই অবস্থাকেই কি ‘অমৃতকাল’ বলে অভিহিত করেছেন দেশের অর্থমন্ত্রী? প্রশ্ন জাগে, দেশের এই বেহাল অবস্থায় দেশের মানুষের অন্ন-সংস্থানের ব্যবস্থা না করে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী আবারও গল্প শোনাচ্ছেন ২৫ বছর পর, দেশের স্বাধীনতার ১০০ বছরে দেশের জনগণ অমৃতলাভ করবেন! এর চেয়ে বড় ধোঁকাবাজি আর কিছু আছে কি? অনাগত ‘অমৃত’ এখনকার খিদে মেটাবে কি? দেশকে রক্ষা করতে হলে, মানুষের দুর্দশা দূর করতে হলে দেশের মানুষকেই একজোট হয়ে এর প্রতিরোধ করতে হবে। মিথ্যে স্বপ্নকে নস্যাৎ করে অর্থনীতির পুনর্গঠনে, বেকারত্ব দূরীকরণে, মূল্যবৃদ্ধি রোধে ঝাঁপিয়ে পড়া দরকার।
পরেশনাথ কর্মকার
রানাঘাট, নদিয়া
প্রবীণের সংসার
পূর্বের বছরগুলোর মতোই এই বছরের বাজেটেও প্রবীণ নাগরিকরা চরম উপেক্ষিত। এই রকম অবস্থা আর কত দিন চলবে? প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারদর ক্রমবর্ধমান, ও দিকে ব্যাঙ্কে সুদের হার তলানিতে এসে ঠেকেছে। ২০১৪ সালে ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতে প্রবীণ নাগরিকরা সর্বোচ্চ সুদ পেতেন ৯.৫%। ২০২২ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে তা নেমে এসেছে ৫.৮%-এর আশেপাশে। সুদের হার বাড়ানোর কথা এ বারের বাজেটে নেই।
প্রবীণদের প্রায় সবাইকে প্রতি দিন অনেক ওষুধ খেতে হয়। ওষুধের উপর জিএসটির হার ১২%। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ওষুধের উপর জিএসটির হার কম করা কি সম্ভব নয়?
এখন স্বাস্থ্যবিমার উপর জিএসটির হার ১৮%। প্রিমিয়ামের অঙ্ক প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে। অত্যধিক হারে জিএসটি হওয়ার ফলে, এবং আকাশছোঁয়া প্রিমিয়াম হওয়ার জন্য অনেক প্রবীণ নাগরিকদের পক্ষে স্বাস্থ্যবিমা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ, বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় চিকিৎসার খরচ অত্যন্ত বেশি। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যবিমার উপর জিএসটির হার কমিয়ে প্রিমিয়াম কি কমানো যেত না? এগুলো কম করা কি এতই অসম্ভব? আয়করের ক্ষেত্রেও প্রবীণ নাগরিকদের কোনও ছাড়ের কথা এ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে নেই। প্রবীণ নাগরিকদের জীবন যাপন দুর্বিষহ
হয়ে উঠেছে।
বিকাশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
মাকড়দহ, হাওড়া
সঙ্কটে চা
অসম ও দার্জিলিঙের বিশ্ববিখ্যাত চা শিল্পে আজ গভীর সঙ্কট। উৎপাদন যথাযথ থাকলেও বিশ্ববাজারে তার চাহিদা কম ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে হঠাৎ প্রতিযোগিতার বাজার তৈরি হওয়া এর মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি তো রয়েছেই।
আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতে অন্তত ৩০০ টন চায়ের চাহিদা চাই। ছিলও তাই। অথচ, গত বছর মাত্র ১৮০ টন চা রফতানি করা সম্ভব হয়েছে। করোনা এর মূল কারণ হলেও, ভারতের মূল বাজার ইরান ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। বিগত কয়েক বছর কূটনৈতিক সম্পর্ক নড়বড়ে হওয়ায় তার প্রভাব ইরানে ভারতের একচেটিয়া চা রফতানির বাজারে পড়েছে। আর ইউরোপে চা বিক্রিতে প্যাকেজিং-এ আধুনিকতার ছোঁয়া চাই। চাই কম কীটনাশকের ব্যবহার। অথচ, প্যাকেজিং-এর খরচ তিনগুণ হওয়ায় ইউরোপের বাজার ধরার অন্তরায় হচ্ছে। এ ছাড়াও যে চা ২০২০ সালে শিলিগুড়িতে ১৯১ টাকায় নিলামে বিক্রি হয়েছিল, সেই চা ২০২১ সালে সাত শতাংশ কমে ১৭৭ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে, ৫০ শতাংশের বেশি চা ২০০ টাকার নীচে বিক্রি করা হয়েছে, যা উৎপাদন খরচও তুলে দিতে পারেনি। এ ছাড়াও বাগিচায় যে খরচ হয় তার ৫০ শতাংশই শ্রমিকদের জন্য খরচ হয়। অতএব চা শিল্পের বাজারদর সম্পর্কিত তথ্যগুলি আশাপ্রদ নয়।
সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, ভারতের বাজার ধরতে নেপাল, চিন, কেনিয়া, আর্জেন্টিনা, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশও ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে নেপালের ১১ হাজার টন চা বাংলা, বিহার, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যের বাজার ধরেছে। এত বিপুল পরিমাণ চায়ের ভারতের বাজারে প্রবেশ সীমান্তে ঢিলেঢালা পরিবেশকেই ইঙ্গিত করে। চিনের চা-ও এ দেশে বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে চা শিল্প সংক্রান্ত পরিবেশ মোটেই ভারতের অনুকূলে নেই। চা শিল্পকে বাঁচাতে চা বাগানের মালিক ও সরকার উভয় পক্ষকেই আরও উন্নত পরিকাঠামোর বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।
শুভজিৎ বসাক
কলকাতা-৫০
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy