— ফাইল চিত্র।
সেখ সাহেবুল হকের ‘বলছি তোমায়, নালিশ করে নয়’ (১৩-২) প্রবন্ধটি পড়ে আমার স্মৃতির ভান্ডারে সঞ্চিত টুকরো কিছু ঘটনা মনের চোখে ফের দেখলাম। বছর কুড়ি আগে আমার পিতৃদেবের কাছে ইংরেজি ভাষা শিখতে আসা কলেজ পড়ুয়া দলটির মধ্যে আশিক নামে মুসলিম ধর্মাবলম্বী এক ছাত্র ছিল। সে আমাদের বাড়ির লক্ষ্মী ও সরস্বতী পুজোয় আলপনা দিত। তার শৈল্পিক নৈপুণ্যের প্রদর্শনে অন্য পড়ুয়াদের অসন্তুষ্টির কোনও ইঙ্গিত কখনও উপলব্ধি করিনি। বছর চল্লিশ আগে কলেজে পড়ার সময়, আমার সহপাঠী-বন্ধু সিরাজুল যখন অন্য কলেজে পাঠরতা এবং আমার নিকট-বান্ধবী হিন্দু বাড়ির মেয়ের প্রেম-প্রত্যাশী হওয়ার সংবাদ আমাকে জানিয়েছিল, তখনও ‘লাভ জেহাদ’ শব্দবন্ধটি আমাদের স্বচ্ছ চিন্তাধারায় ঘুণ ধরাতে পারেনি। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলের একটি স্কুলে ভোটকর্মী হয়ে কর্তব্যরত থাকাকালীন (নিরবচ্ছিন্ন ভোটগ্রহণের উদ্দেশ্যে) দিনভর গ্লুকোজ়-জল খেয়ে কাটিয়েছিলাম। ভোটপর্ব শেষে সন্ধ্যায় উপস্থিত রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের ইফতারের ফলাহার গ্রহণ করে বুঝেছিলাম, ক্ষুধা কোনও ধর্মের বেড়াজাল মানে না।
বর্তমান সময়ে দেখা যায়, রণবীর-অক্ষয় কিংবা শাহরুখ-সলমনের ধর্ম পরিচয়, ধর্মীয় বিভেদের প্রাচীর তুলে চলচ্চিত্র দর্শকদের মনে প্রশ্ন তোলে না। রফি-কিশোর কিংবা অরিজিৎ সিংহ-রাহাত ফতে আলি খানের গান শোনার সময় তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় শ্রোতার সুর-আস্বাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে না। তবে কেন সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষজনিত বৈরিতা রয়ে যাচ্ছে? কারণ, এই দেশের রাজনীতির কারবারিরা স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করতে, ধর্ম ও রাজনীতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চান। এই অভিসন্ধি প্রতিহত করার মানসিক শক্তি সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল, এখনও আছে।
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
বিভাজনের দায়
‘বলছি তোমায়, নালিশ করে নয়’ পড়ে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। ভিতরে একটা কষ্ট অনুভব করলাম। প্রশ্ন জাগে, কেন এমন হল? কেন শুভবুদ্ধি হেরে গেল! কেন ভালবাসা, উদারতা, মানবিকতা পরাজিত হল বিদ্বেষ, বিভাজন আর ঘৃণার কাছে? আমাদের দৈনন্দিন চিন্তা, ভাবনা ও জীবনচর্যায় কী ভুল ছিল, যার পরিণতিতে এই প্রিয় দেশ জুড়ে আজ শুধুই সন্দেহ, আশঙ্কা আর ঘৃণার বাতাবরণ! এমন তো ছিল না এই সমাজ, আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে, আমাদের ছেলেবেলায়। দুঃখের বিষয়, এখন সব কিছুকেই ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করা হয়।
এর একটা বড় দায় সমাজমাধ্যমকে নিতে হবে। যাঁরা সমাজমাধ্যমে সক্রিয়, তাঁরা জানেন কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে কত সহজে, কত দ্রুততার সঙ্গে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া যায়। অবলীলাক্রমে, কোনও প্রমাণ ছাড়াই অন্য সম্প্রদায়ের সম্বন্ধে অভিযোগ আনা যায়, এবং গুজবের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত করা যায়। এর দায় শুধু সংখ্যাগুরুদের নয়, সংখ্যালঘুদেরও থাকে বইকি। তবে অবশ্যই সংখ্যাগুরুদের দায় ও দায়িত্ব অনেক বেশি। বিদ্বেষ ও ঘৃণার ব্যাপারে ভারতে যেমন হিন্দুদের দায় ও দায়িত্ব বেশি, ঠিক তেমনই অন্য দেশেও বিদ্বেষ ও বিভাজনের দায় সেই দেশের সংখ্যাগুরুদের উপর বর্তায়।
কিন্তু এই পারস্পরিক দায় চাপানোতে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। মানুষকে মানুষ হিসাবে ভাবতে না পারলে মানবিকতার উদ্ভব হয় না। মানুষের সাধারণ খাওয়া, পরা, রোজকার আচার-ব্যবহারও বিচার করা হচ্ছে ধর্মের নিরিখে। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, সব ধর্মের মহাপুরুষদের মূল কথাই ছিল পারস্পরিক ভালবাসা, শ্রদ্ধা ও ক্ষমা। বিদ্বেষ থেকে পরিত্রাণের পথ বোধ হয় দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আরও অনেক বেশি মেলামেশা, একে অপরকে আরও বেশি করে জানা।
সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি
পাঠকের খোঁজ
সম্পাদক সমীপেষু বিভাগে মৃণাল শতপথী তাঁর ‘অপারগতা’ (২২-২) শীর্ষক চিঠিতে লিখেছেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে এই নব্য লেখকরা গাঁটের কড়ি খরচ করে বই প্রকাশ করেন।’ তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করে এই চিঠির অবতারণা। একটি গল্প শুনেছিলাম। এক তরুণ লেখক কয়েকটি ছোট গল্প লিখে সেই পাণ্ডুলিপিটি এক প্রকাশককে দিয়ে বলেন, “কয়েকটি দুর্দান্ত গল্প লিখেছি। বন্ধুমহলে বেশ প্রশংসিত। কয়েকটি বিভিন্ন দৈনিকেও ছাপা হয়েছে। একটা বই যদি প্রকাশ করেন।” প্রকাশকের প্রশ্ন, “বিয়ে করেছেন?” লেখকের উত্তর “না।” প্রকাশক বললেন, “বিয়ে করে আসবেন। আপনার বইয়ের অন্তত এক জন পাঠক তো চাই।”
এখন বই ছাপানো সহজ। শুধু বইমেলা উপলক্ষে অনেক প্রকাশক সুলভে বই ছাপেন, তবে অনেক ক্ষেত্রে লেখকের গাঁটের কড়ি খরচা করেই। এখনকার লেখকদের দুঃখ জীবনানন্দের ‘কাব্যময় দুঃখ’ নয়। মানুষ এখন বই পড়ে না, বিশেষ করে নব্য অপরিচিত লেখকদের। তাই তাঁদের সমাজমাধ্যমের সাহায্য নিতে হয়। আর গাঁটের পয়সা খরচ করে যে-হেতু বই ছাপাতে হয়েছে, তাই ‘পিওডি’ শব্দটি বই-বাজারে এসেছে, যার অর্থ ‘প্রিন্ট অন ডিমান্ড’। এ ক্ষেত্রে লেখকদের সুবিধা, প্রথম মুদ্রণ (হয়তো ২৫ কিংবা ৫০ কপি) শেষ হতেই, বড় করে সমাজমাধ্যমে বিজ্ঞাপন।
অনেকেই বলবেন, বাংলা ভাষায় যে বিশ্বমানের সাহিত্য রচিত হয়েছিল, তার আজ অভাব। কিন্তু এটাও ভেবে দেখতে হবে, পরিবর্তিত সময়ের সঙ্গে বাংলা ভাষার প্রতি বর্ধিত অনীহা আজ হ্রাস করেছে বাংলা বইয়ের পাঠকের সংখ্যা। তার উপর প্রকাশকরা পরিচিত লেখকদের বিজ্ঞাপিত করেন, নব্য লেখকদের ক্ষেত্রে তা করেন না। বই ছাপানো থেকে প্রচার— সবটাই এখন নব্য লেখকদের দায়িত্ব। তাই বাধ্য হয়েই এখন উঠতি লেখকরা ক্রেতা তৈরি করেন সমাজমাধ্যম থেকেই। কিন্তু বাঙালি তো বইয়ের পোকা ছিল, সেই পোকাগুলো কোথায় হারিয়ে গেল? অনেকেই বলছেন, এর জন্য সমাজমাধ্যম দায়ী। কিন্তু সমাজমাধ্যমেও সাহিত্য পড়ার অভ্যাসটা কোথায়! কোনও দৈনিকে প্রকাশিত নতুন লেখকদের কোনও প্রবন্ধ কিংবা গল্পও এখন সমাজমাধ্যমে কেউ পড়ে দেখেন না। লেখকরা সৃষ্টিশীল, সীমার মাঝে অসীমকে খোঁজেন। পাথরে ফুল সঞ্চার করতে চান। ভবিষ্যতে হয়তো এঁদের মধ্যে থেকেই আর একটি সুনীল কিংবা সমরেশের জন্ম হবে।
সুপ্রিয় দেবরায়, বরোদা, গুজরাত
জানলার কোণ
অরবিন্দ সামন্তর সময়োচিত ‘শৈশব কেবল যুদ্ধেই বিপন্ন নয়’ (৭-২) প্রবন্ধের নিরিখে এই চিঠি। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ায় বা ইউক্রেনে পৃথিবীর আলো ভাল করে দেখার আগেই চিরতরে বিদায় নিতে হয়েছে হাজার হাজার শিশুকে। কিন্তু কল্যাণময়ী এই ভারতেও কি শিশুরা ভাল আছে, উপভোগ করতে পারছে কি তাদের শৈশবের দিনগুলি? শৈশব তাদের অগোচরে কখন হারিয়ে যাচ্ছে, তার নাগাল হয়তো তারা পাচ্ছে না। সনৎ সিংহের একটি গানের কলি খুব প্রাসঙ্গিক, ‘সেই লাল নীল হলদে রাজা রাণী পুতুলে ভরা ছিল জানালার কোণটা।’ না, আজ আর সেই জানলার কোণ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শৈশব থেকেই নানা রকম শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে সে বড় হয়। চাপ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করে।
দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজব্যবস্থায় যখন রাজনৈতিক দুর্নীতি অথবা খুনখারাপির ছবি ভেসে ওঠে টিভির পর্দায়, তখন শিশুর নিষ্পাপ মনে যে গভীর রেখা পড়ে, তার সুদূরপ্রসারী ফল কি এক বারও আমরা ভেবে দেখি? পথশিশু বা শিশুশ্রমিকদের হাল যে কতটা খারাপ, সে কথা বলা নিষ্প্রয়োজন। শিশুদের সবুজ মনের সোনালি বিকেল ফেরানোর উদ্যোগ করতে হবে আমাদের সকলকে।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy