—প্রতীকী ছবি।
কিছু দিন আগে গিয়েছিলাম দার্জিলিঙের লামাহাটার সীমানা গ্রামে আর কালিম্পঙের গরুবাথানের কুমাই গ্রামে। দুটোই পাহাড়ি গ্রাম। দু’দিন করে ছিলাম এই দুই জায়গায়। পাহাড়ে বর্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে, তার সঙ্গে চলছে অবিরাম বিদ্যুৎ বিভ্রাট। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল গ্রামগুলি। শুনেছি বিদ্যুৎ এখন আমাদের রাজ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপন্ন হয়, আর উত্তরবঙ্গে বেশ কিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও আছে। তবে কেন এই বিদ্যুৎবিহীন অবস্থা?
লামাহাটার বহু পুরনো এক বাসিন্দা জানালেন, এখানে বিদ্যুৎ সমস্যার মূল কারণ জঙ্গলের ভিতর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন। এইখান দিয়ে বিদ্যুৎ লাইনগুলো টানা হয়েছে দূরত্ব কমানোর জন্য। আর তাতেই হচ্ছে সমস্যা। ঝড়বৃষ্টিতে গাছের ডালপালা বিদ্যুতের তারের উপর পড়ে তার ছিঁড়ে গেলে ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। একই কথা শুনলাম কুমাইয়ের এক বাসিন্দার মুখে। আরও এক জন বিদ্যুতের পাশাপাশি পানীয় জলের সমস্যার কথাও বললেন। বুঝলাম, বিদ্যুৎ না থাকলে জলের সমস্যা তো থাকবেই।
রাজ্যের বিদ্যুৎ বিভাগ ও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন, পাহাড়ি গ্রামগুলোর বহু দিনের এই সমস্যার সমাধান হলে ওখানকার পর্যটন শিল্প আরও বৃদ্ধি পাবে এবং গ্রামীণ অর্থনীতির অগ্রগতি হবে। এই সব অঞ্চলে প্রচুর হোম স্টে আছে। ফলে পর্যটনের স্বার্থে বিদ্যুতের লাইনগুলিকে তেমন ক্ষেত্রে চা-বাগান বা পাহাড়ি পথের পাশ দিয়ে নিয়ে আসা যেতে পারে।
পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৯৪
বর্ধিত ফি
আমার পুত্র গত বছর অগস্টে ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট এন্ট্রান্স (ডব্লিউবিজেই) পরীক্ষার মাধ্যমে রাজ্যের একটি খ্যাতনামা বেসরকারি এঞ্জিনিয়ারিং কলেজে বি টেক কোর্সে ভর্তি হয়। আমাদের মতো বহু নিম্নবিত্ত পরিবারের অভিভাবক কলেজের খরচের ধরন দেখে কলেজ নির্ধারণ করেন। ভর্তির সময় জানতে পারি, কলেজে চার বছরের ফি আনুমানিক চার লক্ষ টাকা। অনেক কষ্টে টাকার ব্যবস্থা করে ছেলেকে ভর্তি করাই। দু’টি সিমেস্টার শেষ হওয়ার পর গত মে মাসে কলেজ একটি নোটিস দেয় ও জানায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতর টেকনিক্যাল শাখার দেওয়া নোটিস অনুযায়ী, প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীর ফি তৃতীয় থেকে অষ্টম সিমেস্টার পর্যন্ত প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ আমাদের মতো নিম্নবিত্ত পরিবারের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। কলেজের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তাঁরা বার বার তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছেন। বর্তমানে আমার ছেলের মতো অনেকেরই মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার জোগাড় হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে আবেদন, তারা যেন আমাদের মতো পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের এই শোচনীয় অবস্থার কথাটি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে।
দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায়, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
জলসঙ্কট
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়া পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ও প্রকাশ্যে পুরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ভর্ৎসনা করেন। এ প্রসঙ্গে হাওড়া পুরসভার এক জন নাগরিক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা হাওড়া পুরসভার তিন নম্বর ওয়র্ডের সাহেববাগান অঞ্চলের বাসিন্দা। এটি উত্তর হাওড়া বিধানসভার অন্তর্গত। জল জমার সমস্যা এখানে এখন অবিশ্বাস্য আকার ধারণ করেছে।
বৃষ্টি না হলেও এখানে প্রতি দিন যখন টাইম কলে জল আসে, তখন নর্দমা ভর্তি হয়ে রাস্তায় জল উঠে আসে। আর বৃষ্টি হলে দু’-চার মিনিটের বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে যায়। এক-দেড় ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও কোমর সমান জল জমে। সেই জল নামতে চার-পাঁচ দিন সময় লাগে। সেই জল পেরিয়েই মানুষকে দৈনন্দিন কাজ করতে হয়। বহু বাড়ির ভিতরেও জল ঢুকে যাচ্ছে। সবচেয়ে দুরবস্থা হয় ছোট ছোট স্কুলপড়ুয়াদের। এটা কি কোনও সভ্য দেশে ভাবা যায়?
এখানে ম্যানহোল খুলে ভূগর্ভস্থ নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। হাইড্রেনের উপর একাধিক জায়গায় কংক্রিটের ভারী স্ল্যাব বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি আর পরিষ্কার করা হয় না। ফলে, হাইড্রেনগুলি ক্রমশই পাঁকে বুজে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা উঁচু করে দেওয়া হচ্ছে। কাছেই কেএমডিএ-র একটি পাম্প হাউস থাকলেও সেটি ঠিকমতো চালানো হয় না।
সমস্যার কথা জানিয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, হাওড়া পুরসভার মুখ্য প্রশাসক-সহ একাধিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ফোন, ইমেল বা এমনকি ব্যক্তিগত ভাবেও একাধিক বার যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা সমাধানের কোনও উদ্যোগ করা হয়নি। ফলে দিন দিন সমস্যা আরও ভয়াবহ হচ্ছে। বর্ষা এখনও সে ভাবে শুরুই হয়নি। এখনই এই অবস্থা হলে আগামী তিন-চার মাস কী ভাবে কাটবে, সেই নিয়ে এলাকার মানুষ রীতিমতো আতঙ্কিত। চিঠির মাধ্যমে আমরা তাই মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সৈকত হাজরা, সালকিয়া, হাওড়া
রোগীর দুর্দশা
অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের মর্মস্পর্শী পত্র ‘বেলাগাম খরচ’ (২৪-৬)-এর পরিপ্রেক্ষিতে আরও কিছু দুর্দশার চিত্র তুলে ধরতে চাই। প্রথমেই ইতিবাচক দৃষ্টান্ত দিয়ে বলতে পারি যে, এই চূড়ান্ত ভোগবাদের যুগে এখনও গ্ৰামাঞ্চলে কয়েক জন কর্তব্যপরায়ণ ও রোগীদরদি চিকিৎসক আছেন। চল্লিশ বছর ধরে রোগীর চিকিৎসা করছেন এমন এমডি এবং এমবিবিএস চিকিৎসক আছেন, যাঁরা এখনও দু’শো টাকা ফি নিয়ে দিনরাত চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে চলেছেন। এ ছাড়া তাঁরা অকারণে রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বাধ্য করেন না। যদিও এই শ্রেণির চিকিৎসকের সংখ্যা হাতেগোনা।
বর্তমানে আমাদের ছেলেমেয়েদের চিকিৎসক হওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রচেষ্টার পিছনে অন্যতম কারণ যতটা না আদর্শগত, তার চেয়ে অনেক বেশি অল্প দিনের মধ্যেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা। ফলে এই মনোগত ইচ্ছা পূরণ করার তাগিদে বলি হতে হচ্ছে জনসাধারণকে।
বর্তমানে অসহায় রোগীদের দুর্দশার কারণ শুধুমাত্র চিকিৎসকদের লাগামহীন ভিজ়িটিং চার্জ নেওয়ার প্রবণতা নয়, আরও কিছু কঠিন ও অসহায় পরিস্থিতির শিকার হতে হয় রোগীদের। এর মধ্যে অন্যতম হল, রোগীর কথা শুনতে শুনতেই অনেক চিকিৎসকই কলম চালিয়ে প্রেসক্রিপশন ভরিয়ে তোলেন একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফর্দ দিয়ে। এর পিছনে কারণ হল, ল্যাবগুলি থেকে লোভনীয় কমিশন ও উপহার পাওয়ার মোহ। দ্বিতীয়ত, গ্ৰামাঞ্চলে তো বটেই শহরাঞ্চলেও অনেক চিকিৎসকের রোগী দেখার জন্য ঠিকমতো চেম্বার থাকে না। ওষুধের দোকানগুলিতেই চলে চেম্বার, যেখানে প্রয়োজনীয় বসার ব্যবস্থা, শৌচালয়, পানীয় জলের ব্যবস্থা-সহ আরও অনেক কিছুই থাকে না। চিকিৎসকের কাছে কত ভিড় হচ্ছে এটা দেখানোর জন্য এক সঙ্গে সব রোগীকে চেম্বারে আসতে বলে অকারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁদের হয়রান করা হয়। আবার বহু দোকানে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সব ওষুধ ওই দোকান থেকে কোনও ছাড় ছাড়াই কিনতে বাধ্য করা হয়। সেখানেও বৃথা অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়।
এই সব দুর্দশার প্রতিকারের কি কোনও পথ নেই? এক দল বিবেকহীন চিকিৎসক ও নার্সিংহোমের মালিক মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করবেন আর সরকারও চোখ বুজে সেই ব্যবস্থায় প্রশ্রয় দেবে— এমনটা বন্ধ হওয়া জরুরি।
সন্দীপ সিংহ, হরিপাল, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy