উত্তরবাসীর দুর্দশা মোচনে নবান্নের ধাঁচে গড়া হয়েছিল উত্তরকন্যা। ফাইল ছবি।
উত্তরবাসীর দুর্দশা মোচনে নবান্নের ধাঁচে গড়া হয়েছিল উত্তরকন্যা। বুগেনভিলিয়ার বাহার আর লৌহফলার প্রহরায় মনে হয় যেন এক গুরুগম্ভীর রাজপ্রাসাদ। কিন্তু এমন এক জমকালো দফতর জনহীন, ধু ধু। একটা নীরবতা তাকে জড়িয়ে থাকে সব সময়। কী হয় এখানে? কারা আসেন এ প্রান্তরে? শিলিগুড়ির অদূরে এ দালানবাড়ির শুধু অবস্থান আছে। উত্তরকন্যার এক আধিকারিক আক্ষেপ করলেন, এখানে কাউকে মেরে ফেললেও দশ দিন পর খবর হবে। এমন জনহীন চত্বরের গুরুত্ব নবান্নের কাছাকাছি কখনও আসবে না, বলা বাহুল্য। তবু বলতে ভাল, শুনতে ভাল, উত্তরেও নবান্ন আছে।
এই পুরনো প্রসঙ্গ আবার টানতে হল নতুন এক ঘটনায়— সরকার আয়োজিত উত্তরবঙ্গের লিটলম্যাগ মেলা। আইডিয়াটা ভালই ছিল। উত্তরের কবি-গল্পকারদেরও তো স্বীকৃতি পেতে ইচ্ছে করে। আর রাজধানী কলকাতা বৌদ্ধিকচর্চার প্রকৃত সিলমোহর দান করে। তাই এ দিকের সকলেই কলকাতার অনুসারী, অনুগামী হতে চেয়েছেন যুগে যুগে। সে খেলা হোক আর মেলা! শিশির মঞ্চ, রবীন্দ্রসদন, আকাদেমির আলো না পেলে বাংলার কবি-নাট্যকারদের জনম বৃথা। তা বলে সকলের তো দীর্ঘ পথ পেরিয়ে কলকাতা ছুটে মন জয় সম্ভব নয়। তাই ক্ষোভ মোচনের জন্য মিনিমেলা, মিনিখেলার আয়োজন করার উদ্যোগ চলছে রাজ্যের নানা প্রান্তে। একটা ভারসাম্যের কাব্য লেখা হচ্ছে দিকে দিকে।
ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি কলকাতার লিটলম্যাগ মেলার মতো এক মেলার আয়োজন করল জলপাইগুড়ি শহরে। কলকাতার মেলায় আমন্ত্রণ না-পাওয়া বহু লেখক তিন দিন মঞ্চ আলো করার সুযোগ পেলেন। সম্মান দিতে ছুটে এলেন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, কবি সুবোধ সরকার, লেখক প্রচেত গুপ্ত প্রমুখ। তড়িঘড়ি মানরক্ষার আয়োজনে বাদ রয়ে গেল কেবল দর্শক। অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে কোনও ব্যানার পড়ল না শহরে। মাইকিং শোনা গেল না এত বড় এক আয়োজনের। ফলে তিন দিনের বাংলা আকাদেমির লিটলম্যাগ মেলার উৎসবে সাধারণ পাঠকের দেখা মিলল না তেমন। বাইরের সারি সারি বুক স্টলে যাঁরা বিক্রেতা, তাঁরাই ক্রেতা। যেন একই নাটকের তিনটি শো চলল আর্ট গ্যালারি প্রাঙ্গণে। ফলে উত্তরের এই লিটলম্যাগ মেলা আক্ষরিক অর্থেই শুধু লেখকদের জমায়েত হয়ে রইল। ক্ষোভের পোস্ট, অভিমানের শেয়ার হল ফোনে ফোনে, মুখে মুখে।
উৎসবের সময়ে হলঘরের ভিতরটাও ছিল জনহীন। গল্পের জন্মকথা শুনলেন মাইকম্যান, লাইটম্যানরা। সুবোধ সরকারের আলোচনা সভার সাক্ষী থাকলেন মাত্র দশ জন। এই হল উত্তরে বাংলা আকাদেমি আয়োজিত রেপ্লিকা সাহিত্যমেলার হাঁড়ির হাল। যত দিন এ ভাবে সকলকে অন্ধকারে রেখে মনরক্ষার মোয়া খাওয়ার উৎসব চলবে, তত দিন উত্তরবঙ্গবাসীর প্রকৃত জ্ঞানতৃষ্ণা মিটবে না।
অরূপ বর্মণ, জলপাইগুড়ি
বাংলা কই?
পশ্চিমবঙ্গের দোকান-বাজারের নামে, বা সরকারি কাজকর্মে বাংলার প্রাধান্য এখনও সে ভাবে লক্ষ করা যায় না। আমরা পারিনি কর্পোরেট সংস্থার ভাষাকে বাংলায় পরিণত করতে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতে বাংলা পাঠ আবশ্যিক করতে। যে কোনও রকম লাইসেন্স পাওয়ার অন্যতম শর্ত হিসাবে বাংলা ভাষার ব্যবহারকে আমরা প্রয়োগ করতে পারিনি। অথচ, বাংলাদেশের খেলার মাঠ, দোকান-বাজার যে দিকেই তাকাই না কেন, বাংলারই প্রাধান্য। পশ্চিমবঙ্গে কি এটা করা যায় না? কলকাতাকে দেখলে তো মনে হয় না যে, এটা বাঙালির সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র, তথা দেশের সংস্কৃতির একটি অন্যতম স্থান। কোনও রকম ভাষাবিদ্বেষ না দেখিয়ে বলতে হবে যে, পশ্চিমবঙ্গে বাংলা ভাষার স্থান সব ভাষার উপরে। সব জায়গায় বাংলা লেখা হলেই বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ খুব উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, এমনটা নয়। কিন্তু এটা মানতে হবে যে, বাংলা ভাষার প্রসারের ক্ষেত্রে এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর সঙ্গে সঙ্গে ভাষার প্রসারের বিভিন্ন কৌশলী পরিকল্পনা করতে সরকার ভাষাবিদদের সাহায্য নেবে, এবং তা নানা ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেবে, আশা করা যায়।
দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-১৫২
পান্ডার উপদ্রব
সপরিবারে জগন্নাথদেবের দর্শন করব ও পুজো দেব বলে পুরী গিয়েছিলাম গত ১০ ফেব্রুয়ারি। মন্দিরের কাছাকাছি পৌঁছতেই প্রায় জোর করে এক জন সঙ্গী হয়ে গেলেন। বললেন, তাঁকে শুধু ১০০ টাকা দিলেই খুব কাছ থেকে দেবতার পুজো করিয়ে দেবেন। যে-হেতু প্রথম বার, তাই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। মন্দিরে প্রবেশ করতেই বলা হল, মন্দির প্রাঙ্গণের ভিতরে সরকার স্বীকৃত কাউন্টার থেকে পুজোর ডালি কিনলে তবেই জগন্নাথদেবের কাছে গিয়ে পুজো দিতে পারব। এক রকম বাধ্য হয়েই সবচেয়ে কম দামের ডালির জন্য ৩৩০ টাকা দিতে হল। তার পর ডালি হাতে সকলের সঙ্গে আমরাও লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম জগন্নাথদেবকে দর্শন করে পুজো দেব বলে। হঠাৎ আমাদের সঙ্গী পান্ডা ভিড়ের মধ্যেই ডালিটা আর এক জন পান্ডার হাতে দিতে বললেন, সঙ্গে দক্ষিণা ২০০ টাকা। দক্ষিণা পেয়েই সেই লোকটি ভিতর থেকে হাত উঁচু করে আমাদের দেখালেন, উনি দেবতার কাছে আমাদের পুজোর ডালিটা নিয়ে যাচ্ছেন, এবং নিমেষেই ফিরে এসে আমাদের কপালে তিলক দিয়ে পুজোর ডালি ফেরত দিয়ে চলে গেলেন। আমাদের সঙ্গীকেও ১০০ টাকা দিতে হল।
প্রধান মন্দিরের গায়েই বেশ কয়েকটি মন্দির আছে। সেখানে এক-এক জায়গায় এক জন পান্ডা বা পুরোহিত নামক ভেকধারী দাঁড়িয়ে থাকেন। এ রকমই এক জায়গায় এক জন আমাদের ডাকলেন, “আসুন দেবতা দর্শন করুন এবং স্নান জল নিন।” আমরা উপরে উঠতেই প্রায় জোর করে কয়েকটা ফুল আর একটা ছোট ধাতব মূর্তি (খুব বেশি হলে ১০ টাকার মতো দাম হবে) দিয়ে বললেন ২০০ টাকা দিন, আপনাদের মনবাসনা পূর্ণ হবে। অবশেষে ১০০ টাকা দিয়ে ওই মূর্তি নিয়ে নেমে এলাম। নবগ্রহ মন্দিরে ঢুকেও একই অভিজ্ঞতা। প্রণাম জানিয়ে ২০ টাকা আসনে রেখে নেমে এলাম, তার পর ভাবলাম একটা প্রদীপ কিনে নবগ্রহ মূর্তিকে দেখিয়ে আসি। কিন্তু প্রদীপ নিয়ে পুনরায় নবগ্রহ মন্দিরে উঠে প্রদীপটি দেবতাদের সামনেই রাখতেই পান্ডা ১০ টাকা চাইলেন। আমি হতবাক হয়ে বললাম, আমি এখনই ২০ টাকা দিয়ে গিয়েছি। কিন্তু উনি কিছুতেই প্রদীপ রাখতে দেবেন না, কারণ উনি দেখেননি আমি ২০ টাকা দিয়েছি। পুরী মন্দির ও মন্দিরের চার পাশে অজস্র লোকজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, যাঁদের কাজই হল পুণ্যার্থীদের থেকে যে কোনও উপায়ে পয়সা উপার্জন করা।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী ও পুরী জগন্নাথদেব মন্দির রক্ষা কমিটির কাছে একান্ত অনুরোধ, আপনারা মন্দিরে পান্ডামুক্ত পরিবেশ বজায় রাখা ও পুজো দেওয়ার নামে ব্যবসা বন্ধ করতে ব্যবস্থা করুন।
সন্ধ্যা চক্রবর্তী, কলকাতা-৫৬
ভেষজ আবির
রং ছাড়া বসন্তকে ভাবাই যায় না। কিন্তু যে রং দিয়ে আমরা দোল খেলি, তা আজ কতটা নিরাপদ? বাজারে এখন রাসায়নিক মিশ্রিত আবিরের ছড়াছড়ি, যা ত্বক এবং চোখের পক্ষে ক্ষতিকর। এর প্রয়োগে অ্যালার্জি, অন্ধত্ব, এমনকি ত্বকের ক্যানসারও হতে পারে। তুলনায় ভেষজ আবির নিরাপদ। কিন্তু সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে আজও সচেতনতা তেমন ভাবে গড়ে ওঠেনি। ভেষজ আবিরে ব্যবহার হয় জবা ফুলের রস, নিম পাতা, পলাশ ফুল, অপরাজিতা, কাঁচা হলুদের মতো প্রাকৃতিক উপাদান। এই আবির তৈরির উপাদান হাতের কাছেই পাওয়া যাওয়ায় এর দাম কম হওয়া উচিত। তা ছাড়া সহজে তৈরি করা যায় বলে অনেক গ্রামের মহিলারাও এ কাজে হাত লাগিয়ে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন।
প্রদ্যুৎ সিংহ, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy