Advertisement
২৪ অক্টোবর ২০২৪
Labourers

সম্পাদক সমীপেষু: শ্রমিকের নিরাপত্তা

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ইজ়রায়েল-গাজ়া সংঘাত সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও শ্রমিকরা যেতে চাইছেন, কারণ দেশে সঠিক বেতনের কোনও কাজ নেই।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৬:২৭
Share: Save:

রঞ্জিত শূরের ‘ইজ়রায়েল চলল দেশের মজুর’ (৯-৫) প্রবন্ধটি প্রাসঙ্গিক। বর্তমানে ইজ়রায়েল দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। তা সত্ত্বেও দেশের শ্রমিকদের ইজ়রায়েল যাত্রায় উৎসাহ দিচ্ছে সরকার, যা আমাদের দেশের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে শোচনীয় অবস্থার নির্দেশক। ইজ়রায়েলের নির্মাণ শিল্পে ৯০ হাজার প্যালেস্টাইনি শ্রমিকের প্রস্থানের পর ভারত থেকে এক লক্ষ শ্রমিক নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে গাজ়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগেই ৪২০০০ ভারতীয় নির্মাণ শ্রমিক ইজ়রায়েলে পাঠানোর জন্যে দুই দেশের সরকার চুক্তি সম্পন্ন করে। গত ২ এপ্রিল ৬০ জনের প্রথম একটি দল যাওয়ার সময় তাঁদের নিয়ে একটি বিদায় সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় বলে এ দেশে ইজ়রায়েলের রাষ্ট্রদূত এক্স হ্যান্ডলে জানান। এর জন্যে তিনি ন্যাশনাল স্কিল ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশনকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।

শ্রমিকরা এই যাওয়ার সুযোগকে একটি বিশেষ প্রাপ্তি মনে করছেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ইজ়রায়েল-গাজ়া সংঘাত সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও শ্রমিকরা যেতে চাইছেন, কারণ দেশে সঠিক বেতনের কোনও কাজ নেই। যে সব কাজ করে দেশে ১০-১৫ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যায় না, ইজ়রায়েলে সেই কাজের জন্য মাসে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। ভারত সরকার ইজ়রায়েল সরকারকে শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকে দৃষ্টি দিতে বলেছে। যে শ্রমিকরা পাড়ি দিচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে বিএড ডিগ্রিপ্রাপ্তও আছেন।

প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজ করতে গিয়ে অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। দেশের মানবসম্পদকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করার কথা আমরা ভাবছি না। দেশের অভ্যন্তরে আমরা কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে শোচনীয় ভাবে অসফল। এর মধ্যে যে সব সরকারি কাজ, যেমন— ১০০ দিনের কাজ, যা দেশের মানুষকে স্থায়ী কাজ দেয়, সেগুলিতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। ফলে কর্মসংস্থানে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই শ্রমিকরা বিদেশে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের নিরাপত্তা, মর্যাদা যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে, সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তাঁরা যেন বিজাতীয় ঘৃণা ও শোষণের বলি না হন।

উৎপল আচার্য, কলকাতা-৫

চাহিদার টানে

‘ইজ়রায়েল চলল দেশের মজুর’ সম্পর্কে দু’চার কথা। এটা ঠিক‌ যে, বর্তমানের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সে দেশে মজুর পাঠানো অত্যন্ত ঝুঁকির ব্যাপার। পরিবারের মানুষের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার‌ জন্য, এবং বেকারত্বের তীব্র জ্বালা ঘোচানোর জন্য ঝুঁকি‌ থাকা সত্ত্বেও বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। এটা অনেকটা নিরুপায় হয়ে কাজে সম্মতি জানানো। তবে দেশের মজুর, শ্রমিক কাজের জন্য বিদেশে পাড়ি দিলে তাতে তেমন দোষের কিছু নেই। তাতে তাঁদের পরিবার যেমন সুখে থাকবে, তেমনই সরকারও তাঁদের পাঠানো অর্থ থেকে ‘রেমিটেন্স’ পাবে। দেশের অর্থভান্ডার মজবুত হবে। শুধু সরকারকে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়ে সে দেশের সরকারের থেকে নিশ্চয়তা আদায় করতে হবে। বিদেশে ভারতীয় শ্রমিকদের কল্যাণের জন্য সরকার বিশেষ সেল গঠন করতে পারে। কারণ, মাঝেমধ্যেই বিদেশে ভারতীয় শ্রমিকদের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচারের খবর পাই। এই তালিকায় শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব শ্রেণির শ্রমিকই আছেন।

জনসংখ্যায় আধিক্যের কারণে ভারতে বেকারের সংখ্যা প্রচুর। দেশে কাজের অপ্রতুলতার কারণে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে বাধ্য হন। এঁরা শখ করে পরিবার-পরিজন ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেন না। যত দিন না দেশে পর্যাপ্ত কাজের চাহিদা তৈরি হচ্ছে, তত দিন এই প্রবণতা রোধ করা যাবে না।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

নীতিহীন

‘নৈতিকতার জলাঞ্জলি’ (৮-৫) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি প্রসঙ্গে কিছু কথা। ইদানীং নীতিহীন, নিন্দনীয় কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেগুলি জনপ্রতিনিধিদের স্বেচ্ছাচারিতার নিদর্শনরূপে আলোচিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধতা, সমাজের প্রতিটি নাগরিক তথা নির্বাচক মণ্ডলীর প্রতি কর্তব্যবোধ সংবিধানেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। ভারতের প্রথম নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালে। প্রথম দিকে জনপ্রতিনিধিরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ভালই কাজকর্ম করছিলেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতাও প্রশংসনীয় ছিল। কিন্তু, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্রিটিশ রাজের ধাঁচে জমিদারতন্ত্র কায়েম হতে শুরু করল। সে সময় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অর্থকরী ছিল না, স্বভাবতই বিত্তশালী পরিবারের মধ্যেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৬৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিধাবিভক্ত হওয়া, এবং কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিস্ট)-র জন্ম হওয়ার পর থেকে চাষি, শ্রমিক, সব ধরনের খেটে-খাওয়া মানুষদের বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। যদিও নির্বাচনী রাজনীতিতে তাঁরা তেমন প্রাধান্য পাননি, তবু কিছু রাজ্যে বামপন্থী সরকার উল্লেখযোগ্য কাজ করেছে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে বাহুবলীদের অনুপ্রবেশ গোবলয়ে প্রথম প্রকট হয়। ক্রমশ তা গোটা ভারতে নির্বাচনী রাজনীতিকে গ্রাস করে। ফলে মুষ্টিমেয় ক্ষমতালোভী মানুষ নিজেদের জনগণের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক বলে মনে করতে শুরু করল। দেশের মানুষের সচেতনতা, শিক্ষার ঘাটতি অনুঘটকের কাজ করে। সেই রূপই এখনও প্রতিবিম্বিত হচ্ছে। একে নৈতিকতার জলাঞ্জলি না বলে নীতিহীন রাজনীতি বলাই শ্রেয়। যে কোনও নির্বাচনে দেশ একটা ছোটখাটো যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নিচ্ছে। এটা ভারতের গণতন্ত্রের পক্ষে কি পরিতাপের বিষয় নয়?

সুবীর ভদ্র, কলকাতা-১৫১

নিষ্ফল লড়াই

দেবাশিস ভট্টাচার্যের “‘মিথ্যা’ বলাটাই যথেষ্ট?” (৯-৫) প্রবন্ধটি বেশ সোজাসাপটা, অকপট। প্রবন্ধকার যথার্থ ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘পারসেপশন’ বা ‘বুঝে নেওয়া’র এই যুগে চলেছে গদি আঁকড়ে বসে থাকার নানান কৌশলী খেলা। ভোটের আগে নেতা-মন্ত্রীরা মাঠে নেমে পড়েছিলেন, কে কাকে কী ভাবে টেনেহিঁচড়ে কতটা নীচে নামাবেন। তাতে যদি সাধারণের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, সম্মানে কালিমা লাগে, মিথ্যে মামলায় ফাঁসতে হয়, তাতে তাঁদের আপত্তি নেই। দরিদ্র মানুষের বিশ্বাস নিয়ে চলে রাজনীতির কপট পাশাখেলা। জনগণের অভাব-অভিযোগ, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বড় একটা ঠাঁই পায় না সেখানে। মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, বেহাল শিক্ষা, শিল্পে বন্ধ্যাত্ব— এ সবের সুরাহায় যদি নেতা-মন্ত্রীরা যত্নশীল হতেন, তা হলে কাদা ছোড়াছুড়ি আর হিংসা-প্রতিহিংসার লড়াই দেখতে হত না।

এই প্রবন্ধের প্রসঙ্গ টেনে বলতে হয়, সম্প্রতি রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের ভূমিকা পীড়া দিচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যৌন নির্যাতনের ঘটনাকে তিনি শুধু অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হননি, কোনও রকম তদন্ত ছাড়াই এটিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ আখ্যা দিয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলি সরকারি ক্ষমতাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে আরও যে কত কুফল উপহার দেবে, জানা নেই ।

বাবুলাল দাস, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

অন্য বিষয়গুলি:

Labourers Low Salary Insecurity israel India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE